Skip to main content

মিঠে পান ও ওষুধ



- এই যে দাদা, একটা ফার্স্টক্লাস মিঠাপান দিন দেখি৷

- স্পেশ্যাল বানিয়ে দিই?

- দিন। তবে দেখবেন, স্পেশ্যালের নামে আবার গুলকন্দ ঠুসে ভরবেন না যেন৷

- তা অবিশ্যি ঠিক৷ কড়া মিঠে স্বাদে পান নষ্ট হয়৷
গোটা ব্যাপারটাই হচ্ছে সুগন্ধের খেলা।

- করেক্ট৷ অতিরিক্ত মিষ্টি খেতে হলে দু'পা এগিয়ে হরেনদার দোকান থেকে দু'টো গরম রসগোল্লা খেয়ে নেব৷ তাই না? পান মিঠে হবে আলতো আভাসে, কলার টানা মিষ্টি হলেই কেলেংকারি৷ টেস্টের পাঁচদিন একটানা যদি শুধু সিধুবাবুর কমেন্ট্রি হজম করতে হয়, গোলমাল হবে না?

- ঠিক৷ সুপুরি দেব তো?

- সুপুরি বাদে পান? মোটরসাইকেলের দুলুনি বাদ দিয়ে এই পথ যদি না শেষ হয়?

- হওয়া উচিৎ না, তাই না?

- কভি নহি৷

- গোটা গোটা টুকরো করে কাটা সুপুরি না মিহি কুচনো সুপুরি?

- চাঁদের পাহাড়ের অ্যাব্রিজড ভার্সন পড়তে নেই৷ মিহি কুচনো সুপুরির চলবে না৷ চেবানোর সাবস্ট্যান্স চাই। আর হ্যাঁ, এলাচের খোসাটা ফেলে শুধু দানাগুলো৷ কেমন? এ ব্যাপারে আমি একটু সেনসিটিভ।

- বহুত খুব। আমি তো বারবার বলি, পান ব্যাপারটাই ওই..আপনি যে'টা বললেন...সেনসিটিভ।

- এই যেমন আমার বাবা খান খয়ের ছাড়া সাদা পান৷ এক্সট্রা সুপুরি, অল্প এলাচ, সামানহ চমনবাহার৷ নো জর্দা৷ তিরিশ বছর বাবাকে দেখেছি, টেম্পলেট এ'দিক ও'দিক হতে দেখিনি৷ উনিও বলেন, পান ব্যাপারটাই সেনসিটিভ৷ তবে অত নীরস পান আবার আমার চলেনা৷ তাই এই মিঠে পানের ককটেল।

- আসুন৷ খেয়ে দেখুন দেখি৷

- দেখি দেখি৷

- কেমন?

- অত্যন্ত মোলায়েম৷ ঠিক যেমনটি চেয়েছিলাম। খুশবুতে ঘায়েল করেছেন। কত দেব?

- টুয়েন্টি রুপিজ অনলি।

- আসুন।

- একটা কথা বলি দাদা?

- দশটা বলুন পানবাবু। দশটা বলুন।

- এত রাত্রে একা বেরিয়েছেন শুধু পানের জন্য? পান আপনার নেশা তো নয়৷ নেশাড়ুরা স্পেশ্যাল মিঠেপানের খদ্দের হয়না। আর এত গল্পও জোড়েনা।

- উরিব্বাস৷ এ'টা পানের দোকান না দু'শো একুশের বি বেকার স্ট্রিট মশাই? তবে মোক্ষম ধরেছেন৷ রাত বাড়লে কাশির মত মনখারাপগুলোও বাড়ে। প্রথম ডোজে হেমন্তবাবু ইঞ্জেক্ট করি মনে৷ তারপর বিভূতিভূষণ৷ সে'টাও কাজ না করলে আই ওয়াক ইনটু আ পানশালা।

- সিগারেট চলে নাকি দাদা? না না, এ'টা বিক্রি নয়৷ আমি খাওয়াব।

- ও বদনেশাটা নেই৷ তবে দিন, ঠোঁটে ঝোলাতে আপত্তি নেই৷ আগুন জ্বালার ব্যাপারটা না হয় বাদই থাকল। অমন ভালোবেসে অফার করলেন, রিফিউজ করি কী করে।

- ও'তেই হবে৷ আসুন৷ গোল্ডফ্লেক।

- তা পানবাবু, সিগারেট অফার করলেন যে৷ আপনারও কি ওই কেস? মনখারাপ?

- মোক্ষম ধরেছেন৷ ওই, রাত বাড়লে যা হয় আর কী৷ আমার ওষুধ আবার কিশোরকুমার। ওই দেখুন, ওই সিডি প্লেয়ারে। তবে দু'একদিন গভীর রাতের দিকে স্রেফ কিশোরে বরফ গলেনা৷ সে'সব রাতে আমার বরাতে ঠিক স্পেশ্যাল মিঠে পানের খদ্দের জুটে যায়৷ ব্যাস, আমি অমনি একটা সিগারেট অফার করে ফেলি। মনখারাপের পানের ওপর দিলখোলা আড্ডার চুন-খয়ের লাগিয়ে দিলেই ঝামেলা শেষ।

Comments

Popular posts from this blog

গোয়েন্দা গল্প

- কিছু মনে করবেন না মিস্টার দত্ত...আপনার কথাবার্তাগুলো আর কিছুতেই সিরিয়াসলি নেওয়া যাচ্ছে না।  - কেন? কেন বলুন তো ইন্সপেক্টর? - ভোররাতে এই থানা থেকে একশো ফুট দূরত্বে ফুটপাথে আপনাকে উপুড় হয়ে শুয়ে থাকতে দেখা যায়।  - আপনার কনস্টেবল নিজের চোখে দেখেছে তো।  - না না, সে'টাকে আমি কোশ্চেন করছি না। আমি শুধু সামারাইজ করছি। আপনার গায়ে দামী চিকনের পাঞ্জাবী, ঘড়িটার ডায়ালও সোনার হলে অবাক হব না। এ'রকম কাউকে বড় একটা ফুটপাথে পড়ে থাকতে দেখা যায় না। যা হোক। হরিমোহন কনস্টেবলের কাঁধে ভর দিয়ে আপনি থানায় এলেন। জলটল খেয়ে সামান্য সুস্থ বোধ করলেন। অল ইজ ওয়েল। নিঃশ্বাসে অ্যালকোহলের সামান্যতম ট্রেসও নেই। শরীরে নেই কোনও চোট আঘাত।  - আমার কথা আমায় বলে কী লাভ হচ্ছে? আমি যে জরুরী ব্যাপারটা জানাতে মাঝরাতে ছুটে এসেছিলাম...সেই ব্যাপারটা দেখুন...। ব্যাপারটা আর্জেন্ট ইন্সপেক্টর মিশ্র।  - আর্জেন্সিতে পরে আসছি। রাত সাড়ে তিনটে নাগাদ আপনি থানায় ছুটে এসেছিলেন। ওয়েল অ্যান্ড গুড। কিন্তু...ফুটপাথে পড়ে রইলেন কেন...।  - এ'টাই, এ'টাই আমি ঠিক নিশ্চিত নই। মাথাটাথা ঘুরে গেছিল হয়ত। আফটার অল বা

পকেটমার রবীন্দ্রনাথ

১ । চাপা উত্তেজনায় রবীন্দ্রনাথের ভিতরটা এক্কেবারে ছটফট করছিল । তার হাতে ঝোলানো কালো পলিথিনের প্যাকেটে যে ' টা আছে , সে ' টা ভেবেই নোলা ছুকছাক আর বুক ধড়ফড় । এমনিতে আলুথালু গতিতে সে হেঁটে অভ্যস্ত । তাড়াহুড়ো তার ধাতে সয় না মোটে । কিন্তু আজ ব্যাপারটা আলাদা । সে মাংস নিয়ে ফিরছে । হোক না মোটে আড়াই ' শ গ্রাম , তবু , কচি পাঁঠা বলে কথা । সহৃদয় আলম মিয়াঁ উপরি এক টুকরো মেটেও দিয়ে দিয়েছে । তোফা ! নিজের লম্বা দাড়ি দুলিয়ে ডবল গতিতে পা চালিয়ে সে এগোচ্ছিল ।   গলির মোড়ের দিকে এসে পৌঁছতে রবীন্দ্রনাথের কেমন যেন একটু সন্দেহ হল । ঠিক যেন কেউ পিছু নিয়েছে । দু ' একবার ঘাড় ঘুরিয়েও অবশ্য কাউকে দেখা গেলনা । ভাবনা ঝেড়ে ফেলে মাংসের পাকেটটায় মন ফিরিয়ে আনলেন রবীন্দ্রনাথ । বৌ নিশ্চয়ই খুব খুশি হবে আজ । খোকাটাকে যে কদ্দিন মাংসের ঝোল খাওয়ানো হয়নি ।   খাসির রান্নার গন্ধ ভেবে বড় গান পাচ্ছিল রবীন্দ্রনাথের । সে বাধ্য হয়েই একটা কুমার শানুর গাওয়া আশিকি সিনেমার গান ধরলে ।

চ্যাটার্জীবাবুর শেষ ইচ্ছে

- মিস্টার চ্যাটার্জী...। - কে? - আমার নাম বিনোদ। - আমি তো আপনাকে ঠিক...। - আমায় বস পাঠিয়েছেন। - ওহ, মিস্টার চৌধুরী আপনাকে...। - বসের নামটাম নেওয়ার তো কোনও দরকার নেই। কাজ নিয়ে এসেছি। কাজ করে চলে যাব। - আসুন, ভিতরে আসুন। - আমি ভিতরে গিয়ে কী করব বলুন। সৌজন্যের তো আর তেমন প্রয়োজন নেই। আপনি চলুন আমার সঙ্গে। চটপট কাজ মিটে গেলে পৌনে এগারোটার লোকালটা পেয়ে যাব। আমায় আবার সেই সোনারপুর ফিরতে হবে। - যা করার তা কি এ'খানেই সেরে ফেলা যায়না? - এমন কনজেস্টেড এলাকায় ও'সব কাজ করা চলেনা। চুপচাপ ব্যাপারটা সেরে ফেলতে হবে। - প্লীজ দু'মিনিটের জন্য ভিতরে আসুন বিনোদবাবু। জামাটা অন্তত পালটে নিই। - কী দরকার বলুন জামা পালটে। - দরকার তেমন নেই। তবু। ওই, লাস্ট উইশ ধরে নিন। - ক্যুইক প্লীজ। ট্রেন ধরার তাড়াটা ভুলে যাবেন না। আর ইয়ে, পিছন দিক দিয়ে পালাতে চেষ্টা করে লাভ নেই। বসের লোকজন চারপাশে ছড়িয়ে আছে। - ও মা, ছি ছি। তা নয়। আসলে মিতুলের দেওয়া একটা জামা এখনও ভাঙা হয়নি। বাটিক প্রিন্টের হাফশার্ট। একটু ব্রাইট কালার কিন্তু বেশ একটা ইয়ে আছে। ও চলে যাওয়ার পর ও জামার ভাজ ভাঙতে ইচ্ছে হয়নি। কিন্তু...আজ না হয়...। - মিতু