Skip to main content

সঞ্জীববাবুর বিয়ে

- এ বিয়ে হবে না।
- কী বলছেন বাবা?
- তুমি বুঝছো না। আমার মেয়ের সাথে তোমার বিয়ে হতে পারে না। কাজেই তোমার মুখে এই বাবা ডাকটা শুনলেই মনে হচ্ছে তোমার দু'চোখে  কাসুন্দি ছিটিয়ে দিই।
- কিন্তু আমি যে...।
- শর্মিষ্ঠাকে ভালোবাসো। ও'ও তোমাকে ভালোবাসে। জানি।
- কাজেই দুনিয়ার...।
- কোন শক্তিই তোমাদের আলাদা করতে পারবেন না। কপুর হলেও না। জানি।
- আমি অব্রাহ্মণ বলে আপনি এমন হাবভাব দেখাচ্ছেন?
- আমরা অমন আহাম্মক নই।
- সরকারি চাকরী করি না বলে?
- ধুর ধুর। চাকরী ইজ চাকরী।
- তবে?  ফিনান্সিয়াল ব্যাকগ্রাউন্ড উইক ভেবেছেন?
- তুমি এত বদ? তুমি এইসব ভাবো?
- তবে বিয়ে হবে না কেন?
- কারণ আমরা এখানকার নই বলে।
- বাবা...।
- শাট আপ। রাস্কেল।
- কাকু... আমরাও এখানকার নই। মানে, আমার দাদু বরিশালের।
- না না, বুঝছো না। আমরা এখানকার নই। আমরা এলিয়েন। আমরা হোমোস্যাপিয়েন নই। আমরা মম্ভলুক।
- হে হে হে।
- ওরে কে আছিস এক বাটি কাসুন্দি আন।
- না মানে...আমি সে'ভাবে হাসতে চাইনি।
- শর্মিষ্ঠার জন্মের সাড়ে সাত বছর আগে আমরা এখানে চলে আসি।
- হে হে হে।
- হারামজাদা।
- সরি...কিন্তু বাবা...।
- তস্য হারামজাদা।
- কিন্তু কাকু,  এ যে গল্প কথা।
- গল্প? মুভিরুকা গ্রহের মম্ভলুক প্রজাতির ট্র‍্যাডিশন জানো? বিয়ের পত মম্ভলুকি বৌ মম্ভলুকি পুরুষের দু'হাত খেয়ে ফেলে।
- আজ্ঞে?
- দু'টো হাত। চিবিয়ে খেয়ে ফেলে। সে'টাই কালচার। আইনও বটেন। প্রাচীন সময়ে এনেস্থিসিয়া ছাড়া ঘটত ব্যাপারটা। আজকাল এনেস্থিসিয়া ব্যবহার করে হয়। কিন্তু বিয়ে হয়েছে কী বর জগন্নাথ। আর সে'টা না মানলে..।
- না মানলে?
- না মানলে হাত কাটা যাবে না। শুধু সে গ্রহের সরকার বাহাদুর সেই বর আর বৌয়ের মাথা দু'টো কচাত করে নামিয়ে দেবেন।
- ওহ। হে...হে...।
- কী! হাসি শুকিয়ে আসছে? হেহে। সাধে কি আমি আর শর্মিষ্ঠার মা বিয়ের আগে পালিয়ে এসেছি?
- এ'সব গল্প...।
- হাত দু'টো পৃথিবীতে এসেও বাঁচানো গেল না চাঁদু।
- আরে...এই তো। আপনার এক হাতে চায়ের কাপ আর অন্য হাত আপনার গালে।
- আর্টিফিশিয়াল। সায়েন্সের কামাল। তবে ক্যারম খেলতে পারি না। আঙুলের ছাপ দিতে পারি না। ভাত মাখতে পারি না। কাতুকুতু দিতে পারি না।
- কি...কিন্তু হাত গেল কেন?
- মম্ভলুক ইন্সটিঙ্কট যাবে কোথায়? শর্মিষ্ঠার মা এড়িয়ে থাকতে পারেনি। শর্মিষ্ঠাও পারবে না।
- ও মানে..।
- বিয়ে। সম্ভব নয়।
- কী সব বাজে কথা যে বললেন..।
- কাসুন্দির বাটিটা কেউ দিয়ে গেলি না রে!
- কাসুন্দি অ্যাসিড যা কিছু দিন। হাতের কোপ্তা বানান। এ বিয়ে আমি করবই।
- বেসিক্যালি তুমি আমার কথাগুলো বিশ্বাস করছ না।
- এ'টা কোন বিশ্বাস করার গল্প হলো?
- যে আমার গল্প চোখ বড়বড় করে শোনে না, বিশ্বাস করে না, তার মত আনইমাজিনেটিভ ছেলের সাথে আমার মেয়ের বিয়ে দেব?
- কী মুশকিল।

**

সঞ্জীববাবুর বড় দুঃখ গো।
ক্যারম খেলতে পারেন না।
কাতুকুতু দিতে পারেন না।
ঝোল দিয়ে ভালো করে ভাত মাখতে পারেন না।

আর এই অদ্ভুত রোগে সেই যে ধরেছে, আর ছাড়ার নাম নেই; যে কোন আষাঢ়ে গল্প সহজেই বিশ্বাস করে নেওয়ার রোগ। এমন বিশ্বাসী মন নিয়ে আর যাই হোক পৃথিবীতে বাস করা চলে না।

Comments

Popular posts from this blog

গোয়েন্দা গল্প

- কিছু মনে করবেন না মিস্টার দত্ত...আপনার কথাবার্তাগুলো আর কিছুতেই সিরিয়াসলি নেওয়া যাচ্ছে না।  - কেন? কেন বলুন তো ইন্সপেক্টর? - ভোররাতে এই থানা থেকে একশো ফুট দূরত্বে ফুটপাথে আপনাকে উপুড় হয়ে শুয়ে থাকতে দেখা যায়।  - আপনার কনস্টেবল নিজের চোখে দেখেছে তো।  - না না, সে'টাকে আমি কোশ্চেন করছি না। আমি শুধু সামারাইজ করছি। আপনার গায়ে দামী চিকনের পাঞ্জাবী, ঘড়িটার ডায়ালও সোনার হলে অবাক হব না। এ'রকম কাউকে বড় একটা ফুটপাথে পড়ে থাকতে দেখা যায় না। যা হোক। হরিমোহন কনস্টেবলের কাঁধে ভর দিয়ে আপনি থানায় এলেন। জলটল খেয়ে সামান্য সুস্থ বোধ করলেন। অল ইজ ওয়েল। নিঃশ্বাসে অ্যালকোহলের সামান্যতম ট্রেসও নেই। শরীরে নেই কোনও চোট আঘাত।  - আমার কথা আমায় বলে কী লাভ হচ্ছে? আমি যে জরুরী ব্যাপারটা জানাতে মাঝরাতে ছুটে এসেছিলাম...সেই ব্যাপারটা দেখুন...। ব্যাপারটা আর্জেন্ট ইন্সপেক্টর মিশ্র।  - আর্জেন্সিতে পরে আসছি। রাত সাড়ে তিনটে নাগাদ আপনি থানায় ছুটে এসেছিলেন। ওয়েল অ্যান্ড গুড। কিন্তু...ফুটপাথে পড়ে রইলেন কেন...।  - এ'টাই, এ'টাই আমি ঠিক নিশ্চিত নই। মাথাটাথা ঘুরে গেছিল হয়ত। আফটার অল বা

পকেটমার রবীন্দ্রনাথ

১ । চাপা উত্তেজনায় রবীন্দ্রনাথের ভিতরটা এক্কেবারে ছটফট করছিল । তার হাতে ঝোলানো কালো পলিথিনের প্যাকেটে যে ' টা আছে , সে ' টা ভেবেই নোলা ছুকছাক আর বুক ধড়ফড় । এমনিতে আলুথালু গতিতে সে হেঁটে অভ্যস্ত । তাড়াহুড়ো তার ধাতে সয় না মোটে । কিন্তু আজ ব্যাপারটা আলাদা । সে মাংস নিয়ে ফিরছে । হোক না মোটে আড়াই ' শ গ্রাম , তবু , কচি পাঁঠা বলে কথা । সহৃদয় আলম মিয়াঁ উপরি এক টুকরো মেটেও দিয়ে দিয়েছে । তোফা ! নিজের লম্বা দাড়ি দুলিয়ে ডবল গতিতে পা চালিয়ে সে এগোচ্ছিল ।   গলির মোড়ের দিকে এসে পৌঁছতে রবীন্দ্রনাথের কেমন যেন একটু সন্দেহ হল । ঠিক যেন কেউ পিছু নিয়েছে । দু ' একবার ঘাড় ঘুরিয়েও অবশ্য কাউকে দেখা গেলনা । ভাবনা ঝেড়ে ফেলে মাংসের পাকেটটায় মন ফিরিয়ে আনলেন রবীন্দ্রনাথ । বৌ নিশ্চয়ই খুব খুশি হবে আজ । খোকাটাকে যে কদ্দিন মাংসের ঝোল খাওয়ানো হয়নি ।   খাসির রান্নার গন্ধ ভেবে বড় গান পাচ্ছিল রবীন্দ্রনাথের । সে বাধ্য হয়েই একটা কুমার শানুর গাওয়া আশিকি সিনেমার গান ধরলে ।

চ্যাটার্জীবাবুর শেষ ইচ্ছে

- মিস্টার চ্যাটার্জী...। - কে? - আমার নাম বিনোদ। - আমি তো আপনাকে ঠিক...। - আমায় বস পাঠিয়েছেন। - ওহ, মিস্টার চৌধুরী আপনাকে...। - বসের নামটাম নেওয়ার তো কোনও দরকার নেই। কাজ নিয়ে এসেছি। কাজ করে চলে যাব। - আসুন, ভিতরে আসুন। - আমি ভিতরে গিয়ে কী করব বলুন। সৌজন্যের তো আর তেমন প্রয়োজন নেই। আপনি চলুন আমার সঙ্গে। চটপট কাজ মিটে গেলে পৌনে এগারোটার লোকালটা পেয়ে যাব। আমায় আবার সেই সোনারপুর ফিরতে হবে। - যা করার তা কি এ'খানেই সেরে ফেলা যায়না? - এমন কনজেস্টেড এলাকায় ও'সব কাজ করা চলেনা। চুপচাপ ব্যাপারটা সেরে ফেলতে হবে। - প্লীজ দু'মিনিটের জন্য ভিতরে আসুন বিনোদবাবু। জামাটা অন্তত পালটে নিই। - কী দরকার বলুন জামা পালটে। - দরকার তেমন নেই। তবু। ওই, লাস্ট উইশ ধরে নিন। - ক্যুইক প্লীজ। ট্রেন ধরার তাড়াটা ভুলে যাবেন না। আর ইয়ে, পিছন দিক দিয়ে পালাতে চেষ্টা করে লাভ নেই। বসের লোকজন চারপাশে ছড়িয়ে আছে। - ও মা, ছি ছি। তা নয়। আসলে মিতুলের দেওয়া একটা জামা এখনও ভাঙা হয়নি। বাটিক প্রিন্টের হাফশার্ট। একটু ব্রাইট কালার কিন্তু বেশ একটা ইয়ে আছে। ও চলে যাওয়ার পর ও জামার ভাজ ভাঙতে ইচ্ছে হয়নি। কিন্তু...আজ না হয়...। - মিতু