Skip to main content

তিন

পাপান গল্প শুনতে ভালোবাসতো। বাবু হয়ে বসে, গালে হাত দিয়ে, হা করে। সবার কাছে সে বসে যেত গল্পের আবদার নিয়ে। বাবার কাছে, মায়ের কাছে, মিমিপিসিমার কাছে, বুবাইদাদার কাছে, দিদানের কাছে, পোষা কুকুর মিতুর কাছে কাছে, মেজকার কাছে।
দেখা হওয়া মানেই তাকে গল্প বলতে হবে। না বললেই ছেলের চোখ থেকে টপটপিয়ে জল। গল্প না বলে কোন উপায় থাকতো না কারোর। আর একটা গল্পই বারবার শুনতে চাইতো পাপান, অন্য কোন গল্পে তার মন ভরতো না।
সকলের স্বপ্নে এসে সে বায়না ধরতো, “বল না, সেদিনের পর থেকে তোমরা আমায় স্বপ্নের বাইরে দেখতে পাও না কেন। সেদিনের গল্পটা বল না
প্লীজ"

**
“মৃদুল পার্কের বেঞ্চে আধঘণ্টা ঠায় বসে রইলে। নীলা এখনও আসেনি। একবার ভাবলে সিগারেট ধরাবে, কিন্তু পারলে না। আত্মা'র পকেটে আবার গোল্ডফ্লেকের প্যাকেট আসবে কোত্থেকে!

কিন্তু নীলা এত দেরি করছে কেন? একই সাথে তো অ্যাকসিডেন্ট ঘটলো! তবে কি নীলা বেঁচে গেছে ? এ দুনিয়ায় প্রথম দিনেই একটা ঘাড় মটকাতে হবে ভেবে মৃদুল সামান্য লজ্জা পেলে। "

**
বেশ খানিকক্ষণ এপাশ-ওপাশ করার পরেও ঘুম এলো না নিমাইয়ের। বিশ্রী গরম, দরদর করে ঘামছে সে। ফ্যানের হাওয়াও গায়ে লাগছে না, লোডশেডিং বোধ হয়। জানুয়ারি মাসে এমন গরম পড়লো যে বিছানা তেতে উঠেছে। সে ভাবলে খাট থেকে নেমে একটু হাঁটাহাঁটি করে নেবে। এ গরমে শুয়ে থেকে কী লাভ। কিন্তু কী অদ্ভুত ব্যাপার, শরীরটা টেনে কিছুতেই উঠতে পারলে না নিমাই। দেহ অসাড় মনে হল, গাঁটে গাঁটে প্রচণ্ড ব্যথা।
আচমকা মনে হল এ খাট ঠিক তাঁর নিজের মনে হচ্ছে না, তিনি একলা মানুষ কিন্তু শোয়া হয় ডাব্‌ল বেডে। কিন্তু এতো সিঙ্গেল খাট যেন। আর তার পাশেই আরেকটা খাটে আরেকজন শুয়ে আছে মনে হল। নিমাইয়ের মনে হল তিনি একটা বিশ্রী স্বপ্ন দেখছেন, নয়তো তার খাট পাল্টেই বা যাবে কেন, পাশে অন্য খাটই বা থাকবে কেন, তিনি বিছানা ছেড়ে উঠতে পারবেনই বা না কেন, আর জানুয়ারি মাসে এমন  বিশ্রী গরমই বা পড়বে কেন।
এমন সব বিশ্রী চিন্তা মাথায় ঘোরাফেরা করছে এমন সময় পাশের খাট থেকে আওয়াজ এলো-
“না না, এটা স্বপ্ন নয় নিমাইবাবু। যেখানে আপনি শুয়ে আছেন সেটা খাট বটে, তবে ঠিক বিছানা বলা যায় না। ওইটে আপনার চিতা এইটে আমার। ওঠার চেষ্টা করে কোন লাভ নেই, বুঝলেন কী না!” 

Comments

Suhel Banerjee said…
Porer jonme jeno tor moto likhte pari.
Kuntala said…
সে কী, টাটকা বছরের শুরুতেই এত মৃত্যুচিন্তা কেন! খুব ভালো হয়েছে গল্পগুলো, তন্ময়।

Popular posts from this blog

গোয়েন্দা গল্প

- কিছু মনে করবেন না মিস্টার দত্ত...আপনার কথাবার্তাগুলো আর কিছুতেই সিরিয়াসলি নেওয়া যাচ্ছে না।  - কেন? কেন বলুন তো ইন্সপেক্টর? - ভোররাতে এই থানা থেকে একশো ফুট দূরত্বে ফুটপাথে আপনাকে উপুড় হয়ে শুয়ে থাকতে দেখা যায়।  - আপনার কনস্টেবল নিজের চোখে দেখেছে তো।  - না না, সে'টাকে আমি কোশ্চেন করছি না। আমি শুধু সামারাইজ করছি। আপনার গায়ে দামী চিকনের পাঞ্জাবী, ঘড়িটার ডায়ালও সোনার হলে অবাক হব না। এ'রকম কাউকে বড় একটা ফুটপাথে পড়ে থাকতে দেখা যায় না। যা হোক। হরিমোহন কনস্টেবলের কাঁধে ভর দিয়ে আপনি থানায় এলেন। জলটল খেয়ে সামান্য সুস্থ বোধ করলেন। অল ইজ ওয়েল। নিঃশ্বাসে অ্যালকোহলের সামান্যতম ট্রেসও নেই। শরীরে নেই কোনও চোট আঘাত।  - আমার কথা আমায় বলে কী লাভ হচ্ছে? আমি যে জরুরী ব্যাপারটা জানাতে মাঝরাতে ছুটে এসেছিলাম...সেই ব্যাপারটা দেখুন...। ব্যাপারটা আর্জেন্ট ইন্সপেক্টর মিশ্র।  - আর্জেন্সিতে পরে আসছি। রাত সাড়ে তিনটে নাগাদ আপনি থানায় ছুটে এসেছিলেন। ওয়েল অ্যান্ড গুড। কিন্তু...ফুটপাথে পড়ে রইলেন কেন...।  - এ'টাই, এ'টাই আমি ঠিক নিশ্চিত নই। মাথাটাথা ঘুরে গেছিল হয়ত। আফটার অল বা

পকেটমার রবীন্দ্রনাথ

১ । চাপা উত্তেজনায় রবীন্দ্রনাথের ভিতরটা এক্কেবারে ছটফট করছিল । তার হাতে ঝোলানো কালো পলিথিনের প্যাকেটে যে ' টা আছে , সে ' টা ভেবেই নোলা ছুকছাক আর বুক ধড়ফড় । এমনিতে আলুথালু গতিতে সে হেঁটে অভ্যস্ত । তাড়াহুড়ো তার ধাতে সয় না মোটে । কিন্তু আজ ব্যাপারটা আলাদা । সে মাংস নিয়ে ফিরছে । হোক না মোটে আড়াই ' শ গ্রাম , তবু , কচি পাঁঠা বলে কথা । সহৃদয় আলম মিয়াঁ উপরি এক টুকরো মেটেও দিয়ে দিয়েছে । তোফা ! নিজের লম্বা দাড়ি দুলিয়ে ডবল গতিতে পা চালিয়ে সে এগোচ্ছিল ।   গলির মোড়ের দিকে এসে পৌঁছতে রবীন্দ্রনাথের কেমন যেন একটু সন্দেহ হল । ঠিক যেন কেউ পিছু নিয়েছে । দু ' একবার ঘাড় ঘুরিয়েও অবশ্য কাউকে দেখা গেলনা । ভাবনা ঝেড়ে ফেলে মাংসের পাকেটটায় মন ফিরিয়ে আনলেন রবীন্দ্রনাথ । বৌ নিশ্চয়ই খুব খুশি হবে আজ । খোকাটাকে যে কদ্দিন মাংসের ঝোল খাওয়ানো হয়নি ।   খাসির রান্নার গন্ধ ভেবে বড় গান পাচ্ছিল রবীন্দ্রনাথের । সে বাধ্য হয়েই একটা কুমার শানুর গাওয়া আশিকি সিনেমার গান ধরলে ।

চ্যাটার্জীবাবুর শেষ ইচ্ছে

- মিস্টার চ্যাটার্জী...। - কে? - আমার নাম বিনোদ। - আমি তো আপনাকে ঠিক...। - আমায় বস পাঠিয়েছেন। - ওহ, মিস্টার চৌধুরী আপনাকে...। - বসের নামটাম নেওয়ার তো কোনও দরকার নেই। কাজ নিয়ে এসেছি। কাজ করে চলে যাব। - আসুন, ভিতরে আসুন। - আমি ভিতরে গিয়ে কী করব বলুন। সৌজন্যের তো আর তেমন প্রয়োজন নেই। আপনি চলুন আমার সঙ্গে। চটপট কাজ মিটে গেলে পৌনে এগারোটার লোকালটা পেয়ে যাব। আমায় আবার সেই সোনারপুর ফিরতে হবে। - যা করার তা কি এ'খানেই সেরে ফেলা যায়না? - এমন কনজেস্টেড এলাকায় ও'সব কাজ করা চলেনা। চুপচাপ ব্যাপারটা সেরে ফেলতে হবে। - প্লীজ দু'মিনিটের জন্য ভিতরে আসুন বিনোদবাবু। জামাটা অন্তত পালটে নিই। - কী দরকার বলুন জামা পালটে। - দরকার তেমন নেই। তবু। ওই, লাস্ট উইশ ধরে নিন। - ক্যুইক প্লীজ। ট্রেন ধরার তাড়াটা ভুলে যাবেন না। আর ইয়ে, পিছন দিক দিয়ে পালাতে চেষ্টা করে লাভ নেই। বসের লোকজন চারপাশে ছড়িয়ে আছে। - ও মা, ছি ছি। তা নয়। আসলে মিতুলের দেওয়া একটা জামা এখনও ভাঙা হয়নি। বাটিক প্রিন্টের হাফশার্ট। একটু ব্রাইট কালার কিন্তু বেশ একটা ইয়ে আছে। ও চলে যাওয়ার পর ও জামার ভাজ ভাঙতে ইচ্ছে হয়নি। কিন্তু...আজ না হয়...। - মিতু