Skip to main content

শ্যামল ডিলান তুকতাক



- এই যে৷
- আরে, তুমি? কী আশ্চর্য!
- চলে এলাম, ইচ্ছে হল৷ অবাক হওয়ার কী আছে!
- বসো।
- বসি, কেমন?
- একশো বার৷
- থ্যাঙ্ক ইউ।
- এই বেঞ্চটা বড় মায়ার৷ তাই না?
- যা শীত৷ বাপ রে৷ হাড় কনকনের মধ্যে মায়াটায়া টের পাচ্ছি কই৷
- হেহ্৷
- অনি কেমন আছে?
- দিব্যি৷ শখের প্রাণ৷ আজকাল হঠাৎ বাগানের শখ চেপেছে৷ হপ্তায় দু'দিন অফিস কামাই করছে পেয়ারের গাছেদের দেখভাল করতে৷ চাকরী বেশিদিন টিকলে হয়৷
- লোকটা খ্যাপাটেই রয়ে গেল৷
- আর নিপা?
- গোটা দিন ক্লাসে ছাত্র পড়ানো৷ সন্ধের পর নিজের পড়াশোনা, রিসার্চ৷
- ও'ও কিন্তু কম খ্যাপাটে নয়৷
- খ্যাপাটে না হলে ওই শীতের রাত্রে এই পাহাড়-পাড়ার এই বেঞ্চিতে বসে আর এক খ্যাপার সঙ্গে কেউ গল্প জোড়ে?
- তাই তো। আচ্ছা, নিপা এখন কী করছে বলো তো?
- মাইক্রোওয়েভে খাবার গরম করছে৷ কানে ইয়ারফোন। চোখ বোজা৷ আর তোমার অনি? সে কোথায়?
- শাল জড়িয়ে ছাতে দাঁড়িয়ে বহুক্ষণ৷ ওল্ড মঙ্কের ঝিমঝিম। আর যথারীতি কানে ইয়ারফোন৷ চোখ বোজা৷
- আহ্। অফ কোর্স৷ তাই তো আমাদের দেখা হল৷
- বেঞ্চিটা সত্যিই মায়ার।
- ব্যাপারটা দিব্যি।
- আর খানিকটা ভূতুড়ে৷
- হেহ্ হেহ্।
**
- তা'হলে ছুটি শেষ!
- শেষ৷
- কাল থেকে ফের শহর৷ দৌড়ঝাঁপ৷ আমার সেই চাকরী৷ তোমার সেই কলেজ৷ ধুত্তোর।
- সত্যিই।
- নিপা, বিয়েটা কবে করছি আমরা?
- অনিবাবু যবে সিরিয়াসলি প্রপোজ করবেন, অমনি৷
- বাহ্৷ এখন বুঝি সিরিয়াস নই?
- কাঁচকলা।
- দু'দিন সময় দাও৷ সিরিয়াস প্রপোজাল দেখবে কাকে বলে।
- আচ্ছা, অনি! যদি আমারা দূরে সরে যাই?
- তুমি বড় পেসিমিস্ট নিপা।
- সে দুশ্চিন্তা কখনও তোমার হয় না?
- দাঁড়াও৷ জন্মজন্মান্তরের একটা সলিউশন তৈরি করে যাই৷ তোমার ইয়ারফোনে একটা গান পজ্ করা আছে৷ তাই না? যে'টা এ'খানে হেঁটে আসার সময় শুনছিলে? আমায় দেখে যে'টা থামালে?
- ডিলান।
- তোমায় দূর থেকে দেখে আমিও কান থেকে ইয়ারফোন সরালাম। আমি শ্যামল মিত্তিরে আটকে ছিলাম৷ এ'বার আমায় তোমার ফোন-ইয়ারফোন দাও, আমি ডিলানের গানটা শুনে শেষ করি৷ তুমি আমার শ্যামল সামাল দাও।
- তা'তে কী হবে?
- হাইক্লাস তুকতাক নিপা। তুমি আর আমি যদি ফস্কেই যাই, কোনওদিন যদি সে দুর্ঘটনা ঘটেই যায়..। এই দু'টো গান আমাদের হয়ে মাঝেমধ্যেই এই কার্শিয়াংয়ের বেঞ্চিতে এসে বসবে। নোটস এক্সচেঞ্জ করে সরে পড়বে।
- তুমি একটা অখাদ্য।
- কলকাতায় ফিরে একটা সুপারসিরিয়াস প্রপোজাল দিয়ে তোমায় জাস্ট ঘাবড়ে দেব৷ তখন আর অখাদ্য মনে হবে না!
- দাও দেখি তোমার শ্যামল মিত্র৷ আর এই নাও, ডিলান৷

Comments

Popular posts from this blog

গোয়েন্দা গল্প

- কিছু মনে করবেন না মিস্টার দত্ত...আপনার কথাবার্তাগুলো আর কিছুতেই সিরিয়াসলি নেওয়া যাচ্ছে না।  - কেন? কেন বলুন তো ইন্সপেক্টর? - ভোররাতে এই থানা থেকে একশো ফুট দূরত্বে ফুটপাথে আপনাকে উপুড় হয়ে শুয়ে থাকতে দেখা যায়।  - আপনার কনস্টেবল নিজের চোখে দেখেছে তো।  - না না, সে'টাকে আমি কোশ্চেন করছি না। আমি শুধু সামারাইজ করছি। আপনার গায়ে দামী চিকনের পাঞ্জাবী, ঘড়িটার ডায়ালও সোনার হলে অবাক হব না। এ'রকম কাউকে বড় একটা ফুটপাথে পড়ে থাকতে দেখা যায় না। যা হোক। হরিমোহন কনস্টেবলের কাঁধে ভর দিয়ে আপনি থানায় এলেন। জলটল খেয়ে সামান্য সুস্থ বোধ করলেন। অল ইজ ওয়েল। নিঃশ্বাসে অ্যালকোহলের সামান্যতম ট্রেসও নেই। শরীরে নেই কোনও চোট আঘাত।  - আমার কথা আমায় বলে কী লাভ হচ্ছে? আমি যে জরুরী ব্যাপারটা জানাতে মাঝরাতে ছুটে এসেছিলাম...সেই ব্যাপারটা দেখুন...। ব্যাপারটা আর্জেন্ট ইন্সপেক্টর মিশ্র।  - আর্জেন্সিতে পরে আসছি। রাত সাড়ে তিনটে নাগাদ আপনি থানায় ছুটে এসেছিলেন। ওয়েল অ্যান্ড গুড। কিন্তু...ফুটপাথে পড়ে রইলেন কেন...।  - এ'টাই, এ'টাই আমি ঠিক নিশ্চিত নই। মাথাটাথা ঘুরে গেছিল হয়ত। আফটার অল বা

পকেটমার রবীন্দ্রনাথ

১ । চাপা উত্তেজনায় রবীন্দ্রনাথের ভিতরটা এক্কেবারে ছটফট করছিল । তার হাতে ঝোলানো কালো পলিথিনের প্যাকেটে যে ' টা আছে , সে ' টা ভেবেই নোলা ছুকছাক আর বুক ধড়ফড় । এমনিতে আলুথালু গতিতে সে হেঁটে অভ্যস্ত । তাড়াহুড়ো তার ধাতে সয় না মোটে । কিন্তু আজ ব্যাপারটা আলাদা । সে মাংস নিয়ে ফিরছে । হোক না মোটে আড়াই ' শ গ্রাম , তবু , কচি পাঁঠা বলে কথা । সহৃদয় আলম মিয়াঁ উপরি এক টুকরো মেটেও দিয়ে দিয়েছে । তোফা ! নিজের লম্বা দাড়ি দুলিয়ে ডবল গতিতে পা চালিয়ে সে এগোচ্ছিল ।   গলির মোড়ের দিকে এসে পৌঁছতে রবীন্দ্রনাথের কেমন যেন একটু সন্দেহ হল । ঠিক যেন কেউ পিছু নিয়েছে । দু ' একবার ঘাড় ঘুরিয়েও অবশ্য কাউকে দেখা গেলনা । ভাবনা ঝেড়ে ফেলে মাংসের পাকেটটায় মন ফিরিয়ে আনলেন রবীন্দ্রনাথ । বৌ নিশ্চয়ই খুব খুশি হবে আজ । খোকাটাকে যে কদ্দিন মাংসের ঝোল খাওয়ানো হয়নি ।   খাসির রান্নার গন্ধ ভেবে বড় গান পাচ্ছিল রবীন্দ্রনাথের । সে বাধ্য হয়েই একটা কুমার শানুর গাওয়া আশিকি সিনেমার গান ধরলে ।

চ্যাটার্জীবাবুর শেষ ইচ্ছে

- মিস্টার চ্যাটার্জী...। - কে? - আমার নাম বিনোদ। - আমি তো আপনাকে ঠিক...। - আমায় বস পাঠিয়েছেন। - ওহ, মিস্টার চৌধুরী আপনাকে...। - বসের নামটাম নেওয়ার তো কোনও দরকার নেই। কাজ নিয়ে এসেছি। কাজ করে চলে যাব। - আসুন, ভিতরে আসুন। - আমি ভিতরে গিয়ে কী করব বলুন। সৌজন্যের তো আর তেমন প্রয়োজন নেই। আপনি চলুন আমার সঙ্গে। চটপট কাজ মিটে গেলে পৌনে এগারোটার লোকালটা পেয়ে যাব। আমায় আবার সেই সোনারপুর ফিরতে হবে। - যা করার তা কি এ'খানেই সেরে ফেলা যায়না? - এমন কনজেস্টেড এলাকায় ও'সব কাজ করা চলেনা। চুপচাপ ব্যাপারটা সেরে ফেলতে হবে। - প্লীজ দু'মিনিটের জন্য ভিতরে আসুন বিনোদবাবু। জামাটা অন্তত পালটে নিই। - কী দরকার বলুন জামা পালটে। - দরকার তেমন নেই। তবু। ওই, লাস্ট উইশ ধরে নিন। - ক্যুইক প্লীজ। ট্রেন ধরার তাড়াটা ভুলে যাবেন না। আর ইয়ে, পিছন দিক দিয়ে পালাতে চেষ্টা করে লাভ নেই। বসের লোকজন চারপাশে ছড়িয়ে আছে। - ও মা, ছি ছি। তা নয়। আসলে মিতুলের দেওয়া একটা জামা এখনও ভাঙা হয়নি। বাটিক প্রিন্টের হাফশার্ট। একটু ব্রাইট কালার কিন্তু বেশ একটা ইয়ে আছে। ও চলে যাওয়ার পর ও জামার ভাজ ভাঙতে ইচ্ছে হয়নি। কিন্তু...আজ না হয়...। - মিতু