Skip to main content

অ্যালিমনি



- এই যে, ট্যাক্সিটা আর কতক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকবে? আর ট্যাক্সি দাঁড়ালেও ট্রেন কিন্তু হার ম্যাজেস্টির জন্য নতজানু হয়ে বসে থাকবে না৷ 

- আহ্৷ আসছি তো৷

- মালপত্তর সব তুলে দিয়ে এসেছি। 

- খুব ফুর্তি প্রাণে, তাই না? পারলে এখুনি ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বিদেয় করে নাচানাচি শুরু করবি। 

- চারটে বড় সুটকেস পিছনে৷ 

- খুব ফুর্তি? 

- দু'টো সাইডব্যাগ ড্রাইভারের পাশের সীটে৷

- রাতের রান্না ফ্রিজে আছে। আজ থেকেই হুড়ুম করে বাইরে খাওয়া শুরু করিসনা৷ বাজারটাজার নিয়মিত যাস, মিতুলদি রান্নাবান্না যেমন করছিল তেমনই করবে৷ 

- ট্যাক্সিতে চারটে জলের বোতল রেখে দিয়েছি৷ একটা মাইল্ড ঠাণ্ডা ফর ইমিডিয়েট কনসাম্পশন। বাকিগুলো ম্যাক্সিমাম কনকনে, ঘণ্টাচারেক ওয়েট করতে হবে। ওভারনাইট জার্নি কেটে যাবে৷ তবে টনটনে টনসিলওলা মানুষদের ঠাণ্ডা জলের প্রতি এই সুইসাইডাল লোভ দেখলে গা জ্বলে যায়..। 

- ডিভোর্সটা হয়েই গেল বাবু৷ কেমন চটপট, সুটসাট৷ তাই না?

- নীল সাইডব্যাগের মাঝের খাপের চেনটা খুললেই..দু'টো বাক্স। একটায় ক্ষীরকদম, অন্যটায় গজা৷ এই গজা ব্যাপারটা তোর ওই অমৃতেন্দুর থেকেও খাজা। যেমন বিচ্ছিরি টেক্সচার৷ তেমনি ক্যাটক্যাটে মিষ্টি৷ যাক গে৷ হু অ্যাম আই টু ইন্টারফেয়ার... আমি কোন হরিদাস পালতোলা নৌকো৷ তোর পছন্দ যখন..।

- অমৃতেন্দুর ব্যাপারে এই ন্যাকাপনা মেশানো গবেট-মার্কা বাজে ধারণাটা এ'বারে অন্তত বাদ দে। আমাদের সেপারেশন হচ্ছে, কারণেই হচ্ছে৷ ঝগড়াযুদ্ধ কিছু ছিল বটে, কিন্তু স্ক্যান্ডেল তো কিছুই নেই৷ তুই মানুষটা ভালো৷ আমিও মন্দ নই৷ এবং আমরা দু'জনে ভালো বন্ধু বলেই খুনোখুনি করে সংসার টিকিয়ে রাখার পাগলামোটা করছি না৷ এখন তুই এই অযথা আজেবাজে কথা বলে গায়ে পড়ে তিতকুটে ঝগড়াটা শুরু করিসনা৷ 

- ওহ, আই মাস্ট মেনশন৷ কন্ট্র‍্যাব্যান্ডের মত স্টক করা ওই কাসুন্দিতে আমার ইন্টারেস্ট নেই। একটা প্যাকেটে মুড়ে চারটে শিশিই সাইডব্যাগেই দিয়ে দিয়েছি। লীক করবে না। 

- তুই কি আর কোনও কথাই বলবি না?

- ছোট সুটকেসের মধ্যে রাখা নীল পাউচটা থেকে নেলকাটারটা আমি সরিয়ে রেখেছি৷ গড়িয়াহাট থেকে আমি নিজে কিনেছিলাম৷ আশি টাকায়৷ আর এ মুহূর্তে নখ আমার বেড়েছে বেশি৷ ভুজুংভাজুং দিয়ে সে'টা নিয়ে তুই কেটে পড়বি আর আমি টের পাব না ভেবেছিলিস?

- এ'রকম কেন করছিস হঠাৎ?  তুই তো আপত্তি করিসনি কোনওদিন? উকিলের আইডিয়াটাও তোরই ছিল৷ তবে এই ভালো, জানিস। তুই দেখিস, আমরা ভালো থাকব। সুস্থ একটা বন্ধুত্ব থাকবে৷

- ওহ হো৷ একটা বিগশপার ব্যাগ রেখেছি পিছনের সীটে৷ দু'টো চিঁড়েভাজার প্যাকেট। দু'টো বর্বোন বিস্কুটের বড় প্যাকেট৷ তিনটে..।

- তুই থামবি?

- ট্যাক্সিদাদা মিটার চালু করে দিয়েছে৷

- বাবু, সরি। 

- একটা হেস্তনেস্ত বাকি আছে৷ 

- এখনও কী বাকি আছে?

- বাড়ির বইগুলো তোকে দিয়ে দেব৷ অ্যালিমনি। সময়-সুযোগ করে পাঠিয়ে দেব'খন। 

- তারপর সে বইয়ে লেগে থাকা দীর্ঘশ্বাসে আমার গায়ে লাগুক আর কী৷ আর শোন, আমি পড়ি, টপাটপ বই শেষ করি৷ বাড়ির আলমারির বেশির ভাগ বইই আমার পড়া। আমি তোর মত নই যে গাদাগুচ্ছের বই কিনে জমাব কিন্তু পড়ব না। এ'বার তো হাতে অঢেল সময়৷ জানপ্রাণ লাগিয়ে পড় দেখি৷ 

- ওহহো৷ দ্যাখো কাণ্ড৷ আসল ব্যাপারটা বলে রাখি৷ ফোনের  চার্জারগুলো সব সবুজ সাইডব্যাগটার সাইডের চেনে রেখেছি। 

- আমি মাঝমধ্যেই আসব কিন্তু, কেমন? আর প্রতিবার তোর জন্য ভালো ভালো বই নিয়ে আসব৷ অ্যালিমনি। 

- যাস না৷ 

- যাব না?

- টু সামারাইজ৷ চারটে বড় সুটকেস পিছনে৷ দু'টো সাইডব্যাগ ড্রাইভারের পাশের সীটে। বিগশপ্যারে স্ন্যাক্স৷ চারটে জলের বোতল৷ 

- আসি৷ টু সামারাইজঃ ফ্রিজে ডিনার রাখা আছে৷ ভুলে যাস না। 

Comments

Popular posts from this blog

গোয়েন্দা গল্প

- কিছু মনে করবেন না মিস্টার দত্ত...আপনার কথাবার্তাগুলো আর কিছুতেই সিরিয়াসলি নেওয়া যাচ্ছে না।  - কেন? কেন বলুন তো ইন্সপেক্টর? - ভোররাতে এই থানা থেকে একশো ফুট দূরত্বে ফুটপাথে আপনাকে উপুড় হয়ে শুয়ে থাকতে দেখা যায়।  - আপনার কনস্টেবল নিজের চোখে দেখেছে তো।  - না না, সে'টাকে আমি কোশ্চেন করছি না। আমি শুধু সামারাইজ করছি। আপনার গায়ে দামী চিকনের পাঞ্জাবী, ঘড়িটার ডায়ালও সোনার হলে অবাক হব না। এ'রকম কাউকে বড় একটা ফুটপাথে পড়ে থাকতে দেখা যায় না। যা হোক। হরিমোহন কনস্টেবলের কাঁধে ভর দিয়ে আপনি থানায় এলেন। জলটল খেয়ে সামান্য সুস্থ বোধ করলেন। অল ইজ ওয়েল। নিঃশ্বাসে অ্যালকোহলের সামান্যতম ট্রেসও নেই। শরীরে নেই কোনও চোট আঘাত।  - আমার কথা আমায় বলে কী লাভ হচ্ছে? আমি যে জরুরী ব্যাপারটা জানাতে মাঝরাতে ছুটে এসেছিলাম...সেই ব্যাপারটা দেখুন...। ব্যাপারটা আর্জেন্ট ইন্সপেক্টর মিশ্র।  - আর্জেন্সিতে পরে আসছি। রাত সাড়ে তিনটে নাগাদ আপনি থানায় ছুটে এসেছিলেন। ওয়েল অ্যান্ড গুড। কিন্তু...ফুটপাথে পড়ে রইলেন কেন...।  - এ'টাই, এ'টাই আমি ঠিক নিশ্চিত নই। মাথাটাথা ঘুরে গেছিল হয়ত। আফটার অল বা

পকেটমার রবীন্দ্রনাথ

১ । চাপা উত্তেজনায় রবীন্দ্রনাথের ভিতরটা এক্কেবারে ছটফট করছিল । তার হাতে ঝোলানো কালো পলিথিনের প্যাকেটে যে ' টা আছে , সে ' টা ভেবেই নোলা ছুকছাক আর বুক ধড়ফড় । এমনিতে আলুথালু গতিতে সে হেঁটে অভ্যস্ত । তাড়াহুড়ো তার ধাতে সয় না মোটে । কিন্তু আজ ব্যাপারটা আলাদা । সে মাংস নিয়ে ফিরছে । হোক না মোটে আড়াই ' শ গ্রাম , তবু , কচি পাঁঠা বলে কথা । সহৃদয় আলম মিয়াঁ উপরি এক টুকরো মেটেও দিয়ে দিয়েছে । তোফা ! নিজের লম্বা দাড়ি দুলিয়ে ডবল গতিতে পা চালিয়ে সে এগোচ্ছিল ।   গলির মোড়ের দিকে এসে পৌঁছতে রবীন্দ্রনাথের কেমন যেন একটু সন্দেহ হল । ঠিক যেন কেউ পিছু নিয়েছে । দু ' একবার ঘাড় ঘুরিয়েও অবশ্য কাউকে দেখা গেলনা । ভাবনা ঝেড়ে ফেলে মাংসের পাকেটটায় মন ফিরিয়ে আনলেন রবীন্দ্রনাথ । বৌ নিশ্চয়ই খুব খুশি হবে আজ । খোকাটাকে যে কদ্দিন মাংসের ঝোল খাওয়ানো হয়নি ।   খাসির রান্নার গন্ধ ভেবে বড় গান পাচ্ছিল রবীন্দ্রনাথের । সে বাধ্য হয়েই একটা কুমার শানুর গাওয়া আশিকি সিনেমার গান ধরলে ।

চ্যাটার্জীবাবুর শেষ ইচ্ছে

- মিস্টার চ্যাটার্জী...। - কে? - আমার নাম বিনোদ। - আমি তো আপনাকে ঠিক...। - আমায় বস পাঠিয়েছেন। - ওহ, মিস্টার চৌধুরী আপনাকে...। - বসের নামটাম নেওয়ার তো কোনও দরকার নেই। কাজ নিয়ে এসেছি। কাজ করে চলে যাব। - আসুন, ভিতরে আসুন। - আমি ভিতরে গিয়ে কী করব বলুন। সৌজন্যের তো আর তেমন প্রয়োজন নেই। আপনি চলুন আমার সঙ্গে। চটপট কাজ মিটে গেলে পৌনে এগারোটার লোকালটা পেয়ে যাব। আমায় আবার সেই সোনারপুর ফিরতে হবে। - যা করার তা কি এ'খানেই সেরে ফেলা যায়না? - এমন কনজেস্টেড এলাকায় ও'সব কাজ করা চলেনা। চুপচাপ ব্যাপারটা সেরে ফেলতে হবে। - প্লীজ দু'মিনিটের জন্য ভিতরে আসুন বিনোদবাবু। জামাটা অন্তত পালটে নিই। - কী দরকার বলুন জামা পালটে। - দরকার তেমন নেই। তবু। ওই, লাস্ট উইশ ধরে নিন। - ক্যুইক প্লীজ। ট্রেন ধরার তাড়াটা ভুলে যাবেন না। আর ইয়ে, পিছন দিক দিয়ে পালাতে চেষ্টা করে লাভ নেই। বসের লোকজন চারপাশে ছড়িয়ে আছে। - ও মা, ছি ছি। তা নয়। আসলে মিতুলের দেওয়া একটা জামা এখনও ভাঙা হয়নি। বাটিক প্রিন্টের হাফশার্ট। একটু ব্রাইট কালার কিন্তু বেশ একটা ইয়ে আছে। ও চলে যাওয়ার পর ও জামার ভাজ ভাঙতে ইচ্ছে হয়নি। কিন্তু...আজ না হয়...। - মিতু