Skip to main content

গদ্দারি

- বড়দা! এই বড়দা!
- কী হল, অত লাফালাফি করছিস কেন।
- শেষ পর্যন্ত তুই এ কাজ করলি?
- দুপুরের অমলেটটা পুড়িয়ে দিয়েছিলাম বলে রাগ করেছিস ছোট?
- কথা ঘোরাস না। কথা ঘোরাস না! তুই জানিস আমি কী নিয়ে কথা বলছি।
- মাইরি না।
- তুই ক্লাবের ডিবেটে স্টেজে উঠে দেশের নিন্দে করেছিস! পাবলিকলি দেশের নিন্দে করেছিস!
- দেশের নিন্দে?
- নেকু সাজিস না বড়দা। আমি সব শুনেছি।
- আরে কিছু কিছু সিস্টেমিক ফ্ল পয়েন্ট আউট করেছি ...আমাদের সিভিক সেন্সের কিছু অভাব নিয়েও একটু এলাবোরেট করেছি বটে...। কিন্তু...।
- তোর থেকে এমন গদ্দারি আমি এক্সপেক্ট করিনি দাদা।
-গদ্দারি? বটে?
- আলবাত গদ্দারি। কোন দেশটা নিখুঁত শুনি! প্রব্লেম কোথায় নেই। ঝুটঝ্যামেলা কোথায় নেই। তাই বলে আমরা খামোখা রাস্তায় নেমে দেশের নিন্দে করে চেল্লামেল্লি করব? ইনসাল্ট করব? পেট্রিয়টিজমের কি কোনও মূল্যই নেই আজকাল? এই তোর শিক্ষাদীক্ষা? ছিঃ!
- আহ্‌...শোন...।
- আমার কোনও কিছু খারাপ লাগলে কি তুই পাড়ার মোড়ে দাঁড়িয়ে মাইকে সে'সব ফলাও করে বলবিরে বড়দা?এই তোর লয়্যালটি?
- দ্যাখ ছোট! বড্ড বাতেলাবাজ হয়ে যাচ্ছিস দিনদিন। সমুদ্রে এক চামচে নুন ফেললে সমুদ্রের জাত যাবে না, সমুদ্রের কাছে তুই আর আমি ইনসিগনিফিক্যান্ট। দেশ হল সমুদ্র। তোর আমার মত এলেবেলের জন্য সে ঢেউ আটকে বসে নেই। আর কিছু মনে করিস না, খোঁচালি যখন বলেই দিই। সত্যিই তোর স্টেজে উঠে তোর নিন্দে করতে আমার বাঁধে। এই যে কথায় কথায় হুজ্জুতি করে বেড়ানো, কলার টেনে জ্ঞান দেওয়া, যে'খানে সে'খানে থুতু ফেলা, ট্যাক্স ফাঁকি দেওয়ার ফিকির খোঁজা...এ'সব দেখলেই আমার গা জ্বলে।
- না মানে দাদা... আসলে...।
- লায়েক হয়েছিস। গাঁট্টা দেওয়ার বয়স আর নেই। কাজেই তোর প্রতি যে রাগ; সে'টা হজম করে নিয়ে দেশের হয়েই হাহুতাশ করতে হল অগত্যা।
- আহ্‌, কী যে তুই বলিস বড়দা...।
- তোর কথায় কথায় অন্যের গায়ে পড়ে ঝগড়া করার এন্থু আছে, আর আমার কপালে অম্বল আর ডাইজিন। তাই বেশি হুল্লোড় করতে পারি না। তবে শুনে রাখ ছোট, স্টেজে উঠে আমি কিন্তু তোর মত লোককেই গাঁট্টা মারতে চেয়েছি। সে'টা তুই দিব্যি টের পেয়েছিস। টের পেয়েছিস বলেই সেই গাত্রদাহ। এই গাত্রদাহকে খবরদার প্যাট্রিয়টিজমে বলে চালাতে যাস না।
- আরে কী থেকে কী কথা! যাক গে, চায়ের জল বসাচ্ছি। চলবে? এক কাপ?
- তা'তে এক চামচ এক্সট্রা চিনি দিস। আর পারলে ইনকাম ট্যাক্স রিটার্নটা সময় মত জমা দে। ইডিয়টকুমার বাতেলাসিংহ গপ্পবাজ।

Comments

Popular posts from this blog

গোয়েন্দা গল্প

- কিছু মনে করবেন না মিস্টার দত্ত...আপনার কথাবার্তাগুলো আর কিছুতেই সিরিয়াসলি নেওয়া যাচ্ছে না।  - কেন? কেন বলুন তো ইন্সপেক্টর? - ভোররাতে এই থানা থেকে একশো ফুট দূরত্বে ফুটপাথে আপনাকে উপুড় হয়ে শুয়ে থাকতে দেখা যায়।  - আপনার কনস্টেবল নিজের চোখে দেখেছে তো।  - না না, সে'টাকে আমি কোশ্চেন করছি না। আমি শুধু সামারাইজ করছি। আপনার গায়ে দামী চিকনের পাঞ্জাবী, ঘড়িটার ডায়ালও সোনার হলে অবাক হব না। এ'রকম কাউকে বড় একটা ফুটপাথে পড়ে থাকতে দেখা যায় না। যা হোক। হরিমোহন কনস্টেবলের কাঁধে ভর দিয়ে আপনি থানায় এলেন। জলটল খেয়ে সামান্য সুস্থ বোধ করলেন। অল ইজ ওয়েল। নিঃশ্বাসে অ্যালকোহলের সামান্যতম ট্রেসও নেই। শরীরে নেই কোনও চোট আঘাত।  - আমার কথা আমায় বলে কী লাভ হচ্ছে? আমি যে জরুরী ব্যাপারটা জানাতে মাঝরাতে ছুটে এসেছিলাম...সেই ব্যাপারটা দেখুন...। ব্যাপারটা আর্জেন্ট ইন্সপেক্টর মিশ্র।  - আর্জেন্সিতে পরে আসছি। রাত সাড়ে তিনটে নাগাদ আপনি থানায় ছুটে এসেছিলেন। ওয়েল অ্যান্ড গুড। কিন্তু...ফুটপাথে পড়ে রইলেন কেন...।  - এ'টাই, এ'টাই আমি ঠিক নিশ্চিত নই। মাথাটাথা ঘুরে গেছিল হয়ত। আফটার অল বা

পকেটমার রবীন্দ্রনাথ

১ । চাপা উত্তেজনায় রবীন্দ্রনাথের ভিতরটা এক্কেবারে ছটফট করছিল । তার হাতে ঝোলানো কালো পলিথিনের প্যাকেটে যে ' টা আছে , সে ' টা ভেবেই নোলা ছুকছাক আর বুক ধড়ফড় । এমনিতে আলুথালু গতিতে সে হেঁটে অভ্যস্ত । তাড়াহুড়ো তার ধাতে সয় না মোটে । কিন্তু আজ ব্যাপারটা আলাদা । সে মাংস নিয়ে ফিরছে । হোক না মোটে আড়াই ' শ গ্রাম , তবু , কচি পাঁঠা বলে কথা । সহৃদয় আলম মিয়াঁ উপরি এক টুকরো মেটেও দিয়ে দিয়েছে । তোফা ! নিজের লম্বা দাড়ি দুলিয়ে ডবল গতিতে পা চালিয়ে সে এগোচ্ছিল ।   গলির মোড়ের দিকে এসে পৌঁছতে রবীন্দ্রনাথের কেমন যেন একটু সন্দেহ হল । ঠিক যেন কেউ পিছু নিয়েছে । দু ' একবার ঘাড় ঘুরিয়েও অবশ্য কাউকে দেখা গেলনা । ভাবনা ঝেড়ে ফেলে মাংসের পাকেটটায় মন ফিরিয়ে আনলেন রবীন্দ্রনাথ । বৌ নিশ্চয়ই খুব খুশি হবে আজ । খোকাটাকে যে কদ্দিন মাংসের ঝোল খাওয়ানো হয়নি ।   খাসির রান্নার গন্ধ ভেবে বড় গান পাচ্ছিল রবীন্দ্রনাথের । সে বাধ্য হয়েই একটা কুমার শানুর গাওয়া আশিকি সিনেমার গান ধরলে ।

চ্যাটার্জীবাবুর শেষ ইচ্ছে

- মিস্টার চ্যাটার্জী...। - কে? - আমার নাম বিনোদ। - আমি তো আপনাকে ঠিক...। - আমায় বস পাঠিয়েছেন। - ওহ, মিস্টার চৌধুরী আপনাকে...। - বসের নামটাম নেওয়ার তো কোনও দরকার নেই। কাজ নিয়ে এসেছি। কাজ করে চলে যাব। - আসুন, ভিতরে আসুন। - আমি ভিতরে গিয়ে কী করব বলুন। সৌজন্যের তো আর তেমন প্রয়োজন নেই। আপনি চলুন আমার সঙ্গে। চটপট কাজ মিটে গেলে পৌনে এগারোটার লোকালটা পেয়ে যাব। আমায় আবার সেই সোনারপুর ফিরতে হবে। - যা করার তা কি এ'খানেই সেরে ফেলা যায়না? - এমন কনজেস্টেড এলাকায় ও'সব কাজ করা চলেনা। চুপচাপ ব্যাপারটা সেরে ফেলতে হবে। - প্লীজ দু'মিনিটের জন্য ভিতরে আসুন বিনোদবাবু। জামাটা অন্তত পালটে নিই। - কী দরকার বলুন জামা পালটে। - দরকার তেমন নেই। তবু। ওই, লাস্ট উইশ ধরে নিন। - ক্যুইক প্লীজ। ট্রেন ধরার তাড়াটা ভুলে যাবেন না। আর ইয়ে, পিছন দিক দিয়ে পালাতে চেষ্টা করে লাভ নেই। বসের লোকজন চারপাশে ছড়িয়ে আছে। - ও মা, ছি ছি। তা নয়। আসলে মিতুলের দেওয়া একটা জামা এখনও ভাঙা হয়নি। বাটিক প্রিন্টের হাফশার্ট। একটু ব্রাইট কালার কিন্তু বেশ একটা ইয়ে আছে। ও চলে যাওয়ার পর ও জামার ভাজ ভাঙতে ইচ্ছে হয়নি। কিন্তু...আজ না হয়...। - মিতু