Skip to main content

কাগুজে বাগ



- আসুন ডক্টর চ্যাটার্জি। বসুন। আপনার অপেক্ষাতেই..।

- ইয়ে, আপনার অনুচরটিকে সেই স্পেশ্যাল কফিটা আনতে বলে দিন প্লীজ৷ 

- আমার সঙ্গে দেখা করা চেয়েও দেখছি আপনার আগ্রহ কফিতে বেশি৷ 

- মাফ করবেন মিস্টার সেন, ক্যাবিনেট মিনিস্টার হিসেবে আপনাকে যে যথেষ্ট রেস্পেক্ট করিনা, সে বদনামটাটুকু অন্তত আমার প্রাপ্য নয়৷ তাছাড়া, মানুষ হিসেবেও তো আপনাকে কম ইয়ে করিনা৷ তবে আপনার অফিসের কফিটা..জাস্ট ইনক্রেডিবল। 

- কৃতিত্বটা আমার আর্দালি মনোহরেরই প্রাপ্য৷ ছোকরার হাতে জাদু আছে। তবে আজ শুধু কফি খেয়ে সরে পড়বেন না যে৷ লাঞ্চটাও এখানেই বলে রেখেছি৷ পাবদা আর পমফ্রেট যে আপনার ফেভারিট, সে খবর কিন্তু আমি রাখি৷  

- আমার পরম সৌভাগ্য বলতে হবে৷ 

- তা, প্রজক্টের ব্যাপারটা...?

- সে'টার জন্যেই তো আপনার সেক্রেটারির কাছে জরুরী অ্যাপয়েন্টমেন্টটা চাইতে হল মিস্টার মিনিস্টার৷  ইট ইজ রেডি।

- রেডি?

- একদম৷ বিদেশী টেকনোলজি ধার করতে গিয়ে বিস্তর খরচ হয়েছে বটে, তবে মিশন হান্ড্রেড পার্সেন্ট সাকসেসফুল। বিটা টেস্টিং পেরিয়ে ফাইনাল রোল আউটের জন্য আমরা রেডি৷  এবার আপনি প্রাইম মিনিস্টারের পারমিশন আদায় করতে পারলেই...।

- উনি তো এই ব্রেক-থ্রুর জন্যে মুখিয়ে রয়েছেন ডক্টর৷ 

- তা'হলে তো মিটেই গেলো৷ এ'বারে পঞ্জিকাটঞ্জিকা কনসাল্ট করে একটা ভালো দিন দেখে

- ডক্টর চ্যটার্জি, ইফ দিস ওয়ার্ক্স আউট..আর একদিনও।অপেক্ষা নয়।

- দিস বাগ উইল সার্টেনলি ওয়র্ক৷ 

- বাগ?

- ইট ইজ আ বাগ আফটার অল৷ আড়ি পাতার সফটওয়্যার বইতো নয়৷ কিন্তু আমাদের এই বাগের শক্তি অপরিসীম। অন্যান্য স্নুপিং সফটওয়্যারের মত হাতেগোনা কয়েকজন মানুষের হাঁড়ির খবর শুধু নয়, গভর্নমেন্টের মুঠোর মধ্যে থাকবে এখন দেশের প্রতিটি মানুষের হাঁড়ি খবর৷ থুড়ি,  হাঁড়ির খবর নয়, পেটের খবর।

- গোটা ব্যাপারটাই সিক্রেট থাকবে তো ডক্টর?

- অফ কোর্স৷ নয়ত আমার মাথা ন্যাড়া করে, গাধার পিঠে চাপিয়ে দেশ থেকে খেদিয়ে দেওয়া হোক। শুনুন, দেশের প্রতিটা মোবাইল সিমকার্ডই এখন এক এক একটা ডেটা ট্রান্সমিটার, তা সে ফোন স্মার্ট হোক বা আনস্মার্ট৷ আমাদের গোপন সার্ভারে সমস্তটাই রেকর্ড করা থাকবে৷ 

- বাহ্ বাহ্ ডক্টর চ্যাটার্জি৷ তোমার করব কোতল? বাইশটা নোবেল পাওয়া উচিৎ অথচ এই ছাই সিক্রেসির জন্য তোমার এই ব্রিলিয়ান্ট প্রজেক্টের কথা কেউ কোনওদিন জানবেও না৷ 

- ইট ইজ ওয়ার্থ ইট মিস্টার মিনিস্টার৷ তবে এমন অদ্ভুত আব্দার কোনও পলিটিশিয়ান যে করতে পারে...।

- অদ্ভুত?

- একসময় শুনতাম গভর্নমেন্টরা আড়ি পাতে, মানুষের প্রাইভেসির খেলাপ করে৷ তবে এই প্রথম শুনলাম কোনও সরকার মানুষের ব্যক্তিগত কথাবার্তা শুনতে চাইছে না, বরং মানুষের খিদে পেয়েছি কিনা সে খবর গোপনে আদায় করতে চাইছে৷ 

- গোপনে অন্যের কথা শোনা? সে সব পলিটিকাল ডার্কএজে হত হে ডক্টর৷ সময় পাল্টেছে। স্নুপিং বাগ এখন আমাদের দরকার শুধু মানুষের খিদের খবর পাওয়ার জন্য৷ একটা গোটা ডিপার্টমেন্ট খোলা হয়েছে ডক্টর, আন্ডার ডাইরেক্ট সুপারভিশন অফ দ্য পি এম৷ সেটাও টপ সিক্রেট৷ তোমার এই বাগ সাকসেসফুলি ছড়িয়ে দিতে পারলে সে ডিপার্টমেন্ট কাজে নামবে৷ মানুষের খিদের কষ্ট রেজিস্টার হলেই আমাদের গ্রাউন্ড লেভেল টীম সে মানুষের দোরে পৌঁছে যাবে গরম ডালভাত বা রুটি তরকারি হাতে৷ শিশুরা খিদেয় একটানা কষ্ট পেলে পৌঁছে যাবে দুধ৷ কিন্তু কাউকে ভিক্ষে করতে হবে না,  কারুর কাছে হাত পাততে হবে না৷ আর মূলত মানুষের আত্মসম্মানবোধের কথা ভেবেই গোটা ব্যাপারটাকে নিয়ে এত রাখঢাক আর গোপনীয়তা।  অন্তত মানুষের খিদেটুকু যদি পাবলিক স্পেক্টাকেল না করে; গোপনে, ঢাকঢোল না পিটিয়ে;  আমরা মিটিয়ে দিতে না পারি ডক্টর চ্যাটার্জি...তা'হলে আমরা সরকারে রয়েছি কি করতে?

- কফিটা কিন্তু এখনও এলো না মন্ত্রীমশাই৷ হেহ হেহ হেহ।

**
ছবিটার সঙ্গে এ গল্পের যোগাযোগ আছে এবং নেই।

Comments

Popular posts from this blog

গোয়েন্দা গল্প

- কিছু মনে করবেন না মিস্টার দত্ত...আপনার কথাবার্তাগুলো আর কিছুতেই সিরিয়াসলি নেওয়া যাচ্ছে না।  - কেন? কেন বলুন তো ইন্সপেক্টর? - ভোররাতে এই থানা থেকে একশো ফুট দূরত্বে ফুটপাথে আপনাকে উপুড় হয়ে শুয়ে থাকতে দেখা যায়।  - আপনার কনস্টেবল নিজের চোখে দেখেছে তো।  - না না, সে'টাকে আমি কোশ্চেন করছি না। আমি শুধু সামারাইজ করছি। আপনার গায়ে দামী চিকনের পাঞ্জাবী, ঘড়িটার ডায়ালও সোনার হলে অবাক হব না। এ'রকম কাউকে বড় একটা ফুটপাথে পড়ে থাকতে দেখা যায় না। যা হোক। হরিমোহন কনস্টেবলের কাঁধে ভর দিয়ে আপনি থানায় এলেন। জলটল খেয়ে সামান্য সুস্থ বোধ করলেন। অল ইজ ওয়েল। নিঃশ্বাসে অ্যালকোহলের সামান্যতম ট্রেসও নেই। শরীরে নেই কোনও চোট আঘাত।  - আমার কথা আমায় বলে কী লাভ হচ্ছে? আমি যে জরুরী ব্যাপারটা জানাতে মাঝরাতে ছুটে এসেছিলাম...সেই ব্যাপারটা দেখুন...। ব্যাপারটা আর্জেন্ট ইন্সপেক্টর মিশ্র।  - আর্জেন্সিতে পরে আসছি। রাত সাড়ে তিনটে নাগাদ আপনি থানায় ছুটে এসেছিলেন। ওয়েল অ্যান্ড গুড। কিন্তু...ফুটপাথে পড়ে রইলেন কেন...।  - এ'টাই, এ'টাই আমি ঠিক নিশ্চিত নই। মাথাটাথা ঘুরে গেছিল হয়ত। আফটার অল বা

পকেটমার রবীন্দ্রনাথ

১ । চাপা উত্তেজনায় রবীন্দ্রনাথের ভিতরটা এক্কেবারে ছটফট করছিল । তার হাতে ঝোলানো কালো পলিথিনের প্যাকেটে যে ' টা আছে , সে ' টা ভেবেই নোলা ছুকছাক আর বুক ধড়ফড় । এমনিতে আলুথালু গতিতে সে হেঁটে অভ্যস্ত । তাড়াহুড়ো তার ধাতে সয় না মোটে । কিন্তু আজ ব্যাপারটা আলাদা । সে মাংস নিয়ে ফিরছে । হোক না মোটে আড়াই ' শ গ্রাম , তবু , কচি পাঁঠা বলে কথা । সহৃদয় আলম মিয়াঁ উপরি এক টুকরো মেটেও দিয়ে দিয়েছে । তোফা ! নিজের লম্বা দাড়ি দুলিয়ে ডবল গতিতে পা চালিয়ে সে এগোচ্ছিল ।   গলির মোড়ের দিকে এসে পৌঁছতে রবীন্দ্রনাথের কেমন যেন একটু সন্দেহ হল । ঠিক যেন কেউ পিছু নিয়েছে । দু ' একবার ঘাড় ঘুরিয়েও অবশ্য কাউকে দেখা গেলনা । ভাবনা ঝেড়ে ফেলে মাংসের পাকেটটায় মন ফিরিয়ে আনলেন রবীন্দ্রনাথ । বৌ নিশ্চয়ই খুব খুশি হবে আজ । খোকাটাকে যে কদ্দিন মাংসের ঝোল খাওয়ানো হয়নি ।   খাসির রান্নার গন্ধ ভেবে বড় গান পাচ্ছিল রবীন্দ্রনাথের । সে বাধ্য হয়েই একটা কুমার শানুর গাওয়া আশিকি সিনেমার গান ধরলে ।

চ্যাটার্জীবাবুর শেষ ইচ্ছে

- মিস্টার চ্যাটার্জী...। - কে? - আমার নাম বিনোদ। - আমি তো আপনাকে ঠিক...। - আমায় বস পাঠিয়েছেন। - ওহ, মিস্টার চৌধুরী আপনাকে...। - বসের নামটাম নেওয়ার তো কোনও দরকার নেই। কাজ নিয়ে এসেছি। কাজ করে চলে যাব। - আসুন, ভিতরে আসুন। - আমি ভিতরে গিয়ে কী করব বলুন। সৌজন্যের তো আর তেমন প্রয়োজন নেই। আপনি চলুন আমার সঙ্গে। চটপট কাজ মিটে গেলে পৌনে এগারোটার লোকালটা পেয়ে যাব। আমায় আবার সেই সোনারপুর ফিরতে হবে। - যা করার তা কি এ'খানেই সেরে ফেলা যায়না? - এমন কনজেস্টেড এলাকায় ও'সব কাজ করা চলেনা। চুপচাপ ব্যাপারটা সেরে ফেলতে হবে। - প্লীজ দু'মিনিটের জন্য ভিতরে আসুন বিনোদবাবু। জামাটা অন্তত পালটে নিই। - কী দরকার বলুন জামা পালটে। - দরকার তেমন নেই। তবু। ওই, লাস্ট উইশ ধরে নিন। - ক্যুইক প্লীজ। ট্রেন ধরার তাড়াটা ভুলে যাবেন না। আর ইয়ে, পিছন দিক দিয়ে পালাতে চেষ্টা করে লাভ নেই। বসের লোকজন চারপাশে ছড়িয়ে আছে। - ও মা, ছি ছি। তা নয়। আসলে মিতুলের দেওয়া একটা জামা এখনও ভাঙা হয়নি। বাটিক প্রিন্টের হাফশার্ট। একটু ব্রাইট কালার কিন্তু বেশ একটা ইয়ে আছে। ও চলে যাওয়ার পর ও জামার ভাজ ভাঙতে ইচ্ছে হয়নি। কিন্তু...আজ না হয়...। - মিতু