Skip to main content

গীতা দত্ত আর গানের ল্যাজামুড়ো



গানের ল্যাজামুড়ো বোঝা হলো না৷ সে বোঝা না বোঝায় অবশ্য ভালোবাসা আটকে নেই৷ এই যেমন চাষবাস জানা নেই বলে তো আর ঝোল দিয়ে ভাত সাপটে মেখে খাওয়াটা আটকে থাকে না। সুরের ওঠানামা, রাগরাগিণীর ক্যালকুলাস, ক্লাস-বনাম-মাস; অধ্যাবসায়ের অভাবে এ'সব জরুরী কনসেপ্টগুলো সম্বন্ধে সঠিক ধারণা গড়ে তোলা গেল না৷ তবে ভালোবাসাটুকু নিপাট৷
সে ভালোবাসার টানেই ভোররাতে মেসের ঢাউস জানালার ধারে বসে থাকা ছেলেটার বুকের ভিতরে একটা বিদঘুটে ভালোলাগা আর বেঢপ কান্না মেশানো অনুভূতি তৈরি হয়, রেডিওয় সুমনের জাতিস্মর শুনে৷ সে ভালোবাসায় হেমন্তর সুরে ঘুরপাক খেতে খেতে যাবতীয় গোপন যন্ত্রণা মেরামত করে নেওয়া যায়৷
আর সেই ভালোবাসাতেই নতজানু হয়ে একটা সত্যি স্বীকার করে নেওয়াই যায়৷ গীতা দত্তর কণ্ঠ শুনে 'আহা দিব্যি' বা 'কী সাংঘাতিক ভালো' মার্কা সেলুট ঠুকবে না, এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া চাট্টিখানি কথা নয়৷ আর পাঁচজনের মত আমিও শুনে আসছি, সেই ছেলেবেলা থেকে৷ স্মার্ট, রোম্যান্টিক, মায়াবী কণ্ঠ৷ কিন্তু সেই ভালো লাগাটুকুই গীতা দত্ত প্রসঙ্গে শেষ কথা নয়৷ আচমকা একদিন সমস্ত চেনা ভালো লাগাগুলোকে হুশ্ করে উড়িয়ে দিয়ে এক অচেনা গীতা দত্ত মনের মধ্যে উজ্জ্বল হয়ে উঠবে। সে'টাই নিয়ম বোধ হয়৷
আটপৌরে ভালোলাগায় সে নতুন ভাবে আবিষ্কার করে কণ্ঠের বর্ণনা হয় না৷ নিশির ডাকের যে গা ছমছম, শিউলি সুবাস মাখানো যে স্নেহ আর শীতের রাতে আচমকা ঘুম থেকে উঠে ছলছলে চোখে সাতপুরনো চিঠির উত্তর লিখতে বসার যে আনচান; সে'সমস্ত মিলেমিশে গড়ে ওঠা এক অন্য গীতা দত্তকে আবিষ্কার করার জন্যই যেন বহুবছরের অপেক্ষা৷ হাজারবার শোনা, সুপরিচিত গানগুলো নতুন ভাবে কানে এসে ঠেকবে৷ খানিকটা ভূতের ভয়ের মত ঘাড়ে চেপে বসবে সেই গানগুলোর নেশা৷
আজীবন গীতা দত্তর গানের ভক্ত হয়ে থাকাটা নেহাতই সহজ৷ কিন্তু প্রবল পাগলামোর মুহূর্তে, দুম করে এক অন্য গীতা দত্তকে আবিষ্কার করাই বোধ হয় গীতা দত্তর ম্যাজিকের নাগাল পাওয়ার একমাত্র উপায়। গীতা দত্তর সুরের আদত রোম্যান্সকে হয়ত প্রতিটি মানুষই এমনভাবে দু'ধাপে চিনতে পারেন৷ আর একবার সে পাগলাটে ভালোবাসা চিনতে পারলে আর মুক্তি নেই৷ অথবা হয়ত সে'খানেই মুক্তি৷

Comments

Popular posts from this blog

গোয়েন্দা গল্প

- কিছু মনে করবেন না মিস্টার দত্ত...আপনার কথাবার্তাগুলো আর কিছুতেই সিরিয়াসলি নেওয়া যাচ্ছে না।  - কেন? কেন বলুন তো ইন্সপেক্টর? - ভোররাতে এই থানা থেকে একশো ফুট দূরত্বে ফুটপাথে আপনাকে উপুড় হয়ে শুয়ে থাকতে দেখা যায়।  - আপনার কনস্টেবল নিজের চোখে দেখেছে তো।  - না না, সে'টাকে আমি কোশ্চেন করছি না। আমি শুধু সামারাইজ করছি। আপনার গায়ে দামী চিকনের পাঞ্জাবী, ঘড়িটার ডায়ালও সোনার হলে অবাক হব না। এ'রকম কাউকে বড় একটা ফুটপাথে পড়ে থাকতে দেখা যায় না। যা হোক। হরিমোহন কনস্টেবলের কাঁধে ভর দিয়ে আপনি থানায় এলেন। জলটল খেয়ে সামান্য সুস্থ বোধ করলেন। অল ইজ ওয়েল। নিঃশ্বাসে অ্যালকোহলের সামান্যতম ট্রেসও নেই। শরীরে নেই কোনও চোট আঘাত।  - আমার কথা আমায় বলে কী লাভ হচ্ছে? আমি যে জরুরী ব্যাপারটা জানাতে মাঝরাতে ছুটে এসেছিলাম...সেই ব্যাপারটা দেখুন...। ব্যাপারটা আর্জেন্ট ইন্সপেক্টর মিশ্র।  - আর্জেন্সিতে পরে আসছি। রাত সাড়ে তিনটে নাগাদ আপনি থানায় ছুটে এসেছিলেন। ওয়েল অ্যান্ড গুড। কিন্তু...ফুটপাথে পড়ে রইলেন কেন...।  - এ'টাই, এ'টাই আমি ঠিক নিশ্চিত নই। মাথাটাথা ঘুরে গেছিল হয়ত। আফটার অল বা

পকেটমার রবীন্দ্রনাথ

১ । চাপা উত্তেজনায় রবীন্দ্রনাথের ভিতরটা এক্কেবারে ছটফট করছিল । তার হাতে ঝোলানো কালো পলিথিনের প্যাকেটে যে ' টা আছে , সে ' টা ভেবেই নোলা ছুকছাক আর বুক ধড়ফড় । এমনিতে আলুথালু গতিতে সে হেঁটে অভ্যস্ত । তাড়াহুড়ো তার ধাতে সয় না মোটে । কিন্তু আজ ব্যাপারটা আলাদা । সে মাংস নিয়ে ফিরছে । হোক না মোটে আড়াই ' শ গ্রাম , তবু , কচি পাঁঠা বলে কথা । সহৃদয় আলম মিয়াঁ উপরি এক টুকরো মেটেও দিয়ে দিয়েছে । তোফা ! নিজের লম্বা দাড়ি দুলিয়ে ডবল গতিতে পা চালিয়ে সে এগোচ্ছিল ।   গলির মোড়ের দিকে এসে পৌঁছতে রবীন্দ্রনাথের কেমন যেন একটু সন্দেহ হল । ঠিক যেন কেউ পিছু নিয়েছে । দু ' একবার ঘাড় ঘুরিয়েও অবশ্য কাউকে দেখা গেলনা । ভাবনা ঝেড়ে ফেলে মাংসের পাকেটটায় মন ফিরিয়ে আনলেন রবীন্দ্রনাথ । বৌ নিশ্চয়ই খুব খুশি হবে আজ । খোকাটাকে যে কদ্দিন মাংসের ঝোল খাওয়ানো হয়নি ।   খাসির রান্নার গন্ধ ভেবে বড় গান পাচ্ছিল রবীন্দ্রনাথের । সে বাধ্য হয়েই একটা কুমার শানুর গাওয়া আশিকি সিনেমার গান ধরলে ।

চ্যাটার্জীবাবুর শেষ ইচ্ছে

- মিস্টার চ্যাটার্জী...। - কে? - আমার নাম বিনোদ। - আমি তো আপনাকে ঠিক...। - আমায় বস পাঠিয়েছেন। - ওহ, মিস্টার চৌধুরী আপনাকে...। - বসের নামটাম নেওয়ার তো কোনও দরকার নেই। কাজ নিয়ে এসেছি। কাজ করে চলে যাব। - আসুন, ভিতরে আসুন। - আমি ভিতরে গিয়ে কী করব বলুন। সৌজন্যের তো আর তেমন প্রয়োজন নেই। আপনি চলুন আমার সঙ্গে। চটপট কাজ মিটে গেলে পৌনে এগারোটার লোকালটা পেয়ে যাব। আমায় আবার সেই সোনারপুর ফিরতে হবে। - যা করার তা কি এ'খানেই সেরে ফেলা যায়না? - এমন কনজেস্টেড এলাকায় ও'সব কাজ করা চলেনা। চুপচাপ ব্যাপারটা সেরে ফেলতে হবে। - প্লীজ দু'মিনিটের জন্য ভিতরে আসুন বিনোদবাবু। জামাটা অন্তত পালটে নিই। - কী দরকার বলুন জামা পালটে। - দরকার তেমন নেই। তবু। ওই, লাস্ট উইশ ধরে নিন। - ক্যুইক প্লীজ। ট্রেন ধরার তাড়াটা ভুলে যাবেন না। আর ইয়ে, পিছন দিক দিয়ে পালাতে চেষ্টা করে লাভ নেই। বসের লোকজন চারপাশে ছড়িয়ে আছে। - ও মা, ছি ছি। তা নয়। আসলে মিতুলের দেওয়া একটা জামা এখনও ভাঙা হয়নি। বাটিক প্রিন্টের হাফশার্ট। একটু ব্রাইট কালার কিন্তু বেশ একটা ইয়ে আছে। ও চলে যাওয়ার পর ও জামার ভাজ ভাঙতে ইচ্ছে হয়নি। কিন্তু...আজ না হয়...। - মিতু