Skip to main content

কলকাতার মেসিয়াহ্ - ৬



- এই যে ব্রাদার অরূপ, ঘুম আসছে না?
- এই প্রশ্নের যে কোনো উত্তরই সেল্ফ-ডিফীটিং, তাই না অজয়দা?
- সর্বনাশ। মেসবাড়িতে ফিলোসফিক উত্তর। ব্যাপারটা কী?
- আসছে না। ঘুম। অবভিয়াসলি।
- কী নাম যেন মেয়েটার? কুন্তলা?
- ধুস।
- কুন্তলা নয় ওর নাম?
- আহা, ওর নাম কুন্তলাই। কিন্তু ও আবার এলো কোথা থেকে। গরমে গলদঘর্ম, তাই..।
- লেটস সী। চিঠি দিয়েছে?
- ধ্যার।
- চিঠি এক্সপেক্ট করছিলিস অথচ দেয়নি?
- উফ, অজয়দা।
- প্রেমের কচু চেনার ব্যাপারে আমি রীতিমত শুয়োর, বুঝলি? বিকেলে চাউমিনে ডিম দিতে বললি না, ছাদে গেলি রেডিও ছাড়া; এ'সমস্তই শিওর শট সিম্পটম।
- কলকাতায় এসেছে। সে।
- কুন্তলা কলকাতায়?এই সময়? তোর না সামনে ফার্স্ট ইয়ারের এগজ্যাম? গেল পাঁচ পারসেন্ট।
- যত বাজে কথা। এ কী, আলো জ্বাললে কেন?
- হবে না, তোর এখন ঘুম আসবে না। গজার ডিবেটা এ'দিকে দে। আর খুলে বল। পটাটা থাকলে ভালো হত, প্রেমট্রেমের ব্যাপারে ওর মাথা বেশ খোলতাই।
- প্রেম কেন হতে যাবে?
- ওহ হো। তোর তো আবার সেমান্টিক অ্যালার্জি আছে। যাক গে, মাসীমা কিন্তু গজাগুলো বড় ভালো বানান।
- কুন্তলা এক হপ্তা হল এসেছে।
- থাকে তো দিল্লীতে, তাই না?
- জয়পুরে।
- ওই হল। তা, তুই জানলি কী করে? এসেছে?
- চিঠি।
- দেখা?
- করবে বলেছিল। ফোন নাম্বারও দিয়েছিল। বুথ থেকে ফোন করেছিলাম। বলল সোমবার দেখা করবে। সন্ধেবেলা।
- মানে...কালকে?
- হুঁ।
- ও, আনন্দে ঘুম আসছে না, তাই বল।
- অজয়দা, ওর গলা যেন কেমন শোনালো। দেখা করতে চায় না যেন, নেহাৎ বাধ্য হয়ে...।
- পেসিমিজম।
- গাট ফীলিং। ভাবছি দেখাটেখা করব না।
- তোর মাথায় গাঁট্টা মারলে তবে তোর বদফীলিংগুলো শায়েস্তা হবে। কোথায় দেখা করছিস? সেই আগের বারের মত? কমলা ক্যাফে?
- কথা তেমনই, কিন্তু আমি ভাবছিলাম...মানে মনে হচ্ছিল...কুন্তলা ঠিক দেখা করতে চায় না।
- রাবিশ। গজা শেষ। আর কাল দেখা করে আসিস। অবশ্যই। তারপর অ্যাসেস করব।

***

কমলা ক্যাফেতে অজয়দাও এসেছিল, অরূপের পিছুপিছু।  প্রতিবার যেমন বিরক্ত করতে আসে, আচমকা উদয় হয়। কাটলেটে ভাগ বসায়, বাজে জ্ঞান দেয়। গতবার কুন্তলা বেশ বিরক্ত হয়েছিল। তবে অজয়দা ও'সব বিরক্তিকে পাত্তা দেয় না।

এ'বারে অবশ্য তেমন সমস্যা হয়নি। কুন্তলা আসেনি। অরূপের কাছে ব্যক্তিগত কোনো ফোন নেই, তাই হয়ত জানাতে পারেনি।

দেড় ঘণ্টা অপেক্ষা অপেক্ষা করেছিল অরূপ। অজয়দা তারপর পাশের কেবিন থেকে বেরিয়ে আসে।

"কুন্তলা খুব ভালো মেয়ে অজয়দা। আসলে, আমি ঠিক..." বেকুবের মত বলে ফেলেছিল অরূপ। তবে এ'বার দুম করে অজয়দাকে দেখতে পেয়ে বড় ভালো লেগেছিল।

স্পেশ্যাল মোগলাই দু'টো অজয়দাই অর্ডার করেছিল। টিউশনারি টাকাগুলো ওর কাছে বড় দামী, একদম বাজে খরচ করে না অজয়দা। ওর বাড়ির অবস্থা তেমন সুবিধের নয় কিনা। মোগলাইয়ের পর যখন দু'টো থামস আপ অর্ডার করল অজয়দা, তখন অরূপেরই গা কড়কড় করছিল। কিন্তু বারণ শুনল না। কমলা ক্যাফে থেকে বেরিয়ে এসে কলেজ স্ট্রীটের দে বুক স্টলে নিয়ে গিয়ে অরূপকে একটা বই কিনে দিয়েছিল অজয়দা, এ'বারও বারণ শোনেনি। শিব্রামের 'ঈশ্বর পৃথিবী ভালোবাসা'।

মেসে ঢোকার মুখে অজয়দা অরূপের কাঁধে হাত রেখেছিল;
"অরূপ, কুন্তলা সত্যিই ভালো মেয়ে। এ বিশ্বাস কোনোদিন নষ্ট হতে দিবি না, কেমন"?

মেসের 'বেড'টাই ক্রমশ অরূপের 'বাড়ি' হয়ে উঠছিল।

(চলছে, চলবে)

Comments

Popular posts from this blog

গোয়েন্দা গল্প

- কিছু মনে করবেন না মিস্টার দত্ত...আপনার কথাবার্তাগুলো আর কিছুতেই সিরিয়াসলি নেওয়া যাচ্ছে না।  - কেন? কেন বলুন তো ইন্সপেক্টর? - ভোররাতে এই থানা থেকে একশো ফুট দূরত্বে ফুটপাথে আপনাকে উপুড় হয়ে শুয়ে থাকতে দেখা যায়।  - আপনার কনস্টেবল নিজের চোখে দেখেছে তো।  - না না, সে'টাকে আমি কোশ্চেন করছি না। আমি শুধু সামারাইজ করছি। আপনার গায়ে দামী চিকনের পাঞ্জাবী, ঘড়িটার ডায়ালও সোনার হলে অবাক হব না। এ'রকম কাউকে বড় একটা ফুটপাথে পড়ে থাকতে দেখা যায় না। যা হোক। হরিমোহন কনস্টেবলের কাঁধে ভর দিয়ে আপনি থানায় এলেন। জলটল খেয়ে সামান্য সুস্থ বোধ করলেন। অল ইজ ওয়েল। নিঃশ্বাসে অ্যালকোহলের সামান্যতম ট্রেসও নেই। শরীরে নেই কোনও চোট আঘাত।  - আমার কথা আমায় বলে কী লাভ হচ্ছে? আমি যে জরুরী ব্যাপারটা জানাতে মাঝরাতে ছুটে এসেছিলাম...সেই ব্যাপারটা দেখুন...। ব্যাপারটা আর্জেন্ট ইন্সপেক্টর মিশ্র।  - আর্জেন্সিতে পরে আসছি। রাত সাড়ে তিনটে নাগাদ আপনি থানায় ছুটে এসেছিলেন। ওয়েল অ্যান্ড গুড। কিন্তু...ফুটপাথে পড়ে রইলেন কেন...।  - এ'টাই, এ'টাই আমি ঠিক নিশ্চিত নই। মাথাটাথা ঘুরে গেছিল হয়ত। আফটার অল বা

পকেটমার রবীন্দ্রনাথ

১ । চাপা উত্তেজনায় রবীন্দ্রনাথের ভিতরটা এক্কেবারে ছটফট করছিল । তার হাতে ঝোলানো কালো পলিথিনের প্যাকেটে যে ' টা আছে , সে ' টা ভেবেই নোলা ছুকছাক আর বুক ধড়ফড় । এমনিতে আলুথালু গতিতে সে হেঁটে অভ্যস্ত । তাড়াহুড়ো তার ধাতে সয় না মোটে । কিন্তু আজ ব্যাপারটা আলাদা । সে মাংস নিয়ে ফিরছে । হোক না মোটে আড়াই ' শ গ্রাম , তবু , কচি পাঁঠা বলে কথা । সহৃদয় আলম মিয়াঁ উপরি এক টুকরো মেটেও দিয়ে দিয়েছে । তোফা ! নিজের লম্বা দাড়ি দুলিয়ে ডবল গতিতে পা চালিয়ে সে এগোচ্ছিল ।   গলির মোড়ের দিকে এসে পৌঁছতে রবীন্দ্রনাথের কেমন যেন একটু সন্দেহ হল । ঠিক যেন কেউ পিছু নিয়েছে । দু ' একবার ঘাড় ঘুরিয়েও অবশ্য কাউকে দেখা গেলনা । ভাবনা ঝেড়ে ফেলে মাংসের পাকেটটায় মন ফিরিয়ে আনলেন রবীন্দ্রনাথ । বৌ নিশ্চয়ই খুব খুশি হবে আজ । খোকাটাকে যে কদ্দিন মাংসের ঝোল খাওয়ানো হয়নি ।   খাসির রান্নার গন্ধ ভেবে বড় গান পাচ্ছিল রবীন্দ্রনাথের । সে বাধ্য হয়েই একটা কুমার শানুর গাওয়া আশিকি সিনেমার গান ধরলে ।

চ্যাটার্জীবাবুর শেষ ইচ্ছে

- মিস্টার চ্যাটার্জী...। - কে? - আমার নাম বিনোদ। - আমি তো আপনাকে ঠিক...। - আমায় বস পাঠিয়েছেন। - ওহ, মিস্টার চৌধুরী আপনাকে...। - বসের নামটাম নেওয়ার তো কোনও দরকার নেই। কাজ নিয়ে এসেছি। কাজ করে চলে যাব। - আসুন, ভিতরে আসুন। - আমি ভিতরে গিয়ে কী করব বলুন। সৌজন্যের তো আর তেমন প্রয়োজন নেই। আপনি চলুন আমার সঙ্গে। চটপট কাজ মিটে গেলে পৌনে এগারোটার লোকালটা পেয়ে যাব। আমায় আবার সেই সোনারপুর ফিরতে হবে। - যা করার তা কি এ'খানেই সেরে ফেলা যায়না? - এমন কনজেস্টেড এলাকায় ও'সব কাজ করা চলেনা। চুপচাপ ব্যাপারটা সেরে ফেলতে হবে। - প্লীজ দু'মিনিটের জন্য ভিতরে আসুন বিনোদবাবু। জামাটা অন্তত পালটে নিই। - কী দরকার বলুন জামা পালটে। - দরকার তেমন নেই। তবু। ওই, লাস্ট উইশ ধরে নিন। - ক্যুইক প্লীজ। ট্রেন ধরার তাড়াটা ভুলে যাবেন না। আর ইয়ে, পিছন দিক দিয়ে পালাতে চেষ্টা করে লাভ নেই। বসের লোকজন চারপাশে ছড়িয়ে আছে। - ও মা, ছি ছি। তা নয়। আসলে মিতুলের দেওয়া একটা জামা এখনও ভাঙা হয়নি। বাটিক প্রিন্টের হাফশার্ট। একটু ব্রাইট কালার কিন্তু বেশ একটা ইয়ে আছে। ও চলে যাওয়ার পর ও জামার ভাজ ভাঙতে ইচ্ছে হয়নি। কিন্তু...আজ না হয়...। - মিতু