Skip to main content

ক্যাপ্টেন ও খোকা

- খোকা।
- উম।
- তোমার জন্য কী এনেছি দেখো।
- উম।
- দেখবে না?
- না।
- এ'দিকে দেখই না একবার।
- কই। কী এনেছ?
- গুড বয়। এই দেখ। ইয়াব্বড় লাল এরোপ্লেন। এ'টা এই রিমোট দিয়ে ওড়ানো যায়।
- উম।
- তুমি নেবে না?
- মা বারণ করে। কারুর থেকে কিছু নিতে।
- আমি কিন্তু তোমার মাকে বলে এসেছি।
- থ্যাঙ্ক ইউ।
- তোমার ভালো লেগেছে?
- হুঁ।
- এ'টা তোমার টেডি খোকা?
- ও টেডি নয়। ওর নাম গুবলু। আর ওর পাশে...।
- ওই মিকি মাউস?
- ও মিকি নয়। ওর নাম অভ্র। আমার দেওয়া নাম।
- বাহ। দারুণ নাম তো।
- তোমার নাম কী?
- আমি? আমি ক্যাপ্টেন রয়।
- তুমিই...।
- হুঁ। তোমায় কে বলেছে?
- মা। মা আমায় সব বলে।
- তোমার মা খুব ভালো।
- মা আমায় আইস্ক্রিম খেতে দেয়না।
- ওহ। তোমার আইসক্রিম খুব ভালো লাগে?
- বাটার স্কচ। বাবা আমায় খেতে দিত।
- খোকা।
- আমার বাবা খারাপ লোক ছিল?
- না খোকা।
- তুমি খারাপ লোক?
- সরি।
- সবাই বাবাকে খারাপ বলে।
- মা কী বলে?
- মা বলে বাবারা ভালো হয়।
- তোমার বাবা খুউব ভালো ছিলেন।
- বাবা আইসক্রিম খেতে দিত। বইতে মলাট দিত। আমায় সিন্ড্রেলার গল্প বলত।
- বাবা গল্প বলত?
- সিন্ড্রেলা, পিনোকিও, মহাভারত, টিপু সুলতান...।
- বাহ।
- মা ভালো গল্প বলে না। মা গান করে। বাবা বাজে গাইত।
- ওহ।
- আমার গল্প বেশি ভালো লাগে। বাবা...।
- সরি খোকা।
- তুমি কেন মারলে বাবাকে?
- আমাদের যুদ্ধ হচ্ছিল। আমি মারা যেতে পারতাম। আমার একটা মেয়ে আছে খোকা। তার নাম টুসি।
- টুসিকে আইসক্রিম খেতে দাও?
- স্ট্রবেরি।
- গল্প?
- হুঁ। তবে তোমার বাবার মত অত গল্প জানি না।
- বাবা মিশরের গল্প জানত। ফ্যারাও, পিরামিড।
- খোকা।
- ক্যাপ্টেন কাকু...।
- হুঁ?
- কেন মারামারি করছিলে?
- বড়রা করে। বড়দের করতে হয়।
- আমার বাবা বড় না হলে কী ভালো হত। ভোর বেলা বাবার সাথে আমি আর লুসি বাগানে যেতাম।
- লুসি কে?
- পাগ। তুমি লুসিকে সরি বলবে?
- খোকা। সরি। লুসিকেও বলব। কেমন?
- আমার খুব। খুব। কষ্ট হয়।
- সরি। খোকা।
- বাবা যুদ্ধে কেন যে গেল।
- যেতে হয়। তোমার বাবা গেছিলেন। আমায় যেতে হয়
- কাকু। আমার প্লেন চাই না।
- আচ্ছা। বেশ। তুমি আমার ওপর খুউব রেগে?
- খুউব।
- সরি।
- বাবা খারাপ ছিল না কাকু। গড প্রমিস। বাবা ঘুড়ি ওড়াতে পারত।
- খোকা। তুমি যখন বড় হবে, তখন মনে রাখবে যে আমি তোমায় সরি বলেছি?
- আমি বড় হলেও টুসিকে মারব না।
- বড় হোস খোকা। কেমন? আজ আসি।

***

- ক্যাপ্টেন! ক্যাপ্টেন ব্যানার্জি! ইয়েস! তুমি পেরেছ! ওদের জেনারেল তোমার বুলেটেই খতম হয়েছে। যুদ্ধ ঘুরে গেছে।
- হুঁ!
- আমরাই জিতছি ক্যাপ্টেন!
- হুঁ!
- ক্যাপ্টেন তুমি দৈত্যবধ করেছ। কে জানে কত নারকীয় হত্যাকাণ্ড ওই জেনারেল নিজে দাঁড়িয়ে থেকে ঘটিয়েছে। কত অসহায় মানুষকে জবাই করেছে ও।
- হুঁ।
- তুমি এত বিমর্ষ কেন ক্যাপ্টেন? গোটা দেশ উৎসবে ভেসে যেতে বসেছে। আর যার মধ্যমণি হয়ে থাকার কথা, এ উল্লাস যার নামে, সে কিনা এই অন্ধকার ঘরে ঘাপটি মেরে বসে?
- শত্রুপক্ষের খুনে জেনারেলকে মারতেই হত। নয়তো আমরা ভেসে যেতাম হয়ত। কিন্তু...।
- কিন্তু কী?
- মৃত্যু তো মৃত্যুই। তাই না স্যর? মারকুটে শত্রুকে মেরে ফেলে স্বস্তিতে জিরোনো যায়, কিন্তু উল্লাস? ঘরে বসে টেবিল চাপড়ে যারা যুদ্ধের সুবাস পেতে চায় তারা আনন্দ করুক, উৎসবে হুল্লোড়ে ডুবে যাক। কিন্তু আই অ্যাম আ সোলজার স্যর। মরণভয়ে পালটা মারতে হয়, মারি। দেশের জন্য। দশের জন্য। কিন্তু মৃত্যু নিয়ে উৎসব?  সংবর্ধনা? মৃত মেজরের ওয়ালেট আমার কাছে। তাতে যে খোকাটির ছবি তার বয়স আমার মেয়ের মতই। সে দেশে গিয়ে খোকার সাথে একবার দেখা করা যায় স্যর? সেই খোকা! সেই খোকার আজ বড় কষ্ট। সে কিনা এখনও বড় হয়নি,কাজেই  সে এখনও আমাদের শত্রু নয়। যায় না? দেখা করা?

Comments

DEEP said…
সে এখনো শত্রূ নয়। তার মতন অসংখ্য খোকারা এখনো শত্রূ নয়। আমাদের এখানকার খোকারাও এখনো খোকাই আছে, তারাও ওখানকার খোকাদের শত্রূ নয়। এখনো নয়। যায় না? যায় না এদের কে এরকম ভাবেই রেখে দেওয়া?

Popular posts from this blog

গোয়েন্দা গল্প

- কিছু মনে করবেন না মিস্টার দত্ত...আপনার কথাবার্তাগুলো আর কিছুতেই সিরিয়াসলি নেওয়া যাচ্ছে না।  - কেন? কেন বলুন তো ইন্সপেক্টর? - ভোররাতে এই থানা থেকে একশো ফুট দূরত্বে ফুটপাথে আপনাকে উপুড় হয়ে শুয়ে থাকতে দেখা যায়।  - আপনার কনস্টেবল নিজের চোখে দেখেছে তো।  - না না, সে'টাকে আমি কোশ্চেন করছি না। আমি শুধু সামারাইজ করছি। আপনার গায়ে দামী চিকনের পাঞ্জাবী, ঘড়িটার ডায়ালও সোনার হলে অবাক হব না। এ'রকম কাউকে বড় একটা ফুটপাথে পড়ে থাকতে দেখা যায় না। যা হোক। হরিমোহন কনস্টেবলের কাঁধে ভর দিয়ে আপনি থানায় এলেন। জলটল খেয়ে সামান্য সুস্থ বোধ করলেন। অল ইজ ওয়েল। নিঃশ্বাসে অ্যালকোহলের সামান্যতম ট্রেসও নেই। শরীরে নেই কোনও চোট আঘাত।  - আমার কথা আমায় বলে কী লাভ হচ্ছে? আমি যে জরুরী ব্যাপারটা জানাতে মাঝরাতে ছুটে এসেছিলাম...সেই ব্যাপারটা দেখুন...। ব্যাপারটা আর্জেন্ট ইন্সপেক্টর মিশ্র।  - আর্জেন্সিতে পরে আসছি। রাত সাড়ে তিনটে নাগাদ আপনি থানায় ছুটে এসেছিলেন। ওয়েল অ্যান্ড গুড। কিন্তু...ফুটপাথে পড়ে রইলেন কেন...।  - এ'টাই, এ'টাই আমি ঠিক নিশ্চিত নই। মাথাটাথা ঘুরে গেছিল হয়ত। আফটার অল বা

পকেটমার রবীন্দ্রনাথ

১ । চাপা উত্তেজনায় রবীন্দ্রনাথের ভিতরটা এক্কেবারে ছটফট করছিল । তার হাতে ঝোলানো কালো পলিথিনের প্যাকেটে যে ' টা আছে , সে ' টা ভেবেই নোলা ছুকছাক আর বুক ধড়ফড় । এমনিতে আলুথালু গতিতে সে হেঁটে অভ্যস্ত । তাড়াহুড়ো তার ধাতে সয় না মোটে । কিন্তু আজ ব্যাপারটা আলাদা । সে মাংস নিয়ে ফিরছে । হোক না মোটে আড়াই ' শ গ্রাম , তবু , কচি পাঁঠা বলে কথা । সহৃদয় আলম মিয়াঁ উপরি এক টুকরো মেটেও দিয়ে দিয়েছে । তোফা ! নিজের লম্বা দাড়ি দুলিয়ে ডবল গতিতে পা চালিয়ে সে এগোচ্ছিল ।   গলির মোড়ের দিকে এসে পৌঁছতে রবীন্দ্রনাথের কেমন যেন একটু সন্দেহ হল । ঠিক যেন কেউ পিছু নিয়েছে । দু ' একবার ঘাড় ঘুরিয়েও অবশ্য কাউকে দেখা গেলনা । ভাবনা ঝেড়ে ফেলে মাংসের পাকেটটায় মন ফিরিয়ে আনলেন রবীন্দ্রনাথ । বৌ নিশ্চয়ই খুব খুশি হবে আজ । খোকাটাকে যে কদ্দিন মাংসের ঝোল খাওয়ানো হয়নি ।   খাসির রান্নার গন্ধ ভেবে বড় গান পাচ্ছিল রবীন্দ্রনাথের । সে বাধ্য হয়েই একটা কুমার শানুর গাওয়া আশিকি সিনেমার গান ধরলে ।

চ্যাটার্জীবাবুর শেষ ইচ্ছে

- মিস্টার চ্যাটার্জী...। - কে? - আমার নাম বিনোদ। - আমি তো আপনাকে ঠিক...। - আমায় বস পাঠিয়েছেন। - ওহ, মিস্টার চৌধুরী আপনাকে...। - বসের নামটাম নেওয়ার তো কোনও দরকার নেই। কাজ নিয়ে এসেছি। কাজ করে চলে যাব। - আসুন, ভিতরে আসুন। - আমি ভিতরে গিয়ে কী করব বলুন। সৌজন্যের তো আর তেমন প্রয়োজন নেই। আপনি চলুন আমার সঙ্গে। চটপট কাজ মিটে গেলে পৌনে এগারোটার লোকালটা পেয়ে যাব। আমায় আবার সেই সোনারপুর ফিরতে হবে। - যা করার তা কি এ'খানেই সেরে ফেলা যায়না? - এমন কনজেস্টেড এলাকায় ও'সব কাজ করা চলেনা। চুপচাপ ব্যাপারটা সেরে ফেলতে হবে। - প্লীজ দু'মিনিটের জন্য ভিতরে আসুন বিনোদবাবু। জামাটা অন্তত পালটে নিই। - কী দরকার বলুন জামা পালটে। - দরকার তেমন নেই। তবু। ওই, লাস্ট উইশ ধরে নিন। - ক্যুইক প্লীজ। ট্রেন ধরার তাড়াটা ভুলে যাবেন না। আর ইয়ে, পিছন দিক দিয়ে পালাতে চেষ্টা করে লাভ নেই। বসের লোকজন চারপাশে ছড়িয়ে আছে। - ও মা, ছি ছি। তা নয়। আসলে মিতুলের দেওয়া একটা জামা এখনও ভাঙা হয়নি। বাটিক প্রিন্টের হাফশার্ট। একটু ব্রাইট কালার কিন্তু বেশ একটা ইয়ে আছে। ও চলে যাওয়ার পর ও জামার ভাজ ভাঙতে ইচ্ছে হয়নি। কিন্তু...আজ না হয়...। - মিতু