Skip to main content

জননেতা



- ভায়া, নমস্কার।
- আমি আপনার ইয়ারদোস্ত নই৷ বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ। জননেতা৷ ভায়া আবার কী? স্যার বলুন৷ নিদেনপক্ষে দাদা।
- ওহো৷ সরি, সরি৷ হে হে৷ নমস্কার স্যার দাদা৷
- আহ৷ হয় স্যার নয় দাদা।
- বেশ বেশ৷ নমস্কার হয়স্যারনয়দাদা।
- ধের৷ যাকগে। তা আমার অফিসে কী মনে করে? কী চাই?
- আজ্ঞে, হয়স্যারনয়দাদামশাই। আমিও লাইনের লোক৷
- আপনিও লাইনের লোক? এর মানেটা কী?
- মানে ওই৷ কী বললেন যেন? রাজনীতিবিদ৷
- মস্করা হচ্ছে? বেশি ফচকেমো করলে ছেলেদের ডেকে দেব দু'ঘা!
- আরে মাইরি৷ আমিও রাজনীতিবিদ৷ আপনার অফিসের বাইরে দু'টো টেম্পো ভরে আমার ছেলেরাও অপেক্ষা করছে৷ আপনার ছেলেরা লাফালাফি করলেই তারাও নেত্য শুরু করবে৷
- এত পাঁয়তারা না কষে নিজের পরিচয়টা স্পষ্টভাবে দিন।
- হয়স্যারনয়দাদা, উত্তেজিত হবেন না প্লীজ৷ জননেতারা মেজাজ হারালে কী চলে? আরে সে কাজ তো তাদের পোষা মাস্তানদের। যাক গে, আমার নাম মনোহর ধর৷ অমুক পার্টিতে রয়েছি৷
- অমুক পার্টি? মানে আমাদের তমুক পার্টির আর্চ রাইভাল? কিন্তু আপনাকে তো কোথাও দেখেছি বলে..।
- আজ্ঞে আমি ব্যাকএন্ডের মানুষ৷ আপনার মত জননেতা আমায় দেখবেনই বা কেন৷
- ব্যাকএন্ড?
- ওই৷ হেডহান্টার৷ ডীল ক্লোজ করে থাকি৷
- তা আমার কাছে কী মনে করে ধরবাবু?
- আপনার জনসমর্থন আছে। লোকে আপনার কদর করে। আপনার পোষা গুণ্ডাদের ভয় পায়৷ এ'সব দেখে আমাদের হাইকম্যান্ড এক্কেবারে ইম্প্রেসড।
- আপনারা? গত ইলেকশনে গোহারান হেরেও ইম্প্রেসড?
- ইলেকশন-টিলেকশন বোঝার লোক আমি নই হয়স্যারনয়দাদা৷ আমি বুঝি ডীল৷
- তা এ'খানে কী ডীল চাই?
- ওই৷ আপনার জনসমর্থন আর গুণ্ডাবেস-সহ আপনাকে কিনতে চাই৷ আপনার প্রাইসটা কাইন্ডলি বলে দিন৷
- হাউ ডেয়ার ইউ? রাস্কেল কোথাকার!
- পাঁচ কোটি।
- আচ্ছা নচ্ছার লোক তো আপনি! যখন খুশি যাকে খুশি চাইলেই কেনা যায় ভেবেছেন?
- সাত কোটি।
- তবে রে শুয়ার! শুনে রাখ৷ আমায় লোকে ভালোবাসে। ভক্তি করে৷
- বেশ৷ দশ কোটি৷
- খবরদার বলছি৷ আইডিয়ালের জন্য প্রাণপাত করতে পারি আমি৷ আর একবার যদি শুনি..।
- পঁচিশ।
- ইয়ে..। পঁ..পঁ...!
- পঁচিশ বরং বাদ থাক৷ তিরিশ৷ কোটি।
- ইয়ে, স্যার৷ শুনুন।
- আমি পাতি মানুষ হয়স্যারনয়দাদা৷ আমায় মনোহর বলেই ডাকবেন৷ মনু বলেও ডাকতে পারেন৷ আর হ্যাঁ, চল্লিশ কোটি৷
- ওহ৷ মানে, মনুবাবু। ইয়ে, বুঝতেই পারছেন...এমন দুম করে পালটি খাওয়াটা ঠিক সমীচীন হবে না। আসলে মানুষ তো..।
- পঞ্চাশ কোটি৷
- আমি রাজী!
- ভেরি গুড৷ আপনার ছেলেদের নিয়ে তা'হলে কাল বেলা দশটা নাগাদ আমাদের অফিসে চলে আসবেন৷ দু'হপ্তার একটা কোর্স করে তারপর পার্টিতে জয়েন করে ফেলবেন৷
- কোর্স? কীসের?
- চামড়াটা একটু মোটা করিয়ে নেওয়ার৷ ও সিলেবাস রেডি আছে, আপনাকে ভাবতে হবে না৷ হয়ে যাবে।
- ইয়ে, চামড়া বুঝি এখনও যথেষ্ট মোটা হয়নি?
- হয়নি। এভ্রিওয়ান হ্যাস আ প্রাইস হয়স্যারনয়দাদা মশাই৷ সবারই ব্রেকিং পয়েন্ট আছে৷ আইডয়ালিজম, সততা, জনসমর্থন; সবকিছুই ভেঙে গড়িয়ে নেওয়া যায় সঠিক দাম জানলে। আপনাকে পারচেজ করার জন্য বাজেট ছিল আশি কোটির, অথচ আপনি পঞ্চাশেই কাত হলেন। গায়ের চামড়া সাফিশিয়েন্টলি মোটা হলে আরও কিছুক্ষণ আইডিয়ালিজমের দোহাই পেড়ে নিজের দর বাড়াতে পারতেন।
- এহ হে।
- এখন আসি হয়স্যারনয়দাদা মশাই৷ কাল তা'হলে আমাদের পার্টি অফিসেই দেখা হচ্ছে? আজ আবার শপিং ডে কিনা, আরও বেশ কয়েকটা জায়গায় ছুটতে হবে৷ আসি, কেমন?

Comments

Popular posts from this blog

গোয়েন্দা গল্প

- কিছু মনে করবেন না মিস্টার দত্ত...আপনার কথাবার্তাগুলো আর কিছুতেই সিরিয়াসলি নেওয়া যাচ্ছে না।  - কেন? কেন বলুন তো ইন্সপেক্টর? - ভোররাতে এই থানা থেকে একশো ফুট দূরত্বে ফুটপাথে আপনাকে উপুড় হয়ে শুয়ে থাকতে দেখা যায়।  - আপনার কনস্টেবল নিজের চোখে দেখেছে তো।  - না না, সে'টাকে আমি কোশ্চেন করছি না। আমি শুধু সামারাইজ করছি। আপনার গায়ে দামী চিকনের পাঞ্জাবী, ঘড়িটার ডায়ালও সোনার হলে অবাক হব না। এ'রকম কাউকে বড় একটা ফুটপাথে পড়ে থাকতে দেখা যায় না। যা হোক। হরিমোহন কনস্টেবলের কাঁধে ভর দিয়ে আপনি থানায় এলেন। জলটল খেয়ে সামান্য সুস্থ বোধ করলেন। অল ইজ ওয়েল। নিঃশ্বাসে অ্যালকোহলের সামান্যতম ট্রেসও নেই। শরীরে নেই কোনও চোট আঘাত।  - আমার কথা আমায় বলে কী লাভ হচ্ছে? আমি যে জরুরী ব্যাপারটা জানাতে মাঝরাতে ছুটে এসেছিলাম...সেই ব্যাপারটা দেখুন...। ব্যাপারটা আর্জেন্ট ইন্সপেক্টর মিশ্র।  - আর্জেন্সিতে পরে আসছি। রাত সাড়ে তিনটে নাগাদ আপনি থানায় ছুটে এসেছিলেন। ওয়েল অ্যান্ড গুড। কিন্তু...ফুটপাথে পড়ে রইলেন কেন...।  - এ'টাই, এ'টাই আমি ঠিক নিশ্চিত নই। মাথাটাথা ঘুরে গেছিল হয়ত। আফটার অল বা

পকেটমার রবীন্দ্রনাথ

১ । চাপা উত্তেজনায় রবীন্দ্রনাথের ভিতরটা এক্কেবারে ছটফট করছিল । তার হাতে ঝোলানো কালো পলিথিনের প্যাকেটে যে ' টা আছে , সে ' টা ভেবেই নোলা ছুকছাক আর বুক ধড়ফড় । এমনিতে আলুথালু গতিতে সে হেঁটে অভ্যস্ত । তাড়াহুড়ো তার ধাতে সয় না মোটে । কিন্তু আজ ব্যাপারটা আলাদা । সে মাংস নিয়ে ফিরছে । হোক না মোটে আড়াই ' শ গ্রাম , তবু , কচি পাঁঠা বলে কথা । সহৃদয় আলম মিয়াঁ উপরি এক টুকরো মেটেও দিয়ে দিয়েছে । তোফা ! নিজের লম্বা দাড়ি দুলিয়ে ডবল গতিতে পা চালিয়ে সে এগোচ্ছিল ।   গলির মোড়ের দিকে এসে পৌঁছতে রবীন্দ্রনাথের কেমন যেন একটু সন্দেহ হল । ঠিক যেন কেউ পিছু নিয়েছে । দু ' একবার ঘাড় ঘুরিয়েও অবশ্য কাউকে দেখা গেলনা । ভাবনা ঝেড়ে ফেলে মাংসের পাকেটটায় মন ফিরিয়ে আনলেন রবীন্দ্রনাথ । বৌ নিশ্চয়ই খুব খুশি হবে আজ । খোকাটাকে যে কদ্দিন মাংসের ঝোল খাওয়ানো হয়নি ।   খাসির রান্নার গন্ধ ভেবে বড় গান পাচ্ছিল রবীন্দ্রনাথের । সে বাধ্য হয়েই একটা কুমার শানুর গাওয়া আশিকি সিনেমার গান ধরলে ।

চ্যাটার্জীবাবুর শেষ ইচ্ছে

- মিস্টার চ্যাটার্জী...। - কে? - আমার নাম বিনোদ। - আমি তো আপনাকে ঠিক...। - আমায় বস পাঠিয়েছেন। - ওহ, মিস্টার চৌধুরী আপনাকে...। - বসের নামটাম নেওয়ার তো কোনও দরকার নেই। কাজ নিয়ে এসেছি। কাজ করে চলে যাব। - আসুন, ভিতরে আসুন। - আমি ভিতরে গিয়ে কী করব বলুন। সৌজন্যের তো আর তেমন প্রয়োজন নেই। আপনি চলুন আমার সঙ্গে। চটপট কাজ মিটে গেলে পৌনে এগারোটার লোকালটা পেয়ে যাব। আমায় আবার সেই সোনারপুর ফিরতে হবে। - যা করার তা কি এ'খানেই সেরে ফেলা যায়না? - এমন কনজেস্টেড এলাকায় ও'সব কাজ করা চলেনা। চুপচাপ ব্যাপারটা সেরে ফেলতে হবে। - প্লীজ দু'মিনিটের জন্য ভিতরে আসুন বিনোদবাবু। জামাটা অন্তত পালটে নিই। - কী দরকার বলুন জামা পালটে। - দরকার তেমন নেই। তবু। ওই, লাস্ট উইশ ধরে নিন। - ক্যুইক প্লীজ। ট্রেন ধরার তাড়াটা ভুলে যাবেন না। আর ইয়ে, পিছন দিক দিয়ে পালাতে চেষ্টা করে লাভ নেই। বসের লোকজন চারপাশে ছড়িয়ে আছে। - ও মা, ছি ছি। তা নয়। আসলে মিতুলের দেওয়া একটা জামা এখনও ভাঙা হয়নি। বাটিক প্রিন্টের হাফশার্ট। একটু ব্রাইট কালার কিন্তু বেশ একটা ইয়ে আছে। ও চলে যাওয়ার পর ও জামার ভাজ ভাঙতে ইচ্ছে হয়নি। কিন্তু...আজ না হয়...। - মিতু