Skip to main content

লোনের ফোনে



- হ্যালো।
- নমস্কার। আমি কি মিস্টার দত্তর সঙ্গে কথা বলছি?
- হ্যাঁ। বলছি। আপনি?
- আমি অমুক ব্যাঙ্ক থেকে দীপিকা বলছি। 
- বলুন।
- স্যার, আপনি আমাদের ব্যাঙ্কে একটা লোনের জন্য আবেদন করেছিলেন।
- হ্যাঁ।
- লোনের জন্য আমাদের ব্যাঙ্কে যোগাযোগ করার জন্য ধন্যবাদ স্যার। আমি কি আপনার মূল্যবান সময় থেকে দু'মিনিট নিতে পারি?
- কেমন একটা অদ্ভুত বাংলায় বললেন যেন। তবে সময়ের ব্যাপারে কোনও চিন্তা নেই। বাড়ির ওয়াইফাই ভোগে, হাতে অঢেল সময়। বলুন। 
- আপনি গত মাসের বাইশ তারিখে লোনের জন্য আবেদন করেছিলেন। তাই তো?
- একদম।
- অমুক ব্যাঙ্কের তরফ থেকে মিস্টার মনোজ হালদার আপনার সঙ্গে কথা বলছিলেন৷ 
- রাইট। ভেরি ব্রাইট ফেলো, বলতেই হয়। মাত্র তিনচারটে ফর্ম কুড়ি মিনিটের মধ্যে ভরে নিয়ে সমস্ত প্রসেস করে নিল। প্রম্পটনেস একেই বলে। 
- অমুক ব্যাঙ্কের বিজ্ঞাপন দেখেছেন নিশ্চয়ই। নিয়ম পরে, গ্রাহকদের সুবিধে আগে।
- বিউটিফুল।  এ'টাই তো চাই। এক হপ্তার মধ্যেই লোন এলিজিবিলিটির কনফার্মেশন ইমেলও পেয়ে গেছি। আমি যাকে বলে সুপার ইম্প্রেসড।
- থ্যাঙ্ক ইউ স্যার। তাহলে আপনি আমাদের সার্ভিসকে এক থেকে পাঁচের মধ্যে কত নম্বর দেবেন? 
- সাড়ে পাঁচ।
- মাফ করবেন স্যার। আপনাকে এক থেকে পাঁচের মধ্যেই একটা সংখ্যা বেছে নিতে হবে।
- ইট ওয়াজ আ জোক৷ অবভিয়াসলি৷ আমার তরফ থেকে আপনাদের সার্ভিসের জন্য রইল পাঁচে পাঁচ। 
- অনেক ধন্যবাদ স্যার৷ এ'বারে ব্যাঙ্কের তরফ থেকে একটা জরুরী তথ্য আপনাকে জানাত চাই। 
- লোনের টাকাটা অ্যাকাউন্টে ঢুকছে বুঝি? তা'হলে সামনের হপ্তার মধ্যেই বাড়ির রেজিস্ট্রিটা সেরে ফেলা যাবে।
- ঠিক তা নয়...।
- তবে?
- আপনার লোনের আবেদনটা নাকচ হয়ে গেছে। 
- কী?
- রিজেক্টেড, স্যার।
- সে কী! তবে সেই লোন এলিজিবিলিটির ইমেল? 
- আপনার আশা পূরণ করতে বা পারার জন্য আমরা দুঃখিত। কিন্তু আমরা আপ্রাণ চেষ্টা করব..।
- আবার সেই খটমটে বাংলা। যাক গে। ইমেলে ভুল খবর? আপনি জানেন আমি আপনাদের নামে কেস ঠুকতে পারি?
- কেসের বিষয়ে কোনও কথা বলতে হলে আপনাকে আমাদের লীগাল ডিপার্টমেন্টের সঙ্গে কথা বলতে হবে।
- বেশ! আপনি তা'হল সেই লীগ্যাল ব্যাটাদের জানিয়ে দেবেন যে গোলক দত্ত ব্যাঙ্কের নামে কেস ঠুকবে।
- লীগাল ডিপার্টমেন্টকে তো আমরা জানাতে পারব না স্যার।    সে নিয়ম নেই।
- আপনাদের লীগাল টীমের সঙ্গে যোগাযোগ কী'ভাবে করব?
- মাফ করবেন স্যার। গ্রাহক হিসেবে আপনি শুধু আমাদের কাস্টোমার রিলেশন টীমের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারবেন। 
- ইয়ার্কি হচ্ছে নাকি? উকিলের চিঠি যখন যাবে তখন বুঝবেন। 
- অত্যন্ত দুঃখের সঙ্গে জানাতে বাধ্য হচ্ছি যে উকিল বা আইন সম্বন্ধে কোনও কথা বলতে হলে আপনাকে..।
- আপনাদের লীগাল ডিপার্টনমেন্টের সঙ্গে কথা বলতে হবে?  সেই ডিপার্টমেন্ট যাদের সঙ্গে গ্রাহকদের যোগাযোগ করার নিয়ম নেই?
- আপনাকে সমস্ত কিছু স্পষ্টভাবে বুঝিয়ে দেওয়ার জন্যই এই কাস্টোমার সার্ভিস কল। 
- ধেত্তেরি মাইরি। আমার লোনের অ্যাপ্লিকেশন রিজেক্ট হল কেন?আমার গ্যারেন্টর রিলায়েবল নয়?
- না, সে'খানে কোনও সমস্যা নেই।
- আমার মাইনে যথেষ্ট নয়? সে জন্য আমি এলিজিবল নই?
- আপনাকে তো ইমেল করে জানানো হয়েছে যে আপনি লোনের জন্য এলিজিবল। ইমেল রেফারেন্স নম্বর একুশ ড্যাশ এস তিন বাই এস এক্স ফিফটি থ্রি বাই রোমান সেভেন ডেটেড সাতাশে জুন দু'হাজার একুশ। 
- তা'হলে লোনটা নাকচ হচ্ছে কেন?
- কারণ আপনার আবেদনপত্রটা সঠিকভাবে ভরা হয়নি। 
- সে কী! ফর্মে কিছু ভুল লিখেছি?
- না স্যার৷ আপনি ফর্মে কিছু ভুল লেখেননি। সে জন্যই তো ব্যাঙ্কের তরফ থেকে আপনাকে এই লোনের জন্য এলিজিবল ঘোষণা করে ইমেল করা হয়েছে।  বিশদে জানতে হলে আপনাকে পড়তে হবে ইমেল রেফারেন্স নম্বর একুশ ড্যাশ এস তিন বাই এস এক্স ফিফটি থ্রি...।
- আরে থামুন! তা'হলে গোলমালটা হল কোথায়? এলিজিবল হয়েও লোন পাচ্ছি না কেন?
- কারণ আপনার ফর্মে লিখতে গিয়ে সামান্য ভুল করেছেন আপনার অমুক ব্যাঙ্ক রিলেশনশিপ ম্যানেজার মিস্টার মনোজ হালদার!
- আচ্ছা হতচ্ছাড়া তো। তা সে যদি ভুল করে থাকে তো তার কান মুলে শুধরে নিলেই হয়। 
- সে'টা সম্ভব নয়। 
- কেন?
- কারণ মনোজ হালদার অমুক ব্যাঙ্কের চাকরী ছেড়েছেন গত পরশু। ব্যাঙ্কের কোনও ফর্ম তাকে দেওয়া আর সম্ভব নয়। অতএব, অত্যন্ত দুঃখের সঙ্গে জানাচ্ছি যে আপনার হোম লোনের আবেদন নাকচ করা হয়েছে। 
- কী মুশকিল। জলে পড়ব যে। বাড়ি কেনার সমস্ত কথাবার্তা পাকা। আরে মনোজ নেই তো অন্য কাউকে দিয়ে আর একটা ফর্ম ভরিয়ে নিলেই তো হয়..। কুড়ি মিনিটের তো ব্যাপার..। আমি নিজে না হয় আপনাদের ব্যাঙ্কে চলে যাব..।
- মাফ করবেন স্যার। আমাদেত অমুক কোনও ব্যাঙ্কে লোনের আবেদন নাকচ হলে আগামী ছ'মাস আপনি নতুন কোনও লোনের জন্য আবেদন করতে পারবেন না। এ'টাই নিয়ম। 
- আমি আপনাদের কোর্টে নিয়ে যাব! বলে রাখলাম।
- কোর্ট, উকিল, কেস; এ সমস্ত ব্যাপারে শুধু আমাদের লীগাল টীম কথা বলতে পারে। আমি অপারগ স্যার। তবে আপনাকে আন্তরিক ধন্যবাদ আমাদের সার্ভিসকে পাঁচে পাঁচ রেটিং দেওয়ার জন্য। আপনার দিন ভালো কাটুক৷ মনে রাখবেন, অমুক ব্যাঙ্ক সবসময় আপনার পাশে রয়েছে।

Comments

Popular posts from this blog

গোয়েন্দা গল্প

- কিছু মনে করবেন না মিস্টার দত্ত...আপনার কথাবার্তাগুলো আর কিছুতেই সিরিয়াসলি নেওয়া যাচ্ছে না।  - কেন? কেন বলুন তো ইন্সপেক্টর? - ভোররাতে এই থানা থেকে একশো ফুট দূরত্বে ফুটপাথে আপনাকে উপুড় হয়ে শুয়ে থাকতে দেখা যায়।  - আপনার কনস্টেবল নিজের চোখে দেখেছে তো।  - না না, সে'টাকে আমি কোশ্চেন করছি না। আমি শুধু সামারাইজ করছি। আপনার গায়ে দামী চিকনের পাঞ্জাবী, ঘড়িটার ডায়ালও সোনার হলে অবাক হব না। এ'রকম কাউকে বড় একটা ফুটপাথে পড়ে থাকতে দেখা যায় না। যা হোক। হরিমোহন কনস্টেবলের কাঁধে ভর দিয়ে আপনি থানায় এলেন। জলটল খেয়ে সামান্য সুস্থ বোধ করলেন। অল ইজ ওয়েল। নিঃশ্বাসে অ্যালকোহলের সামান্যতম ট্রেসও নেই। শরীরে নেই কোনও চোট আঘাত।  - আমার কথা আমায় বলে কী লাভ হচ্ছে? আমি যে জরুরী ব্যাপারটা জানাতে মাঝরাতে ছুটে এসেছিলাম...সেই ব্যাপারটা দেখুন...। ব্যাপারটা আর্জেন্ট ইন্সপেক্টর মিশ্র।  - আর্জেন্সিতে পরে আসছি। রাত সাড়ে তিনটে নাগাদ আপনি থানায় ছুটে এসেছিলেন। ওয়েল অ্যান্ড গুড। কিন্তু...ফুটপাথে পড়ে রইলেন কেন...।  - এ'টাই, এ'টাই আমি ঠিক নিশ্চিত নই। মাথাটাথা ঘুরে গেছিল হয়ত। আফটার অল বা

পকেটমার রবীন্দ্রনাথ

১ । চাপা উত্তেজনায় রবীন্দ্রনাথের ভিতরটা এক্কেবারে ছটফট করছিল । তার হাতে ঝোলানো কালো পলিথিনের প্যাকেটে যে ' টা আছে , সে ' টা ভেবেই নোলা ছুকছাক আর বুক ধড়ফড় । এমনিতে আলুথালু গতিতে সে হেঁটে অভ্যস্ত । তাড়াহুড়ো তার ধাতে সয় না মোটে । কিন্তু আজ ব্যাপারটা আলাদা । সে মাংস নিয়ে ফিরছে । হোক না মোটে আড়াই ' শ গ্রাম , তবু , কচি পাঁঠা বলে কথা । সহৃদয় আলম মিয়াঁ উপরি এক টুকরো মেটেও দিয়ে দিয়েছে । তোফা ! নিজের লম্বা দাড়ি দুলিয়ে ডবল গতিতে পা চালিয়ে সে এগোচ্ছিল ।   গলির মোড়ের দিকে এসে পৌঁছতে রবীন্দ্রনাথের কেমন যেন একটু সন্দেহ হল । ঠিক যেন কেউ পিছু নিয়েছে । দু ' একবার ঘাড় ঘুরিয়েও অবশ্য কাউকে দেখা গেলনা । ভাবনা ঝেড়ে ফেলে মাংসের পাকেটটায় মন ফিরিয়ে আনলেন রবীন্দ্রনাথ । বৌ নিশ্চয়ই খুব খুশি হবে আজ । খোকাটাকে যে কদ্দিন মাংসের ঝোল খাওয়ানো হয়নি ।   খাসির রান্নার গন্ধ ভেবে বড় গান পাচ্ছিল রবীন্দ্রনাথের । সে বাধ্য হয়েই একটা কুমার শানুর গাওয়া আশিকি সিনেমার গান ধরলে ।

চ্যাটার্জীবাবুর শেষ ইচ্ছে

- মিস্টার চ্যাটার্জী...। - কে? - আমার নাম বিনোদ। - আমি তো আপনাকে ঠিক...। - আমায় বস পাঠিয়েছেন। - ওহ, মিস্টার চৌধুরী আপনাকে...। - বসের নামটাম নেওয়ার তো কোনও দরকার নেই। কাজ নিয়ে এসেছি। কাজ করে চলে যাব। - আসুন, ভিতরে আসুন। - আমি ভিতরে গিয়ে কী করব বলুন। সৌজন্যের তো আর তেমন প্রয়োজন নেই। আপনি চলুন আমার সঙ্গে। চটপট কাজ মিটে গেলে পৌনে এগারোটার লোকালটা পেয়ে যাব। আমায় আবার সেই সোনারপুর ফিরতে হবে। - যা করার তা কি এ'খানেই সেরে ফেলা যায়না? - এমন কনজেস্টেড এলাকায় ও'সব কাজ করা চলেনা। চুপচাপ ব্যাপারটা সেরে ফেলতে হবে। - প্লীজ দু'মিনিটের জন্য ভিতরে আসুন বিনোদবাবু। জামাটা অন্তত পালটে নিই। - কী দরকার বলুন জামা পালটে। - দরকার তেমন নেই। তবু। ওই, লাস্ট উইশ ধরে নিন। - ক্যুইক প্লীজ। ট্রেন ধরার তাড়াটা ভুলে যাবেন না। আর ইয়ে, পিছন দিক দিয়ে পালাতে চেষ্টা করে লাভ নেই। বসের লোকজন চারপাশে ছড়িয়ে আছে। - ও মা, ছি ছি। তা নয়। আসলে মিতুলের দেওয়া একটা জামা এখনও ভাঙা হয়নি। বাটিক প্রিন্টের হাফশার্ট। একটু ব্রাইট কালার কিন্তু বেশ একটা ইয়ে আছে। ও চলে যাওয়ার পর ও জামার ভাজ ভাঙতে ইচ্ছে হয়নি। কিন্তু...আজ না হয়...। - মিতু