"পেয়ার মুঝসে যো কিয়া তুমনে তো কেয়া পাওগি"র সুরে জানপ্রাণ লড়িয়ে মোড়া আলো করে বসেছিলেন মিয়াঁ তানসেন।
তার স্যান্ডো গেঞ্জিতে ট্যাংরা টেস্ট করা ঝোলের ছিটে। তার পায়জামা আল্ট্রা ঢলঢলে। তানসেনের কোলে আমতেল দিয়ে মাখা মুড়ির বাটি। তানসেনের গলায় দরদ;
"মেরি হালাত কি আঁধি মে বিখর যাওগিইইই...ইইই"।
"ইইইশ, ছ্যাহ্"!
মুড়ি বাটি চলকে ওঠে,
তানসেনের সুর কেঁপে যায় ব্যালকনি কাঁপানো হুঙ্কারে।
তানবাবুর গাইবার কথা ছিল;
"খোয়াব ক্যিউ দেখু উয়ো জিস্পে মে শরমিন্দা হুঁ,
ম্যায় যো শরমিন্দা হুঁ, তো অউর তুম ভি শরমাওগিইইই..ইইই"।
কিন্তু আউরাঙ্গজেবি ধমক অতি বিষম বস্তু। কথায় কথায় ধড় মুণ্ড আলাদা হয়ে যায়, কথায় কথায় বন্দী। কথা ও সুর মিয়াঁর গলার কাছটায় থেবড়ে বসে রইলে, উঁকিঝুঁকি দেওয়ার সাহস করলে না।
"এ'টা গান হচ্ছে?", আউরঙ্গজেব তেলে-বেগুনে-কেরোসিনে, "কর্পোরেশনে বলে কয়ে একটা গান গেয়ে কুকুর তাড়ানোর চাকরী জুটিয়ে নিলেই হয়"!
তানসেন অভিমানী। মুড়ি বিস্বাদ হয়ে এলো, সাউথ ফেসিং ব্যালকনিটাকে মন হলে অফিসটাইমের বজবজ লোকালের ভেন্ডর কম্পার্টমেন্ট। কিন্তু তানবাবু পান্নালালের শিফ্ট করার আগেই পা টিপে এগিয়ে এলেন তিনি। অ্যানাক্রনিসমের স্কেল ডিঙিয়ে মোড়ার পাশে ঘেষে এসে দাঁড়ালেন আউরাঙ্গজেব স্বয়ং।
নিখুঁত মখমলি সুরে ব্যালকনির মেজাজ জলসার জৌলুসে বাঁধলেন আউরাঙ্গজেব;
"কিউ মেরে সাথ কোই অউর পরেশান রহে
মেরি দুনিয়া হ্যায় তো জো ভিরান তো ভিরান রহে"।
সুরের ধর্মই ওই। এক চাঁই পাথররের মত পাহাড় চূড়া থেকে দিক মেপে গড়িয়ে দিলেই হল।
ট্যাংরার ঝোলে বড়ির বড়াইয়ের মত জেগে উঠলেন মিয়াঁ তানসেন;
"এক ম্যায় কেয়া অভি আয়েঙ্গে দিওয়ানে কিতনে
অভি গুঞ্জেঙ্গে মহব্বতকে তরানে কিতনে
জিন্দেগি তুমকো সুনায়েঙ্গে ফসানে কিতনে..."
আউরাঙ্গজেব তখন মোড়ার পাশে মেঝেতে পা ছড়িয়ে বসে। তাঁর লাল পেড়ে হলুদ শাড়ির সামনে হত্যে দিয়ে পড়ে মুড়িমাখার আধখালি বাটি।
আউরঙ্গজেবের পায়ের আলতার কাঁচা লালে ভূতের ভয়, জানেন মিয়াঁ তানসেন। গলার কাঁপুনিতে তুলির শেষ টান দেন তিনি;
" কিউ সমঝতি হো মুঝে ভুল নহি পাওগি?
পেয়ার মুঝসে যো কিয়া তুমনে তো কেয়া পাওগি?"।
Comments