Skip to main content

লেহ্‌ ও ফুর্তি



পাহাড়ের গায়ে লেহ্৷ চোখধাঁধানো চারপাশ৷ ঘ্যাম সব পাহাড়, দিল্লীকে টেক্কা দেওয়া শীত৷ টুরিস্টরা এ'সব জায়গায় এসেই কবিতা লিখতে শুরু করবেন৷ নেহাত লিখতে না পারলে কফিহাউস-মুগ্ধ একটা হাবভাব নিজের মুখে ফুটিয়ে তুলবেন, সে'টাই অন্তত কপিবুক রেস্পন্স৷ এমন শহরে ঘুরতে এসে তাই প্রাণে ফুর্তি বাড়বেই৷ তাই লেহ্ এয়ারপোর্ট থেকেই চনমনে মনমেজাজ৷
কিন্তু কী ক্যালামিটি! এ'খানে অলটিচিউড সিকনেসের ভয় আছে৷ প্রথম দিন থেকেই বেশি লম্ফঝম্প করলে নাকি বিস্তর গোলমালের সম্ভাবনা৷ শ্বেতা জানালে প্রথম দিন নাকি কোনও সাইটসিয়িং নয়, শুধুই নির্ভেজাল বিশ্রাম৷
অতএব...ফুর্তি ডবল হল।
এরপর আর এক কেস-জন্ডিস ব্যাপার। দেখলাম ফোনে সিগন্যাল নেই৷ আমার সার্ভিস প্রোভাইডার এ'খানে এখনও সুবিধে করে উঠতে পারেনি কী মুশকিল৷ ম্যানুয়ালি খুঁজেও সিগন্যাল জুটল না৷ বুঝলাম, ভরসা বলতে স্রেফ হোটেলের ওয়াফাই৷ কোনও জরুরী কল আসবে না৷ রাতবিরেতে কেউ ফোন করে কাজকর্মের কথা ঝালিতে নিতে পারবে না৷ এমন ম্যাদামারা জীবনের কোনও মানে হয়?
অতএব..ফুর্তি চারগুণ হল৷
এয়ারপোর্টে থেকে দর্জেবাবুর গাড়িতে চেপে সোজা হোটেল৷ একটা দেওয়াল জোড়া জানলার ও'পাশের ভ্যিউ অতি চমৎকার। কিন্তু এখানে আবার এক অন্য সমস্যা৷ ঘরের মধ্যেও বাতাসে এমন কনকনে শীত যে রুমের মধ্যে পায়চারি করতে গিয়েও রাম-কাঁপুনি৷ কী মুশকিল৷ কাজেই গোটাদিন কম্বল মুড়ি দিয়ে শুয়ে থাকা ছাড়া কোনও উপায় নেই৷ বিস্তর শখসমেত ঘুরতে এসে শেষে কম্বলবন্দী হয়ে দিন কাটাতে হবে? স্রেফ বই পড়ে, নেটফ্লিক্স দেখে, রুমসার্ভিস মেনুকার্ড ঘেঁটে খাবারদাবার অর্ডার করে, আর চমৎকার কফিতে চুমুক দিয়ে দিনটা ফুরিয়ে যাবে? ভাবিইনি এমনটা৷
অতএব, স্পীকিং অ্যাজ আ লেহ্-ম্যান, ফুর্তি এখন ষোলোগুণ।

Comments

Popular posts from this blog

গোয়েন্দা গল্প

- কিছু মনে করবেন না মিস্টার দত্ত...আপনার কথাবার্তাগুলো আর কিছুতেই সিরিয়াসলি নেওয়া যাচ্ছে না।  - কেন? কেন বলুন তো ইন্সপেক্টর? - ভোররাতে এই থানা থেকে একশো ফুট দূরত্বে ফুটপাথে আপনাকে উপুড় হয়ে শুয়ে থাকতে দেখা যায়।  - আপনার কনস্টেবল নিজের চোখে দেখেছে তো।  - না না, সে'টাকে আমি কোশ্চেন করছি না। আমি শুধু সামারাইজ করছি। আপনার গায়ে দামী চিকনের পাঞ্জাবী, ঘড়িটার ডায়ালও সোনার হলে অবাক হব না। এ'রকম কাউকে বড় একটা ফুটপাথে পড়ে থাকতে দেখা যায় না। যা হোক। হরিমোহন কনস্টেবলের কাঁধে ভর দিয়ে আপনি থানায় এলেন। জলটল খেয়ে সামান্য সুস্থ বোধ করলেন। অল ইজ ওয়েল। নিঃশ্বাসে অ্যালকোহলের সামান্যতম ট্রেসও নেই। শরীরে নেই কোনও চোট আঘাত।  - আমার কথা আমায় বলে কী লাভ হচ্ছে? আমি যে জরুরী ব্যাপারটা জানাতে মাঝরাতে ছুটে এসেছিলাম...সেই ব্যাপারটা দেখুন...। ব্যাপারটা আর্জেন্ট ইন্সপেক্টর মিশ্র।  - আর্জেন্সিতে পরে আসছি। রাত সাড়ে তিনটে নাগাদ আপনি থানায় ছুটে এসেছিলেন। ওয়েল অ্যান্ড গুড। কিন্তু...ফুটপাথে পড়ে রইলেন কেন...।  - এ'টাই, এ'টাই আমি ঠিক নিশ্চিত নই। মাথাটাথা ঘুরে গেছিল হয়ত। আফটার অল বা

পকেটমার রবীন্দ্রনাথ

১ । চাপা উত্তেজনায় রবীন্দ্রনাথের ভিতরটা এক্কেবারে ছটফট করছিল । তার হাতে ঝোলানো কালো পলিথিনের প্যাকেটে যে ' টা আছে , সে ' টা ভেবেই নোলা ছুকছাক আর বুক ধড়ফড় । এমনিতে আলুথালু গতিতে সে হেঁটে অভ্যস্ত । তাড়াহুড়ো তার ধাতে সয় না মোটে । কিন্তু আজ ব্যাপারটা আলাদা । সে মাংস নিয়ে ফিরছে । হোক না মোটে আড়াই ' শ গ্রাম , তবু , কচি পাঁঠা বলে কথা । সহৃদয় আলম মিয়াঁ উপরি এক টুকরো মেটেও দিয়ে দিয়েছে । তোফা ! নিজের লম্বা দাড়ি দুলিয়ে ডবল গতিতে পা চালিয়ে সে এগোচ্ছিল ।   গলির মোড়ের দিকে এসে পৌঁছতে রবীন্দ্রনাথের কেমন যেন একটু সন্দেহ হল । ঠিক যেন কেউ পিছু নিয়েছে । দু ' একবার ঘাড় ঘুরিয়েও অবশ্য কাউকে দেখা গেলনা । ভাবনা ঝেড়ে ফেলে মাংসের পাকেটটায় মন ফিরিয়ে আনলেন রবীন্দ্রনাথ । বৌ নিশ্চয়ই খুব খুশি হবে আজ । খোকাটাকে যে কদ্দিন মাংসের ঝোল খাওয়ানো হয়নি ।   খাসির রান্নার গন্ধ ভেবে বড় গান পাচ্ছিল রবীন্দ্রনাথের । সে বাধ্য হয়েই একটা কুমার শানুর গাওয়া আশিকি সিনেমার গান ধরলে ।

চ্যাটার্জীবাবুর শেষ ইচ্ছে

- মিস্টার চ্যাটার্জী...। - কে? - আমার নাম বিনোদ। - আমি তো আপনাকে ঠিক...। - আমায় বস পাঠিয়েছেন। - ওহ, মিস্টার চৌধুরী আপনাকে...। - বসের নামটাম নেওয়ার তো কোনও দরকার নেই। কাজ নিয়ে এসেছি। কাজ করে চলে যাব। - আসুন, ভিতরে আসুন। - আমি ভিতরে গিয়ে কী করব বলুন। সৌজন্যের তো আর তেমন প্রয়োজন নেই। আপনি চলুন আমার সঙ্গে। চটপট কাজ মিটে গেলে পৌনে এগারোটার লোকালটা পেয়ে যাব। আমায় আবার সেই সোনারপুর ফিরতে হবে। - যা করার তা কি এ'খানেই সেরে ফেলা যায়না? - এমন কনজেস্টেড এলাকায় ও'সব কাজ করা চলেনা। চুপচাপ ব্যাপারটা সেরে ফেলতে হবে। - প্লীজ দু'মিনিটের জন্য ভিতরে আসুন বিনোদবাবু। জামাটা অন্তত পালটে নিই। - কী দরকার বলুন জামা পালটে। - দরকার তেমন নেই। তবু। ওই, লাস্ট উইশ ধরে নিন। - ক্যুইক প্লীজ। ট্রেন ধরার তাড়াটা ভুলে যাবেন না। আর ইয়ে, পিছন দিক দিয়ে পালাতে চেষ্টা করে লাভ নেই। বসের লোকজন চারপাশে ছড়িয়ে আছে। - ও মা, ছি ছি। তা নয়। আসলে মিতুলের দেওয়া একটা জামা এখনও ভাঙা হয়নি। বাটিক প্রিন্টের হাফশার্ট। একটু ব্রাইট কালার কিন্তু বেশ একটা ইয়ে আছে। ও চলে যাওয়ার পর ও জামার ভাজ ভাঙতে ইচ্ছে হয়নি। কিন্তু...আজ না হয়...। - মিতু