Skip to main content

সিনেমানস

মিডিওক্রিটির বোঝা কাঁধে নিয়ে বড় হওয়া চাট্টিখানি কথা নয়। আমি জানি।

কোনো চ্যাম্পিয়নসুলভ মুহূর্ত নেই, কোনো এক্সেলেন্সের জন্য জান লড়িয়ে দেওয়া নেই। সাফল্যের ডেফিনিশনকে নিজের স্কেলে বসিয়ে ফুর্তি করতে হয়। আমি বুঝি।

জীবনের প্রশ্নগুলোকে কানমুলে রাখতে হয়;
চাবকানি খেতে যাতে না হয়, পরীক্ষায় সেই বেসিক নম্বরটুকু পাব তো? কনসেপ্টটনসেপ্ট না বুঝলেও চলবে।
কোনোরকমে একটা চাকরী পাব তো? নিজের আগ্রহটাগ্রহের মত এলিটিস্ট ব্যাপারে না ভাবলেও হবে।
চাকরীটা টিকিয়ে রাখা যাবে তো? কাজে নিখুঁত হওয়ার চেষ্টা অতি বুর্জোয়া একটা খোয়াইশ।

খেলাধুলো? টিভির রিমোট।
এক্সট্রা কারিকুলার? ফোঁপরদালালি।

এই সব মিডিওক্রেসির ভিড়ে পিএফ-গ্র‍্যাচুইটির ইগলু বানিয়ে তার ভিতর নড়বড়ে আত্মবিশ্বাসের স্যান্ডো গেঞ্জি পরে বসে থাকা।

মধ্যমেধা, মধ্যমাপের শখআহ্লাদ, মধ্যরুচির চাহিদায় ভেসে বেড়ালে কী হবে। মাঝেমধ্যে কিছু সিনেমার মুহূর্ত সিনা চওড়া করে দেয়, বুকে দু'দণ্ড সাহসের বাতাস বয়।  আবহসঙ্গীত ভালোবাসা তৈরী করে। সাদামাটা একটা চরিত্র কেমন ঝকঝকে হিমাচলি আকাশের মত চোখ জুড়িয়ে দেয়। তার ভালো মন্দ নিজের বুকের মধ্যে বাজতে শুরু করে।

কয়েক মুহূর্তের জন্য মনে হয়; টুপ করে কয়েকটা ভালো কাজ করে ফেললে বেশ হয়। কোনো এক  দৃশ্যের সামনে দাঁড়িয়ে  আচমকা মনে হয় কাল থেকে ধান্দাবাজি ছেড়ে দেব।

নিজের মধ্যের অজস্র ভালো-হতে-না পারাগুলো চোখের উপর ছলছলিয়ে ওঠে। মনখারাপ হয়, মনভালোর চেয়েও সুন্দর যে মনখারাপ। ছবির মত, সেই সিনেমার মত।

মিনিট দশেক থাকে সেই মনখারাপ। সেই মিডিওক্রিটিকে কাঁচকলা দেখানো দশ মিনিটের জন্যই ভালো সিনেমা। খানিক পরেই অবশ্য চোখ ছলছল কেটে যায়, মনের মধ্যে ফের ডালডা পোড়া অফিস চালাকি আর পারিবারিক গসিপ; পায়ের তলায় ফিরে আসে গ্র‍্যাভিট, জিভে তিতকুটে ভাব।

সিনেমারা বেঁচে থাক।

Comments

Popular posts from this blog

গোয়েন্দা গল্প

- কিছু মনে করবেন না মিস্টার দত্ত...আপনার কথাবার্তাগুলো আর কিছুতেই সিরিয়াসলি নেওয়া যাচ্ছে না।  - কেন? কেন বলুন তো ইন্সপেক্টর? - ভোররাতে এই থানা থেকে একশো ফুট দূরত্বে ফুটপাথে আপনাকে উপুড় হয়ে শুয়ে থাকতে দেখা যায়।  - আপনার কনস্টেবল নিজের চোখে দেখেছে তো।  - না না, সে'টাকে আমি কোশ্চেন করছি না। আমি শুধু সামারাইজ করছি। আপনার গায়ে দামী চিকনের পাঞ্জাবী, ঘড়িটার ডায়ালও সোনার হলে অবাক হব না। এ'রকম কাউকে বড় একটা ফুটপাথে পড়ে থাকতে দেখা যায় না। যা হোক। হরিমোহন কনস্টেবলের কাঁধে ভর দিয়ে আপনি থানায় এলেন। জলটল খেয়ে সামান্য সুস্থ বোধ করলেন। অল ইজ ওয়েল। নিঃশ্বাসে অ্যালকোহলের সামান্যতম ট্রেসও নেই। শরীরে নেই কোনও চোট আঘাত।  - আমার কথা আমায় বলে কী লাভ হচ্ছে? আমি যে জরুরী ব্যাপারটা জানাতে মাঝরাতে ছুটে এসেছিলাম...সেই ব্যাপারটা দেখুন...। ব্যাপারটা আর্জেন্ট ইন্সপেক্টর মিশ্র।  - আর্জেন্সিতে পরে আসছি। রাত সাড়ে তিনটে নাগাদ আপনি থানায় ছুটে এসেছিলেন। ওয়েল অ্যান্ড গুড। কিন্তু...ফুটপাথে পড়ে রইলেন কেন...।  - এ'টাই, এ'টাই আমি ঠিক নিশ্চিত নই। মাথাটাথা ঘুরে গেছিল হয়ত। আফটার অল বা

পকেটমার রবীন্দ্রনাথ

১ । চাপা উত্তেজনায় রবীন্দ্রনাথের ভিতরটা এক্কেবারে ছটফট করছিল । তার হাতে ঝোলানো কালো পলিথিনের প্যাকেটে যে ' টা আছে , সে ' টা ভেবেই নোলা ছুকছাক আর বুক ধড়ফড় । এমনিতে আলুথালু গতিতে সে হেঁটে অভ্যস্ত । তাড়াহুড়ো তার ধাতে সয় না মোটে । কিন্তু আজ ব্যাপারটা আলাদা । সে মাংস নিয়ে ফিরছে । হোক না মোটে আড়াই ' শ গ্রাম , তবু , কচি পাঁঠা বলে কথা । সহৃদয় আলম মিয়াঁ উপরি এক টুকরো মেটেও দিয়ে দিয়েছে । তোফা ! নিজের লম্বা দাড়ি দুলিয়ে ডবল গতিতে পা চালিয়ে সে এগোচ্ছিল ।   গলির মোড়ের দিকে এসে পৌঁছতে রবীন্দ্রনাথের কেমন যেন একটু সন্দেহ হল । ঠিক যেন কেউ পিছু নিয়েছে । দু ' একবার ঘাড় ঘুরিয়েও অবশ্য কাউকে দেখা গেলনা । ভাবনা ঝেড়ে ফেলে মাংসের পাকেটটায় মন ফিরিয়ে আনলেন রবীন্দ্রনাথ । বৌ নিশ্চয়ই খুব খুশি হবে আজ । খোকাটাকে যে কদ্দিন মাংসের ঝোল খাওয়ানো হয়নি ।   খাসির রান্নার গন্ধ ভেবে বড় গান পাচ্ছিল রবীন্দ্রনাথের । সে বাধ্য হয়েই একটা কুমার শানুর গাওয়া আশিকি সিনেমার গান ধরলে ।

চ্যাটার্জীবাবুর শেষ ইচ্ছে

- মিস্টার চ্যাটার্জী...। - কে? - আমার নাম বিনোদ। - আমি তো আপনাকে ঠিক...। - আমায় বস পাঠিয়েছেন। - ওহ, মিস্টার চৌধুরী আপনাকে...। - বসের নামটাম নেওয়ার তো কোনও দরকার নেই। কাজ নিয়ে এসেছি। কাজ করে চলে যাব। - আসুন, ভিতরে আসুন। - আমি ভিতরে গিয়ে কী করব বলুন। সৌজন্যের তো আর তেমন প্রয়োজন নেই। আপনি চলুন আমার সঙ্গে। চটপট কাজ মিটে গেলে পৌনে এগারোটার লোকালটা পেয়ে যাব। আমায় আবার সেই সোনারপুর ফিরতে হবে। - যা করার তা কি এ'খানেই সেরে ফেলা যায়না? - এমন কনজেস্টেড এলাকায় ও'সব কাজ করা চলেনা। চুপচাপ ব্যাপারটা সেরে ফেলতে হবে। - প্লীজ দু'মিনিটের জন্য ভিতরে আসুন বিনোদবাবু। জামাটা অন্তত পালটে নিই। - কী দরকার বলুন জামা পালটে। - দরকার তেমন নেই। তবু। ওই, লাস্ট উইশ ধরে নিন। - ক্যুইক প্লীজ। ট্রেন ধরার তাড়াটা ভুলে যাবেন না। আর ইয়ে, পিছন দিক দিয়ে পালাতে চেষ্টা করে লাভ নেই। বসের লোকজন চারপাশে ছড়িয়ে আছে। - ও মা, ছি ছি। তা নয়। আসলে মিতুলের দেওয়া একটা জামা এখনও ভাঙা হয়নি। বাটিক প্রিন্টের হাফশার্ট। একটু ব্রাইট কালার কিন্তু বেশ একটা ইয়ে আছে। ও চলে যাওয়ার পর ও জামার ভাজ ভাঙতে ইচ্ছে হয়নি। কিন্তু...আজ না হয়...। - মিতু