Skip to main content

গোকুলবাবুর পুজো

পুজো এলেই গোকুলবাবুর নার্ভাসনেসটা অস্বাভাবিক ভাবে বেড়ে যায়। তিন দাগ ওষুধ বাড়িয়েও হাঁটুর ঠোকাঠুকি বা হাতের কাঁপুনি কমানো যায় না।

পাড়ার চাঁদা, পারিবারিক জামাকাপড় কেনার ধুম, রাস্তায় বাঁশ, চারদিকে ঘুরতে যাওয়ার প্ল্যানের হিড়িক; সবমিলে পুজোর হপ্তাখানেক আগে থেকেই গোকুলবাবুর মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ে।

পুজো এলেই বুকের ধড়ফড়ানিতে মরে যেতে ইচ্ছে করে গোকুলবাবুর।

**

গিন্নীর পাহাড় পছন্দ। মেয়ের সমুদ্র। ছেলের পছন্দ কলকাতার প্যান্ডেল-হপিং আর রেঁস্তোরার সামনে গিয়ে লাইন দিয়ে "কতদূর আর কতদূর বলো মা" গাওয়া।
গোকুলবাবু জানেন দু'জনের চোপা খাওয়ার চেয়ে তিনজনের রাগ হজম করাতে অন্তত পলিটিকাল ঝামেলাটা এড়ানো যায়। তার সাথে খরচও কমে। অতএব পুজোয় বাড়তি অফিসের কাজের জন্য আবেদন করেন গোকুলবাবু। প্রত্যেকবারই পেয়ে যান কিছু না কিছু, কারণ ওভারটাইমের টাকা দিতেই হবে তেমন কোনও দাবী রাখেন না তিনি।

**

- এত রাত্রে আপনি অফিসে বসে?
- আপনি কে স্যার?
- আগে আমার প্রশ্নের জবাব।
- কেন দেব?
- আপনার পকেটে রিভলভার আছে?
- না। আপনার কাছে আছে?
- থাকতেও পারে।
- মানে?
- মানে আপনার পকেটে শিওরলি নেই। আমার পকেটে রিভলভার থাকলেও থাকতে পারে। তাহলে কার ভয় পাওয়া উচিৎ গোকুলবাবু? প্রশ্নের উত্তর আগে কে দেবে?
- আমার।
- গুড। হিসেব বোঝেন।
- আমি আকাউন্ট্যান্ট।
- এত রাত পর্যন্ত অফিসে কেন?
- অফিসের কাজ এগিয়ে রাখছি। কারণ পাড়ায় আজ রাতে জলসা।
- জানি। বকুলবাগান সার্বজনীন আয়োজিত কিশোর নাইট।
- আপনিও ও পাড়ার?
- আপাতত আছি।
- আপনার নামটা স্যার?
- রিভলভার সম্ভবত আমার কাছে। কাজেই প্রশ্নও আমিই করব।
- ওকে।
- পুজোয় ভয় কেন আপনার? দুর্গায় অ্যালার্জি?
- এ মা না! জগজ্জননী উনি। আমি এথেইস্ট নই।
- তবে?
- বাড়াবাড়ি সহ্য হয় না।
- যেমন?
- এই। শহরের এই ওভার দ্য টপ আদেখলাপনা। মনে হয় মরে যাই।
- ইউ ডোন্ট লাইক ক্যালক্যাটা?
- তেমন ভাবে নয় কখনই। ভিড়, পলিউশন, অটোর লাইন, বাতেলা! আর পুজো এলে মনে হয় হিমালয়ে চলে যাই।
- যাবেন?
- কোথায়?
- হিমালয়। বড্ড নিরিবিলি,  আমার অপছন্দ। এদিকে আপনার ক্যালক্যাটা অপছন্দ অথচ আমার এ জায়গাটা তুমুল লাগে।
- তুমুল লাগে? নাহ। আপনার যা ভাষার ডায়রেকশন, শহুরে কুল লাইফ আপনার সইবে।
- যাবেন? হিমালয়?
- তার সাথে আপনার কলকাতায় থেকে যাওয়ার সম্পর্ক কোথায়?
- রিভলভার কার কাছে থাকলেও থাকতে পারে?
- ওহ। সরি। আমার দিক থেকে প্রশ্ন নয়।
- যাবেন? হিমালয়?

**

মহিষাসুর কোহিনূর নয়, মোনালিসা নয়। তবু কে বা কারা যেন বকুলবাগান সার্বজনীনের প্যান্ডলের পেল্লায় সিক্স প্যাকিও অসুরকে সরিয়ে হাড়গিলে ব্যাজারমুখো এক মুর্তি বসিয়ে গেছে সে'টা একটা রহস্য। এ'টা ধর্মানুভূতিতে আঘাত নাকি শহরের নিরাপত্তা শিকেয় উঠেছে? নাকি নিচু জাতির অসুরকে মাসকুলার না দেখিয়ে প্যাকাটি চেহারায় দেখানোটা কোনও উচ্চশ্রেণীর ষড়যন্ত্র?  যে কোন মুহূর্তে দাঙ্গা লেগে যেতে পারে।

সবাই চিন্তায়। সবাই স্তম্ভিত। খবরের কাগজের প্রথম পাতা থেকে কাস্মীর আর টেস্ট ক্রিকেট গায়েব হয়ে স্রেফ পালটে যাওয়া মহিষাসুর।  খোদ সরকারও ভেবড়ে একাকার। বোমা পেটো এ'সব ম্যানেজ দিতে কলকাতা ওস্তাদ। কিন্তু মহিষাসুরের মূর্তি বদল? স্ক্যান্ডেলের ঠাকুরদা!

সে বছরের পুজোটাই মাঠে মারা গেল। সবাই গুম হয় নিউজ চ্যানেল খুলে বাড়িতে বসে রইলে, চারদিকে একটা কী হয় কী হয় ভাব। শহরের রাস্তায় রাস্তায় বাড়তি পুলিশ।

শুধু মেডিকাল কলেজের একদল ডাক্তারের সময় রইলো না অসুরচুরির গড়বড়ে মন দেওয়ার। হাজার বিদ্যা ফলিয়েও তাঁরা গোকুলবাবুর আচমকা গজিয়ে ওঠা বাইসেপ-ট্রাইসেপ-সিক্স প্যাকের রহস্য উদ্ধার করতে পারলেন না। আরও বড় মেডিকাল মিস্ট্রি হল গোকুলবাবুর গায়ের চামড়ার দুধে আলতা রঙ গায়েব হয়ে এক নতুন হালকা সবুজ জেল্লা দেখা দিয়েছে, এ'দিকে তার শরীর নিরোগ। চিফ মিনিস্টার নিজে গোকুলবাবুকে দেখে গেলেন, ঠিক করা হলো এর শেষ দেখে ছাড়া হবে। আমেরিকা থেকে একটা মেডিকাল টীম আনানোর সুপারিশকে গ্রীন সিগন্যাল দিয়ে গেলেন মুখ্যমন্ত্রী।

Comments

Popular posts from this blog

গোয়েন্দা গল্প

- কিছু মনে করবেন না মিস্টার দত্ত...আপনার কথাবার্তাগুলো আর কিছুতেই সিরিয়াসলি নেওয়া যাচ্ছে না।  - কেন? কেন বলুন তো ইন্সপেক্টর? - ভোররাতে এই থানা থেকে একশো ফুট দূরত্বে ফুটপাথে আপনাকে উপুড় হয়ে শুয়ে থাকতে দেখা যায়।  - আপনার কনস্টেবল নিজের চোখে দেখেছে তো।  - না না, সে'টাকে আমি কোশ্চেন করছি না। আমি শুধু সামারাইজ করছি। আপনার গায়ে দামী চিকনের পাঞ্জাবী, ঘড়িটার ডায়ালও সোনার হলে অবাক হব না। এ'রকম কাউকে বড় একটা ফুটপাথে পড়ে থাকতে দেখা যায় না। যা হোক। হরিমোহন কনস্টেবলের কাঁধে ভর দিয়ে আপনি থানায় এলেন। জলটল খেয়ে সামান্য সুস্থ বোধ করলেন। অল ইজ ওয়েল। নিঃশ্বাসে অ্যালকোহলের সামান্যতম ট্রেসও নেই। শরীরে নেই কোনও চোট আঘাত।  - আমার কথা আমায় বলে কী লাভ হচ্ছে? আমি যে জরুরী ব্যাপারটা জানাতে মাঝরাতে ছুটে এসেছিলাম...সেই ব্যাপারটা দেখুন...। ব্যাপারটা আর্জেন্ট ইন্সপেক্টর মিশ্র।  - আর্জেন্সিতে পরে আসছি। রাত সাড়ে তিনটে নাগাদ আপনি থানায় ছুটে এসেছিলেন। ওয়েল অ্যান্ড গুড। কিন্তু...ফুটপাথে পড়ে রইলেন কেন...।  - এ'টাই, এ'টাই আমি ঠিক নিশ্চিত নই। মাথাটাথা ঘুরে গেছিল হয়ত। আফটার অল বা

পকেটমার রবীন্দ্রনাথ

১ । চাপা উত্তেজনায় রবীন্দ্রনাথের ভিতরটা এক্কেবারে ছটফট করছিল । তার হাতে ঝোলানো কালো পলিথিনের প্যাকেটে যে ' টা আছে , সে ' টা ভেবেই নোলা ছুকছাক আর বুক ধড়ফড় । এমনিতে আলুথালু গতিতে সে হেঁটে অভ্যস্ত । তাড়াহুড়ো তার ধাতে সয় না মোটে । কিন্তু আজ ব্যাপারটা আলাদা । সে মাংস নিয়ে ফিরছে । হোক না মোটে আড়াই ' শ গ্রাম , তবু , কচি পাঁঠা বলে কথা । সহৃদয় আলম মিয়াঁ উপরি এক টুকরো মেটেও দিয়ে দিয়েছে । তোফা ! নিজের লম্বা দাড়ি দুলিয়ে ডবল গতিতে পা চালিয়ে সে এগোচ্ছিল ।   গলির মোড়ের দিকে এসে পৌঁছতে রবীন্দ্রনাথের কেমন যেন একটু সন্দেহ হল । ঠিক যেন কেউ পিছু নিয়েছে । দু ' একবার ঘাড় ঘুরিয়েও অবশ্য কাউকে দেখা গেলনা । ভাবনা ঝেড়ে ফেলে মাংসের পাকেটটায় মন ফিরিয়ে আনলেন রবীন্দ্রনাথ । বৌ নিশ্চয়ই খুব খুশি হবে আজ । খোকাটাকে যে কদ্দিন মাংসের ঝোল খাওয়ানো হয়নি ।   খাসির রান্নার গন্ধ ভেবে বড় গান পাচ্ছিল রবীন্দ্রনাথের । সে বাধ্য হয়েই একটা কুমার শানুর গাওয়া আশিকি সিনেমার গান ধরলে ।

চ্যাটার্জীবাবুর শেষ ইচ্ছে

- মিস্টার চ্যাটার্জী...। - কে? - আমার নাম বিনোদ। - আমি তো আপনাকে ঠিক...। - আমায় বস পাঠিয়েছেন। - ওহ, মিস্টার চৌধুরী আপনাকে...। - বসের নামটাম নেওয়ার তো কোনও দরকার নেই। কাজ নিয়ে এসেছি। কাজ করে চলে যাব। - আসুন, ভিতরে আসুন। - আমি ভিতরে গিয়ে কী করব বলুন। সৌজন্যের তো আর তেমন প্রয়োজন নেই। আপনি চলুন আমার সঙ্গে। চটপট কাজ মিটে গেলে পৌনে এগারোটার লোকালটা পেয়ে যাব। আমায় আবার সেই সোনারপুর ফিরতে হবে। - যা করার তা কি এ'খানেই সেরে ফেলা যায়না? - এমন কনজেস্টেড এলাকায় ও'সব কাজ করা চলেনা। চুপচাপ ব্যাপারটা সেরে ফেলতে হবে। - প্লীজ দু'মিনিটের জন্য ভিতরে আসুন বিনোদবাবু। জামাটা অন্তত পালটে নিই। - কী দরকার বলুন জামা পালটে। - দরকার তেমন নেই। তবু। ওই, লাস্ট উইশ ধরে নিন। - ক্যুইক প্লীজ। ট্রেন ধরার তাড়াটা ভুলে যাবেন না। আর ইয়ে, পিছন দিক দিয়ে পালাতে চেষ্টা করে লাভ নেই। বসের লোকজন চারপাশে ছড়িয়ে আছে। - ও মা, ছি ছি। তা নয়। আসলে মিতুলের দেওয়া একটা জামা এখনও ভাঙা হয়নি। বাটিক প্রিন্টের হাফশার্ট। একটু ব্রাইট কালার কিন্তু বেশ একটা ইয়ে আছে। ও চলে যাওয়ার পর ও জামার ভাজ ভাঙতে ইচ্ছে হয়নি। কিন্তু...আজ না হয়...। - মিতু