Monday, December 27, 2021

গীতা দত্ত আর গানের ল্যাজামুড়ো



গানের ল্যাজামুড়ো বোঝা হলো না৷ সে বোঝা না বোঝায় অবশ্য ভালোবাসা আটকে নেই৷ এই যেমন চাষবাস জানা নেই বলে তো আর ঝোল দিয়ে ভাত সাপটে মেখে খাওয়াটা আটকে থাকে না। সুরের ওঠানামা, রাগরাগিণীর ক্যালকুলাস, ক্লাস-বনাম-মাস; অধ্যাবসায়ের অভাবে এ'সব জরুরী কনসেপ্টগুলো সম্বন্ধে সঠিক ধারণা গড়ে তোলা গেল না৷ তবে ভালোবাসাটুকু নিপাট৷
সে ভালোবাসার টানেই ভোররাতে মেসের ঢাউস জানালার ধারে বসে থাকা ছেলেটার বুকের ভিতরে একটা বিদঘুটে ভালোলাগা আর বেঢপ কান্না মেশানো অনুভূতি তৈরি হয়, রেডিওয় সুমনের জাতিস্মর শুনে৷ সে ভালোবাসায় হেমন্তর সুরে ঘুরপাক খেতে খেতে যাবতীয় গোপন যন্ত্রণা মেরামত করে নেওয়া যায়৷
আর সেই ভালোবাসাতেই নতজানু হয়ে একটা সত্যি স্বীকার করে নেওয়াই যায়৷ গীতা দত্তর কণ্ঠ শুনে 'আহা দিব্যি' বা 'কী সাংঘাতিক ভালো' মার্কা সেলুট ঠুকবে না, এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া চাট্টিখানি কথা নয়৷ আর পাঁচজনের মত আমিও শুনে আসছি, সেই ছেলেবেলা থেকে৷ স্মার্ট, রোম্যান্টিক, মায়াবী কণ্ঠ৷ কিন্তু সেই ভালো লাগাটুকুই গীতা দত্ত প্রসঙ্গে শেষ কথা নয়৷ আচমকা একদিন সমস্ত চেনা ভালো লাগাগুলোকে হুশ্ করে উড়িয়ে দিয়ে এক অচেনা গীতা দত্ত মনের মধ্যে উজ্জ্বল হয়ে উঠবে। সে'টাই নিয়ম বোধ হয়৷
আটপৌরে ভালোলাগায় সে নতুন ভাবে আবিষ্কার করে কণ্ঠের বর্ণনা হয় না৷ নিশির ডাকের যে গা ছমছম, শিউলি সুবাস মাখানো যে স্নেহ আর শীতের রাতে আচমকা ঘুম থেকে উঠে ছলছলে চোখে সাতপুরনো চিঠির উত্তর লিখতে বসার যে আনচান; সে'সমস্ত মিলেমিশে গড়ে ওঠা এক অন্য গীতা দত্তকে আবিষ্কার করার জন্যই যেন বহুবছরের অপেক্ষা৷ হাজারবার শোনা, সুপরিচিত গানগুলো নতুন ভাবে কানে এসে ঠেকবে৷ খানিকটা ভূতের ভয়ের মত ঘাড়ে চেপে বসবে সেই গানগুলোর নেশা৷
আজীবন গীতা দত্তর গানের ভক্ত হয়ে থাকাটা নেহাতই সহজ৷ কিন্তু প্রবল পাগলামোর মুহূর্তে, দুম করে এক অন্য গীতা দত্তকে আবিষ্কার করাই বোধ হয় গীতা দত্তর ম্যাজিকের নাগাল পাওয়ার একমাত্র উপায়। গীতা দত্তর সুরের আদত রোম্যান্সকে হয়ত প্রতিটি মানুষই এমনভাবে দু'ধাপে চিনতে পারেন৷ আর একবার সে পাগলাটে ভালোবাসা চিনতে পারলে আর মুক্তি নেই৷ অথবা হয়ত সে'খানেই মুক্তি৷

No comments: