Skip to main content

জগা মল্লিকের শাস্তি



- ব্রাদার৷ ও ব্রাদার। শুনছেন? জ্ঞান ফিরেছে?
- উঁ..।
- গা হাত পায়ে খুব ব্যথা নাকি? ব্রাদার? এহ্, আমার স্যাঙ্গাৎগুলো আপনাকে একটু বেশিই মারধোর করেছে। গোমুখ্যু ছেলেপিলে তো, মডারেশন ব্যাপারটা বোঝে না৷ তবে ভাববেন না৷ আমি ওদের খুব এক চোট ধমক দিয়েছি৷
- আমায় এ'ভাবে এদ্দিন আটকে রাখার মানে কী।
- এদ্দিন আবার কী৷ মাস তিনেকের বেশি তো হয়নি৷ বাড়ি ফিরে গুগুল ঘেঁটে দেখবেন শ্যামলবাবু৷ আপনার আগে বহু মানুষ মাসের পর মাস বন্দী থেকেছেন৷
- কী চান আপনারা৷ সে'টা তো এদ্দিনেও..।
- বলিনি৷ কারণ র্যানসম ট্যানসম নিয়ে আমরা মাথা ঘামাইনা৷ আমরা পেটি ক্রিমিনাল নই শ্যামলদা৷ কিছু মাইন্ড করবেন না, বাবুটাবু আমার পোষায় না৷ শ্যামলদাই ভালো৷ তাই তো?
- আপনারা টেররিস্ট?
- আমরা ভোট চাইলে আমাদের টেররিস্ট বলতেন না৷ তাই না?
- আপনি..আপনি কে?
- ওহ, আমার নাম জানা নেই বলে আলাপচারিতায় অসুবিধে হচ্ছে৷ তাই না ব্রাদার? বেশ৷ ধরুন আমার নাম জগা মল্লিক।
- কী চাই?
- আপনাকে মুক্তি দিতে চাই শ্যামলদা৷ মুক্তি৷
- এ'সব বাজে কথার কী মানে?
- বটেই তো৷ পার্লামেন্টে দাঁড়িয়ে কথা বলছি না৷ আপনার মত সিভিলাইজড মানুষের কানে সে'সব বাজেই ঠেকবে৷
- এদ্দিন তো আমার সঙ্গে কথা বলেননি৷ আজ হঠাৎ..।
- ওই যে বললাম৷ আজ আপনার মুক্তি৷ আপনাকে আমরা ছেড়ে দিতে চাই৷ এই ভজা, শ্যামলদার হাতের বাঁধনটা খুলে দে বাপ৷ তবে পা আর কোমরটা আপাতত বাঁধাই থাক।
- আপনার মতলবটা কী?
- আপনি আমলা মানুষ৷ ইন্টেলিজেন্স তালেবর। সো কলড টেররিজমের বিরুদ্ধে নিবেদিত প্রাণ৷ আপনাকে রগড়ে দেওয়াটাই উদ্দেশ্য ছিল৷ তবে আমরা ঠিক করেছি আপনাকে ছেড়ে দেব৷ আফটার অল আপনার বৌ-মেয়ে নির্দোষ৷ আপনার অপেক্ষায় তারা নাওয়াখাওয়া ভুলে বসে আছে৷ দে ডিজার্ভ পীস৷
- বলে যান৷
- একটা ছোট্ট কাজ আপনাকে করতে হবে৷ মানে কাজটা এতই এলেবেলে যে বলতেও লজ্জা লাগছে৷ কিন্তু কী করি বলুন৷ আমারও ওপরওলা আছে৷ এই নিন৷ এই রিমোটটা ধরুন।
- এ'টা...এ'টা কী..।
- আরে! সাধারণ রিমোট৷ আপনাকে শুধু ওই বোতামটা টিপতে হবে৷ কাজটা নেহাতই পাতি৷ আমরাও সেরে ফেলতেই পারি৷ কিন্তু আমরা চাইছি এই পুণ্যটা আপনার কপালেই থাক৷ নিন, বোতামটা টিপুন৷ তারপর ভজা আপনার বাকি বাঁধনগুলো খুলে, মাছের ঝোল ভাত-চাটনি-সন্দেশ খাইয়ে, আপনাকে ট্যাক্সি করে বাড়ি দিয়ে আসবে৷
- এই বোতামটা টিপলে কী হবে?
- এ'সব ছেলেমানুষি প্রশ্ন আপনাকে মানায়? দোর্দণ্ডপ্রতাপশালী শ্যামল দত্তর মুখে এমন নেকু প্রশ্ন মানায়?
- কী হবে?
- হাজার খানেক লোক সমেত কোনও ট্রেনে উড়ে যাবে হয়ত৷ অথবা ধরুন জমজমাট একটা গোটা বাজার ফুশ্ করে গায়েব৷ বলা যায় না, হাওড়া ব্রিজটাই হয়ত উবে যাবে৷ পসিবিলিটিস আর এন্ডলেস৷ তবে সে'সব ভেবে আপনার কাজ নেই৷ আসুন৷ বোতামটা টিপুন৷ অ্যান্ড দেন, মুক্তি৷ প্রমিস৷
**
মেয়ের মুখ বারবার মনে পড়ে৷ বুক ফেটে যায় শ্যামল দত্তের৷ কাছেই একটা টুলের ওপর রাখা রিমোটটা মাঝেমধ্যেই নেড়েচেড়ে দেখেন৷ হাত বোলান সে রিমোটের প্লাস্টিকে৷ কাঁপা কাঁপা আঙুলে হালকা স্পর্শ করেন লাল বোতামটা৷ আর তারপর সাবধানে সেই টুলের ওপর রেখে দেন৷
এ'ভাবেই কতদিন কেটে গেল৷ প্রতি মুহূর্তে মুক্তির হাতছানি; সে হাতছানি যে কী যন্ত্রণার৷ খুকির মুখ তাকে টানে, আবার খুকির মুখটাই মনে করিয়ে দেয় আর পাঁচটা খুকির প্রাণ তাঁর হাতের মুঠোয়৷ মাসখানেক পর সমস্ত বাঁধনই খুলে দিয়েছিল জগা মল্লিকের স্যাঙাৎরা৷ বন্দী হলেও হাঁটাচলা আটকে থাকেনি৷ শুধু সেই রিমোটটার দিকে তাকিয়ে প্রতি মুহূর্তে অজস্রবার ছিন্নভিন্ন হতেন শ্যামল৷
**
- ব্রাদার।
- জ..জগা..জগা মল্লিক?
- নামটা সাজানো নয় স্যার৷ এত বছর পরেও আপনি মনে রেখেছেন, থ্যাঙ্কিউ।
- আমি যার আস্তানায় বন্দী, তার নাম ভোলাটা গোস্তাখি।
- কেমন বোধ করছেন?
- এ'বারে সত্যিই মুক্তি হে জগা।
- ডাক্তার আজ আপনাকে দেখে গেলেন। ঘুমিয়েছিলেন আপনি।
- ডাক্তারির আওতায় আর কি আছি হে? এ'বার মুক্তি৷ দিন কয়েক, বড়জোর৷ তোমার রিমোটের বোতাম আর টিপতে হল না৷ এই বাঁচোয়া।
- তেরোটা বছর এইভাবে থেকে গেলেন৷ অথচ রিমোটের বোতামটা টিপলেই আপনি বেরিয়ে যেতে পারতেন৷
- আমায় খুন করতেই পারতে৷ তবে আমায় দিয়ে অকারণ মানুষ খুন করাতে পারবে না৷ কিছুতেই না৷ তা, ক'জন মারা যেত আমি এ বোতাম টিপলে?
- একজন।
- হুম?
- আমাদের দল আমায় বিশ্বাসঘাতক ভেবেছিল। আমার শাস্তিবিধান কী ছিল জানেন? আমার বন্দী..অর্থাৎ আপনার হাতে নিজের মেয়ের খুন হতে দেখা৷ আমার মেয়ে গত তেরো বছর একটা লকেট পরে রয়েছে৷ যে'টা সঙ্গে সঙ্গে তারও উড়ে যাওয়ার কথা, আপনি এই রিমোটের বোতাম টিপলে।
- জগা..!
- নিজের খুকির থেকে নিজেকে দূরে সরিয়ে রেখে আমার খুকিকে আপনি বাঁচিয়ে রেখেছেন শ্যামলদা৷ এ পাপ থেকে আমার মুক্তি নেই জানি৷ শুধু পারলে বিশ্বাস করবেন..আপনার খুকিকে আমি ভেসে যেতে দিইনি৷ আড়াল থেকে হলেও তাকে আগলে রেখেছি৷ আগলে রাখবও৷ আর বিশ্বাস করুন, গত তেরো বছরের প্রতিটি মুহুর্ত, আমি আপনার চেয়েও বহুগুণ বেশি যন্ত্রণায় কাটিয়েছি৷
- আই ট্রাস্ট ইউ ব্রাদার৷

Comments

Popular posts from this blog

গোয়েন্দা গল্প

- কিছু মনে করবেন না মিস্টার দত্ত...আপনার কথাবার্তাগুলো আর কিছুতেই সিরিয়াসলি নেওয়া যাচ্ছে না।  - কেন? কেন বলুন তো ইন্সপেক্টর? - ভোররাতে এই থানা থেকে একশো ফুট দূরত্বে ফুটপাথে আপনাকে উপুড় হয়ে শুয়ে থাকতে দেখা যায়।  - আপনার কনস্টেবল নিজের চোখে দেখেছে তো।  - না না, সে'টাকে আমি কোশ্চেন করছি না। আমি শুধু সামারাইজ করছি। আপনার গায়ে দামী চিকনের পাঞ্জাবী, ঘড়িটার ডায়ালও সোনার হলে অবাক হব না। এ'রকম কাউকে বড় একটা ফুটপাথে পড়ে থাকতে দেখা যায় না। যা হোক। হরিমোহন কনস্টেবলের কাঁধে ভর দিয়ে আপনি থানায় এলেন। জলটল খেয়ে সামান্য সুস্থ বোধ করলেন। অল ইজ ওয়েল। নিঃশ্বাসে অ্যালকোহলের সামান্যতম ট্রেসও নেই। শরীরে নেই কোনও চোট আঘাত।  - আমার কথা আমায় বলে কী লাভ হচ্ছে? আমি যে জরুরী ব্যাপারটা জানাতে মাঝরাতে ছুটে এসেছিলাম...সেই ব্যাপারটা দেখুন...। ব্যাপারটা আর্জেন্ট ইন্সপেক্টর মিশ্র।  - আর্জেন্সিতে পরে আসছি। রাত সাড়ে তিনটে নাগাদ আপনি থানায় ছুটে এসেছিলেন। ওয়েল অ্যান্ড গুড। কিন্তু...ফুটপাথে পড়ে রইলেন কেন...।  - এ'টাই, এ'টাই আমি ঠিক নিশ্চিত নই। মাথাটাথা ঘুরে গেছিল হয়ত। আফটার অল বা

পকেটমার রবীন্দ্রনাথ

১ । চাপা উত্তেজনায় রবীন্দ্রনাথের ভিতরটা এক্কেবারে ছটফট করছিল । তার হাতে ঝোলানো কালো পলিথিনের প্যাকেটে যে ' টা আছে , সে ' টা ভেবেই নোলা ছুকছাক আর বুক ধড়ফড় । এমনিতে আলুথালু গতিতে সে হেঁটে অভ্যস্ত । তাড়াহুড়ো তার ধাতে সয় না মোটে । কিন্তু আজ ব্যাপারটা আলাদা । সে মাংস নিয়ে ফিরছে । হোক না মোটে আড়াই ' শ গ্রাম , তবু , কচি পাঁঠা বলে কথা । সহৃদয় আলম মিয়াঁ উপরি এক টুকরো মেটেও দিয়ে দিয়েছে । তোফা ! নিজের লম্বা দাড়ি দুলিয়ে ডবল গতিতে পা চালিয়ে সে এগোচ্ছিল ।   গলির মোড়ের দিকে এসে পৌঁছতে রবীন্দ্রনাথের কেমন যেন একটু সন্দেহ হল । ঠিক যেন কেউ পিছু নিয়েছে । দু ' একবার ঘাড় ঘুরিয়েও অবশ্য কাউকে দেখা গেলনা । ভাবনা ঝেড়ে ফেলে মাংসের পাকেটটায় মন ফিরিয়ে আনলেন রবীন্দ্রনাথ । বৌ নিশ্চয়ই খুব খুশি হবে আজ । খোকাটাকে যে কদ্দিন মাংসের ঝোল খাওয়ানো হয়নি ।   খাসির রান্নার গন্ধ ভেবে বড় গান পাচ্ছিল রবীন্দ্রনাথের । সে বাধ্য হয়েই একটা কুমার শানুর গাওয়া আশিকি সিনেমার গান ধরলে ।

চ্যাটার্জীবাবুর শেষ ইচ্ছে

- মিস্টার চ্যাটার্জী...। - কে? - আমার নাম বিনোদ। - আমি তো আপনাকে ঠিক...। - আমায় বস পাঠিয়েছেন। - ওহ, মিস্টার চৌধুরী আপনাকে...। - বসের নামটাম নেওয়ার তো কোনও দরকার নেই। কাজ নিয়ে এসেছি। কাজ করে চলে যাব। - আসুন, ভিতরে আসুন। - আমি ভিতরে গিয়ে কী করব বলুন। সৌজন্যের তো আর তেমন প্রয়োজন নেই। আপনি চলুন আমার সঙ্গে। চটপট কাজ মিটে গেলে পৌনে এগারোটার লোকালটা পেয়ে যাব। আমায় আবার সেই সোনারপুর ফিরতে হবে। - যা করার তা কি এ'খানেই সেরে ফেলা যায়না? - এমন কনজেস্টেড এলাকায় ও'সব কাজ করা চলেনা। চুপচাপ ব্যাপারটা সেরে ফেলতে হবে। - প্লীজ দু'মিনিটের জন্য ভিতরে আসুন বিনোদবাবু। জামাটা অন্তত পালটে নিই। - কী দরকার বলুন জামা পালটে। - দরকার তেমন নেই। তবু। ওই, লাস্ট উইশ ধরে নিন। - ক্যুইক প্লীজ। ট্রেন ধরার তাড়াটা ভুলে যাবেন না। আর ইয়ে, পিছন দিক দিয়ে পালাতে চেষ্টা করে লাভ নেই। বসের লোকজন চারপাশে ছড়িয়ে আছে। - ও মা, ছি ছি। তা নয়। আসলে মিতুলের দেওয়া একটা জামা এখনও ভাঙা হয়নি। বাটিক প্রিন্টের হাফশার্ট। একটু ব্রাইট কালার কিন্তু বেশ একটা ইয়ে আছে। ও চলে যাওয়ার পর ও জামার ভাজ ভাঙতে ইচ্ছে হয়নি। কিন্তু...আজ না হয়...। - মিতু