Skip to main content

ফুটবলিষ্ঠ



- হ্যাঁ রে গুপে, টিভিতে আজকাল কোনও ফুটবল ম্যাচট্যাচ কিছু হচ্ছে নাকি?

-  ফুটবল?

- ফুটবল। 

- ভটকাইদা, তোমার হঠাৎ ফুটবলের খবরে কী দরকার?

- ফুটবল কি জাহাজ? আমি কি আদার বিজনেস করছি?

- তেমনটাই তো জানি। সে'বছর পাড়ার মাঠে হঠাৎ ফুটবল খেলতে নেমে গোলকিপারের এগেন্সটে লেগ বিফোর উইকেটের অ্যাপীল করে রেফারি স্বদেশ জ্যেঠুর গাঁট্টা খেয়েছিলে মনে নেই?

- আরে ওটা রিফ্লেক্সে মুখ দিয়ে বেরিয়ে গেছিল। তবে ফ্র‍্যাঙ্কলি বলি গুপে, খেলতে নেমে অমন গায়ে পড়াপড়ি আমার ধাতে সয় না৷ যাকগে, আমি ফুটবল খেলতে চাইছি না৷ দেখতে চাইছি।

- কিন্তু হঠাৎ ফুটবল দেখার শখ হলই বা কেন? ও'দিকে তোমার আদৌ কোনও ইন্টারেস্ট আছে কি? কোনও ফুটবলারকে চেনো?

- আলবাত চিনি। পেলে। মারাদোনা। কৃশানু।  মেসি। চীমা। গোষ্ঠ পাল। 

- বাহ্। তা, নিয়মিকানুন সব জানা আছে?

- গোল দেওয়া আর খাওয়া। মাঝে এন্তার ধ্বস্তাধস্তি। কুস্তির আবার নিয়মফিয়ম কী? আর তোর অত কৈফিয়তেই বা কাজ কী? এ'বার থেকে ফুটবল দেখব। ব্যাস। 

- ইউরো চলছে। কোপ আমেরিকা চলছে। লট অফ ফুটবল অন টেলিভিশন। 

- এ তো চেনা সব টুর্নামেন্টের নাম। লাভলি। বলছি, রোনাল্ডো এখনও খেলে?

- সুপারস্টার তো। 

- এই বয়সেও খেলতে পারছে? হাড়ে জোর আছে বলতে হবে। টাকটা মেন্টেন করছে না চুল বাগিয়েছে?

- টাক? তুমি কি ব্রাজিলের রোনাল্ডোর কথা বলছ?

- অফ কোর্স। ফুটবলের থাম্বরুল তো দুটোই। ব্রাজিল জিন্দাবাদ। ইস্ট বেঙ্গল হিপ হিপ হুররে। 

- পর্তুগালের রোনাল্ডো এখন মাঠ কাঁপাচ্ছে ভটকাইদা। নট দ্য ওয়ান ফ্রম ব্রাজিল। 

- দেশ পালটে ফেললে? কেপলার ওয়েসলসের মত? 

- উফ! না রে বাবা। এ আলাদা রোনাল্ডো।

- স্ট্রেঞ্জ৷ এ যেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের ওয়াসিম। ফ্যাসিনেটিং। ঠিক আছে৷ কিছুটা পড়াশোনা করতে হবে দেখছি।

- অত সাতপাঁচ না ভেবে ম্যাচ দেখে ফুর্তি করলেই তো মিটে গেল৷ পড়াশোনা করার দরকারটা কী? এ তো এগজ্যামিনেশন নয়। 

- ও মা। আকাটের মত দেখে হাততালি দিলে ফেসবুকে লিখব কী করে গুপে? খেলায় গোলটোল হলে শক্তির পোয়েট্রি কোট করে এসোটেরিক একটা কিছু বলে দেওয়াই যায় অবশ্য৷ তবু..।

- তুমি হঠাৎ ক্রিকেট ছেড়ে ফুটবল নিয়ে পড়লে কেন বলো তো?

- টেস্ট ফাইনালের হারটা ডাইজেস্ট করতে পারছি না রে ভাই৷ উইলিয়ামসনের ভালোমানুষ মুখটা মনে করে মনের মধ্যে "খেলায় হারজিত আছেই, স্পিরিট ইজ ইম্পর্ট্যান্ট" গোছের স্লোগান তোলার চেষ্টা করছি বটে...কিন্তু প্রাণে সইছে না। অন্য স্পোর্টসে ডাইভার্সিফাই না করলেই নয়৷

- তুমি ক্রিকেটের দুঃখে ফুটবল দেখবে?

- তেমনটাই ইচ্ছে। তবে আরও একটা ব্যাপার আছে বুঝলি৷ হোয়্যাটস্যাপ গ্রুপগুলোতে আজকাল এত ফুটবল আলোচনা আর তর্ক চালাচ্ছে শালা ফুটবল পাগলের দল, সামান্য ফুটবল এ'বার না দেখলেই নই। খেলা বুঝেটুঝে কাজ নেই, কিন্তু স্রেফ ইনফর্মেশনের অভাবে তর্কে পার্টিসিপেট করব না...এ যন্ত্রণা বরদাস্ত করা যায় রে গুপে? অসম্ভব!

Comments

Popular posts from this blog

গোয়েন্দা গল্প

- কিছু মনে করবেন না মিস্টার দত্ত...আপনার কথাবার্তাগুলো আর কিছুতেই সিরিয়াসলি নেওয়া যাচ্ছে না।  - কেন? কেন বলুন তো ইন্সপেক্টর? - ভোররাতে এই থানা থেকে একশো ফুট দূরত্বে ফুটপাথে আপনাকে উপুড় হয়ে শুয়ে থাকতে দেখা যায়।  - আপনার কনস্টেবল নিজের চোখে দেখেছে তো।  - না না, সে'টাকে আমি কোশ্চেন করছি না। আমি শুধু সামারাইজ করছি। আপনার গায়ে দামী চিকনের পাঞ্জাবী, ঘড়িটার ডায়ালও সোনার হলে অবাক হব না। এ'রকম কাউকে বড় একটা ফুটপাথে পড়ে থাকতে দেখা যায় না। যা হোক। হরিমোহন কনস্টেবলের কাঁধে ভর দিয়ে আপনি থানায় এলেন। জলটল খেয়ে সামান্য সুস্থ বোধ করলেন। অল ইজ ওয়েল। নিঃশ্বাসে অ্যালকোহলের সামান্যতম ট্রেসও নেই। শরীরে নেই কোনও চোট আঘাত।  - আমার কথা আমায় বলে কী লাভ হচ্ছে? আমি যে জরুরী ব্যাপারটা জানাতে মাঝরাতে ছুটে এসেছিলাম...সেই ব্যাপারটা দেখুন...। ব্যাপারটা আর্জেন্ট ইন্সপেক্টর মিশ্র।  - আর্জেন্সিতে পরে আসছি। রাত সাড়ে তিনটে নাগাদ আপনি থানায় ছুটে এসেছিলেন। ওয়েল অ্যান্ড গুড। কিন্তু...ফুটপাথে পড়ে রইলেন কেন...।  - এ'টাই, এ'টাই আমি ঠিক নিশ্চিত নই। মাথাটাথা ঘুরে গেছিল হয়ত। আফটার অল বা

পকেটমার রবীন্দ্রনাথ

১ । চাপা উত্তেজনায় রবীন্দ্রনাথের ভিতরটা এক্কেবারে ছটফট করছিল । তার হাতে ঝোলানো কালো পলিথিনের প্যাকেটে যে ' টা আছে , সে ' টা ভেবেই নোলা ছুকছাক আর বুক ধড়ফড় । এমনিতে আলুথালু গতিতে সে হেঁটে অভ্যস্ত । তাড়াহুড়ো তার ধাতে সয় না মোটে । কিন্তু আজ ব্যাপারটা আলাদা । সে মাংস নিয়ে ফিরছে । হোক না মোটে আড়াই ' শ গ্রাম , তবু , কচি পাঁঠা বলে কথা । সহৃদয় আলম মিয়াঁ উপরি এক টুকরো মেটেও দিয়ে দিয়েছে । তোফা ! নিজের লম্বা দাড়ি দুলিয়ে ডবল গতিতে পা চালিয়ে সে এগোচ্ছিল ।   গলির মোড়ের দিকে এসে পৌঁছতে রবীন্দ্রনাথের কেমন যেন একটু সন্দেহ হল । ঠিক যেন কেউ পিছু নিয়েছে । দু ' একবার ঘাড় ঘুরিয়েও অবশ্য কাউকে দেখা গেলনা । ভাবনা ঝেড়ে ফেলে মাংসের পাকেটটায় মন ফিরিয়ে আনলেন রবীন্দ্রনাথ । বৌ নিশ্চয়ই খুব খুশি হবে আজ । খোকাটাকে যে কদ্দিন মাংসের ঝোল খাওয়ানো হয়নি ।   খাসির রান্নার গন্ধ ভেবে বড় গান পাচ্ছিল রবীন্দ্রনাথের । সে বাধ্য হয়েই একটা কুমার শানুর গাওয়া আশিকি সিনেমার গান ধরলে ।

চ্যাটার্জীবাবুর শেষ ইচ্ছে

- মিস্টার চ্যাটার্জী...। - কে? - আমার নাম বিনোদ। - আমি তো আপনাকে ঠিক...। - আমায় বস পাঠিয়েছেন। - ওহ, মিস্টার চৌধুরী আপনাকে...। - বসের নামটাম নেওয়ার তো কোনও দরকার নেই। কাজ নিয়ে এসেছি। কাজ করে চলে যাব। - আসুন, ভিতরে আসুন। - আমি ভিতরে গিয়ে কী করব বলুন। সৌজন্যের তো আর তেমন প্রয়োজন নেই। আপনি চলুন আমার সঙ্গে। চটপট কাজ মিটে গেলে পৌনে এগারোটার লোকালটা পেয়ে যাব। আমায় আবার সেই সোনারপুর ফিরতে হবে। - যা করার তা কি এ'খানেই সেরে ফেলা যায়না? - এমন কনজেস্টেড এলাকায় ও'সব কাজ করা চলেনা। চুপচাপ ব্যাপারটা সেরে ফেলতে হবে। - প্লীজ দু'মিনিটের জন্য ভিতরে আসুন বিনোদবাবু। জামাটা অন্তত পালটে নিই। - কী দরকার বলুন জামা পালটে। - দরকার তেমন নেই। তবু। ওই, লাস্ট উইশ ধরে নিন। - ক্যুইক প্লীজ। ট্রেন ধরার তাড়াটা ভুলে যাবেন না। আর ইয়ে, পিছন দিক দিয়ে পালাতে চেষ্টা করে লাভ নেই। বসের লোকজন চারপাশে ছড়িয়ে আছে। - ও মা, ছি ছি। তা নয়। আসলে মিতুলের দেওয়া একটা জামা এখনও ভাঙা হয়নি। বাটিক প্রিন্টের হাফশার্ট। একটু ব্রাইট কালার কিন্তু বেশ একটা ইয়ে আছে। ও চলে যাওয়ার পর ও জামার ভাজ ভাঙতে ইচ্ছে হয়নি। কিন্তু...আজ না হয়...। - মিতু