Skip to main content

দ্য রেস অফ মাই লাইফ



গতকাল পড়লাম এই বইটা৷ এর বছরখানেক আগে লোপেজ লোমংয়ের একটা দুর্ধর্ষ আত্মজীবনী পড়েছিলাম, সে'টাও এক অদম্য অ্যাথলিটের গল্প। কিন্তু সে জীবনীতে রীতিমতো উপন্যাসের মশলা ছিল৷ গৃহযুদ্ধ,  রাজনীতি,  খিদের জ্বালা; সব মিলে টানটান৷ প্রবল মনকেমনের লেখা৷ মিলখার আত্মজীবনী ঠিক সেই ধরণের লেখা নয়৷ তবে সে'টা অভিযোগ নয়৷ সাহিত্যের উপাদান তাঁর জীবনেও কম ছিল না। দেশভাগের দাঙ্গায় পরিবার খোয়ানো কিশোর, প্রবল আর্থিক অনটন, ভেসে যাওয়ার অজস্র সম্ভাবনাকে প্রতি নিয়ত ডজ করে এগিয়ে চলা, ভালোবাসা-মায়া-মমতা-বিশ্বাসঘাতকতা, দুর্দান্ত উত্থান আর সাহেবি কেতায় যাকে বলে "মেজর হার্টব্রেক"; সবই ছিল। সবচেয়ে বড় কথা, ইতিহাসের একটা গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় সযত্নে ছুঁয়ে ফেলাই যেত এই বইয়ে৷ যে'টা লোপেজ করেছেন৷ অথবা আগাসির মত সিনেম্যাটিক ভঙ্গিমায় ফ্রেম করা যেত বায়োগ্রাফিটা। মিলখা সে পথে হাঁটেননি৷ কিন্তু সহজ সরল স্টাইলে যে ন্যারেটিভটা তৈরি হয়েছে সে'টা দিব্যি ঝরঝরে৷ মিলখা নিজের কথা বলেছেন, ইতিহাস-টিতিহাস নিয়ে বিশেষ হোঁচট খাননি৷ একটা সুবৃহৎ সাক্ষাৎকার হিসেবে এ বই চমৎকার৷ 

গতকাল থেকে মিলখা সিংয়ের একটা 'কোটেশন' সোশ্যাল মিডিয়ায় খুব চালাচালি হচ্ছে - "The track, to me, was like an open book, in which I could read the meaning and purpose of life. I revered it like I would the sanctum sanctorum in a temple, where the deity resided and before whom I would humbly prostrate myself as a devotee"।  কথাটা এই বইতেই বলেছেন মিলখা৷ আর এ কথাটা যে স্রেফ এস্যে লিখতে বসে ভারি ইংরেজি ফলানো নয়, মিলখার আন্তরিক স্টাইলেই সে'টা স্পষ্ট হয়ে ওঠে৷ মিলখা শুধু ঘাম নয়, রক্তও ঝরিয়েছেন ট্র‍্যাকে - আর মিলখার সে গল্প পড়তে পড়তে পাঠক অনায়াসে নিজের মনের মধ্যে একটা মোতি নন্দী 'Re-telling' কল্পনা করে নিতে পারবেন৷ 

কর্পোরেটে প্রায়ই একটা খেজুরে প্রসঙ্গ নিয়ে " ডোন্ট বি আ আ মিনিমাম গাই" গোছের সাহেবরা জ্ঞান ঝাড়েন - এক্সেলেন্স৷ মিলখার মজ্জায় এককণাও দেখনাই-কর্পোরেট পালিশ নেই৷ কাজেই তার জীবনীতে পাওয়ারপয়েন্ট জ্ঞান নেই, রয়েছে আদত এস্কেলেন্সের প্রসঙ্গ৷ ফুংসুক ওয়াংড়ু যে কথাটা সিনেম্যাটিক ব্রিলিয়ান্স আর "হাইক্লাস এন্টারটেনমেন্টে"র মাধ্যমে বুঝিয়েছেন, মিলখার বইয়ে সে'টাই রয়েছে একটু সাদামাটা ভাষায়, কখনও প্রায় সভাসমিতির মাইক্রোফনের সামনে দাঁড়িয়ে কথা বলার ভাষায়।

দেশভাগ আর বাপ-মা হারানোর যন্ত্রণা, আর্মি ব্যারাকের নিরস ডিসিপ্লিনের ওজন বইতে বইতে নিজের প্যাশন খুঁজে পাওয়া, আকাশ ছোঁয়া সাফল্য, আর রোম অলিম্পিকের যন্ত্রণা। সবই রয়েছে৷ ব্যাক্তিগত ধ্যানধারণা আর সম্পর্কগুলোও বাদ যায়নি৷ তবে এ বইতে আর একটা গুরুত্বপূর্ণ অংশ রয়েছে; ভারতের স্পোর্টস 'সিস্টেম' নিয়ে মিলখার খোলামেলা মতামত এবং খানিকটা হতাশা। 

চট করে পড়ে ফেলাই যায়৷

Comments

Popular posts from this blog

গোয়েন্দা গল্প

- কিছু মনে করবেন না মিস্টার দত্ত...আপনার কথাবার্তাগুলো আর কিছুতেই সিরিয়াসলি নেওয়া যাচ্ছে না।  - কেন? কেন বলুন তো ইন্সপেক্টর? - ভোররাতে এই থানা থেকে একশো ফুট দূরত্বে ফুটপাথে আপনাকে উপুড় হয়ে শুয়ে থাকতে দেখা যায়।  - আপনার কনস্টেবল নিজের চোখে দেখেছে তো।  - না না, সে'টাকে আমি কোশ্চেন করছি না। আমি শুধু সামারাইজ করছি। আপনার গায়ে দামী চিকনের পাঞ্জাবী, ঘড়িটার ডায়ালও সোনার হলে অবাক হব না। এ'রকম কাউকে বড় একটা ফুটপাথে পড়ে থাকতে দেখা যায় না। যা হোক। হরিমোহন কনস্টেবলের কাঁধে ভর দিয়ে আপনি থানায় এলেন। জলটল খেয়ে সামান্য সুস্থ বোধ করলেন। অল ইজ ওয়েল। নিঃশ্বাসে অ্যালকোহলের সামান্যতম ট্রেসও নেই। শরীরে নেই কোনও চোট আঘাত।  - আমার কথা আমায় বলে কী লাভ হচ্ছে? আমি যে জরুরী ব্যাপারটা জানাতে মাঝরাতে ছুটে এসেছিলাম...সেই ব্যাপারটা দেখুন...। ব্যাপারটা আর্জেন্ট ইন্সপেক্টর মিশ্র।  - আর্জেন্সিতে পরে আসছি। রাত সাড়ে তিনটে নাগাদ আপনি থানায় ছুটে এসেছিলেন। ওয়েল অ্যান্ড গুড। কিন্তু...ফুটপাথে পড়ে রইলেন কেন...।  - এ'টাই, এ'টাই আমি ঠিক নিশ্চিত নই। মাথাটাথা ঘুরে গেছিল হয়ত। আফটার অল বা

পকেটমার রবীন্দ্রনাথ

১ । চাপা উত্তেজনায় রবীন্দ্রনাথের ভিতরটা এক্কেবারে ছটফট করছিল । তার হাতে ঝোলানো কালো পলিথিনের প্যাকেটে যে ' টা আছে , সে ' টা ভেবেই নোলা ছুকছাক আর বুক ধড়ফড় । এমনিতে আলুথালু গতিতে সে হেঁটে অভ্যস্ত । তাড়াহুড়ো তার ধাতে সয় না মোটে । কিন্তু আজ ব্যাপারটা আলাদা । সে মাংস নিয়ে ফিরছে । হোক না মোটে আড়াই ' শ গ্রাম , তবু , কচি পাঁঠা বলে কথা । সহৃদয় আলম মিয়াঁ উপরি এক টুকরো মেটেও দিয়ে দিয়েছে । তোফা ! নিজের লম্বা দাড়ি দুলিয়ে ডবল গতিতে পা চালিয়ে সে এগোচ্ছিল ।   গলির মোড়ের দিকে এসে পৌঁছতে রবীন্দ্রনাথের কেমন যেন একটু সন্দেহ হল । ঠিক যেন কেউ পিছু নিয়েছে । দু ' একবার ঘাড় ঘুরিয়েও অবশ্য কাউকে দেখা গেলনা । ভাবনা ঝেড়ে ফেলে মাংসের পাকেটটায় মন ফিরিয়ে আনলেন রবীন্দ্রনাথ । বৌ নিশ্চয়ই খুব খুশি হবে আজ । খোকাটাকে যে কদ্দিন মাংসের ঝোল খাওয়ানো হয়নি ।   খাসির রান্নার গন্ধ ভেবে বড় গান পাচ্ছিল রবীন্দ্রনাথের । সে বাধ্য হয়েই একটা কুমার শানুর গাওয়া আশিকি সিনেমার গান ধরলে ।

চ্যাটার্জীবাবুর শেষ ইচ্ছে

- মিস্টার চ্যাটার্জী...। - কে? - আমার নাম বিনোদ। - আমি তো আপনাকে ঠিক...। - আমায় বস পাঠিয়েছেন। - ওহ, মিস্টার চৌধুরী আপনাকে...। - বসের নামটাম নেওয়ার তো কোনও দরকার নেই। কাজ নিয়ে এসেছি। কাজ করে চলে যাব। - আসুন, ভিতরে আসুন। - আমি ভিতরে গিয়ে কী করব বলুন। সৌজন্যের তো আর তেমন প্রয়োজন নেই। আপনি চলুন আমার সঙ্গে। চটপট কাজ মিটে গেলে পৌনে এগারোটার লোকালটা পেয়ে যাব। আমায় আবার সেই সোনারপুর ফিরতে হবে। - যা করার তা কি এ'খানেই সেরে ফেলা যায়না? - এমন কনজেস্টেড এলাকায় ও'সব কাজ করা চলেনা। চুপচাপ ব্যাপারটা সেরে ফেলতে হবে। - প্লীজ দু'মিনিটের জন্য ভিতরে আসুন বিনোদবাবু। জামাটা অন্তত পালটে নিই। - কী দরকার বলুন জামা পালটে। - দরকার তেমন নেই। তবু। ওই, লাস্ট উইশ ধরে নিন। - ক্যুইক প্লীজ। ট্রেন ধরার তাড়াটা ভুলে যাবেন না। আর ইয়ে, পিছন দিক দিয়ে পালাতে চেষ্টা করে লাভ নেই। বসের লোকজন চারপাশে ছড়িয়ে আছে। - ও মা, ছি ছি। তা নয়। আসলে মিতুলের দেওয়া একটা জামা এখনও ভাঙা হয়নি। বাটিক প্রিন্টের হাফশার্ট। একটু ব্রাইট কালার কিন্তু বেশ একটা ইয়ে আছে। ও চলে যাওয়ার পর ও জামার ভাজ ভাঙতে ইচ্ছে হয়নি। কিন্তু...আজ না হয়...। - মিতু