Skip to main content

সাফ টেবিল



অফিসে একটা জমজমাট প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে। "সাফ টেবিল প্রতিযোগিতা"। সবচেয়ে জমাটি ব্যাপার হল যে এ খেলায় আলাদা করে খেলতে নামার সুযোগ নেই, বিচারকরাই এক্ষেত্রে মাঠে নেমে দাপাদাপি করে থাকেন। বিনা নোটিশে তাঁরা ঘুরে ঘুরে সবার অফিস ডেস্ক জরীপ করে নম্বর দেবেন। কার টেবিলে জঞ্জাল কম, কে সমস্ত কাগজপত্র মনিকা-গেলার-গোছের হাড়-জ্বালানো জ্যামিতিতে সাজিয়ে রেখেছে, কে আবার বাড়তি সৌন্দর্য যোগ করেছে অনাবিল টবে বাহারে পাতার ছোট্ট গাছ সাজিয়ে রেখে। আচমকা যখন বিচারকরা হেলতেদুলতে আমার টেবিলের সামনে এসে দাঁড়ালেন তখন আমার টেবিলে তখন আস্ত চিৎপুর বাজার উপুড় হয়ে রয়েছে। অন্তত খান পাঁচেক ফাইল ছড়িয়েছিটিয়ে, সবক’টাই খোলা। এ ছাড়া একটা পেন স্ট্যান্ড যে’টার মধ্যে সাতটা কলমের ঢাকনি আর একটাও পেন নেই। সতেরো রকমের তার টেবিলের নীচে ওপরে জড়াজড়ি করে পড়ে। গাছপালা নেই তবে দু’তিনটে প্রিন্টআউটের মরা বাঁশ শুয়ে পড়ে আছে অযত্নে। এ ছাড়া একটা ঢাউস টিফিনবাক্স, দু’টো জলের বোতল, একটা ব্যাকপ্যাক, দু’টো স্টেপলার আর দু’টো পিনের বাক্স (কিন্ত স্টেপলারে পিন ভরা নেই, প্রতিবার স্টেপল করার দরকার হলেই ভাবছি এইবারের মত কমন প্রিন্টারের কাছে বেঁধে রাখা স্টেপলার ব্যবহার করে কাজ চালিয়ে নিই, তারপর না হয় স্টেপলারে পিন ভরে নেওয়া যাবে'খন), একটা জেমস ক্লিপের ডিবে (যে’টা বোধ  হয় ১৯৯৭ সাল থেকে এই টেবিলে পড়ে রয়েছে কিন্তু কেউই তাদের ব্যবহার করে উঠতে পারেনি), দু’টো টেবিল ক্যালেন্ডার (একটা গত বছরের, সরানো হয়নি। অন্যটা এ বছরের কিন্তু মার্চের পর থেকে পাতা পালটানো হয়নি), একটা হলুদ আর একটা কমলা হাইলাইটার (কমলা হাইলাইটারের মাথায় হলুদ খাপ আর হলদের মাথায় কাঁচকলা)। একটা বদখত সাইজের ডায়েরি, সে'টাও আধখোলা। আর কিউবিকেলের একদিকে সাঁটানো রঙবেরঙের অজস্র স্টিকি-নোটস (সে স্টিকি-নোটে যেহেতু আমার হাতের লেখা, সেহেতু সেগুলোর দিকে আধ-মিনিটের বেশি একটানা তাকিয়ে থাকে ব্লাড-প্রেশার বেড়ে যেতে বাধ্য)। 

প্রথম বিচারক বিহ্বল হয়ে আমার দিকে চাইলেন, বিব্রত হলেও আমায় খানিকটা হাসতে হল। এমন গোলমেলে পরিস্থিতিতে হ্যা-হ্যা করতে পারলে দেখেছি অস্বস্তি খানিকটা কাটানো যায়। খানিকক্ষণ আমার টেবিলের দিকে তাকিয়ে চুকচুক শব্দ করলেন এক’দুবার। তারপর বললেন; 
“ট্যু ক্লাটার্ড মুকর্জি”! 

অগত্যা আমি হাসির ডোজ বাড়িয়ে দিলাম। দ্বিতীয় বিচারক ভদ্রলোক আমার নার্ভাসনেস ধরতে পেরে খানিকটা নরম ভাবে বললেন,
“ঘাবড়ে যেও না ব্রাদার, আইনস্টাইন মানবজাতীর উদ্দেশ্যে একটা মোক্ষম প্রশ্ন ভাসিয়ে দিয়ে গেছেন। সে’টা জানা আছে তো? If a cluttered desk is a sign of cluttered mind, of what then, is an empty desk a sign”? 

Comments

Popular posts from this blog

গোয়েন্দা গল্প

- কিছু মনে করবেন না মিস্টার দত্ত...আপনার কথাবার্তাগুলো আর কিছুতেই সিরিয়াসলি নেওয়া যাচ্ছে না।  - কেন? কেন বলুন তো ইন্সপেক্টর? - ভোররাতে এই থানা থেকে একশো ফুট দূরত্বে ফুটপাথে আপনাকে উপুড় হয়ে শুয়ে থাকতে দেখা যায়।  - আপনার কনস্টেবল নিজের চোখে দেখেছে তো।  - না না, সে'টাকে আমি কোশ্চেন করছি না। আমি শুধু সামারাইজ করছি। আপনার গায়ে দামী চিকনের পাঞ্জাবী, ঘড়িটার ডায়ালও সোনার হলে অবাক হব না। এ'রকম কাউকে বড় একটা ফুটপাথে পড়ে থাকতে দেখা যায় না। যা হোক। হরিমোহন কনস্টেবলের কাঁধে ভর দিয়ে আপনি থানায় এলেন। জলটল খেয়ে সামান্য সুস্থ বোধ করলেন। অল ইজ ওয়েল। নিঃশ্বাসে অ্যালকোহলের সামান্যতম ট্রেসও নেই। শরীরে নেই কোনও চোট আঘাত।  - আমার কথা আমায় বলে কী লাভ হচ্ছে? আমি যে জরুরী ব্যাপারটা জানাতে মাঝরাতে ছুটে এসেছিলাম...সেই ব্যাপারটা দেখুন...। ব্যাপারটা আর্জেন্ট ইন্সপেক্টর মিশ্র।  - আর্জেন্সিতে পরে আসছি। রাত সাড়ে তিনটে নাগাদ আপনি থানায় ছুটে এসেছিলেন। ওয়েল অ্যান্ড গুড। কিন্তু...ফুটপাথে পড়ে রইলেন কেন...।  - এ'টাই, এ'টাই আমি ঠিক নিশ্চিত নই। মাথাটাথা ঘুরে গেছিল হয়ত। আফটার অল বা

পকেটমার রবীন্দ্রনাথ

১ । চাপা উত্তেজনায় রবীন্দ্রনাথের ভিতরটা এক্কেবারে ছটফট করছিল । তার হাতে ঝোলানো কালো পলিথিনের প্যাকেটে যে ' টা আছে , সে ' টা ভেবেই নোলা ছুকছাক আর বুক ধড়ফড় । এমনিতে আলুথালু গতিতে সে হেঁটে অভ্যস্ত । তাড়াহুড়ো তার ধাতে সয় না মোটে । কিন্তু আজ ব্যাপারটা আলাদা । সে মাংস নিয়ে ফিরছে । হোক না মোটে আড়াই ' শ গ্রাম , তবু , কচি পাঁঠা বলে কথা । সহৃদয় আলম মিয়াঁ উপরি এক টুকরো মেটেও দিয়ে দিয়েছে । তোফা ! নিজের লম্বা দাড়ি দুলিয়ে ডবল গতিতে পা চালিয়ে সে এগোচ্ছিল ।   গলির মোড়ের দিকে এসে পৌঁছতে রবীন্দ্রনাথের কেমন যেন একটু সন্দেহ হল । ঠিক যেন কেউ পিছু নিয়েছে । দু ' একবার ঘাড় ঘুরিয়েও অবশ্য কাউকে দেখা গেলনা । ভাবনা ঝেড়ে ফেলে মাংসের পাকেটটায় মন ফিরিয়ে আনলেন রবীন্দ্রনাথ । বৌ নিশ্চয়ই খুব খুশি হবে আজ । খোকাটাকে যে কদ্দিন মাংসের ঝোল খাওয়ানো হয়নি ।   খাসির রান্নার গন্ধ ভেবে বড় গান পাচ্ছিল রবীন্দ্রনাথের । সে বাধ্য হয়েই একটা কুমার শানুর গাওয়া আশিকি সিনেমার গান ধরলে ।

চ্যাটার্জীবাবুর শেষ ইচ্ছে

- মিস্টার চ্যাটার্জী...। - কে? - আমার নাম বিনোদ। - আমি তো আপনাকে ঠিক...। - আমায় বস পাঠিয়েছেন। - ওহ, মিস্টার চৌধুরী আপনাকে...। - বসের নামটাম নেওয়ার তো কোনও দরকার নেই। কাজ নিয়ে এসেছি। কাজ করে চলে যাব। - আসুন, ভিতরে আসুন। - আমি ভিতরে গিয়ে কী করব বলুন। সৌজন্যের তো আর তেমন প্রয়োজন নেই। আপনি চলুন আমার সঙ্গে। চটপট কাজ মিটে গেলে পৌনে এগারোটার লোকালটা পেয়ে যাব। আমায় আবার সেই সোনারপুর ফিরতে হবে। - যা করার তা কি এ'খানেই সেরে ফেলা যায়না? - এমন কনজেস্টেড এলাকায় ও'সব কাজ করা চলেনা। চুপচাপ ব্যাপারটা সেরে ফেলতে হবে। - প্লীজ দু'মিনিটের জন্য ভিতরে আসুন বিনোদবাবু। জামাটা অন্তত পালটে নিই। - কী দরকার বলুন জামা পালটে। - দরকার তেমন নেই। তবু। ওই, লাস্ট উইশ ধরে নিন। - ক্যুইক প্লীজ। ট্রেন ধরার তাড়াটা ভুলে যাবেন না। আর ইয়ে, পিছন দিক দিয়ে পালাতে চেষ্টা করে লাভ নেই। বসের লোকজন চারপাশে ছড়িয়ে আছে। - ও মা, ছি ছি। তা নয়। আসলে মিতুলের দেওয়া একটা জামা এখনও ভাঙা হয়নি। বাটিক প্রিন্টের হাফশার্ট। একটু ব্রাইট কালার কিন্তু বেশ একটা ইয়ে আছে। ও চলে যাওয়ার পর ও জামার ভাজ ভাঙতে ইচ্ছে হয়নি। কিন্তু...আজ না হয়...। - মিতু