Skip to main content

মূর্তিভাঙার গল্প


- নমস্কার খাসনবীসবাবু। 

- আরে দত্ত? হঠাৎ আমার অফিসে? পথ ভুল করে নাকি?

- আপনার অফিস? হে হে। 

- আরও অন্তত দু'দিন। পরশু সন্ধেবেলা গিয়ে রাষ্ট্রপতির কাছে ইস্তফা দেব। তদ্দিন এ অফিস আমারই। তারপরের দিন থেকে না হয় এ'টাকে নিজের অফিস করে নিও। 

- হে হে হে। তবে, মার্জিনটার জন্য খারাপ লাগছে খাসনবীসবাবু। এদ্দিনের নেতা আপনি। এদ্দিনের পার্টি। এ'ভাবে গোহারান হেরে যাওয়াটা ঠিক হয়নি। মাইরি বলছি, আপনার দুঃখে নিজের এমন ল্যান্ডস্লাইড ভিক্ট্রি নিয়েও ঠিক আহ্লাদ করতে পারছি না। 

- দুঃখের আর এ কী দেখলে হে দত্ত। দু'বছর যেতে দাও। তারপর দেখো মিডিয়া আর পাবলিক কী খতরনাক চিজ। সে যাক গে, তা এই হেরো অপোজিশনের কাছে কী মনে করে? গোলমেলে ফাইলটাইল সব জ্বালিয়ে দিয়েছি ভায়া। কিস্যু পাবে না। 

- কী যে বলেন খাসনবীসবাবু। আপনি খাস হতে পারেন, আমি নভিস হতে পারি; তবে ঘটে এ'টুকু বুদ্ধি আছে। সে'সব ফাইলটাইল নিয়ে আপনার কোনও চিন্তা নেই। র‍্যালিট্যালিতে একটু চমকাতে হয়, তাই বলে কি ও'সব নিয়ে পড়ে থাকলে আমার চলবে? ও নিয়ে আপনি ভাববেন না। আমি এসেছিলাম অন্য একটা রিকুয়েস্ট নিয়ে। 

- রিকুয়েস্ট? 

- অনুরোধ। 

- বাংলা তর্জমার জন্য আমার তোমায় দরকার পড়বে না দত্ত। দরকারটা কী?

- বলছিলাম যে দু'দিনের মধ্যে রাজধানীর কোনও একটা ব্যস্ত মোড়ে আপনার একটা মূর্তি না বসালেই নয় যে।  

- আমার মূর্তি? 

- গ্র্যান্ড হবে খাসনবীসবাবু। আমি কথা দিচ্ছি। পনেরো ফুটের মূর্তি। জায়ান্ট। আর আপনার ক্যারিস্মার সঙ্গে খাপেখাপে। সমস্ত প্রস্তুতি নেওয়া হয়ে গেছে। এ'বার শুধু আপনি হ্যাঁ বললেই...। 

- আমি ইলেকশনে হেরেছি। আমার দল সাফ হয়ে গেছে ভাই দত্ত। আমার আবার মূর্তি কেন? 

- কী করব স্যার। পার্টির ছেলেরা ইলেকশনের জন্য মুখে রক্ত তুলে খাটল ছ'মাস। ইলেকশন জেতার পর শুধু মদ মাংস খাইয়ে তো আমার দায়িত্ব শেষ হয়ে যেতে পারে না। ও'দের যথেষ্ট উজ্জীবিত না করতে পারলে যে আমি ভেসে যাব খাসনবীসবাবু। আপনি এদ্দিনের পিএম। আমার মত ইয়ং চ্যাপের ফিউচার নিয়ে একবারও ভাববেন না? 

- মূর্তিভাঙাটা লোকে আজকাল বেশ খাচ্ছে, তাই না?

- আলবাত। রক্ত টগবগ। টিআরপিতে বিস্ফোরণ। 

- ভ্যানডালিসম একটু আছে বটে...। 

- এই আপনাদের এক রোগ। কথায় কথায় পাথর-ছোঁড়া-ইংরেজি। আর ছেলেছোকরারা পিকনিকে গিয়ে মাংস না কষিয়ে কি উচ্ছে-সেদ্ধ বসাবে? আর আমার ফুট সোলজাররা ভোটে জিতিয়ে দু'চার পিস মূর্তি না উপড়ে কি শ্যামাসঙ্গীত গাইবে?

- মার্কেট পালটে যাচ্ছে হে দত্ত। ট্রেন্ড বুঝতে হবে। যাক গে। বেশ। তাই হবে। আমার মূর্তি কাল বসুক। দু'দিন পর ভেঙেটেঙে দিও'খন। 

- আপনি মাই ডিয়ার লোক খাসনবীসবাবু। টিভি চ্যানেলে দেওয়া খিস্তিগুলো গায়ে মাখবেন না প্লীজ। বাজারের হাল তো দেখছেন, একটু আগুন না ঝরালে জনগণ পিঠ চুলকে দেবে কেন? 

- বেশ বেশ। কিন্তু শোনো হে দত্ত। সামনেই মিউনিসিপালিটির ইলেকশন আসছে। ও'টা আমার চাই কিন্তু। ছেলেটা বড্ড আইডল হয়ে বসে আছে। ওর একটা হিল্লে করতে হবে। 

- সে দায়িত্ব আমার। ও নিয়ে আপনি কিচ্ছু ভাববেন খাসনবীসবাবু। দরকার পড়লে মিউনিসিপালিটির অফিসের সামনে আমি আমার একটা মূর্তি বসিয়ে দেব ইলেকশনের আগে। ইলেকশন জিতে এলে খোকার সুবিধে হবে মৌজ করতে। কেমন?  

Comments

Popular posts from this blog

গোয়েন্দা গল্প

- কিছু মনে করবেন না মিস্টার দত্ত...আপনার কথাবার্তাগুলো আর কিছুতেই সিরিয়াসলি নেওয়া যাচ্ছে না।  - কেন? কেন বলুন তো ইন্সপেক্টর? - ভোররাতে এই থানা থেকে একশো ফুট দূরত্বে ফুটপাথে আপনাকে উপুড় হয়ে শুয়ে থাকতে দেখা যায়।  - আপনার কনস্টেবল নিজের চোখে দেখেছে তো।  - না না, সে'টাকে আমি কোশ্চেন করছি না। আমি শুধু সামারাইজ করছি। আপনার গায়ে দামী চিকনের পাঞ্জাবী, ঘড়িটার ডায়ালও সোনার হলে অবাক হব না। এ'রকম কাউকে বড় একটা ফুটপাথে পড়ে থাকতে দেখা যায় না। যা হোক। হরিমোহন কনস্টেবলের কাঁধে ভর দিয়ে আপনি থানায় এলেন। জলটল খেয়ে সামান্য সুস্থ বোধ করলেন। অল ইজ ওয়েল। নিঃশ্বাসে অ্যালকোহলের সামান্যতম ট্রেসও নেই। শরীরে নেই কোনও চোট আঘাত।  - আমার কথা আমায় বলে কী লাভ হচ্ছে? আমি যে জরুরী ব্যাপারটা জানাতে মাঝরাতে ছুটে এসেছিলাম...সেই ব্যাপারটা দেখুন...। ব্যাপারটা আর্জেন্ট ইন্সপেক্টর মিশ্র।  - আর্জেন্সিতে পরে আসছি। রাত সাড়ে তিনটে নাগাদ আপনি থানায় ছুটে এসেছিলেন। ওয়েল অ্যান্ড গুড। কিন্তু...ফুটপাথে পড়ে রইলেন কেন...।  - এ'টাই, এ'টাই আমি ঠিক নিশ্চিত নই। মাথাটাথা ঘুরে গেছিল হয়ত। আফটার অল বা

পকেটমার রবীন্দ্রনাথ

১ । চাপা উত্তেজনায় রবীন্দ্রনাথের ভিতরটা এক্কেবারে ছটফট করছিল । তার হাতে ঝোলানো কালো পলিথিনের প্যাকেটে যে ' টা আছে , সে ' টা ভেবেই নোলা ছুকছাক আর বুক ধড়ফড় । এমনিতে আলুথালু গতিতে সে হেঁটে অভ্যস্ত । তাড়াহুড়ো তার ধাতে সয় না মোটে । কিন্তু আজ ব্যাপারটা আলাদা । সে মাংস নিয়ে ফিরছে । হোক না মোটে আড়াই ' শ গ্রাম , তবু , কচি পাঁঠা বলে কথা । সহৃদয় আলম মিয়াঁ উপরি এক টুকরো মেটেও দিয়ে দিয়েছে । তোফা ! নিজের লম্বা দাড়ি দুলিয়ে ডবল গতিতে পা চালিয়ে সে এগোচ্ছিল ।   গলির মোড়ের দিকে এসে পৌঁছতে রবীন্দ্রনাথের কেমন যেন একটু সন্দেহ হল । ঠিক যেন কেউ পিছু নিয়েছে । দু ' একবার ঘাড় ঘুরিয়েও অবশ্য কাউকে দেখা গেলনা । ভাবনা ঝেড়ে ফেলে মাংসের পাকেটটায় মন ফিরিয়ে আনলেন রবীন্দ্রনাথ । বৌ নিশ্চয়ই খুব খুশি হবে আজ । খোকাটাকে যে কদ্দিন মাংসের ঝোল খাওয়ানো হয়নি ।   খাসির রান্নার গন্ধ ভেবে বড় গান পাচ্ছিল রবীন্দ্রনাথের । সে বাধ্য হয়েই একটা কুমার শানুর গাওয়া আশিকি সিনেমার গান ধরলে ।

চ্যাটার্জীবাবুর শেষ ইচ্ছে

- মিস্টার চ্যাটার্জী...। - কে? - আমার নাম বিনোদ। - আমি তো আপনাকে ঠিক...। - আমায় বস পাঠিয়েছেন। - ওহ, মিস্টার চৌধুরী আপনাকে...। - বসের নামটাম নেওয়ার তো কোনও দরকার নেই। কাজ নিয়ে এসেছি। কাজ করে চলে যাব। - আসুন, ভিতরে আসুন। - আমি ভিতরে গিয়ে কী করব বলুন। সৌজন্যের তো আর তেমন প্রয়োজন নেই। আপনি চলুন আমার সঙ্গে। চটপট কাজ মিটে গেলে পৌনে এগারোটার লোকালটা পেয়ে যাব। আমায় আবার সেই সোনারপুর ফিরতে হবে। - যা করার তা কি এ'খানেই সেরে ফেলা যায়না? - এমন কনজেস্টেড এলাকায় ও'সব কাজ করা চলেনা। চুপচাপ ব্যাপারটা সেরে ফেলতে হবে। - প্লীজ দু'মিনিটের জন্য ভিতরে আসুন বিনোদবাবু। জামাটা অন্তত পালটে নিই। - কী দরকার বলুন জামা পালটে। - দরকার তেমন নেই। তবু। ওই, লাস্ট উইশ ধরে নিন। - ক্যুইক প্লীজ। ট্রেন ধরার তাড়াটা ভুলে যাবেন না। আর ইয়ে, পিছন দিক দিয়ে পালাতে চেষ্টা করে লাভ নেই। বসের লোকজন চারপাশে ছড়িয়ে আছে। - ও মা, ছি ছি। তা নয়। আসলে মিতুলের দেওয়া একটা জামা এখনও ভাঙা হয়নি। বাটিক প্রিন্টের হাফশার্ট। একটু ব্রাইট কালার কিন্তু বেশ একটা ইয়ে আছে। ও চলে যাওয়ার পর ও জামার ভাজ ভাঙতে ইচ্ছে হয়নি। কিন্তু...আজ না হয়...। - মিতু