Skip to main content

অমু ও জমানো

অমু, সে ছোটবেলা থেকেই খুব জমাতে ভালোবাসতো। বিভিন্ন রকম জমানোর সখ। কখনও কেতাবি, কখনও অদ্ভুত।

ক্লাস টু’তে জমানো শুরু করেছিল বাসের টিকিট দিয়ে। কলকাতার প্রাইভেট বাসের সরু লম্বা টিকিটগুলো। কয়েক বাণ্ডিল জমা হওয়ার পর মতি পাল্টে ট্রেনের টিকিট জমানো শুরু করেছিল। তখনও ইলেকট্রনিক টিকিটের জমানা আসেনি, হলদে রঙের ছোট টিকিট যাতে ঘটাং করে কালো কালিতে তারিখ ছাপা হত। সেই ট্রেনের টিকিট জমিয়েছিল এক থলে। দেশলাই আর সিগারেটের বাক্সও একই সাথে জমাতে আরম্ভ করেছিল, একটু বড় বয়েসে এসে। আগন্তুক সিনেমাটা দেখে সে নতুন শব্দ শিখল নিউমিসম্যাটিস। কয়েন জমানো শুরু করেছিল সেই দেখে। খান কয়েক ব্রিটিশ, নেপালি আর বাংলাদেশি কয়েন জোগাড় করতে গিয়েই টের পেলে যে ছাত্র বয়েসে এই শখে টু পাইস বেশি খরচ হওয়ার চান্স আছে, বাপের যোগান তেমনটি নেই। সেই হিসেবেই স্ট্যাম্প জমানোর দিকেও যায়নি সে।

বাব্‌ল গামের সঙ্গে পাওয়া যেত ক্রিকেটার আর ফুটবলারদের ছবি, সেই ঝোঁক চালিয়েছিল বেশ কিছুদিন। মার্বেল জমানোর শখও হয়েছিল বেশ কিছুদিনের জন্য, তিন বয়াম ভর্তি রঙিন মার্বেল আজও রয়েছে। এমনকি একবার বিয়েবাড়ির মেনুকার্ড জমানোর উদ্ভট শখ নিয়েও কিছুদিন কাটিয়েছিল।  জুরাসিক পার্ক দেখে শুরু করেছিল ডাইনোসরদের স্টিকার আর তাদের সম্বন্ধে বিভিন্ন ট্রিভিয়া জোগাড় করে একটা পুরনো ডায়েরীতে জড়ো করা; তখনও গুগ্‌ল জীবনে আসেনি- কাজেই সেই ডাইনোসর ডায়েরী উল্টে পাল্টে দেখতে ভীষণ ভালো লাগতো।

এমনি ভাবে লাগাতার কোন না কোন জমিয়ে যাওয়ার শখ কালটিভেট করে যেত অমু। বিভিন্ন পাখির পালক, অটোগ্রাফ, পুরনো জমানার কাগজের বিজ্ঞাপন; কত কী। পুরনো শখটা আচমকাই তাকে ছেড়ে চলে যায় কলেজের ফার্স্ট ইয়ারে। শেষ যে জমিয়েছিল চিঠি। নীলার লেখা চিঠি, ক্লাস টুয়েল্ভ থেকে ফার্স্ট ইয়ার পর্যন্ত।

তারপর থেকে বাড়তি মেদ ছাড়া আর কোনদিন কিছু জমায়নি অমু।         

Comments

malabika said…
এই শেষ জমানোটাই সবচেয়ে বিশ্বস্ত, কারণ এর হারানো বা চুরির ভয় নেই। অন্য জমানোর জিনিষগুলো সামলাতে হয়; খুঁজে খুঁজে আনতে হয়, কিন্তু এইটিকে দেখ, কোন কষ্ট নেই। নিজেই এসে জুড়ে বসল।

Popular posts from this blog

গোয়েন্দা গল্প

- কিছু মনে করবেন না মিস্টার দত্ত...আপনার কথাবার্তাগুলো আর কিছুতেই সিরিয়াসলি নেওয়া যাচ্ছে না।  - কেন? কেন বলুন তো ইন্সপেক্টর? - ভোররাতে এই থানা থেকে একশো ফুট দূরত্বে ফুটপাথে আপনাকে উপুড় হয়ে শুয়ে থাকতে দেখা যায়।  - আপনার কনস্টেবল নিজের চোখে দেখেছে তো।  - না না, সে'টাকে আমি কোশ্চেন করছি না। আমি শুধু সামারাইজ করছি। আপনার গায়ে দামী চিকনের পাঞ্জাবী, ঘড়িটার ডায়ালও সোনার হলে অবাক হব না। এ'রকম কাউকে বড় একটা ফুটপাথে পড়ে থাকতে দেখা যায় না। যা হোক। হরিমোহন কনস্টেবলের কাঁধে ভর দিয়ে আপনি থানায় এলেন। জলটল খেয়ে সামান্য সুস্থ বোধ করলেন। অল ইজ ওয়েল। নিঃশ্বাসে অ্যালকোহলের সামান্যতম ট্রেসও নেই। শরীরে নেই কোনও চোট আঘাত।  - আমার কথা আমায় বলে কী লাভ হচ্ছে? আমি যে জরুরী ব্যাপারটা জানাতে মাঝরাতে ছুটে এসেছিলাম...সেই ব্যাপারটা দেখুন...। ব্যাপারটা আর্জেন্ট ইন্সপেক্টর মিশ্র।  - আর্জেন্সিতে পরে আসছি। রাত সাড়ে তিনটে নাগাদ আপনি থানায় ছুটে এসেছিলেন। ওয়েল অ্যান্ড গুড। কিন্তু...ফুটপাথে পড়ে রইলেন কেন...।  - এ'টাই, এ'টাই আমি ঠিক নিশ্চিত নই। মাথাটাথা ঘুরে গেছিল হয়ত। আফটার অল বা

পকেটমার রবীন্দ্রনাথ

১ । চাপা উত্তেজনায় রবীন্দ্রনাথের ভিতরটা এক্কেবারে ছটফট করছিল । তার হাতে ঝোলানো কালো পলিথিনের প্যাকেটে যে ' টা আছে , সে ' টা ভেবেই নোলা ছুকছাক আর বুক ধড়ফড় । এমনিতে আলুথালু গতিতে সে হেঁটে অভ্যস্ত । তাড়াহুড়ো তার ধাতে সয় না মোটে । কিন্তু আজ ব্যাপারটা আলাদা । সে মাংস নিয়ে ফিরছে । হোক না মোটে আড়াই ' শ গ্রাম , তবু , কচি পাঁঠা বলে কথা । সহৃদয় আলম মিয়াঁ উপরি এক টুকরো মেটেও দিয়ে দিয়েছে । তোফা ! নিজের লম্বা দাড়ি দুলিয়ে ডবল গতিতে পা চালিয়ে সে এগোচ্ছিল ।   গলির মোড়ের দিকে এসে পৌঁছতে রবীন্দ্রনাথের কেমন যেন একটু সন্দেহ হল । ঠিক যেন কেউ পিছু নিয়েছে । দু ' একবার ঘাড় ঘুরিয়েও অবশ্য কাউকে দেখা গেলনা । ভাবনা ঝেড়ে ফেলে মাংসের পাকেটটায় মন ফিরিয়ে আনলেন রবীন্দ্রনাথ । বৌ নিশ্চয়ই খুব খুশি হবে আজ । খোকাটাকে যে কদ্দিন মাংসের ঝোল খাওয়ানো হয়নি ।   খাসির রান্নার গন্ধ ভেবে বড় গান পাচ্ছিল রবীন্দ্রনাথের । সে বাধ্য হয়েই একটা কুমার শানুর গাওয়া আশিকি সিনেমার গান ধরলে ।

চ্যাটার্জীবাবুর শেষ ইচ্ছে

- মিস্টার চ্যাটার্জী...। - কে? - আমার নাম বিনোদ। - আমি তো আপনাকে ঠিক...। - আমায় বস পাঠিয়েছেন। - ওহ, মিস্টার চৌধুরী আপনাকে...। - বসের নামটাম নেওয়ার তো কোনও দরকার নেই। কাজ নিয়ে এসেছি। কাজ করে চলে যাব। - আসুন, ভিতরে আসুন। - আমি ভিতরে গিয়ে কী করব বলুন। সৌজন্যের তো আর তেমন প্রয়োজন নেই। আপনি চলুন আমার সঙ্গে। চটপট কাজ মিটে গেলে পৌনে এগারোটার লোকালটা পেয়ে যাব। আমায় আবার সেই সোনারপুর ফিরতে হবে। - যা করার তা কি এ'খানেই সেরে ফেলা যায়না? - এমন কনজেস্টেড এলাকায় ও'সব কাজ করা চলেনা। চুপচাপ ব্যাপারটা সেরে ফেলতে হবে। - প্লীজ দু'মিনিটের জন্য ভিতরে আসুন বিনোদবাবু। জামাটা অন্তত পালটে নিই। - কী দরকার বলুন জামা পালটে। - দরকার তেমন নেই। তবু। ওই, লাস্ট উইশ ধরে নিন। - ক্যুইক প্লীজ। ট্রেন ধরার তাড়াটা ভুলে যাবেন না। আর ইয়ে, পিছন দিক দিয়ে পালাতে চেষ্টা করে লাভ নেই। বসের লোকজন চারপাশে ছড়িয়ে আছে। - ও মা, ছি ছি। তা নয়। আসলে মিতুলের দেওয়া একটা জামা এখনও ভাঙা হয়নি। বাটিক প্রিন্টের হাফশার্ট। একটু ব্রাইট কালার কিন্তু বেশ একটা ইয়ে আছে। ও চলে যাওয়ার পর ও জামার ভাজ ভাঙতে ইচ্ছে হয়নি। কিন্তু...আজ না হয়...। - মিতু