Skip to main content

বড়দিন আর রাত্রিবেলার হাওয়াখাওয়া



- এই যে৷ ট্যাক্সিভায়া। বেহালা যাবে?
- না৷
- শেয়ালদা?
- কাকা, আপনি বেহালা যাবেন না শেয়ালদা?
- বেহালা নিয়ে গেলেও যাব৷ শেয়ালদা নিয়ে গেলেও যাব৷ নেহাত ঝুলোঝুলি করলে গড়িয়া যেতেও আপত্তি নেই।
- ইয়ার্কি করছেন না তো?
- ক্রিসমাসের দিন ভায়া৷ এই সময় পার্কস্ট্রিটের পুণ্যভূমিতে দাঁড়িয়ে ফাজলামো করব? না না ভায়া৷ নেভার। তা'হলে কী ঠিক হল? কোথায় যাব?
- টালিগঞ্জের প্যাসেঞ্জার পেলে ভালো হত কাকা৷ ও'দিকেই বাড়ি কিনা।।
- আহা বেশ তো৷ টালিগঞ্জই সই৷ চলো।
- উঠে আসুন।
- থ্যাঙ্ক ইউ ভায়া৷ মিটার চালু করো দেখি৷
- কেসটা কী বলুন তো কাকা? এত রাত্তিরে হাওয়া খেতে বেরিয়েছেন নাকি? তা বয়সে ঠাণ্ডাফান্ডা লেগে গেলে মুশকিল তো।
- এই সময়টা আমি একটু ঘোরাঘুরি করি বটে৷ তবে ঠাণ্ডা লাগার ভয় আমি পাইনা ভাই৷ এর চেয়ে অনেক কড়া শীত আমি দিব্যি ম্যানেজ দিয়ে থাকি৷ আর আমার এই ঘোরাঘুরি আমি শুরু করি পার্ক স্ট্রিট দিয়ে৷
- হ্যাঁ, এ সময়টা পার্ক স্ট্রীটের ইয়েই আলাদা।
- হ্যাঁ৷ সত্যিই হাইক্লাস ইয়ে।
- তা টালিগঞ্জের হয়ে কোথায় যাবেন কাকা?
- টালিগঞ্জের পর ভাবছি চট করে একটু গিয়োথোনবিনে ঢুঁ মেরে আসব।
- গিয়ো..কী?
- গিয়োথোনবিন।
- বারাসাতের দিকে কোনও হাউসিং কম্পলেক্স কি?
- না হে৷ গিয়োথোনবিন একটা হদ্দ গ্রাম। বার্মায়৷
- নেশাটেশা করা হয় নাকি? কাকা?
- নেশার টানেই তো ফি-বছর পার্কস্ট্রীট থেকেই যাত্রা শুরু করি হে। প্রথমেই কুসুমের রোলের দোকানের সামনে গিয়ে খানিকক্ষণ দাঁড়িয়ে রোলের সুবাসে মনপ্রাণ ভরে ফেলি৷ তারপর শুরু অভিযান।
- অভিযান?
- এই ডিবেটায় কী আছে বলো দেখি ভায়া?
- কেকের ডিবে তো৷
- ফ্লুরিজের প্লাম৷ তুমি তো কেক খুব ভালোবাসো, তাই না ট্যাক্সিভায়া? ফ্লুরিজের আলো সুবাস মায়া তোমায় বড্ড টানে, তাই না?
- কাকা! আপনি কি তান্ত্রিকটান্ত্রিক নাকি?
- হলেই বা! এ কেকের স্বাদ তো আর কমছে না৷ চলো, কেকটা ভাগ করে সাবাড় করে ফেলা যাক৷ রাতের ফাঁকা রাস্তায় টালিগঞ্জ পৌঁছতে সময় বেশি লাগবে না৷ কাজেই, ক্যুইক৷ আমার আবার গিয়োথোনবিন ছুটতে হবে।
- আপনি কে বলুন দেখি কাকা?
- কেক মুখে না দিয়ে খামোখা প্রশ্নে সময় নষ্ট করার কোনও মানে হয়? হো হো হো।

***
সনাতন দত্ত যখন বাড়ি ফিরলেন তখন রাত পৌনে একটা৷ বহুচেষ্টা করেও কেক-তৃপ্ত ট্যাক্সিভায়াকে ভাড়ার টাকাটা গছানো যায়নি৷
প্রতি বড়দিনে এক ধরনের ছেলেমানুষি তাঁকে পেয়ে বসে - পার্ক্সস্ট্রিটে কাউকে হুট করে পাকড়াও করে কেক না খাওয়ালে তার মন ভরে না৷ তাছাড়া কেক-পিপাসু চোখ আর টালিগঞ্জের দিকে যেতে চাওয়া ট্যাক্সি ড্রাইভারদের একনজরে চিনতে পারার একটা দুরন্ত ক্ষমতা রয়েছে তাঁর৷ ধেড়েখোকাদেরও গোপন-স্যান্টার প্রয়োজন পড়ে, এ সত্যটি বিলক্ষণ জানেন সনাতনবাবু৷

Comments

Popular posts from this blog

গোয়েন্দা গল্প

- কিছু মনে করবেন না মিস্টার দত্ত...আপনার কথাবার্তাগুলো আর কিছুতেই সিরিয়াসলি নেওয়া যাচ্ছে না।  - কেন? কেন বলুন তো ইন্সপেক্টর? - ভোররাতে এই থানা থেকে একশো ফুট দূরত্বে ফুটপাথে আপনাকে উপুড় হয়ে শুয়ে থাকতে দেখা যায়।  - আপনার কনস্টেবল নিজের চোখে দেখেছে তো।  - না না, সে'টাকে আমি কোশ্চেন করছি না। আমি শুধু সামারাইজ করছি। আপনার গায়ে দামী চিকনের পাঞ্জাবী, ঘড়িটার ডায়ালও সোনার হলে অবাক হব না। এ'রকম কাউকে বড় একটা ফুটপাথে পড়ে থাকতে দেখা যায় না। যা হোক। হরিমোহন কনস্টেবলের কাঁধে ভর দিয়ে আপনি থানায় এলেন। জলটল খেয়ে সামান্য সুস্থ বোধ করলেন। অল ইজ ওয়েল। নিঃশ্বাসে অ্যালকোহলের সামান্যতম ট্রেসও নেই। শরীরে নেই কোনও চোট আঘাত।  - আমার কথা আমায় বলে কী লাভ হচ্ছে? আমি যে জরুরী ব্যাপারটা জানাতে মাঝরাতে ছুটে এসেছিলাম...সেই ব্যাপারটা দেখুন...। ব্যাপারটা আর্জেন্ট ইন্সপেক্টর মিশ্র।  - আর্জেন্সিতে পরে আসছি। রাত সাড়ে তিনটে নাগাদ আপনি থানায় ছুটে এসেছিলেন। ওয়েল অ্যান্ড গুড। কিন্তু...ফুটপাথে পড়ে রইলেন কেন...।  - এ'টাই, এ'টাই আমি ঠিক নিশ্চিত নই। মাথাটাথা ঘুরে গেছিল হয়ত। আফটার অল বা

পকেটমার রবীন্দ্রনাথ

১ । চাপা উত্তেজনায় রবীন্দ্রনাথের ভিতরটা এক্কেবারে ছটফট করছিল । তার হাতে ঝোলানো কালো পলিথিনের প্যাকেটে যে ' টা আছে , সে ' টা ভেবেই নোলা ছুকছাক আর বুক ধড়ফড় । এমনিতে আলুথালু গতিতে সে হেঁটে অভ্যস্ত । তাড়াহুড়ো তার ধাতে সয় না মোটে । কিন্তু আজ ব্যাপারটা আলাদা । সে মাংস নিয়ে ফিরছে । হোক না মোটে আড়াই ' শ গ্রাম , তবু , কচি পাঁঠা বলে কথা । সহৃদয় আলম মিয়াঁ উপরি এক টুকরো মেটেও দিয়ে দিয়েছে । তোফা ! নিজের লম্বা দাড়ি দুলিয়ে ডবল গতিতে পা চালিয়ে সে এগোচ্ছিল ।   গলির মোড়ের দিকে এসে পৌঁছতে রবীন্দ্রনাথের কেমন যেন একটু সন্দেহ হল । ঠিক যেন কেউ পিছু নিয়েছে । দু ' একবার ঘাড় ঘুরিয়েও অবশ্য কাউকে দেখা গেলনা । ভাবনা ঝেড়ে ফেলে মাংসের পাকেটটায় মন ফিরিয়ে আনলেন রবীন্দ্রনাথ । বৌ নিশ্চয়ই খুব খুশি হবে আজ । খোকাটাকে যে কদ্দিন মাংসের ঝোল খাওয়ানো হয়নি ।   খাসির রান্নার গন্ধ ভেবে বড় গান পাচ্ছিল রবীন্দ্রনাথের । সে বাধ্য হয়েই একটা কুমার শানুর গাওয়া আশিকি সিনেমার গান ধরলে ।

চ্যাটার্জীবাবুর শেষ ইচ্ছে

- মিস্টার চ্যাটার্জী...। - কে? - আমার নাম বিনোদ। - আমি তো আপনাকে ঠিক...। - আমায় বস পাঠিয়েছেন। - ওহ, মিস্টার চৌধুরী আপনাকে...। - বসের নামটাম নেওয়ার তো কোনও দরকার নেই। কাজ নিয়ে এসেছি। কাজ করে চলে যাব। - আসুন, ভিতরে আসুন। - আমি ভিতরে গিয়ে কী করব বলুন। সৌজন্যের তো আর তেমন প্রয়োজন নেই। আপনি চলুন আমার সঙ্গে। চটপট কাজ মিটে গেলে পৌনে এগারোটার লোকালটা পেয়ে যাব। আমায় আবার সেই সোনারপুর ফিরতে হবে। - যা করার তা কি এ'খানেই সেরে ফেলা যায়না? - এমন কনজেস্টেড এলাকায় ও'সব কাজ করা চলেনা। চুপচাপ ব্যাপারটা সেরে ফেলতে হবে। - প্লীজ দু'মিনিটের জন্য ভিতরে আসুন বিনোদবাবু। জামাটা অন্তত পালটে নিই। - কী দরকার বলুন জামা পালটে। - দরকার তেমন নেই। তবু। ওই, লাস্ট উইশ ধরে নিন। - ক্যুইক প্লীজ। ট্রেন ধরার তাড়াটা ভুলে যাবেন না। আর ইয়ে, পিছন দিক দিয়ে পালাতে চেষ্টা করে লাভ নেই। বসের লোকজন চারপাশে ছড়িয়ে আছে। - ও মা, ছি ছি। তা নয়। আসলে মিতুলের দেওয়া একটা জামা এখনও ভাঙা হয়নি। বাটিক প্রিন্টের হাফশার্ট। একটু ব্রাইট কালার কিন্তু বেশ একটা ইয়ে আছে। ও চলে যাওয়ার পর ও জামার ভাজ ভাঙতে ইচ্ছে হয়নি। কিন্তু...আজ না হয়...। - মিতু