Skip to main content

মেসি ও মামা

- মামা গো!
- এই অসময়ে ফোন করেছিস কেন?
- অসময়? রাত পৌনে ন'টা। এখন তো তুমি সবে মশলা মুড়ি খেয়ে অ্যাপেটাইট বিল্ড করছ।
- নাহ্‌। আজ আর সে'সব করছি না।
- সে কী! শনিবার রাত তো তোমার পাঁঠার কোর্মা আর হাতরুটির রাত। প্লাস ছানার পায়েস। তা, অ্যাপেটাইট বিল্ড না করলে চলবে?
- আজ রাতে ঝিঙের তরকারি আর সয়াবিন।
- সে কী!
- বাজে কথা বলার সময় আমার নেই।
- তা খেলা দেখলে?
- হ্যাঁ। ইংল্যান্ড খুব ভালো ব্যাট করেছে।
- সে কী! মেসি মাঠে নামলে আর তুমি ক্রিকেটের রেফারেন্স দিচ্ছ মামা?
- বড্ড পেকেছিস তুই। সেদিনের ছোকরা, বড়দের লেগপুল করছিস?
- যাব্বাবা! খেলা দেখছ কিনা জিজ্ঞেস করলাম, এ'তে আবার লেগপুলের কী হল।
- শোন, এককালে ডিস্ট্রিক্ট খেলেছি। লেফট উইং। বুঝলি? তোদের মত ইএ স্পোর্টসে লম্ফঝম্প করে জ্ঞান ঝাড়ি না।
- মন খারাপ মামা? মেসির পেনাল্টি মিসে?
- মনখারাপের কী? শোন, মারাদোনা আর মেসির পর আমার মোস্ট ফেভারিট আর্জেন্টাইন চে'কে টিশার্টে নয়, বুকে রাখি। বিপ্লব কখনও পেনাল্টি মিস করে সন্ন্যাস নেয় না। আইসল্যান্ডের সঙ্গে আইসব্রেকিংয়ে সমস্যা হয়েছে, দাঁড়া আর দু'দিন। ওই নন-ন্যাড়া রোনাল্ডোর কান মুলে যদি মেসি না এগিয়েছে...।
- কিন্তু যাই বলো মামা। তেকাঠিতে প্রায় বল রাখতেই পারল না। পেনাল্টিতে অবশ্য রেখেছিল, তবে ইয়ে। গোলকিপারটা বেরসিক।
- ইনজুরিতে আজিনোমোটো ছড়াচ্ছিস? সেই জন্যেই তো ফোন করেছিস, তাই না?
- মামা, খামোখা চটছ মাইরি।
- সব বুঝি। যাক গে। এ'টা আমি জানতাম।
- জানতে?
- বাপনদা বলছিল, গ্রহের পজিশন নাকি বিট্রে করতে পারে।
- বাপনমামা? তোমার সেই তান্ত্রিক কাম জ্যোতিষ বন্ধু?
- হুঁ।
- গ্রহের পজিশনের পেনাল্টি মিস?
- মেসি একটু ভেবড়ে গেছিল তাই। মেসি একটা মাদুলি ধারণ পারলে ভালো হত। কিন্তু যাকগে। অল্টারনেট উপায় একটা পাওয়া গেছে।
- কী উপায়?
- সামনের মঙ্গলবার নিরামিষ খেয়ে মেসির নামে কালীঘাটে একটা পুজো দিতে হবে। বাপনই সমস্ত ব্যবস্থা করে দেবে।
- বলো কী!
- গ্রহের ইন্টারফারেন্স কাটলেই; কচাতকচাত করে সব কচুকাটা হবে।
- মামা, তুমি মঙ্গলে নিরামিষ খাচ্ছ?
- উপায় নেই রে। উপায় নেই।
- যাব্ববা। এ তো বেশ মুশকিল হল।
- কীসের মুশকিল?
- মঙ্গলে জামাই ষষ্ঠী না? এ'বার তোমার শ্বশুরবাড়ি থেকে ডাকেনি? জামাইআদরের শেলফ লাইফ শেষ?
- সর্বনাশ! মঙ্গলে তো জামাই ষষ্ঠী। একদম ভুলে মেরে দিয়েছিলাম। এ'দিকে পুজোটা মঙ্গলেই করতে হবে। পরের মঙ্গল হলে ইট উইল বি টু লেট।
- যাক, তা'হলে কী আর করা যাবে। এ যাত্রা নিরামিষ খেয়েই কাটিয়ে দাও জামাইষষ্ঠীতে। শ্বশুরবাড়িতে জানিয়ে দাও। দুপুরে ভাত, ঝিঙে আলুর ঝোল, আর মুলো দেওয়া ডাল থাকলেই চলবে।
- খামোশ। ভামোস নিয়ে পরে ভাবলেও চলবে। আর রিয়েল খেলা তো ক্রিকেট রে; যে'খানে লাঞ্চ টী ড্রিঙ্কস সমস্ত আছে। ফুটবল তো ধ্বস্তাধস্তি। একটা আদ্দির পাঞ্জাবি কিনতে হবে। বেরোব ভাবছি। দেখা করবি নাকি? পাঞ্জাবি কেনা আর নন্দী হোটেলের মেটে চচ্চড়ি আর ডিম তড়কা। কী?
- তুমি অন্তর্যামী মামা। মোড়ের মাথায় দেখা করি তা'হলে? আধঘণ্টার মাথায়?
- তাই আয়। আমি একটু মশলা মুড়ি মুখে দিয়েই বেরোচ্ছি।
(ছবিঃ Pulse)

Comments

Popular posts from this blog

গোয়েন্দা গল্প

- কিছু মনে করবেন না মিস্টার দত্ত...আপনার কথাবার্তাগুলো আর কিছুতেই সিরিয়াসলি নেওয়া যাচ্ছে না।  - কেন? কেন বলুন তো ইন্সপেক্টর? - ভোররাতে এই থানা থেকে একশো ফুট দূরত্বে ফুটপাথে আপনাকে উপুড় হয়ে শুয়ে থাকতে দেখা যায়।  - আপনার কনস্টেবল নিজের চোখে দেখেছে তো।  - না না, সে'টাকে আমি কোশ্চেন করছি না। আমি শুধু সামারাইজ করছি। আপনার গায়ে দামী চিকনের পাঞ্জাবী, ঘড়িটার ডায়ালও সোনার হলে অবাক হব না। এ'রকম কাউকে বড় একটা ফুটপাথে পড়ে থাকতে দেখা যায় না। যা হোক। হরিমোহন কনস্টেবলের কাঁধে ভর দিয়ে আপনি থানায় এলেন। জলটল খেয়ে সামান্য সুস্থ বোধ করলেন। অল ইজ ওয়েল। নিঃশ্বাসে অ্যালকোহলের সামান্যতম ট্রেসও নেই। শরীরে নেই কোনও চোট আঘাত।  - আমার কথা আমায় বলে কী লাভ হচ্ছে? আমি যে জরুরী ব্যাপারটা জানাতে মাঝরাতে ছুটে এসেছিলাম...সেই ব্যাপারটা দেখুন...। ব্যাপারটা আর্জেন্ট ইন্সপেক্টর মিশ্র।  - আর্জেন্সিতে পরে আসছি। রাত সাড়ে তিনটে নাগাদ আপনি থানায় ছুটে এসেছিলেন। ওয়েল অ্যান্ড গুড। কিন্তু...ফুটপাথে পড়ে রইলেন কেন...।  - এ'টাই, এ'টাই আমি ঠিক নিশ্চিত নই। মাথাটাথা ঘুরে গেছিল হয়ত। আফটার অল বা

পকেটমার রবীন্দ্রনাথ

১ । চাপা উত্তেজনায় রবীন্দ্রনাথের ভিতরটা এক্কেবারে ছটফট করছিল । তার হাতে ঝোলানো কালো পলিথিনের প্যাকেটে যে ' টা আছে , সে ' টা ভেবেই নোলা ছুকছাক আর বুক ধড়ফড় । এমনিতে আলুথালু গতিতে সে হেঁটে অভ্যস্ত । তাড়াহুড়ো তার ধাতে সয় না মোটে । কিন্তু আজ ব্যাপারটা আলাদা । সে মাংস নিয়ে ফিরছে । হোক না মোটে আড়াই ' শ গ্রাম , তবু , কচি পাঁঠা বলে কথা । সহৃদয় আলম মিয়াঁ উপরি এক টুকরো মেটেও দিয়ে দিয়েছে । তোফা ! নিজের লম্বা দাড়ি দুলিয়ে ডবল গতিতে পা চালিয়ে সে এগোচ্ছিল ।   গলির মোড়ের দিকে এসে পৌঁছতে রবীন্দ্রনাথের কেমন যেন একটু সন্দেহ হল । ঠিক যেন কেউ পিছু নিয়েছে । দু ' একবার ঘাড় ঘুরিয়েও অবশ্য কাউকে দেখা গেলনা । ভাবনা ঝেড়ে ফেলে মাংসের পাকেটটায় মন ফিরিয়ে আনলেন রবীন্দ্রনাথ । বৌ নিশ্চয়ই খুব খুশি হবে আজ । খোকাটাকে যে কদ্দিন মাংসের ঝোল খাওয়ানো হয়নি ।   খাসির রান্নার গন্ধ ভেবে বড় গান পাচ্ছিল রবীন্দ্রনাথের । সে বাধ্য হয়েই একটা কুমার শানুর গাওয়া আশিকি সিনেমার গান ধরলে ।

চ্যাটার্জীবাবুর শেষ ইচ্ছে

- মিস্টার চ্যাটার্জী...। - কে? - আমার নাম বিনোদ। - আমি তো আপনাকে ঠিক...। - আমায় বস পাঠিয়েছেন। - ওহ, মিস্টার চৌধুরী আপনাকে...। - বসের নামটাম নেওয়ার তো কোনও দরকার নেই। কাজ নিয়ে এসেছি। কাজ করে চলে যাব। - আসুন, ভিতরে আসুন। - আমি ভিতরে গিয়ে কী করব বলুন। সৌজন্যের তো আর তেমন প্রয়োজন নেই। আপনি চলুন আমার সঙ্গে। চটপট কাজ মিটে গেলে পৌনে এগারোটার লোকালটা পেয়ে যাব। আমায় আবার সেই সোনারপুর ফিরতে হবে। - যা করার তা কি এ'খানেই সেরে ফেলা যায়না? - এমন কনজেস্টেড এলাকায় ও'সব কাজ করা চলেনা। চুপচাপ ব্যাপারটা সেরে ফেলতে হবে। - প্লীজ দু'মিনিটের জন্য ভিতরে আসুন বিনোদবাবু। জামাটা অন্তত পালটে নিই। - কী দরকার বলুন জামা পালটে। - দরকার তেমন নেই। তবু। ওই, লাস্ট উইশ ধরে নিন। - ক্যুইক প্লীজ। ট্রেন ধরার তাড়াটা ভুলে যাবেন না। আর ইয়ে, পিছন দিক দিয়ে পালাতে চেষ্টা করে লাভ নেই। বসের লোকজন চারপাশে ছড়িয়ে আছে। - ও মা, ছি ছি। তা নয়। আসলে মিতুলের দেওয়া একটা জামা এখনও ভাঙা হয়নি। বাটিক প্রিন্টের হাফশার্ট। একটু ব্রাইট কালার কিন্তু বেশ একটা ইয়ে আছে। ও চলে যাওয়ার পর ও জামার ভাজ ভাঙতে ইচ্ছে হয়নি। কিন্তু...আজ না হয়...। - মিতু