Monday, October 3, 2016

ছাত ও সিগারেট

- আসুন।
- এ'টা কোথায়?
- ছাদ। আমাদের বাড়ির।
- মিস দত্ত, ওয়েট। আপনার বাড়ি খড়দা। আমি বারুইপুর। দাঁড়ান। দাঁড়ান।
- অত ভেবে করবেনটা কী?
- আমি শুতে গেলাম বারুইপুরের ফ্ল্যাটের শোওয়ার ঘরে। তখনও টিভি চলছিল..। আচমকা আমার চোখ লেগে আসে...।
- আপনি বড় বাজে চিন্তা করেন।
- এ'টা চিন্তার সাব্জেক্ট নয়?
- এ'টা আমার স্বপ্ন। হল?
- ওহ। আই সী।
- এই নিন মিস্টার বোস। গোল্ডফ্লেক।
- ও কী! আমি সিগারেট ছেড়ে দিয়েছি তো।
- আমার স্বপ্নে ছাড়েননি।
- সর্বনাশ!
- নিন। জ্বালান। আমার কাউন্টার।
- অগত্যা!
- এ'সময়টা বড্ড মন কেমন করা মিঠে হাওয়া আসে ছাদের এ'দিকটায়। গঙ্গার সরসরে শব্দটা শুনতে পারছেন?
- মফস্বলের ঘিঞ্জি ফ্ল্যাটবাড়ির মানুষ। ছাদের গঙ্গার হাওয়া ইন্টারসেপ্ট করার কান আমার নেই মিস দত্ত।

**

- শুনুন!
- এ কী! মিস দত্ত! এখানে? এ'সময়?
- ইউ টেল মি মিস্টার বোস! আমি কোথায়?
- মানে? ঠাট্টা করছেন? এ'টা আমাদের বারুইপুরের পাড়া। রাতবিরেতে একটাই মাত্র সিগারেটের দোকান খোলা থাকে। ভজাদার পান স্টল। কিন্তু আপনি এত রাত্রে খড়দা ছেড়ে এখানে? কোনও আত্মীয়টাত্মীয়র বাড়ি? বন্ধুবান্ধব?
- একদম বাজে কথা বলবেন না!
- মানে?
- মানে, দিব্যি খড়দার বাড়ির ছাদে মাদুর পেতে বসেছিলাম। একটু ঢুলুনি এসেছে কি দেখি ছাদে আপনি।
- হুঁ? মানে?
- স্বপ্ন ছিল! অবভিয়াসলি!
- আপনার স্বপ্নে আমি? মাইরি?
- ন্যাকা সাজবেন না। আমি আপনাকে সিগারেট অফার করলাম, আপনি বললেন ক্যুইট করেছেন। আমি ইনন্সিস্ট করলাম। কারণ স্বপ্নটা আমার ছিল।
- কিন্তু আমি সত্যিই সিগারেট ছেড়েছিলাম।
- তাহলে এত রাত্রে আপনি সিগারেট খুঁজতে বেরিয়েছেন কেন?
- জানি না। টিভি দেখতে দেখতে চোখ লেগে এসেছিল। হঠাৎ ঘুমটা ভেঙে মনে হল যেন প্রবল গোল্ডফ্লেকের নেশা চাগাড় দিয়ে উঠেছে। আনন্যাচুরাল। কিন্তু ওই, অগত্যা!
- আপনার ঘুম ভাঙেনি।
- মানে?
- মানে আমি কোনভাবেই এ'সময় বারুইপুরে আসতে পারি না। ইট হ্যাস টু বি আ ড্রীম। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে...।
- কী বলে যাচ্ছেন বলুন তো?
- প্রশ্ন হচ্ছে, স্বপ্নটা কার?
- ধুস। গুলিয়ে যাচ্ছে। সিগারেট ধরাই আগে। পরে ভাবব। আপনার তো চলে...।
- কাউন্টার দিলেই হবে।

**

- কী বুঝছেন?
- ভজাদার সিগারেটের দোকান। এইখানে। আর এইটা, আপনাদের বাড়ি।
- আমাদের খড়দার বাড়ি।
- আর ভজাদার দোকান আমাদের বারুইপুরের পাড়ায়।
- কাজেই এ'টা স্বপ্ন মিস্টার বোস?
- বিলকুল! কিন্তু কার? কার স্বপ্নে কে আছে?
- আমি আপনার খড়দার বাড়ি দেখিনি। আপনি ভজাদার দোকানের খবর জানেন না।
- বাড়ি খুব জেনারেল ব্যাপার। সবার থাকে। কিন্তু ভজাদার দোকান খুব স্পেসিফিক ইনফরমেশন।
- তাহলে বলছেন আমারই স্বপ্ন?
- মনে হচ্ছে তাই মিস্টার বোস!
- ওহ।
- গশ্! আমি ফ্রী!
- ওহ! ওহ!
- চুমু খাবেন?
- আ...আ...আ...।
- আচার চাই?
- আমি যে কেউ না মিস দত্ত! আপনার মধ্যে আকাশী রঙ আছে। আলো আছে। চোখের চিকচিক। হাসি মিস দত্ত! আপনার হাসি! আমার তো ফিফথ ডেসিমাল প্লেসের মত ভেসে যাওয়ার কথা।
- খুব চালিয়াতি,  না?
- মাইরি। আমি কিছু না। আপনি সমস্ত। আমি আপনার "ওগো হ্যাঁগো"র যোগ্য নই। ডেস্পারেশন ভাবুন। স্বপ্নে সিগারেট কিনতে এসে আপনাকে টেনে এনেছি।
- আমায় আপনার স্বপ্নে যখন এনেইছেন, তখন আসুন আমাদের বাড়ির ছাদে। এইত্তো, বারুইপুরের ভজাদার দোকানের পাশেই আমার খড়দার বাড়ি আর তার ছাদ। আসুন।
- মিস দত্ত...। আমার ভূতের ভয়। আপনার পায়ে আলতা। আমার আলতা পায়ের ভয়। আপনার ভয়। ছোট টিপ। শিরশির। আর এইভাবে স্বপ্নে এসে দাঁড়ানো হয়নি আগে। আমি খুব সহজে ভেসে যাই।
- আমি খুব ভালো সামলে রাখতে পারি, কেমন?
- আচ্ছা।
- বিয়ে করতাম। আপনার স্বপ্ন না হলে। পুরুষমানুষের স্বপ্নে বিশ্বাস করতে নেই।
- আচ্ছা।
- আসুন। ছাদে।

**

তমাল বোসের ঘুমটা যখন ভাঙলো তখন তিনি টের পেলেন যে টিভি, ঘরের লাইট সমস্ত অন রেখেই ঘুমিয়ে পড়েছিলেন।

আচমকা একটা দলা পাকানো গোল্ডফ্লেক সুখটানের ইচ্ছে প্রবল ভাবে মাথার ভিতর নাড়া দিল। সিগারেট ছেড়ে দিব্যি আছেন আজ বছর চারেক হল অথচ এমন অদ্ভুত নেশার চাড় আগে কোনওদিন অনুভূত হয়নি। অথচ এখন প্রায় রাত বারোটা। এ'সময় খোলা আছে শুধু স্টেশনের কাছে ভজাদার সিগারেটের দোকান। ভজাদার কথা মনে আসতেই সদ্য দেখা স্বপ্নটা দড়াম করে মনে ফিরে এলো।

মিস দত্ত!
উফ! সে কী কাঁপুনি। আর টেলিপ্যাথির বাবা হয়ে তখনই ব্যাপারটা ঘটলো। আচমকা পিং শব্দে মোবাইল হাতে নিয়ে এসএমএস চেক করলেম বোসবাবু।

মিস দত্ত লিখেছেন;

"এ'সময়টা বড্ড মন কেমন করা মিঠে হাওয়া আসে ছাদের এ'দিকটায়। গঙ্গার সরসরে শব্দটা শোনাতাম আপনাকে, যদি থাকতেন এ সময়টা পাশে। আর পারলে আপনাকে একটা গোল্ডফ্লেক খাওয়াতাম। জানি আপনি ছেড়ে দিয়েছেন। তবুও"।

No comments: