Skip to main content

চোখের ধুলো

- ওই আওয়াজটা কীসের রে বাবু?
- কোন আওয়াজ?কোনও আওয়াজ নেই তো। তুমি ঘুমোও এবার। রাত অনেক হয়েছে।
- মন দিয়ে শোন, ওই যে। খটখট করে হচ্ছে। 
- বলছি তো। কিচ্ছু না। ঘুমোও এবার। জ্বালিও না।
- একটু উঠে দেখ না বাবা। বারান্দায় বেড়াল ঢুকলো নাকি! পাখিগুলো রয়েছে যে। নেহাত আমি অন্ধ, নয়তো আমিই...
- বেড়ালের আওয়াজ নয়। আমি কিছু কাজ করছি। ঘুমোও। এত রাত্রে ঘ্যানঘ্যান শুনতে ভালো লাগছে না।
- তুই তো শুয়ে পড়েছিলি মশারি টাঙিয়ে, আবার কী এমন কাজ মনে পড়লো।
- আরে আমার সব কাজের কৈফিয়ত সর্বক্ষণ তোমায় দিতে হবে নাকি। কী গেরো। 
- তুই খুব খিটখিটে হয়ে যাচ্ছিস বাবু। 
- ঘুমোলে এবার?
- যা খুশি কর। শুলাম আমি। বারান্দায় বেড়াল এসে যদি পাখিগুলোকে... 
- সে দায়িত্ব আমার। কানের মাথা না খেয়ে এবার ঘুমোও।

*** 

বাঁ হাতটা অয়েলিং হয়ে গেছিলো বাবুর। এবার ডান হাতটা অয়েলিং করার জন্যে স্ক্রুগুলো খুলছিল। এই সামান্য খটখট শব্দগুলোও বাবার কানে যাবে আর গোলমাল পাকবে। অবশ্য নিজের বাবা নয়। বাবার আদত ছেলে অর্থাৎ আদত বাবু তো কবেই মরে গেছে; এ বাবু তো বৃদ্ধ বাপের চোখে ধুলো মাত্র। ছেলে বড় বৈজ্ঞানিক ছিল, বাপেরই মত তাবড় বা হয়তো বাপের চেয়েও ধারালো। ছেলে যখন বুঝতে পারলো যে রক্তের ক্যানসারের কোন উত্তর তার হাতে নেই, তখন বৃদ্ধ বাপকে পুত্রশোকের খপ্পর থেকে বাঁচাতে অবিকল নিজের মত মানুষ রোবট তৈরি করে ফেললে দুরন্ত এ জিনিষ- গায়ের চামড়া থেকে হাবভাব থেকে কথাবার্তা থেকে বিচার বুদ্ধি; সব সেই আসলি বাবুর মতই। এমনকি সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বয়স বাড়ার সমস্ত চিহ্নও তার কৃত্রিম মানব দেহে দেখা দেবে। বাবু মারা গেলেও বৃদ্ধ পিতা টের পেলেন না। রোবটকেই বাবু ভেবে বেঁচে রইলেন, রোবটও বাবু হয়ে তার সাথে টিকে রইলো। 

*** 

বৃদ্ধ বাপ নিজের ছেলের কথায় বিরক্ত হয়ে শুয়ে পড়লেন। অবশ্য বৃদ্ধ জানেন যে তিনি নিজে বাবুর আসলি বাপ নন। বাবুর যখন বারো বছর বয়স তখনই তার ক্যানসার ধরা পরে, থার্ড স্টেজ। বাবুর মা আগেই মারা গেছিল। বাপ হয়ে বুঝতে বাকি ছিলো না যে এ বয়েসে বাপকেও হারালে বাবু ভেসে যাবে। নিজে বৈজ্ঞানিক ছিলেন পিতাটি। অবিকল নিজের মত এক রোবট বানালেন; সে প্রায় সম্পূর্ণ ভাবে মানুষ, গায়ের চামড়া থেকে হাবভাব থেকে কথাবার্তা থেকে তার বিচার-বুদ্ধি, সবই তার নিজের মত। যন্ত্র হলেও তার পিতৃ-স্নেহ সক্ষম ভাবেই বহন করতে পারবে এই রোবট। এমনকি সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বয়স বাড়ার সমস্ত চিহ্নও তার কৃত্রিম মানব দেহে দেখা দেবে। নেহাত বয়সের সঙ্গে বাবা-রোবটের ইন্টারনাল সার্কিটের একটা অংশ খারাপ হয়ে যাওয়ায় দৃষ্টিশক্তিটা কমে যাওয়ার বদলে একেবারে গায়েব। বাবুর বাবা তো সেই কবেই মারা গেছেন, কিন্তু এমন ভাবে সরেছেন যে পৃথিবীর কেউ টের পাননি। বাবুও নয়, সে জানে তার বাবা বেঁচে আছে, সে জানে তার বাবা তাকে আগলে রেখেছে।  বাবু রোবটের পিতৃস্নেহেই বড় হয়ে উঠেছে। 

Comments

kingkhan said…
osadharon.
ebar aarektu boro "choto golpo" likhun. olpete mon bhorche na :)
Som said…
Durdanto! Khub bhalo laglo/
Ashish said…
It reminds me M C Escher's famous "Drawing Hands" ....
malabika said…
জব্বর গপ্পটা। খুব ভাল লেগেছে। বং এর পেনটা অক্ষয় হোক।
Anonymous said…
I love what you guys are usually up too. This type of clever work and exposure!
Keep up the terrific works guys I've incorporated you
guys to my own blogroll.

My web blog: home improvement diy ideas
Unknown said…
Jah babba!!! Uri babba!!! Babbattok bolte badhho hochhi, (Sadhu)baad
bvik said…
reminds me of Hugo
bvik said…
reminds me of Hugo
Unknown said…
Opurba, chaliye jan apnara.

Popular posts from this blog

গোয়েন্দা গল্প

- কিছু মনে করবেন না মিস্টার দত্ত...আপনার কথাবার্তাগুলো আর কিছুতেই সিরিয়াসলি নেওয়া যাচ্ছে না।  - কেন? কেন বলুন তো ইন্সপেক্টর? - ভোররাতে এই থানা থেকে একশো ফুট দূরত্বে ফুটপাথে আপনাকে উপুড় হয়ে শুয়ে থাকতে দেখা যায়।  - আপনার কনস্টেবল নিজের চোখে দেখেছে তো।  - না না, সে'টাকে আমি কোশ্চেন করছি না। আমি শুধু সামারাইজ করছি। আপনার গায়ে দামী চিকনের পাঞ্জাবী, ঘড়িটার ডায়ালও সোনার হলে অবাক হব না। এ'রকম কাউকে বড় একটা ফুটপাথে পড়ে থাকতে দেখা যায় না। যা হোক। হরিমোহন কনস্টেবলের কাঁধে ভর দিয়ে আপনি থানায় এলেন। জলটল খেয়ে সামান্য সুস্থ বোধ করলেন। অল ইজ ওয়েল। নিঃশ্বাসে অ্যালকোহলের সামান্যতম ট্রেসও নেই। শরীরে নেই কোনও চোট আঘাত।  - আমার কথা আমায় বলে কী লাভ হচ্ছে? আমি যে জরুরী ব্যাপারটা জানাতে মাঝরাতে ছুটে এসেছিলাম...সেই ব্যাপারটা দেখুন...। ব্যাপারটা আর্জেন্ট ইন্সপেক্টর মিশ্র।  - আর্জেন্সিতে পরে আসছি। রাত সাড়ে তিনটে নাগাদ আপনি থানায় ছুটে এসেছিলেন। ওয়েল অ্যান্ড গুড। কিন্তু...ফুটপাথে পড়ে রইলেন কেন...।  - এ'টাই, এ'টাই আমি ঠিক নিশ্চিত নই। মাথাটাথা ঘুরে গেছিল হয়ত। আফটার অল বা

পকেটমার রবীন্দ্রনাথ

১ । চাপা উত্তেজনায় রবীন্দ্রনাথের ভিতরটা এক্কেবারে ছটফট করছিল । তার হাতে ঝোলানো কালো পলিথিনের প্যাকেটে যে ' টা আছে , সে ' টা ভেবেই নোলা ছুকছাক আর বুক ধড়ফড় । এমনিতে আলুথালু গতিতে সে হেঁটে অভ্যস্ত । তাড়াহুড়ো তার ধাতে সয় না মোটে । কিন্তু আজ ব্যাপারটা আলাদা । সে মাংস নিয়ে ফিরছে । হোক না মোটে আড়াই ' শ গ্রাম , তবু , কচি পাঁঠা বলে কথা । সহৃদয় আলম মিয়াঁ উপরি এক টুকরো মেটেও দিয়ে দিয়েছে । তোফা ! নিজের লম্বা দাড়ি দুলিয়ে ডবল গতিতে পা চালিয়ে সে এগোচ্ছিল ।   গলির মোড়ের দিকে এসে পৌঁছতে রবীন্দ্রনাথের কেমন যেন একটু সন্দেহ হল । ঠিক যেন কেউ পিছু নিয়েছে । দু ' একবার ঘাড় ঘুরিয়েও অবশ্য কাউকে দেখা গেলনা । ভাবনা ঝেড়ে ফেলে মাংসের পাকেটটায় মন ফিরিয়ে আনলেন রবীন্দ্রনাথ । বৌ নিশ্চয়ই খুব খুশি হবে আজ । খোকাটাকে যে কদ্দিন মাংসের ঝোল খাওয়ানো হয়নি ।   খাসির রান্নার গন্ধ ভেবে বড় গান পাচ্ছিল রবীন্দ্রনাথের । সে বাধ্য হয়েই একটা কুমার শানুর গাওয়া আশিকি সিনেমার গান ধরলে ।

চ্যাটার্জীবাবুর শেষ ইচ্ছে

- মিস্টার চ্যাটার্জী...। - কে? - আমার নাম বিনোদ। - আমি তো আপনাকে ঠিক...। - আমায় বস পাঠিয়েছেন। - ওহ, মিস্টার চৌধুরী আপনাকে...। - বসের নামটাম নেওয়ার তো কোনও দরকার নেই। কাজ নিয়ে এসেছি। কাজ করে চলে যাব। - আসুন, ভিতরে আসুন। - আমি ভিতরে গিয়ে কী করব বলুন। সৌজন্যের তো আর তেমন প্রয়োজন নেই। আপনি চলুন আমার সঙ্গে। চটপট কাজ মিটে গেলে পৌনে এগারোটার লোকালটা পেয়ে যাব। আমায় আবার সেই সোনারপুর ফিরতে হবে। - যা করার তা কি এ'খানেই সেরে ফেলা যায়না? - এমন কনজেস্টেড এলাকায় ও'সব কাজ করা চলেনা। চুপচাপ ব্যাপারটা সেরে ফেলতে হবে। - প্লীজ দু'মিনিটের জন্য ভিতরে আসুন বিনোদবাবু। জামাটা অন্তত পালটে নিই। - কী দরকার বলুন জামা পালটে। - দরকার তেমন নেই। তবু। ওই, লাস্ট উইশ ধরে নিন। - ক্যুইক প্লীজ। ট্রেন ধরার তাড়াটা ভুলে যাবেন না। আর ইয়ে, পিছন দিক দিয়ে পালাতে চেষ্টা করে লাভ নেই। বসের লোকজন চারপাশে ছড়িয়ে আছে। - ও মা, ছি ছি। তা নয়। আসলে মিতুলের দেওয়া একটা জামা এখনও ভাঙা হয়নি। বাটিক প্রিন্টের হাফশার্ট। একটু ব্রাইট কালার কিন্তু বেশ একটা ইয়ে আছে। ও চলে যাওয়ার পর ও জামার ভাজ ভাঙতে ইচ্ছে হয়নি। কিন্তু...আজ না হয়...। - মিতু