Skip to main content

থ্রি চিয়ার্স ডিলাক্স বার


- এসো ভায়া সমীরণ, এসো৷ তোমার অপেক্ষায় বসে বসে এক পেগ রামের পাশাপাশি দু'বাটি কম্পলিমেন্টারি চানাচুর সাফ করে ফেললাম।

- থ্রি চিয়ার্স ডিলাক্স বারের লক্ষ্মী আপনি। ফি শনিবার চার বয়াম করে চানাচুর চাইলেও আপনাকে এরা রিফিউজ করবে বলে মনে হয় না৷

- আজ এত দেরী হলো কেন?

- ওই৷ অফিস। ট্র‍্যাফিক..।

- তা, তোমার আজ রাম না হুইস্কি?

- বিমলদা৷ আজ শুধু কোকাকোলা।

- সে কী ভায়া৷ উইকেন্ডে উপোস? বিরিয়ানিতে হরতকি?

- নাহ্৷ আজ ঠিক ইচ্ছে করছে না। এখানে এলাম শুধু আপনার সঙ্গে আড্ডা জমানোর টানে। বরং একপ্লেট চিলি ফিশ বলে দিই৷ ড্রাই।

- শনিবার সন্ধ্যেয় মদে অরুচি৷ ইন্ট্রিগিং।

- আদত নেশাটা তো আড্ডার বিমলদা।

- বটে?

- এই আড্ডার প্রতি আমার কমিটমেন্ট নিয়ে আপনার এখনও সন্দেহ আছে নাকি? বছর চারেক হল তো আমাদের এই থ্রি চিয়ার্স ডিলাক্স বারের শনিবারের আড্ডার৷ নেহাৎ ফাঁপরে না পড়লে একদিনও কামাই করেছি কি?

- বুঝলে ভায়া, এ'টা খুব ভালো সিম্পটম।

- এই বিরিয়ানিতে হরতকি?

- হে হে৷ উপমা বিষয়ক বাড়াবাড়িটা আমার বরাবরের বদঅভ্যাস।

- তা শনিবারের পানশালার আড্ডায় এসে মদস্পর্শ না করাটাকে ভালো সিম্পটম বলে আপনার কেন মনে হল?

- ডিডিউস করলাম৷

- কী'রকম?

- অফিসের ক্লান্তি সত্ত্বেও মুখে চনমনে হাসি। চুলে টাটকা শালিমারের তেল, পরনের জামার পরিপাটি ইস্তিরি, পারফিউম। বেশ টের পাচ্ছি যে অফিস থেকে ফিরে বাড়ি হয়ে তারপর এ'খানে এসেছ। তা'তেই আদত দেরী।

- শার্লক হোমস থাকলে আপনার পিঠ চাপড়ে দিতেন।

- কাজেই মদে অরুচিটা অস্থিরতা নয়, বরং পরিতৃপ্তির চিহ্ন৷ আর সম্ভবত তাড়াতাড়ি বাড়ি ফেরার তাগিদের জন্য৷ তাই বললাম, ভালো সিম্পটম৷

- হেহ্৷ আপনার জবাব নেই বিমলদা।

- তুমি আর নীলা, তোমরা বেশ ভালো আছ সমীরণ৷ কথাটা ঈর্ষায় ছটফট করে বলা নয়। ওল্ড মঙ্কের তাড়নাতেও নয়। অন্তর থেকে বলা।

- জানি বিমলদা৷

- আমাদের এই শনিবারের মাতলামি আড্ডার চার বছর হল বললে, তাই না?

- এ'মাসে এগজ্যাক্টলি চারে পড়ল।

- তোমাদের বিয়েরও তা'হলে চার বছর হল।

- আর আপনার আর নীলার সেপারেশনের পাঁচ বছর।

- ইঞ্জুরিতে বিটনুন দিচ্ছ ভায়া?

- হেহ্। আপনি আমার বন্ধুও তো বটে বিমলদা৷ ও'টুকু লেগপুল করতেই পারি৷

- তা পারো। তুমি বন্ধু তো বটেই৷ ইন ফ্যাক্ট তুমি ছাড়া কার সঙ্গেই বা এত কথা হয়।

- অথচ বারবার ডাকা সত্ত্বেও আড্ডা দিতে আমাদের বাড়িতে আসতে চান না৷

- আমি বাউণ্ডুলে মানুষ হে সমীরণ। গেরস্থালী আমার ধাতে সয়না৷ আমার জন্য এই থ্রি চিয়ার্স ডিলাক্স বারের আলোআঁধারিই আইডিয়াল৷ এ'তে নেশা ত্বরান্বিত হয়। ঝিমঝিমটা ইন্টেন্সিফাই করে।

- আপনার ওই বাউণ্ডুলেপনা নিয়ে নীলার কি কম দুশ্চিন্তা ছিল? আমাদের বিয়ের পরপর সে আমায় প্রায় ঠেলে পাঠাত শনিবার শনিবার এই বারে এসে আপনার হালহকিকত জেনে যেতে৷ পাছে আপনি দুম করে ভেসে না যান৷ সেই খোঁজখবর নিতে আসাটা যে সাপ্তাহিক আড্ডায় পরিণত হবে, সে'টা কি আর তখন জানতাম।

- আমাদের বিয়েটা টিকলোনা আমারই দোষে ভায়া৷ তবে নীলার মধ্যে যে কী স্নেহ আছে..। আহা।

- "নীলার মধ্যে যে কী স্নেহ আছে"৷ বিমল দত্তর চিরন্তন শনিবাসরীয় বাণী৷ এক পেগ ওল্ড রামের পর৷ হে হে হে।

- হা হা হা। এই ভালো ভায়া৷ নীলা তোমায় পেয়ে বাঁচলে। আবার অন্যদিকে তার স্নেহের ঠেলায় তুমি আমার বন্ধু হয়ে এসে জুটলে এই শনিবারের থ্রি চিয়ার্স ডিলাক্স বারে৷ তুমি আছ, তাই হপ্তাভর জমিয়ে রাখা গল্পগুলো উগরে দিতে পারি।

- নীলা গতকাল পাটিসাপটা বানিয়েছিল। এ-ক্লাস, বুঝলেন৷ আজ অফিস ফেরতা বাড়ি হয়ে এখানে এলাম যাতে আপনার জন্য এক টিফিনবাক্স নিয়ে আসতে পারি৷ এই যে।

- ইউ আর আ ট্রু ফ্রেন্ড ভাই সমীরণ। আচ্ছা, ওল্ড মঙ্কের সঙ্গে চাখনা হিসেবে পাটিসাপটা কি খুব বেমানান হবে?

Comments

Popular posts from this blog

গোয়েন্দা গল্প

- কিছু মনে করবেন না মিস্টার দত্ত...আপনার কথাবার্তাগুলো আর কিছুতেই সিরিয়াসলি নেওয়া যাচ্ছে না।  - কেন? কেন বলুন তো ইন্সপেক্টর? - ভোররাতে এই থানা থেকে একশো ফুট দূরত্বে ফুটপাথে আপনাকে উপুড় হয়ে শুয়ে থাকতে দেখা যায়।  - আপনার কনস্টেবল নিজের চোখে দেখেছে তো।  - না না, সে'টাকে আমি কোশ্চেন করছি না। আমি শুধু সামারাইজ করছি। আপনার গায়ে দামী চিকনের পাঞ্জাবী, ঘড়িটার ডায়ালও সোনার হলে অবাক হব না। এ'রকম কাউকে বড় একটা ফুটপাথে পড়ে থাকতে দেখা যায় না। যা হোক। হরিমোহন কনস্টেবলের কাঁধে ভর দিয়ে আপনি থানায় এলেন। জলটল খেয়ে সামান্য সুস্থ বোধ করলেন। অল ইজ ওয়েল। নিঃশ্বাসে অ্যালকোহলের সামান্যতম ট্রেসও নেই। শরীরে নেই কোনও চোট আঘাত।  - আমার কথা আমায় বলে কী লাভ হচ্ছে? আমি যে জরুরী ব্যাপারটা জানাতে মাঝরাতে ছুটে এসেছিলাম...সেই ব্যাপারটা দেখুন...। ব্যাপারটা আর্জেন্ট ইন্সপেক্টর মিশ্র।  - আর্জেন্সিতে পরে আসছি। রাত সাড়ে তিনটে নাগাদ আপনি থানায় ছুটে এসেছিলেন। ওয়েল অ্যান্ড গুড। কিন্তু...ফুটপাথে পড়ে রইলেন কেন...।  - এ'টাই, এ'টাই আমি ঠিক নিশ্চিত নই। মাথাটাথা ঘুরে গেছিল হয়ত। আফটার অল বা

পকেটমার রবীন্দ্রনাথ

১ । চাপা উত্তেজনায় রবীন্দ্রনাথের ভিতরটা এক্কেবারে ছটফট করছিল । তার হাতে ঝোলানো কালো পলিথিনের প্যাকেটে যে ' টা আছে , সে ' টা ভেবেই নোলা ছুকছাক আর বুক ধড়ফড় । এমনিতে আলুথালু গতিতে সে হেঁটে অভ্যস্ত । তাড়াহুড়ো তার ধাতে সয় না মোটে । কিন্তু আজ ব্যাপারটা আলাদা । সে মাংস নিয়ে ফিরছে । হোক না মোটে আড়াই ' শ গ্রাম , তবু , কচি পাঁঠা বলে কথা । সহৃদয় আলম মিয়াঁ উপরি এক টুকরো মেটেও দিয়ে দিয়েছে । তোফা ! নিজের লম্বা দাড়ি দুলিয়ে ডবল গতিতে পা চালিয়ে সে এগোচ্ছিল ।   গলির মোড়ের দিকে এসে পৌঁছতে রবীন্দ্রনাথের কেমন যেন একটু সন্দেহ হল । ঠিক যেন কেউ পিছু নিয়েছে । দু ' একবার ঘাড় ঘুরিয়েও অবশ্য কাউকে দেখা গেলনা । ভাবনা ঝেড়ে ফেলে মাংসের পাকেটটায় মন ফিরিয়ে আনলেন রবীন্দ্রনাথ । বৌ নিশ্চয়ই খুব খুশি হবে আজ । খোকাটাকে যে কদ্দিন মাংসের ঝোল খাওয়ানো হয়নি ।   খাসির রান্নার গন্ধ ভেবে বড় গান পাচ্ছিল রবীন্দ্রনাথের । সে বাধ্য হয়েই একটা কুমার শানুর গাওয়া আশিকি সিনেমার গান ধরলে ।

চ্যাটার্জীবাবুর শেষ ইচ্ছে

- মিস্টার চ্যাটার্জী...। - কে? - আমার নাম বিনোদ। - আমি তো আপনাকে ঠিক...। - আমায় বস পাঠিয়েছেন। - ওহ, মিস্টার চৌধুরী আপনাকে...। - বসের নামটাম নেওয়ার তো কোনও দরকার নেই। কাজ নিয়ে এসেছি। কাজ করে চলে যাব। - আসুন, ভিতরে আসুন। - আমি ভিতরে গিয়ে কী করব বলুন। সৌজন্যের তো আর তেমন প্রয়োজন নেই। আপনি চলুন আমার সঙ্গে। চটপট কাজ মিটে গেলে পৌনে এগারোটার লোকালটা পেয়ে যাব। আমায় আবার সেই সোনারপুর ফিরতে হবে। - যা করার তা কি এ'খানেই সেরে ফেলা যায়না? - এমন কনজেস্টেড এলাকায় ও'সব কাজ করা চলেনা। চুপচাপ ব্যাপারটা সেরে ফেলতে হবে। - প্লীজ দু'মিনিটের জন্য ভিতরে আসুন বিনোদবাবু। জামাটা অন্তত পালটে নিই। - কী দরকার বলুন জামা পালটে। - দরকার তেমন নেই। তবু। ওই, লাস্ট উইশ ধরে নিন। - ক্যুইক প্লীজ। ট্রেন ধরার তাড়াটা ভুলে যাবেন না। আর ইয়ে, পিছন দিক দিয়ে পালাতে চেষ্টা করে লাভ নেই। বসের লোকজন চারপাশে ছড়িয়ে আছে। - ও মা, ছি ছি। তা নয়। আসলে মিতুলের দেওয়া একটা জামা এখনও ভাঙা হয়নি। বাটিক প্রিন্টের হাফশার্ট। একটু ব্রাইট কালার কিন্তু বেশ একটা ইয়ে আছে। ও চলে যাওয়ার পর ও জামার ভাজ ভাঙতে ইচ্ছে হয়নি। কিন্তু...আজ না হয়...। - মিতু