Skip to main content

চক্র

১।
-হ্যালো, কী ব্যাপার...।
-হ্যালো...সেন সাহেব...সেন সাহেব...।
-কী ব্যাপার সামন্ত, তোমার গলা এমন শোনাচ্ছে কেন?
-আগুন সেন সাহেব...আগুন...।
-আগুন? কোথায়?
-ফ্যাক্টরি জুড়ে...।
-কী বলছো...সামন্ত...কী বলছো...ফিনিশ্‌ড স্টক? নতুন মেশিনারি?
-সব শেষ সেন সাহেব। সব শেষ। এত কিছু করেও পারলাম না স্যার...পারলাম না...।
-কখন লাগলো? দমকল?
-আধ ঘণ্টা আগে, কিন্তু এতটাই ছড়িয়ে গেছে যে...আর দমকলের এখনও দেখা নেই!
-কী শুনলাম সামন্ত। আমি যে পথে বসে গেলাম। আমার সব শেষ হয়ে গেল...।

২।
-বোসবাবু। হ্যালো। আমি সামন্ত।
-কাজ হয়েছে?
-আজ্ঞে।
-নতুন মেশিনারি?
-সব ছাই।
-ইউ আর এ গুড বয় সামন্ত। সেন জেনেছে?
-আমিই জানিয়েছি ফোন করে। এই কিছুক্ষণ আগে।
-কোন সন্দেহ করেনি তো সেন?
-না না। সে চিন্তা নেই। স্যার আমারটা...।
-কাল বিকেলের মধ্যে তোমার বাড়িতে পৌঁছে যাবে। ক্যাশে। আর শোন, আমায় আর তুমি কল করবে না।

৩।
-হ্যালো, ইন্সপেক্টর চ্যাটার্জি?
-কে বোসবাবু? বলুন। আপনার কাজটা তো হয়ে গেছে খবর পেলাম।
-এর মধ্যেই খবর চলে গেছে?
-এলাকার অত বড় কারখানায় আগুন লেগেছে, থানায় খবর আসতে কতক্ষণ।
-দেখবেন আমার ছেলেদের যেন আবার আপনি...।
-আরে মশাই সে চিন্তা কেন করছেন। আপনি শুধু এদিকের খেয়ালটা রাখবেন।
-আর শুনুন, ওই যে সামন্ত ছেলেটা...।
-যে আপনার হয়ে কাজটা করে দিয়েছে তো...।
-হুঁ। ছেলেটা প্যাঁচালো আছে। আজ সেনকে ধোঁকা দিয়েছে। কাল আমাকে দেবে না তার কী মানে? আমায় না ছুঁয়ে ওকে যদি...।
-আমি তুলে নেবো। প্যাঁদানির চোটে হালত এমন করব চাইলেও কিছু বলতে পারবে না। চিন্তা করবেন না। ঘুমিয়ে পড়ুন এবার নিশ্চিন্তে।

৪।
-হ্যালো, চক্রবর্তীবাবু? ইন্সপেক্টর চ্যাটার্জি বলছিলাম।
-কী ব্যাপার। ঘটনাটা ঘটে গেছে?
-এই ঘণ্টা খানেক আগে।
-কিন্তু স্রেফ সেনের সর্বনাশে আমার কী লাভ হে দারোগা?
-আপনার মূল টার্গেট। ইন্দ্র বোসই যে এ কাজ করিয়েছে তার সমস্ত  প্রমাণ আমার হাতে। অন্তত বছর পাঁচেকের ঘানি থেকে কেউ বাঁচাতে পারবে না।
-ইন্দ্র বোস যদি জালে ধরা না পড়ে তবে সেটা তোমার জন্য সুখবর হবে না দারোগা। উফ, সে ব্যাটা গত ইলেকশন থেকে আমার পার্টি ফান্ডে একটা কানা কড়িও ঢালেনি। উল্টে অপোজিশন মল্লিককে তোল্লাই দিয়ে গেছে। যাক। যা বললাম মনে থাকে যেন।

৫।
-হ্যালো, সুলেখা?
-কী ব্যাপার। এত রাত্রে পরস্ত্রীর মোবাইলে রাজ্যের মন্ত্রী ও পরম পূজ্য নেতা নরেন চক্রবর্তীর রসালো কল?
-পরস্ত্রী হয়ে তোমায় আর বেশিদিন থাকতে দিচ্ছি না নীলা। তোমার পতি, ওই ব্যাটা কোরাপ্ট হাড়-হারামি চ্যাটার্জি  দারোগাকে এমন ফাঁসান ফাঁসাতে চলেছি যে ওকে উর্দি খুলে ন্যাংটো হয়ে নাচতে হবে। চাকরি যাবে ব্যাটার শিগগির। এক ঢিলে দুই পাখি মেরেছি। বোস জেলে যাবে সেনের কারখানায় আগুন লাগাবার দায়ে আর তোমার পতিদেবতার বলি হবে বোসের থেকে ঘুষ নেওয়ার অপরাধে। দু’টোই পচবে জেলে। আর তুমি তখন ফ্রি বার্ড স্যুইটি।
-ফ্রি বার্ড না তোমার খাঁচার ময়না? কী বলো নেতা সোনা ?
-হে হে হে হে। ইউ আর সো স্যুইট সুলেখা।


***

৬।
সুলেখার হাত থেকে মোবাইল ফোনটা কেড়ে নিয়ে কাটলেন অনিল সেন। খুনসুটির মাঝে এমন ফোন বিরক্তিকর। সুলেখার মুখটা নিজের মুখের কাছে টেনে এনে একটা লম্বা চুমু খেলেন।
-নরেন চক্কোত্তির সাথে প্রেম নাটকের এবারে এখানেই না হয় ইতি টানলে সুলেখা।
-তোমার ফ্যাক্টরি জ্বলে পুড়ে ছাই, তবু এত সোহাগ কেন গো সেন সাহেব।
-সোহাগের এ আর কী দেখলে সুন্দরী। বোস ব্যাটাকে শায়েস্তা করা আর তোমার পুলিশ বর কে জেলে পোরা, দু’টো কাজই যে তুমি মিষ্টি ভাবে করে ফেলেছো চক্কোত্তির মাথায় প্রেমের হাত বুলিয়ে। থ্যাঙ্ক ইউ। নতুন মেশিন যেগুলো ছাই হয়ে গেল, সে ছাই এখন সোনা সুলেখা। ইনস্যুরেন্স আমায় রাজা করবে আর আমি তোমায় রানী করবো। এবার তাড়াতাড়ি কর, তোমার বরের নাইট ডিউটি শেষ হওয়ার আগেই আমাদের বেরিয়ে ফ্লাইট ধরতে হবে যে।  মরিশাস অ্যান্ড আ নিউ লাইফ ইজ ওয়েটিং ফর আস স্যুইট হার্ট।

***

৭।
অখিলেশ সামন্ত এয়ারপোর্টের বাইরে দাঁড়িয়েছিল। গালে তিনদিনের না কামানো দাড়ি। পরনের পোশাকটা ময়লা। ঘড়ির দিকে ঘন ঘন চোখ রাখছিল সে। ভোর হয়ে এলো বলে, ও যে কখন আসবে। ঠিক পাঁচটা বাজতে যখন সাত মিনিট বাকি, ট্যাক্সি থেকে নামলো একটা নীলচে শাড়ির আভা আর একটা বেঢপ লাল সুটকেস। চোখ আর প্রাণ জুড়িয়ে গেল সামন্তর।
-তোমার দেরী দেখে ভয়ে কাঠ হয়ে গেছিলাম সুলেখা।
-কথা বলার সময় নেই বেশি অখিলেশ। চটপট বোর্ডিং পাস নিতে হবে। চলো এগোই।
-সেন?
-এতক্ষণে নিশ্চয়ই মারা গেছে। শিশির সমস্তটা ঢেলে দিয়েছিলাম হুইস্কিতে। পাঁচ মিনিটের মধ্যেই মুখ থেকে গ্যাঁজলা বেরিয়ে এসেছে। এই নাও তোমার স্পেশাল পাসপোর্ট। অনিল সেনের এই জাল পাসপোর্টে তোমার ছবি লাগিয়ে বার করতে আমায় প্রায় আরও দু’একটা ছোট প্রেম করে ফেলতে হয়েছে। মনে রেখো, এ মুহূর্ত থেকে তুমি আর অখিলেশ সামন্ত নও। তুমি অনিল সেন। আসল অনিল সেনের খুনের খবর ছড়িয়ে পড়ার আগেই আমরা মরিশাসে, আমরা তখন মুক্ত অখিলেশ।
-ওই ইনস্যুরেন্সের টাকাটা?
-অনিল সেনের মরিশাসের অ্যাকাউন্টে এক মাসের মধ্যে ট্রান্সফার হয়ে যাবে। আর সেই অ্যাকাউন্টের গোপন ও একমাত্র নমিনি আমি। বুঝলেন? রাস্কেলটা ভেবেছিল আমায় নিয়ে মরিশাসে ফুর্তি করবে।
-তোমার নিয়ে তো কতজনে স্বপ্ন দেখেছে সুলেখা। যাক। কী রাত গেল বলো তো ? আমি একটা কারখানা পুড়িয়ে ছাই করে দিলাম। তুমি একটা খুন করে ফেললে।
-যা হয়েছে বাদ দাও অখিলেশ। মরিশাসে গিয়ে আমায় একটা সংসার দেবে প্লীজ?  

Comments

Anonymous said…
দারুণ লাগল!
Kuntala said…
এই লেখাটা খুব ভালো হয়েছে, তন্ময়।
Anonymous said…
Excellent blog here! Also your web site loads up fast!
What web host are you using? Can I get your affiliate link to your host?
I wish my website loaded up as fast as yours lol

My web page ... clash of clans hack galaxy s3
malabika said…
Again I wish to remember you that bongpen needs another part to be published as soon as possible.

Popular posts from this blog

গোয়েন্দা গল্প

- কিছু মনে করবেন না মিস্টার দত্ত...আপনার কথাবার্তাগুলো আর কিছুতেই সিরিয়াসলি নেওয়া যাচ্ছে না।  - কেন? কেন বলুন তো ইন্সপেক্টর? - ভোররাতে এই থানা থেকে একশো ফুট দূরত্বে ফুটপাথে আপনাকে উপুড় হয়ে শুয়ে থাকতে দেখা যায়।  - আপনার কনস্টেবল নিজের চোখে দেখেছে তো।  - না না, সে'টাকে আমি কোশ্চেন করছি না। আমি শুধু সামারাইজ করছি। আপনার গায়ে দামী চিকনের পাঞ্জাবী, ঘড়িটার ডায়ালও সোনার হলে অবাক হব না। এ'রকম কাউকে বড় একটা ফুটপাথে পড়ে থাকতে দেখা যায় না। যা হোক। হরিমোহন কনস্টেবলের কাঁধে ভর দিয়ে আপনি থানায় এলেন। জলটল খেয়ে সামান্য সুস্থ বোধ করলেন। অল ইজ ওয়েল। নিঃশ্বাসে অ্যালকোহলের সামান্যতম ট্রেসও নেই। শরীরে নেই কোনও চোট আঘাত।  - আমার কথা আমায় বলে কী লাভ হচ্ছে? আমি যে জরুরী ব্যাপারটা জানাতে মাঝরাতে ছুটে এসেছিলাম...সেই ব্যাপারটা দেখুন...। ব্যাপারটা আর্জেন্ট ইন্সপেক্টর মিশ্র।  - আর্জেন্সিতে পরে আসছি। রাত সাড়ে তিনটে নাগাদ আপনি থানায় ছুটে এসেছিলেন। ওয়েল অ্যান্ড গুড। কিন্তু...ফুটপাথে পড়ে রইলেন কেন...।  - এ'টাই, এ'টাই আমি ঠিক নিশ্চিত নই। মাথাটাথা ঘুরে গেছিল হয়ত। আফটার অল বা

পকেটমার রবীন্দ্রনাথ

১ । চাপা উত্তেজনায় রবীন্দ্রনাথের ভিতরটা এক্কেবারে ছটফট করছিল । তার হাতে ঝোলানো কালো পলিথিনের প্যাকেটে যে ' টা আছে , সে ' টা ভেবেই নোলা ছুকছাক আর বুক ধড়ফড় । এমনিতে আলুথালু গতিতে সে হেঁটে অভ্যস্ত । তাড়াহুড়ো তার ধাতে সয় না মোটে । কিন্তু আজ ব্যাপারটা আলাদা । সে মাংস নিয়ে ফিরছে । হোক না মোটে আড়াই ' শ গ্রাম , তবু , কচি পাঁঠা বলে কথা । সহৃদয় আলম মিয়াঁ উপরি এক টুকরো মেটেও দিয়ে দিয়েছে । তোফা ! নিজের লম্বা দাড়ি দুলিয়ে ডবল গতিতে পা চালিয়ে সে এগোচ্ছিল ।   গলির মোড়ের দিকে এসে পৌঁছতে রবীন্দ্রনাথের কেমন যেন একটু সন্দেহ হল । ঠিক যেন কেউ পিছু নিয়েছে । দু ' একবার ঘাড় ঘুরিয়েও অবশ্য কাউকে দেখা গেলনা । ভাবনা ঝেড়ে ফেলে মাংসের পাকেটটায় মন ফিরিয়ে আনলেন রবীন্দ্রনাথ । বৌ নিশ্চয়ই খুব খুশি হবে আজ । খোকাটাকে যে কদ্দিন মাংসের ঝোল খাওয়ানো হয়নি ।   খাসির রান্নার গন্ধ ভেবে বড় গান পাচ্ছিল রবীন্দ্রনাথের । সে বাধ্য হয়েই একটা কুমার শানুর গাওয়া আশিকি সিনেমার গান ধরলে ।

চ্যাটার্জীবাবুর শেষ ইচ্ছে

- মিস্টার চ্যাটার্জী...। - কে? - আমার নাম বিনোদ। - আমি তো আপনাকে ঠিক...। - আমায় বস পাঠিয়েছেন। - ওহ, মিস্টার চৌধুরী আপনাকে...। - বসের নামটাম নেওয়ার তো কোনও দরকার নেই। কাজ নিয়ে এসেছি। কাজ করে চলে যাব। - আসুন, ভিতরে আসুন। - আমি ভিতরে গিয়ে কী করব বলুন। সৌজন্যের তো আর তেমন প্রয়োজন নেই। আপনি চলুন আমার সঙ্গে। চটপট কাজ মিটে গেলে পৌনে এগারোটার লোকালটা পেয়ে যাব। আমায় আবার সেই সোনারপুর ফিরতে হবে। - যা করার তা কি এ'খানেই সেরে ফেলা যায়না? - এমন কনজেস্টেড এলাকায় ও'সব কাজ করা চলেনা। চুপচাপ ব্যাপারটা সেরে ফেলতে হবে। - প্লীজ দু'মিনিটের জন্য ভিতরে আসুন বিনোদবাবু। জামাটা অন্তত পালটে নিই। - কী দরকার বলুন জামা পালটে। - দরকার তেমন নেই। তবু। ওই, লাস্ট উইশ ধরে নিন। - ক্যুইক প্লীজ। ট্রেন ধরার তাড়াটা ভুলে যাবেন না। আর ইয়ে, পিছন দিক দিয়ে পালাতে চেষ্টা করে লাভ নেই। বসের লোকজন চারপাশে ছড়িয়ে আছে। - ও মা, ছি ছি। তা নয়। আসলে মিতুলের দেওয়া একটা জামা এখনও ভাঙা হয়নি। বাটিক প্রিন্টের হাফশার্ট। একটু ব্রাইট কালার কিন্তু বেশ একটা ইয়ে আছে। ও চলে যাওয়ার পর ও জামার ভাজ ভাঙতে ইচ্ছে হয়নি। কিন্তু...আজ না হয়...। - মিতু