Skip to main content

ফিস্টি




পিকনিক ব্যাপারটা মন্দ নয়৷ তবে শীতের রাতে ছাতের ফিস্টি অনেক বেশি সুবিধেজনক মনে হত। ভোরবেলা কাগজের বাক্স থেকে ডিমসেদ্ধ আর মাখন-পাউরুটি বের করার চেয়ে ঢের ভালো হলো সন্ধ্যেবেলা এক ঠোঙা মুড়ি-বেগুনি হাতে বন্ধুর বাড়ির ছাতে উঠে যাওয়া৷ তাছাড়া পিকনিকের জন্য বাড়তি প্ল্যানিংয়ের দরকার৷ কোথায় যাওয়া হবে, কী'ভাবে যাওয়া হবে, কতজন যাবে। বাজারের ফর্দ তৈরি, বাজার করা, বাসনপত্র ভাড়া করা। ব্যাডমিন্টনের র‍্যাকেট, ক্রিকেট ব্যাট সমেত বিভিন্ন রকম খেলার সরঞ্জাম জোগাড় করা৷ বড়দের জন্য হাউজি খেলার ব্যবস্থা, ছোকরাদের লারেলাপ্পা হিন্দি গান চালানোর জন্য স্পীকার৷ আর সর্বোপরি পিকনিক স্পট বুক করা৷ হাজারো হ্যাপা৷ চড়ুইভাতি নিয়ে রচনা-টচনা লিখতে দিব্যি লাগলেও, কিন্তু আদত ব্যাপারটা সামাল দিতে মাথার ঘাম পায়ে না ফেললেই নয়৷  

পাড়ার ফিস্টিতে বরং সে'সব জটিল ছক কষা নেই৷ দুপুরের খামোখা হুজুগে রাতের জম্পেশ ফিস্টি নেমে যায়৷ বিকেলে খেলার মাঠ থেকে কেউ সোজা গেল মুর্গি কিনতে৷ কেউ গেল আলু, পেঁয়াজ, টমেটো গোছের খুচরো জিনিসপত্র জোগাড় করতে৷ ফাঁকিবাজ বন্ধুটি স্রেফ ট্যুয়েন্টি নাইনের তাস জোগাড় করেই খালাস৷ যার বাড়ির ছাতে পিকনিক, বাসনপত্র-রান্নার গ্যাসের দায়িত্ব তার৷ বিনিময়ে বাসন মাজা বা রান্নার হ্যাপা তার কপালে নেই। 

ফিস্টির মেনুতে গুরুপাক অচল; সাদামাটা সমস্ত পদ। আলুভাজা (শুধু শুধু খাওয়ার জন্য, স্টার্টার), মুর্গির টানটান ঝোল, গরম ভাত, টমেটোর চাটনি, রসগোল্লা আর গোল্ডফ্লেক। সে সামান্য রান্নাটুকু শেষ হতে রাত বারোটা বাজবেই৷ সে'টাই ট্র‍্যাডিশন। কারণ বাজে গল্প৷ গল্প ভালো এবং গভীর হলে যে ফিস্টিটাই মাটি। রান্না শুরু হওয়ার আগেই কয়েক রাউন্ড চা চাপানো হবে। 'লিকার' চা না হলে ফিস্টির গালগল্প জমবে কী করে? ফিস্টির প্রাণই তো হল মুর্গি ধুতে ধুতে আর পেঁয়াজ কুচোতে কুচোতে বারোয়ারী গল্প। 

রান্নার ক্যাপ্টেন চেয়ার আলো করে উনুনের সামনে বসে টীম পরিচালনা করবে।
জ্ঞানরত্ন খোকা দু'কোয়া রসুন ছাড়িয়ে নোবেলজয়ী হাসি হেসে, রিচি-বেনোর ঠাকুর্দা লেভেলের আত্মবিশ্বাস সমেত ক্রিকেট নিয়ে জ্ঞান দেবে।
আচমকা কোনও র‍্যান্ডম জ্যেঠিমা ছাতে উঠে এসে রান্নাবান্না নিয়ে দু'টো ভারিক্কি টিপস দিয়ে যাবেন।
টুয়েন্টি নাইনের আসর থেকে ইতিউতি দু'এক টুকরো ভাঙা প্রেমের মনোগ্রাহী গল্প উড়ে আসবে৷
আর, মুর্গি কড়াইয়ে পড়লেই কেউ না কেউ গান ধরবে। তার আচমকা বেসুরো আক্রমণে দমে না গিয়ে আরও জনা কয়েক সুর মেলাবে, তেমনটাই নিয়ম। 

আর,
বছর সতেরো বাদে, ডিসেম্বর রাত্রির বিটকেল প্রান্তে, কয়েক হাজার মাইল দূর থেকে বেরসিক কেউ ফোন করে জানতে চাইবে, "ভাই, আজ অন্তত দিব্যি কেট বল! সে'বার তপাদাদার ছাতের ফিস্টিতে আমার ভাগের লেগপিসটা তুই মেরে দিসনি? এদ্দিন পর তো অন্তত স্বীকার কর রে রাস্কেল"!

Comments

Popular posts from this blog

গোয়েন্দা গল্প

- কিছু মনে করবেন না মিস্টার দত্ত...আপনার কথাবার্তাগুলো আর কিছুতেই সিরিয়াসলি নেওয়া যাচ্ছে না।  - কেন? কেন বলুন তো ইন্সপেক্টর? - ভোররাতে এই থানা থেকে একশো ফুট দূরত্বে ফুটপাথে আপনাকে উপুড় হয়ে শুয়ে থাকতে দেখা যায়।  - আপনার কনস্টেবল নিজের চোখে দেখেছে তো।  - না না, সে'টাকে আমি কোশ্চেন করছি না। আমি শুধু সামারাইজ করছি। আপনার গায়ে দামী চিকনের পাঞ্জাবী, ঘড়িটার ডায়ালও সোনার হলে অবাক হব না। এ'রকম কাউকে বড় একটা ফুটপাথে পড়ে থাকতে দেখা যায় না। যা হোক। হরিমোহন কনস্টেবলের কাঁধে ভর দিয়ে আপনি থানায় এলেন। জলটল খেয়ে সামান্য সুস্থ বোধ করলেন। অল ইজ ওয়েল। নিঃশ্বাসে অ্যালকোহলের সামান্যতম ট্রেসও নেই। শরীরে নেই কোনও চোট আঘাত।  - আমার কথা আমায় বলে কী লাভ হচ্ছে? আমি যে জরুরী ব্যাপারটা জানাতে মাঝরাতে ছুটে এসেছিলাম...সেই ব্যাপারটা দেখুন...। ব্যাপারটা আর্জেন্ট ইন্সপেক্টর মিশ্র।  - আর্জেন্সিতে পরে আসছি। রাত সাড়ে তিনটে নাগাদ আপনি থানায় ছুটে এসেছিলেন। ওয়েল অ্যান্ড গুড। কিন্তু...ফুটপাথে পড়ে রইলেন কেন...।  - এ'টাই, এ'টাই আমি ঠিক নিশ্চিত নই। মাথাটাথা ঘুরে গেছিল হয়ত। আফটার অল বা

পকেটমার রবীন্দ্রনাথ

১ । চাপা উত্তেজনায় রবীন্দ্রনাথের ভিতরটা এক্কেবারে ছটফট করছিল । তার হাতে ঝোলানো কালো পলিথিনের প্যাকেটে যে ' টা আছে , সে ' টা ভেবেই নোলা ছুকছাক আর বুক ধড়ফড় । এমনিতে আলুথালু গতিতে সে হেঁটে অভ্যস্ত । তাড়াহুড়ো তার ধাতে সয় না মোটে । কিন্তু আজ ব্যাপারটা আলাদা । সে মাংস নিয়ে ফিরছে । হোক না মোটে আড়াই ' শ গ্রাম , তবু , কচি পাঁঠা বলে কথা । সহৃদয় আলম মিয়াঁ উপরি এক টুকরো মেটেও দিয়ে দিয়েছে । তোফা ! নিজের লম্বা দাড়ি দুলিয়ে ডবল গতিতে পা চালিয়ে সে এগোচ্ছিল ।   গলির মোড়ের দিকে এসে পৌঁছতে রবীন্দ্রনাথের কেমন যেন একটু সন্দেহ হল । ঠিক যেন কেউ পিছু নিয়েছে । দু ' একবার ঘাড় ঘুরিয়েও অবশ্য কাউকে দেখা গেলনা । ভাবনা ঝেড়ে ফেলে মাংসের পাকেটটায় মন ফিরিয়ে আনলেন রবীন্দ্রনাথ । বৌ নিশ্চয়ই খুব খুশি হবে আজ । খোকাটাকে যে কদ্দিন মাংসের ঝোল খাওয়ানো হয়নি ।   খাসির রান্নার গন্ধ ভেবে বড় গান পাচ্ছিল রবীন্দ্রনাথের । সে বাধ্য হয়েই একটা কুমার শানুর গাওয়া আশিকি সিনেমার গান ধরলে ।

চ্যাটার্জীবাবুর শেষ ইচ্ছে

- মিস্টার চ্যাটার্জী...। - কে? - আমার নাম বিনোদ। - আমি তো আপনাকে ঠিক...। - আমায় বস পাঠিয়েছেন। - ওহ, মিস্টার চৌধুরী আপনাকে...। - বসের নামটাম নেওয়ার তো কোনও দরকার নেই। কাজ নিয়ে এসেছি। কাজ করে চলে যাব। - আসুন, ভিতরে আসুন। - আমি ভিতরে গিয়ে কী করব বলুন। সৌজন্যের তো আর তেমন প্রয়োজন নেই। আপনি চলুন আমার সঙ্গে। চটপট কাজ মিটে গেলে পৌনে এগারোটার লোকালটা পেয়ে যাব। আমায় আবার সেই সোনারপুর ফিরতে হবে। - যা করার তা কি এ'খানেই সেরে ফেলা যায়না? - এমন কনজেস্টেড এলাকায় ও'সব কাজ করা চলেনা। চুপচাপ ব্যাপারটা সেরে ফেলতে হবে। - প্লীজ দু'মিনিটের জন্য ভিতরে আসুন বিনোদবাবু। জামাটা অন্তত পালটে নিই। - কী দরকার বলুন জামা পালটে। - দরকার তেমন নেই। তবু। ওই, লাস্ট উইশ ধরে নিন। - ক্যুইক প্লীজ। ট্রেন ধরার তাড়াটা ভুলে যাবেন না। আর ইয়ে, পিছন দিক দিয়ে পালাতে চেষ্টা করে লাভ নেই। বসের লোকজন চারপাশে ছড়িয়ে আছে। - ও মা, ছি ছি। তা নয়। আসলে মিতুলের দেওয়া একটা জামা এখনও ভাঙা হয়নি। বাটিক প্রিন্টের হাফশার্ট। একটু ব্রাইট কালার কিন্তু বেশ একটা ইয়ে আছে। ও চলে যাওয়ার পর ও জামার ভাজ ভাঙতে ইচ্ছে হয়নি। কিন্তু...আজ না হয়...। - মিতু