Skip to main content

গোবরদার টোটকা


- আপনার পিঠে যে'টা ঠেকছে, সে'টা বন্দুকের নল। কাজেই নড়াচড়া করবেন না, বেফালতু আওয়াজ করলেই কিন্তু সোজা গুড়ুম!
- আরিব্বাস। পিঠে বন্দুক? মা কালীর দিব্যি?
- মাইরি৷
- আমি প্রাইভেট ফার্মের পাতি চাকুরে মশাই, থোড়বড়িখাড়া জীবন৷ শখ বলতে রাতের খাবার হজম করতে রোজ এই ফুটপাথ ধরে আধঘণ্টা হাঁটা৷ দুম এ'রকম একটা রোমাঞ্চকর ব্যাপার ঘটবে, ভাবতেই পারিনি।
- এই, খুব ফুর্তি হচ্ছে নাকি? দেব নাকি দু'রাউন্ড ফায়ার করে?
- যাই বলুন মশাই৷ বন্দুকের ফায়্যারে রক্তারক্তি আছে, কিন্তু রোজ অফিসে বসের ফায়্যারিংয়ের মত বিষ নেই৷
- তা অবিশ্যি মন্দ বলেননি৷ আমার ওস্তাদেরও এমন তিরিক্ষি মেজাজ৷ উফ৷ আরে সবে মাসখানেক হল লাইনে নেমেছি৷ পকেটকাটার ব্যাপারটা এখনও জলবৎ হয়নি। এ'দিকে আমায় ধরিয়ে দিল পিস্তল, বলে কিনা কেরিয়ার প্রগ্রেস চাইলে রাহাজানিতে ঢোকো৷
- এই এক নতুন বাতিক হয়েছে, বুঝলেন৷ কথায় কথায় নাকের ডগায় কেরিয়ারের গাজর ঝুলিয়ে ড্যাঙশপেটা করবে। তা যাকগে, পিঠে যে বন্দুক ঠেকালেন, কী চাই ভাই?
- মানিব্যাগ, মোবাইল, রিস্টওয়াচ, আঙটি।
- আপনার দ্বারা এ'সব হবে না৷ কেমন? পকেটমারি রাহাজানি ছেড়ে বরং টিউশনি খুঁজুন।
- একদম চালাকি নয়। বেশি প্যাটরপ্যাটর করলেই গুড়ুম।
- আমার ভালোনাম সঞ্জয় কিন্তু ডাকনাম গোবর, কেন জানেন? কারণ বাপ-মা বুঝেছিলেন যে আর যাই হোক আমার মগজে বিন্দুমাত্র চালাকি নেই৷ পাড়াতে সঞ্জয় চাকলাদারের বাড়ি খুঁজতে গিয়ে হন্যে হবেন কিন্তু গোবরদার বাড়ি সক্কলে চেনে৷ কাজেই আর যাই হোক, চালাকির জন্য গুলি খেয়ে মরব না, এ কথা আমি হলফ করে বলতে পারি৷
- ইয়ে, আমার দ্বারা লুঠপাট হবেনা কেন গোবরদা?
- ঢলঢলে পাজামা পরে হাঁটতে বেরিয়েছি ভাই৷ আমার কাছে মানিব্যাগ থাকবে কেন? আর ফতুয়ার ওপর এই যে র্যাপারটা জড়ানো- এ'টা এখন খয়েরী হলেও, নব্বুইয়ের দশকে এ'টার রঙ ছিল নীল। হাতে আঙটি নেই তবে গলায় একটা সস্তা মাদুলি আছে, তারাপিঠ থেকে আনা৷ রিস্টওয়াচ রিস্টে যখন নেই, তখন তো আর বুকপকেট হাতড়ালে পাওয়া যাবে না৷ তবে মোবাইল আছে, সাত বছর পুরনো একটা থ্যাবড়া ফোন, পেপারওয়েট হিসেবে ব্যবহার করতে পারবে। তার বেশি কিছু হবে না এ দিয়ে৷
- ধুর৷ ট্রেনিংটাই মাটি৷ ওস্তাদের শুধু বড় বড় কথা৷ এ'দিকে যা শেখায় সবই গাঁজাখুরি যা বুঝছি। আমায় দু'হপ্তা ধরে শেখালে যে লুঠপাট করার টার্গেট ধরতে হবে পোশাকের জেল্লা দেখে নয়, চোখের ঝিলিক বুঝে৷ চোখ দেখেই নাকি সঠিক রহিসি মেজাজ চেনা যায়৷ চোখের ঝিলিক বিচার করার কত টেকনিক শেখালে ওস্তাদ৷ অথচ কাজের বেলায় দেখছি গুবলেট।
- আমার চোখে রহিসি ঝিলিক দেখতে পেয়েছ নাকি বন্দুকবাবু?
- হিসেব তো তাই বলছে৷ রহিসি, লাটসাহেবি, সুখী দৃষ্টি৷ আমি তো ভেবেছিলাম প্রথম কোপেই বড় দাঁও মারব।
- ওস্তাদের ফর্মুলা মন্দ নয় হে ভায়া৷ এন্তার পাটিসাপটা আর পাটালির পায়েস খেয়ে হাঁটতে বেরিয়েছিলাম আজ৷ ঢপ নয়, টপকোয়ালিটি পাটালি৷ নিজেকে সত্যিই বেশ কেউকেটা মনে হচ্ছে বটে, তৃপ্তি উপচে পড়ছে৷ রাজারাজড়ার মেজাজ বোধ হয় এমনই৷ এমন কী অফিসের বসের ফোনটাও সাহস করে কেটে দিলাম কিছুক্ষণ আগে৷ পিঠে-পাটালির এফেক্ট কাল সকালে কেটে যাবে৷ তখন আবার নেকুপুষুসুন্টুনিমুন্টুনি হয়ে বসের সামনে ফ্ল্যাট হব৷ কিন্তু তার আগে পর্যন্ত আমিই রাজা।
- যাহ্৷ আচ্ছা ঝামেলা হল তো৷ রাস্তাঘাটও শুনশান, জাঁদরেল কাউকে পাব বলে তো আর মনে হচ্ছে না..৷ ওস্তাদ এমন দাঁত খিঁচুনি দেবে এখন..।
- ইয়ে ভায়া, পিঠ থেকে বন্দুকের নলটা সরালে একটা ওস্তাদ-সামলানোর উপায় বাতলাতে পারি।
- মাইরি গোবরদা?
- সাকসেসফুল টেকনোলজি বন্দুক-ভায়া৷ হাতেকলমে প্রমাণিত। শোনো, আমার পকেটে এক টুকরো পাটালি আছে, ভেবেছিলাম হন্টন শেষে বাড়ি ফেরার পথে মুখে দেব৷ সে'টা বরং তুমিই খেয়ে ফেলো৷ দেখবে ওস্তাদের দাঁতখিঁচুনি সয়ে আসবে, বুকে বল পাবে৷ দেব নাকি?
- দিন। এই প্রথম পিঠে বন্দুক ঠেকালাম, সোনাদানা টাকাকড়ি ঘড়িমোবাইল জুটল না৷ অন্তত পাটালি দিয়ে বউনিটা হয়ে যাক৷ জয় মা।
***
(ছবিটা ২০১৯ ডিসেম্বরের)

Comments

Popular posts from this blog

গোয়েন্দা গল্প

- কিছু মনে করবেন না মিস্টার দত্ত...আপনার কথাবার্তাগুলো আর কিছুতেই সিরিয়াসলি নেওয়া যাচ্ছে না।  - কেন? কেন বলুন তো ইন্সপেক্টর? - ভোররাতে এই থানা থেকে একশো ফুট দূরত্বে ফুটপাথে আপনাকে উপুড় হয়ে শুয়ে থাকতে দেখা যায়।  - আপনার কনস্টেবল নিজের চোখে দেখেছে তো।  - না না, সে'টাকে আমি কোশ্চেন করছি না। আমি শুধু সামারাইজ করছি। আপনার গায়ে দামী চিকনের পাঞ্জাবী, ঘড়িটার ডায়ালও সোনার হলে অবাক হব না। এ'রকম কাউকে বড় একটা ফুটপাথে পড়ে থাকতে দেখা যায় না। যা হোক। হরিমোহন কনস্টেবলের কাঁধে ভর দিয়ে আপনি থানায় এলেন। জলটল খেয়ে সামান্য সুস্থ বোধ করলেন। অল ইজ ওয়েল। নিঃশ্বাসে অ্যালকোহলের সামান্যতম ট্রেসও নেই। শরীরে নেই কোনও চোট আঘাত।  - আমার কথা আমায় বলে কী লাভ হচ্ছে? আমি যে জরুরী ব্যাপারটা জানাতে মাঝরাতে ছুটে এসেছিলাম...সেই ব্যাপারটা দেখুন...। ব্যাপারটা আর্জেন্ট ইন্সপেক্টর মিশ্র।  - আর্জেন্সিতে পরে আসছি। রাত সাড়ে তিনটে নাগাদ আপনি থানায় ছুটে এসেছিলেন। ওয়েল অ্যান্ড গুড। কিন্তু...ফুটপাথে পড়ে রইলেন কেন...।  - এ'টাই, এ'টাই আমি ঠিক নিশ্চিত নই। মাথাটাথা ঘুরে গেছিল হয়ত। আফটার অল বা

পকেটমার রবীন্দ্রনাথ

১ । চাপা উত্তেজনায় রবীন্দ্রনাথের ভিতরটা এক্কেবারে ছটফট করছিল । তার হাতে ঝোলানো কালো পলিথিনের প্যাকেটে যে ' টা আছে , সে ' টা ভেবেই নোলা ছুকছাক আর বুক ধড়ফড় । এমনিতে আলুথালু গতিতে সে হেঁটে অভ্যস্ত । তাড়াহুড়ো তার ধাতে সয় না মোটে । কিন্তু আজ ব্যাপারটা আলাদা । সে মাংস নিয়ে ফিরছে । হোক না মোটে আড়াই ' শ গ্রাম , তবু , কচি পাঁঠা বলে কথা । সহৃদয় আলম মিয়াঁ উপরি এক টুকরো মেটেও দিয়ে দিয়েছে । তোফা ! নিজের লম্বা দাড়ি দুলিয়ে ডবল গতিতে পা চালিয়ে সে এগোচ্ছিল ।   গলির মোড়ের দিকে এসে পৌঁছতে রবীন্দ্রনাথের কেমন যেন একটু সন্দেহ হল । ঠিক যেন কেউ পিছু নিয়েছে । দু ' একবার ঘাড় ঘুরিয়েও অবশ্য কাউকে দেখা গেলনা । ভাবনা ঝেড়ে ফেলে মাংসের পাকেটটায় মন ফিরিয়ে আনলেন রবীন্দ্রনাথ । বৌ নিশ্চয়ই খুব খুশি হবে আজ । খোকাটাকে যে কদ্দিন মাংসের ঝোল খাওয়ানো হয়নি ।   খাসির রান্নার গন্ধ ভেবে বড় গান পাচ্ছিল রবীন্দ্রনাথের । সে বাধ্য হয়েই একটা কুমার শানুর গাওয়া আশিকি সিনেমার গান ধরলে ।

চ্যাটার্জীবাবুর শেষ ইচ্ছে

- মিস্টার চ্যাটার্জী...। - কে? - আমার নাম বিনোদ। - আমি তো আপনাকে ঠিক...। - আমায় বস পাঠিয়েছেন। - ওহ, মিস্টার চৌধুরী আপনাকে...। - বসের নামটাম নেওয়ার তো কোনও দরকার নেই। কাজ নিয়ে এসেছি। কাজ করে চলে যাব। - আসুন, ভিতরে আসুন। - আমি ভিতরে গিয়ে কী করব বলুন। সৌজন্যের তো আর তেমন প্রয়োজন নেই। আপনি চলুন আমার সঙ্গে। চটপট কাজ মিটে গেলে পৌনে এগারোটার লোকালটা পেয়ে যাব। আমায় আবার সেই সোনারপুর ফিরতে হবে। - যা করার তা কি এ'খানেই সেরে ফেলা যায়না? - এমন কনজেস্টেড এলাকায় ও'সব কাজ করা চলেনা। চুপচাপ ব্যাপারটা সেরে ফেলতে হবে। - প্লীজ দু'মিনিটের জন্য ভিতরে আসুন বিনোদবাবু। জামাটা অন্তত পালটে নিই। - কী দরকার বলুন জামা পালটে। - দরকার তেমন নেই। তবু। ওই, লাস্ট উইশ ধরে নিন। - ক্যুইক প্লীজ। ট্রেন ধরার তাড়াটা ভুলে যাবেন না। আর ইয়ে, পিছন দিক দিয়ে পালাতে চেষ্টা করে লাভ নেই। বসের লোকজন চারপাশে ছড়িয়ে আছে। - ও মা, ছি ছি। তা নয়। আসলে মিতুলের দেওয়া একটা জামা এখনও ভাঙা হয়নি। বাটিক প্রিন্টের হাফশার্ট। একটু ব্রাইট কালার কিন্তু বেশ একটা ইয়ে আছে। ও চলে যাওয়ার পর ও জামার ভাজ ভাঙতে ইচ্ছে হয়নি। কিন্তু...আজ না হয়...। - মিতু