Skip to main content

ওয়ার্ক লাইফ ব্যালেন্স



- এই যে, সামন্ত। আগামীকাল অফিসে এসো কিন্তু। 

- কাল?

- কাল।

- কিন্তু কাল তো শনিবার।

- তা'তে কী?

- না মানে স্যার...উইকেন্ডে..।

- আহ, যুদ্ধে যেতে তো বলছি না। অফিসে এসো। 

- এমার্জেন্সি কিছু কি?

- একটা ট্রেনিং আছে। ডেভেলপমেন্টাল। 

- কীসের ওপর?

- ওয়ার্ক লাইফ ব্যালেন্স। হাইক্লাস একজন লাইফ কোচ আসছেন। টেড স্পীকার। গত মাসে মুম্বই টীমকে ঘ্যাম লেভেলে ইন্সপ্যায়ার করে গেছেন। কাজেই কাল তোমায় আসতেই হবে। টীমের সবাই আসছে। আর হ্যাঁ, কাল একটু সকাল সকাল এসো। 

- শনিবার। তাড়াতাড়ি অফিস আসব ওয়ার্ক লাইফ ব্যালেন্সের ট্রেনিং করতে?

- উইকডেজ শুড বি অল আবাউট ওয়ার্ক ওয়ার্ক অ্যান্ড ওয়ার্ক। কালকের ব্যাপারটা তো একটা ফান এক্সারসাইজ। 

- ফান?

- রীতিমতো।  আই প্রমিস। 

- বেশ। তা'হলে আজ বেরোই এখন স্যার। 

- ও মা, এখনও তো সাড়ে সাতটাও বাজেনি। এই ভেতো বাঙালিদের এই একটা সমস্যা। অফিসে আসা মাত্রই বাড়ি যাব বাড়ি যাব বায়না। হেডঅফিস একটা জুম মিটিং রেখেছে সাড়ে আটটায়। সে'খানে তোমার থাকাটা মাস্ট। 

- ওহ। 

- দ্যাখ সামন্ত। নিজের মধ্যে একটু কিলার ইন্সটিঙ্কট তৈরি করো।  সব সময় অমন ন্যাতা হয়ে থাকলে কর্পোরেটে চলে না। এনার্জি চাই। ডাইনামিজম চাই। চাই ফায়্যার ইন দ্য বেলি। 

- একটা রিকুয়েস্ট ছিল স্যার। 

- এনিথিং। শুধু ছুটি চেয়ো না ভাই। 

- না, তা নয়। আসলে সামনের রোব্বারটা একটু ফাঁকা পড়ে যাচ্ছে। খুব ভয় হচ্ছে বাড়িতে বসে একটু রিল্যাক্স না করে ফেলি। 

- হোয়াট?

- বলা তো যায় না স্যার, দিনকাল যা পড়েছে। রোব্বারের অলস মন, একটা সর্বনাশ না ঘটিয়ে ফেলি। দুম করে হয়ত আপনার সামনে প্রেজেন্টেশন দেওয়ার বদলে বৌয়ের সঙ্গে কথা বলে ফেলব।

- সামন্ত! হোয়াট ইজ দিস।

- মাইরি স্যার। খুবই নার্ভাস হয়ে আছি৷ ছুটির দিন বাড়িতে থাকলে যদি কোনও ক্যালামিটি ঘটে যায়? যদি অফিস ফাইলের বদলে টিনটিন পড়ে ফেলি? যদি মিটিং ভুলে হপ্তায় একদিন আড্ডা দিতে বসে যাই? যদি এক্সেলশিট সরিয়ে রেখে খোকার সঙ্গে আধঘণ্টা ক্যারম খেলে ফেলি? না না। রিস্ক নিয়ে লাভ নেই স্যার। আমার রোব্বারে বাড়িতে ফেলে রাখবেন না প্লীজ। অফিসে ডেকে নিন। প্লীজ। প্লীজ।

- ওয়ার্থলেস! তোমাদের সঙ্গে কোনও রকমের এনরিচিং ইনসাইট শেয়ার করতে যাওয়াটাই ভুল। ব্লাডি ক্লারিকাল মাইন্ডসেট।

Comments

Popular posts from this blog

গোয়েন্দা গল্প

- কিছু মনে করবেন না মিস্টার দত্ত...আপনার কথাবার্তাগুলো আর কিছুতেই সিরিয়াসলি নেওয়া যাচ্ছে না।  - কেন? কেন বলুন তো ইন্সপেক্টর? - ভোররাতে এই থানা থেকে একশো ফুট দূরত্বে ফুটপাথে আপনাকে উপুড় হয়ে শুয়ে থাকতে দেখা যায়।  - আপনার কনস্টেবল নিজের চোখে দেখেছে তো।  - না না, সে'টাকে আমি কোশ্চেন করছি না। আমি শুধু সামারাইজ করছি। আপনার গায়ে দামী চিকনের পাঞ্জাবী, ঘড়িটার ডায়ালও সোনার হলে অবাক হব না। এ'রকম কাউকে বড় একটা ফুটপাথে পড়ে থাকতে দেখা যায় না। যা হোক। হরিমোহন কনস্টেবলের কাঁধে ভর দিয়ে আপনি থানায় এলেন। জলটল খেয়ে সামান্য সুস্থ বোধ করলেন। অল ইজ ওয়েল। নিঃশ্বাসে অ্যালকোহলের সামান্যতম ট্রেসও নেই। শরীরে নেই কোনও চোট আঘাত।  - আমার কথা আমায় বলে কী লাভ হচ্ছে? আমি যে জরুরী ব্যাপারটা জানাতে মাঝরাতে ছুটে এসেছিলাম...সেই ব্যাপারটা দেখুন...। ব্যাপারটা আর্জেন্ট ইন্সপেক্টর মিশ্র।  - আর্জেন্সিতে পরে আসছি। রাত সাড়ে তিনটে নাগাদ আপনি থানায় ছুটে এসেছিলেন। ওয়েল অ্যান্ড গুড। কিন্তু...ফুটপাথে পড়ে রইলেন কেন...।  - এ'টাই, এ'টাই আমি ঠিক নিশ্চিত নই। মাথাটাথা ঘুরে গেছিল হয়ত। আফটার অল বা

পকেটমার রবীন্দ্রনাথ

১ । চাপা উত্তেজনায় রবীন্দ্রনাথের ভিতরটা এক্কেবারে ছটফট করছিল । তার হাতে ঝোলানো কালো পলিথিনের প্যাকেটে যে ' টা আছে , সে ' টা ভেবেই নোলা ছুকছাক আর বুক ধড়ফড় । এমনিতে আলুথালু গতিতে সে হেঁটে অভ্যস্ত । তাড়াহুড়ো তার ধাতে সয় না মোটে । কিন্তু আজ ব্যাপারটা আলাদা । সে মাংস নিয়ে ফিরছে । হোক না মোটে আড়াই ' শ গ্রাম , তবু , কচি পাঁঠা বলে কথা । সহৃদয় আলম মিয়াঁ উপরি এক টুকরো মেটেও দিয়ে দিয়েছে । তোফা ! নিজের লম্বা দাড়ি দুলিয়ে ডবল গতিতে পা চালিয়ে সে এগোচ্ছিল ।   গলির মোড়ের দিকে এসে পৌঁছতে রবীন্দ্রনাথের কেমন যেন একটু সন্দেহ হল । ঠিক যেন কেউ পিছু নিয়েছে । দু ' একবার ঘাড় ঘুরিয়েও অবশ্য কাউকে দেখা গেলনা । ভাবনা ঝেড়ে ফেলে মাংসের পাকেটটায় মন ফিরিয়ে আনলেন রবীন্দ্রনাথ । বৌ নিশ্চয়ই খুব খুশি হবে আজ । খোকাটাকে যে কদ্দিন মাংসের ঝোল খাওয়ানো হয়নি ।   খাসির রান্নার গন্ধ ভেবে বড় গান পাচ্ছিল রবীন্দ্রনাথের । সে বাধ্য হয়েই একটা কুমার শানুর গাওয়া আশিকি সিনেমার গান ধরলে ।

চ্যাটার্জীবাবুর শেষ ইচ্ছে

- মিস্টার চ্যাটার্জী...। - কে? - আমার নাম বিনোদ। - আমি তো আপনাকে ঠিক...। - আমায় বস পাঠিয়েছেন। - ওহ, মিস্টার চৌধুরী আপনাকে...। - বসের নামটাম নেওয়ার তো কোনও দরকার নেই। কাজ নিয়ে এসেছি। কাজ করে চলে যাব। - আসুন, ভিতরে আসুন। - আমি ভিতরে গিয়ে কী করব বলুন। সৌজন্যের তো আর তেমন প্রয়োজন নেই। আপনি চলুন আমার সঙ্গে। চটপট কাজ মিটে গেলে পৌনে এগারোটার লোকালটা পেয়ে যাব। আমায় আবার সেই সোনারপুর ফিরতে হবে। - যা করার তা কি এ'খানেই সেরে ফেলা যায়না? - এমন কনজেস্টেড এলাকায় ও'সব কাজ করা চলেনা। চুপচাপ ব্যাপারটা সেরে ফেলতে হবে। - প্লীজ দু'মিনিটের জন্য ভিতরে আসুন বিনোদবাবু। জামাটা অন্তত পালটে নিই। - কী দরকার বলুন জামা পালটে। - দরকার তেমন নেই। তবু। ওই, লাস্ট উইশ ধরে নিন। - ক্যুইক প্লীজ। ট্রেন ধরার তাড়াটা ভুলে যাবেন না। আর ইয়ে, পিছন দিক দিয়ে পালাতে চেষ্টা করে লাভ নেই। বসের লোকজন চারপাশে ছড়িয়ে আছে। - ও মা, ছি ছি। তা নয়। আসলে মিতুলের দেওয়া একটা জামা এখনও ভাঙা হয়নি। বাটিক প্রিন্টের হাফশার্ট। একটু ব্রাইট কালার কিন্তু বেশ একটা ইয়ে আছে। ও চলে যাওয়ার পর ও জামার ভাজ ভাঙতে ইচ্ছে হয়নি। কিন্তু...আজ না হয়...। - মিতু