Skip to main content

মধুময়ের হিল্লে

মধুময় জানে না ব্যাপারটা কী ভাবে ঘটে।
জানার কথাও না। কিন্তু মাঝেমধ্যেই হয়।
মধুময়ের গান পায়, শুধু গান পায় তাই নয়; গলা বেয়ে গান আপনা থেকেই বেরিয়েও আসে। মধুময় জানে না ব্যাপারটা কী ভাবে ঘটে।
জানার কথাও না। কিন্তু মাঝেমধ্যেই হয়।

মধুময়ের গান পায়, শুধু গান পায় তাই নয়; গলা বেয়ে গান আপনা থেকেই বেরিয়েও আসে।

সুরগুলো মধুময়ের চেনা নয়। সবচেয়ে বড় কথা; গানের ভাষাটাই মধুময় জানে না। তবু অচেনা ভাষায় নতুন নতুন সুরে নতুন নতুন গান মাঝেমধ্যে মধুময়ের মধ্যে থেকে বেরিয়ে আসে। আর যখন আসে তখন সেই সুরের তোড় কিছুতেই রোখা যায় না; মধুময় গেয়ে উঠবেই। অমূল্য দাসের মুদীর দোকানে কাজ করে, হঠাৎ হঠাৎ গান পেলে বড় অপ্রস্তুত হয়ে পড়ে সে। অমূল্য দাস বা খদ্দেররাও প্রথম প্রথম ভেবড়ে যেত আর অদ্ভুত ভাষার গান শুনে, কিন্তু মধুময়ের গলায় দিব্যি সুর এসে গেছিল। ক্রমশ ব্যাপারটা গা-সওয়া হয়ে এসেছে। এখন আর তার গানে কেউ চমকে ওঠে না, এমনিতেও 'পাগলছাগল' বলে তাকে বিশেষ কেউ ঘাটায় না।

কিন্তু গান এলেই আরো একটা ব্যাপার হয়, সে'টা মধুময় ছাড়া অন্য কেউ টের পায় না। কানের মধ্যে কারুর মিঠে খিলিখিল হাসির শব্দ ভেসে আসে। কোনো ছোট্টমেয়ে, নিশ্চিত। মাঝেমধ্যে আসে হাততালির শব্দ, কখনো ছোট্ট মেয়েটা কথায় বলে ওঠে, গেয়েও ওঠে; কিন্তু সেই উদ্ভট অজানা ভাষায়। ব্যাপারটা আরো গোলমেলে অন্য কারণে, মধুময় কালা। কানে কিস্যুটি শুনতে পায় না। সাত বছর বয়সে একটা বিশ্রী অসুখে কান দু'টোই গেছিল। খুকির গলা কী ভাবে শুনতে পায় মধুময়? খুকিটি কে? কোথায় থাকে?

বেশি চিন্তা করে লাভ নেই। খুকির প্রতি সামান্য মায়া পড়ে গেছে। খুকি কি তার গান ভালোবাসে?

**

শিয়াঙের বন্ধুবান্ধব নেই, কথা বলতে না পারলে যা হয় আর কী। তবে শিয়াঙ সমস্ত কথা শুনতে পারে। সে আপন মনে খেলে বেড়ায়। মাঠে, ছাদে, উঠোনে, বাগানে আর মাঝেমধ্যে চিলেকোঠার ঘরে।
চিলেকোঠার ঘরটা শিয়াঙের বড় প্রিয়। কত সাতপুরনো আসবাবপত্র সে'খানে পড়ে। ছোট্ট শিয়াঙ সবচেয়ে ভালোবাসে পুরনো ভাঙাচোরা ট্রাঞ্জিস্টরটা। সবাই অবশ্য সে'টাকে অচল বলে, অথচ শিয়াঙ সে'টার নব ঘোরালেই একই কণ্ঠে খালি গলায় বিভিন্ন গান শুনতে পায়। সে কথা অবশ্য কেউ বিশ্বাস করে না। এক ভারতীয় বিজ্ঞানী কিছুদিন শিয়াঙের বাবার অতিথি হয়ে ছিলেন, শিয়াঙের সঙ্গে বড্ড ভাব জমে গেছিল তার। যাওয়ার আগে এই ভাঙা ট্রান্সিস্টর শিয়াঙকে উপহার দিয়ে গেছিলেন।

বাড়ির সক্কলে অবাক, এমন ভাঙা ট্রান্সিস্টর কেউ কাউকে দেয় নাকি? তবে বৈজ্ঞানিকরা অমন খ্যাপাটে হয় বটে, আর উপহার যখন; তা ফেলেও দেওয়া যায় না। কাজেই তার স্থান হয়েছিল চিলেকোঠায়। 

কিন্তু উপহারটা যে কতটা ভালো তা শুধু শিয়াঙ টের পায়। রেডিওর নব ঘোরালেই একটা অচেনা পুরুষ কণ্ঠ অদ্ভুত উচ্চারণে এবং অপূর্ব সুরে গাইতে শুরু করে। কী আনন্দ হয় শিয়াঙের। খিলিখিলিয়ে হেসে ওঠে সে, হাততালি দেয় আর সবচেয়ে অদ্ভুত ব্যাপার; সেই গান শোনার সময় রীতিমত কথা বলতে পারে ছোট্ট শিয়াং। কেউ বিশ্বাস করে না, তা'তে শিয়াঙের ভারি বয়েই গেছে! সে গান শুনে শিয়াঙ কথা বলতে পারে; এমন কী গাইতেও পারে। 

শিয়াঙ বড্ড ভালোবাসে রেডিওর কণ্ঠস্বরটাকে।

**

- প্রহ্লাদ রে, আছিস কোথায়?
- যাক, চীনদেশ থেকে ফিরলেন শেষে। আমি ভাবলাম আর ফিরবেন না। ল্যাবোরেটরির মায়া ত্যাগ করে মানস সরোবরের আশেপাশে সাধুটাধু হয়ে ঘুরে বেড়াবেন বোধ হয়।
- ল্যাবরেটরি সাফ রেখেছিস?
- ঝকঝকে তকতকে আজ্ঞে।
- তোর জন্য একটা ভালো খবর আছে।
- সন্ন্যাসটা নিচ্ছেন? আমায় এ বাড়ি উইল করে দিচ্ছেন। ল্যাবরেটরিতে কিন্তু আমি ঠাকুরঘর করব বলে রাখলাম।
- উফফ। এ ব্যাটাকে স্নাফ গানে শায়েস্তা না করলে চলছে না। যাক গে, তোর পিসতুতো ভাই মধুময়ের কথা বলেছিলিস না? তার বড় দুঃখ সে কানে শুনতে পায় না? হিয়ারিং এডেও কাজ হয়নি? 
- নবদ্বীপে বাস। ন্যালাখ্যাপা হতে পারে, কিন্তু বড় ভালো ছেলে। আহা, কী দুঃখ তার! 
- তার একটা হিল্লে করে এলাম।
- মধুময়ের?
- নয়তো আর বলছি কী। 
- চীনদেশে গেছিলেন না নবদ্বীপ?
- চীন। অপূর্ব দেশ, ছ'মাস ধরে চষে বেড়ালাম। 
- তা'তে মধুময়ের কী লাভ? সে যে নবদ্বীপে!
- এক ঢিলে দুই পাখি। তোর মাথায় ঢুকবে না। তা হ্যাঁ রে  প্রহ্লাদ,  নিউটনকে দেখছি না যে। তার কি অভিমান হয়েছে? 

Comments

Popular posts from this blog

গোয়েন্দা গল্প

- কিছু মনে করবেন না মিস্টার দত্ত...আপনার কথাবার্তাগুলো আর কিছুতেই সিরিয়াসলি নেওয়া যাচ্ছে না।  - কেন? কেন বলুন তো ইন্সপেক্টর? - ভোররাতে এই থানা থেকে একশো ফুট দূরত্বে ফুটপাথে আপনাকে উপুড় হয়ে শুয়ে থাকতে দেখা যায়।  - আপনার কনস্টেবল নিজের চোখে দেখেছে তো।  - না না, সে'টাকে আমি কোশ্চেন করছি না। আমি শুধু সামারাইজ করছি। আপনার গায়ে দামী চিকনের পাঞ্জাবী, ঘড়িটার ডায়ালও সোনার হলে অবাক হব না। এ'রকম কাউকে বড় একটা ফুটপাথে পড়ে থাকতে দেখা যায় না। যা হোক। হরিমোহন কনস্টেবলের কাঁধে ভর দিয়ে আপনি থানায় এলেন। জলটল খেয়ে সামান্য সুস্থ বোধ করলেন। অল ইজ ওয়েল। নিঃশ্বাসে অ্যালকোহলের সামান্যতম ট্রেসও নেই। শরীরে নেই কোনও চোট আঘাত।  - আমার কথা আমায় বলে কী লাভ হচ্ছে? আমি যে জরুরী ব্যাপারটা জানাতে মাঝরাতে ছুটে এসেছিলাম...সেই ব্যাপারটা দেখুন...। ব্যাপারটা আর্জেন্ট ইন্সপেক্টর মিশ্র।  - আর্জেন্সিতে পরে আসছি। রাত সাড়ে তিনটে নাগাদ আপনি থানায় ছুটে এসেছিলেন। ওয়েল অ্যান্ড গুড। কিন্তু...ফুটপাথে পড়ে রইলেন কেন...।  - এ'টাই, এ'টাই আমি ঠিক নিশ্চিত নই। মাথাটাথা ঘুরে গেছিল হয়ত। আফটার অল বা

পকেটমার রবীন্দ্রনাথ

১ । চাপা উত্তেজনায় রবীন্দ্রনাথের ভিতরটা এক্কেবারে ছটফট করছিল । তার হাতে ঝোলানো কালো পলিথিনের প্যাকেটে যে ' টা আছে , সে ' টা ভেবেই নোলা ছুকছাক আর বুক ধড়ফড় । এমনিতে আলুথালু গতিতে সে হেঁটে অভ্যস্ত । তাড়াহুড়ো তার ধাতে সয় না মোটে । কিন্তু আজ ব্যাপারটা আলাদা । সে মাংস নিয়ে ফিরছে । হোক না মোটে আড়াই ' শ গ্রাম , তবু , কচি পাঁঠা বলে কথা । সহৃদয় আলম মিয়াঁ উপরি এক টুকরো মেটেও দিয়ে দিয়েছে । তোফা ! নিজের লম্বা দাড়ি দুলিয়ে ডবল গতিতে পা চালিয়ে সে এগোচ্ছিল ।   গলির মোড়ের দিকে এসে পৌঁছতে রবীন্দ্রনাথের কেমন যেন একটু সন্দেহ হল । ঠিক যেন কেউ পিছু নিয়েছে । দু ' একবার ঘাড় ঘুরিয়েও অবশ্য কাউকে দেখা গেলনা । ভাবনা ঝেড়ে ফেলে মাংসের পাকেটটায় মন ফিরিয়ে আনলেন রবীন্দ্রনাথ । বৌ নিশ্চয়ই খুব খুশি হবে আজ । খোকাটাকে যে কদ্দিন মাংসের ঝোল খাওয়ানো হয়নি ।   খাসির রান্নার গন্ধ ভেবে বড় গান পাচ্ছিল রবীন্দ্রনাথের । সে বাধ্য হয়েই একটা কুমার শানুর গাওয়া আশিকি সিনেমার গান ধরলে ।

চ্যাটার্জীবাবুর শেষ ইচ্ছে

- মিস্টার চ্যাটার্জী...। - কে? - আমার নাম বিনোদ। - আমি তো আপনাকে ঠিক...। - আমায় বস পাঠিয়েছেন। - ওহ, মিস্টার চৌধুরী আপনাকে...। - বসের নামটাম নেওয়ার তো কোনও দরকার নেই। কাজ নিয়ে এসেছি। কাজ করে চলে যাব। - আসুন, ভিতরে আসুন। - আমি ভিতরে গিয়ে কী করব বলুন। সৌজন্যের তো আর তেমন প্রয়োজন নেই। আপনি চলুন আমার সঙ্গে। চটপট কাজ মিটে গেলে পৌনে এগারোটার লোকালটা পেয়ে যাব। আমায় আবার সেই সোনারপুর ফিরতে হবে। - যা করার তা কি এ'খানেই সেরে ফেলা যায়না? - এমন কনজেস্টেড এলাকায় ও'সব কাজ করা চলেনা। চুপচাপ ব্যাপারটা সেরে ফেলতে হবে। - প্লীজ দু'মিনিটের জন্য ভিতরে আসুন বিনোদবাবু। জামাটা অন্তত পালটে নিই। - কী দরকার বলুন জামা পালটে। - দরকার তেমন নেই। তবু। ওই, লাস্ট উইশ ধরে নিন। - ক্যুইক প্লীজ। ট্রেন ধরার তাড়াটা ভুলে যাবেন না। আর ইয়ে, পিছন দিক দিয়ে পালাতে চেষ্টা করে লাভ নেই। বসের লোকজন চারপাশে ছড়িয়ে আছে। - ও মা, ছি ছি। তা নয়। আসলে মিতুলের দেওয়া একটা জামা এখনও ভাঙা হয়নি। বাটিক প্রিন্টের হাফশার্ট। একটু ব্রাইট কালার কিন্তু বেশ একটা ইয়ে আছে। ও চলে যাওয়ার পর ও জামার ভাজ ভাঙতে ইচ্ছে হয়নি। কিন্তু...আজ না হয়...। - মিতু