Skip to main content

প্রফেসর ও রোবট

- এই যে, অমন জড়সড় হয়ে বাইরে দাঁড়িয়ে কেন অনির্বাণ? ভেতরে এসো।
- না না, আমি এখানেই ঠিক আছি।
- বোঝ। কী ব্যাপার। কোন কারণে রাগ করেছ?
- রাগ? করেছি। তবে তোমার ওপর নয়।
- আবার কার ওপর রাগ করলে বাবা অনির্বাণ। আরে শোন। আগে ভেতরে তো এসো।
- না।
- আচ্ছা এসো না। এসো। ঘরে আসলে আজই তোমার স্পাইনের লুব্রিকেটিং অয়েলটা পাল্টে দেব।
- সে তুমি অনেকদিন থেকে বলছো। দিচ্ছ না।
- আসলে পয়সাকড়ির একটু টান চলছিল কী না। সায়নেটিস্টদের নিয়মিত আয় আর কত বলো। আর রোবট বানানো সহজ, কিন্তু পোষা যে হাতির চেয়েও বেশি ডিফিকাল্ট। তোমার চেয়ে ভালো আর তা কে জানবে। এসো অনির্বাণ ভেতরে এসো। এসো। এসে দ্যাখ দেখি, তোমার সেন্সর কী বলছে আমার এই নতুন কাজগুলোর ব্যাপারে। এই তো। এসো। গুড বয়।
- তুমি এত জোর করলে তাই এলাম।
- আচ্ছা, কার ওপর এত রাগ তোমার অনির্বাণ?
- তুমি ছাড়া আর কে আছে এখানে যার ওপর রাগ করা যায়?
- অনিন্দ্য? অনিন্দ্যর ওপর রাগ করেছে।
- সে হারামজাদার নাম নিও না আমার সামনে।
- ছিঃ, ভকাবুলারি অ্যাবসর্ব করেছ গোটাটা তা ভালো কথা, কিন্তু তা বলে ভাষার এমন কদর্য  ব্যাবহার?

- তুমি জানো না অনিন্দ্য কী করেছে। জানলে তুমিও তাকে হারামজাদাই বলতে।আমার মত রোবট থাকতে কেন যে তুমি ওরকম একটা রোবট বানাতে গেলে...
- হে হে। বাবা অনির্বাণ। তুমি হলে কেজো প্রভু ভক্ত রোবট। তোমায় দিয়ে আমার ফাইফরমাশ চলে যায়। কিন্তু একজন আর্টিস্টয়ের ভারী দরকার হয়ে পড়ছিল আমার। সমঝা? আর্টিস্ট। তোমার প্রভুভক্তিতে যে প্রাণ ওষ্ঠাগত হয়ে উঠছিল। আমার সংসারে এমন একজনকে চাইছিলাম যে ভাবনা চিন্তায় নতুন রঙ আনবে, নতুন কিছু তৈরি করবে। শিল্পী হবে। যে তোমার মত দিনরাত আমার স্নানের জল তুলে,আমার ল্যাবরেটরি বুক-শেলফ সাফ করে আর আমার জন্য ভাত মাছের ঝোল করে হদ্দ হয়ে যাবে না। সে আমার জন্যে ছবি আঁকবে, গান শোনাবে, বাগানে নতুন ফুল ফোটাবে।  যার সঙ্গে দু’টো রসের কথা চলতে পারে। আর যে প্রয়োজনে আমার সঙ্গে তুফানি তর্ক  জুড়তে পারে। তাই অনিন্দ্যকে বানিয়েছি। তোমাকে বানাতে আমার বেশি বেগ পেতে হয়নি, কল কব্জা জুড়ে দিতেই তুমি তৈয়ার। বরং অনিন্দ্যকে বানাতে আমার বহু রাত জেগে কাটাতে হয়েছে।আফটার অল শিল্পী বানানো তো চাট্টিখানি কথা নয়। সব চেয়ে বেশি বেগ পেতে হয়েছে ওর মধ্যে সেন্স অফ হিউমর প্রোগ্রাম করতে গিয়ে। হিউমর ছাড়া কী আর্ট দাঁড়াতে পারে?
- তোমার কথা শুনে আমার মনে হচ্ছে যেন আমার ভেতরের সার্কিট জ্বলে যাচ্ছে।
- এত রাগ তোমার অনিন্দ্যর প্রতি?
- হারামজাদা।
- তোমাকে কতবার বলেছি অনির্বাণ, অমন ভাষা ব্যাবহার না করতে।
- বেশ করেছি করবো।
- ইন্টারেস্টিং, তোমার ভেতরে জেদ, অসভ্যতা বা স্বেচ্ছাচার কিন্তু আমি প্রোগ্রাম করিনি। এটা তুমি নিজে থেকে আয়ত্ত করেছ। অ্যামেজিং। বিজ্ঞানের পয়েন্ট অফ ভিউ থেকে অভাবনীয়।
- তুমি জানো অনিন্দ্য কী করেছে?
- কী করেছে?
- সে বলেছে তোমার দাড়ি নাকি রামছাগলের  মত।
- অ্যাঁ? সে তাই বলেছে? আমার দাড়ি রামছাগলের মত?
- শুধু তাই না, একটা ছবিও এঁকেছিল সে। তোমাকে আর রামছাগলকে মিশিয়ে একটা জন্তুর ছবি। বীভৎস। কী দুঃসাহস।
- তাই নাকি ? রিয়েলি? হা হা হা হা হা হা...!!
- তুমি হাসছো প্রফেসর? তুমি ওকে বানিয়েছ! আর ওই হারামজাদা তোমাকে নিয়েই ছবি আঁকছে। আর তুমি হাসছো?
- এ তো মজার ব্যাপার। ওই যে বললাম সেন্স অফ হিউমর যে সবার উপরে অনির্বাণবাবু। হো হো হো, রামছাগল আর আমি মেশানো ছবি...হে হে হে হে...!!
- অসহ্য!। তুমি হারামজাদাকে মাফ করছো? যাক। বদলা আমিই নিয়েছি।
- বদলা নিয়েছ? সে কী! কী করেছ তুমি অনির্বাণ?
- তুমি আমার সৃষ্টিকর্তা। তুমি তোমার নিজের প্রতি ছুঁড়ে দেওয়া ঠাট্টার প্রতি উদাসীন থাকতে পারো কিন্তু আমি বরদাস্ত করবো না। আমি এক বোতল কনসেন্ট্রেটেড সালফিউরিক অ্যাসিড ঢেলে দিয়েছি অনিন্দ্যর গায়ে। ওর ইন্টারনাল সমস্ত সার্কিট আর মাদারবোর্ড জ্বলে খাক হয়ে গিয়েছে প্রফেসর। ও হারামজাদা খতম।
- কী???? কী বলছো অনির্বাণ??
- দুপুরে কী রান্না করবো আজ প্রফেসর?
- তুমি অনিন্দ্যকে শেষ করে দিয়েছো অনির্বাণ? তুমি আমার জীবনের সর্বশ্রেষ্ঠ সৃষ্টিকে শেষ করে দিয়েছ অনির্বাণ? হাউ কুড ইউ? এ তুমি কী করলে অনির্বাণ?
- মাছের ঝোল খাবে না ভাজা খাবে আজ দুপুরে প্রফেসর?
- এ তুমি কী করলে অনির্বাণ ? কী ভাবে করলে? আমি তোমায় না শেখানো সত্ত্বেও তুমি খুন করা শিখলে? তুমি উন্মাদ বনে যাওয়া শিখলে কার থেকে? এ কী হচ্ছে...
- ট্যাঙরা মাছ আছে। ঝোলে কী ধনেপাতা দেব ?
- তুমি উন্মাদ হয়ে গেছ অনির্বাণ...।
- প্রফেসর। আমার বিশ্বাস আগে। আমার বিশ্বাস তোমায় জুড়ে হতে পারে। কিন্তু বিশ্বাসের চেয়ে কেউ বড় নয়, তুমিও নয়। আর একবার যদি আমায় ঘা দিয়ে কথা বলো...তাহলে তোমাকেও...
- অনির্বাণ...
- ট্যাংরার ঝোলে বড়ি দেব তো প্রফেসর? তুমি তো সেভাবেই ভালো খাও, তাই তো?  

Comments

Anonymous said…
True said my dear friend. ... blind love and religion without reasoning is deadly mental condition.

Popular posts from this blog

গোয়েন্দা গল্প

- কিছু মনে করবেন না মিস্টার দত্ত...আপনার কথাবার্তাগুলো আর কিছুতেই সিরিয়াসলি নেওয়া যাচ্ছে না।  - কেন? কেন বলুন তো ইন্সপেক্টর? - ভোররাতে এই থানা থেকে একশো ফুট দূরত্বে ফুটপাথে আপনাকে উপুড় হয়ে শুয়ে থাকতে দেখা যায়।  - আপনার কনস্টেবল নিজের চোখে দেখেছে তো।  - না না, সে'টাকে আমি কোশ্চেন করছি না। আমি শুধু সামারাইজ করছি। আপনার গায়ে দামী চিকনের পাঞ্জাবী, ঘড়িটার ডায়ালও সোনার হলে অবাক হব না। এ'রকম কাউকে বড় একটা ফুটপাথে পড়ে থাকতে দেখা যায় না। যা হোক। হরিমোহন কনস্টেবলের কাঁধে ভর দিয়ে আপনি থানায় এলেন। জলটল খেয়ে সামান্য সুস্থ বোধ করলেন। অল ইজ ওয়েল। নিঃশ্বাসে অ্যালকোহলের সামান্যতম ট্রেসও নেই। শরীরে নেই কোনও চোট আঘাত।  - আমার কথা আমায় বলে কী লাভ হচ্ছে? আমি যে জরুরী ব্যাপারটা জানাতে মাঝরাতে ছুটে এসেছিলাম...সেই ব্যাপারটা দেখুন...। ব্যাপারটা আর্জেন্ট ইন্সপেক্টর মিশ্র।  - আর্জেন্সিতে পরে আসছি। রাত সাড়ে তিনটে নাগাদ আপনি থানায় ছুটে এসেছিলেন। ওয়েল অ্যান্ড গুড। কিন্তু...ফুটপাথে পড়ে রইলেন কেন...।  - এ'টাই, এ'টাই আমি ঠিক নিশ্চিত নই। মাথাটাথা ঘুরে গেছিল হয়ত। আফটার অল বা

পকেটমার রবীন্দ্রনাথ

১ । চাপা উত্তেজনায় রবীন্দ্রনাথের ভিতরটা এক্কেবারে ছটফট করছিল । তার হাতে ঝোলানো কালো পলিথিনের প্যাকেটে যে ' টা আছে , সে ' টা ভেবেই নোলা ছুকছাক আর বুক ধড়ফড় । এমনিতে আলুথালু গতিতে সে হেঁটে অভ্যস্ত । তাড়াহুড়ো তার ধাতে সয় না মোটে । কিন্তু আজ ব্যাপারটা আলাদা । সে মাংস নিয়ে ফিরছে । হোক না মোটে আড়াই ' শ গ্রাম , তবু , কচি পাঁঠা বলে কথা । সহৃদয় আলম মিয়াঁ উপরি এক টুকরো মেটেও দিয়ে দিয়েছে । তোফা ! নিজের লম্বা দাড়ি দুলিয়ে ডবল গতিতে পা চালিয়ে সে এগোচ্ছিল ।   গলির মোড়ের দিকে এসে পৌঁছতে রবীন্দ্রনাথের কেমন যেন একটু সন্দেহ হল । ঠিক যেন কেউ পিছু নিয়েছে । দু ' একবার ঘাড় ঘুরিয়েও অবশ্য কাউকে দেখা গেলনা । ভাবনা ঝেড়ে ফেলে মাংসের পাকেটটায় মন ফিরিয়ে আনলেন রবীন্দ্রনাথ । বৌ নিশ্চয়ই খুব খুশি হবে আজ । খোকাটাকে যে কদ্দিন মাংসের ঝোল খাওয়ানো হয়নি ।   খাসির রান্নার গন্ধ ভেবে বড় গান পাচ্ছিল রবীন্দ্রনাথের । সে বাধ্য হয়েই একটা কুমার শানুর গাওয়া আশিকি সিনেমার গান ধরলে ।

চ্যাটার্জীবাবুর শেষ ইচ্ছে

- মিস্টার চ্যাটার্জী...। - কে? - আমার নাম বিনোদ। - আমি তো আপনাকে ঠিক...। - আমায় বস পাঠিয়েছেন। - ওহ, মিস্টার চৌধুরী আপনাকে...। - বসের নামটাম নেওয়ার তো কোনও দরকার নেই। কাজ নিয়ে এসেছি। কাজ করে চলে যাব। - আসুন, ভিতরে আসুন। - আমি ভিতরে গিয়ে কী করব বলুন। সৌজন্যের তো আর তেমন প্রয়োজন নেই। আপনি চলুন আমার সঙ্গে। চটপট কাজ মিটে গেলে পৌনে এগারোটার লোকালটা পেয়ে যাব। আমায় আবার সেই সোনারপুর ফিরতে হবে। - যা করার তা কি এ'খানেই সেরে ফেলা যায়না? - এমন কনজেস্টেড এলাকায় ও'সব কাজ করা চলেনা। চুপচাপ ব্যাপারটা সেরে ফেলতে হবে। - প্লীজ দু'মিনিটের জন্য ভিতরে আসুন বিনোদবাবু। জামাটা অন্তত পালটে নিই। - কী দরকার বলুন জামা পালটে। - দরকার তেমন নেই। তবু। ওই, লাস্ট উইশ ধরে নিন। - ক্যুইক প্লীজ। ট্রেন ধরার তাড়াটা ভুলে যাবেন না। আর ইয়ে, পিছন দিক দিয়ে পালাতে চেষ্টা করে লাভ নেই। বসের লোকজন চারপাশে ছড়িয়ে আছে। - ও মা, ছি ছি। তা নয়। আসলে মিতুলের দেওয়া একটা জামা এখনও ভাঙা হয়নি। বাটিক প্রিন্টের হাফশার্ট। একটু ব্রাইট কালার কিন্তু বেশ একটা ইয়ে আছে। ও চলে যাওয়ার পর ও জামার ভাজ ভাঙতে ইচ্ছে হয়নি। কিন্তু...আজ না হয়...। - মিতু