Friday, September 23, 2016

সঞ্জীববাবুর বিয়ে

- এ বিয়ে হবে না।
- কী বলছেন বাবা?
- তুমি বুঝছো না। আমার মেয়ের সাথে তোমার বিয়ে হতে পারে না। কাজেই তোমার মুখে এই বাবা ডাকটা শুনলেই মনে হচ্ছে তোমার দু'চোখে  কাসুন্দি ছিটিয়ে দিই।
- কিন্তু আমি যে...।
- শর্মিষ্ঠাকে ভালোবাসো। ও'ও তোমাকে ভালোবাসে। জানি।
- কাজেই দুনিয়ার...।
- কোন শক্তিই তোমাদের আলাদা করতে পারবেন না। কপুর হলেও না। জানি।
- আমি অব্রাহ্মণ বলে আপনি এমন হাবভাব দেখাচ্ছেন?
- আমরা অমন আহাম্মক নই।
- সরকারি চাকরী করি না বলে?
- ধুর ধুর। চাকরী ইজ চাকরী।
- তবে?  ফিনান্সিয়াল ব্যাকগ্রাউন্ড উইক ভেবেছেন?
- তুমি এত বদ? তুমি এইসব ভাবো?
- তবে বিয়ে হবে না কেন?
- কারণ আমরা এখানকার নই বলে।
- বাবা...।
- শাট আপ। রাস্কেল।
- কাকু... আমরাও এখানকার নই। মানে, আমার দাদু বরিশালের।
- না না, বুঝছো না। আমরা এখানকার নই। আমরা এলিয়েন। আমরা হোমোস্যাপিয়েন নই। আমরা মম্ভলুক।
- হে হে হে।
- ওরে কে আছিস এক বাটি কাসুন্দি আন।
- না মানে...আমি সে'ভাবে হাসতে চাইনি।
- শর্মিষ্ঠার জন্মের সাড়ে সাত বছর আগে আমরা এখানে চলে আসি।
- হে হে হে।
- হারামজাদা।
- সরি...কিন্তু বাবা...।
- তস্য হারামজাদা।
- কিন্তু কাকু,  এ যে গল্প কথা।
- গল্প? মুভিরুকা গ্রহের মম্ভলুক প্রজাতির ট্র‍্যাডিশন জানো? বিয়ের পত মম্ভলুকি বৌ মম্ভলুকি পুরুষের দু'হাত খেয়ে ফেলে।
- আজ্ঞে?
- দু'টো হাত। চিবিয়ে খেয়ে ফেলে। সে'টাই কালচার। আইনও বটেন। প্রাচীন সময়ে এনেস্থিসিয়া ছাড়া ঘটত ব্যাপারটা। আজকাল এনেস্থিসিয়া ব্যবহার করে হয়। কিন্তু বিয়ে হয়েছে কী বর জগন্নাথ। আর সে'টা না মানলে..।
- না মানলে?
- না মানলে হাত কাটা যাবে না। শুধু সে গ্রহের সরকার বাহাদুর সেই বর আর বৌয়ের মাথা দু'টো কচাত করে নামিয়ে দেবেন।
- ওহ। হে...হে...।
- কী! হাসি শুকিয়ে আসছে? হেহে। সাধে কি আমি আর শর্মিষ্ঠার মা বিয়ের আগে পালিয়ে এসেছি?
- এ'সব গল্প...।
- হাত দু'টো পৃথিবীতে এসেও বাঁচানো গেল না চাঁদু।
- আরে...এই তো। আপনার এক হাতে চায়ের কাপ আর অন্য হাত আপনার গালে।
- আর্টিফিশিয়াল। সায়েন্সের কামাল। তবে ক্যারম খেলতে পারি না। আঙুলের ছাপ দিতে পারি না। ভাত মাখতে পারি না। কাতুকুতু দিতে পারি না।
- কি...কিন্তু হাত গেল কেন?
- মম্ভলুক ইন্সটিঙ্কট যাবে কোথায়? শর্মিষ্ঠার মা এড়িয়ে থাকতে পারেনি। শর্মিষ্ঠাও পারবে না।
- ও মানে..।
- বিয়ে। সম্ভব নয়।
- কী সব বাজে কথা যে বললেন..।
- কাসুন্দির বাটিটা কেউ দিয়ে গেলি না রে!
- কাসুন্দি অ্যাসিড যা কিছু দিন। হাতের কোপ্তা বানান। এ বিয়ে আমি করবই।
- বেসিক্যালি তুমি আমার কথাগুলো বিশ্বাস করছ না।
- এ'টা কোন বিশ্বাস করার গল্প হলো?
- যে আমার গল্প চোখ বড়বড় করে শোনে না, বিশ্বাস করে না, তার মত আনইমাজিনেটিভ ছেলের সাথে আমার মেয়ের বিয়ে দেব?
- কী মুশকিল।

**

সঞ্জীববাবুর বড় দুঃখ গো।
ক্যারম খেলতে পারেন না।
কাতুকুতু দিতে পারেন না।
ঝোল দিয়ে ভালো করে ভাত মাখতে পারেন না।

আর এই অদ্ভুত রোগে সেই যে ধরেছে, আর ছাড়ার নাম নেই; যে কোন আষাঢ়ে গল্প সহজেই বিশ্বাস করে নেওয়ার রোগ। এমন বিশ্বাসী মন নিয়ে আর যাই হোক পৃথিবীতে বাস করা চলে না।

No comments: