Skip to main content

সোমালিয়া আর ঘটিদা

- পোয়েট্রি ছাড়া সমস্তই অন্ধকার, বুঝলি রে..।
- আমায় বলছ ঘটিদা?
- এ ঘরে মেসমালিকের বাপের ছবি আর তুই ছাড়া আর কে আছে রে গবেট বিশে?
- গত পরশু দুপুরে তুমি ওই ফ্রেমে বাঁধানো উমাপদ দত্তের দিকে তাকিয়ে বিড়বিড় করে কত কিছু তো বললে। তাই ভাবলাম...।
- চুপ কর। যত বাজে কথা। ও'টা রিহার্স করছিলাম।
- রিহার্সাল? কলেজের নাটকে চান্স পেয়েছ বুঝি?
- ধুস। ও'সব পেটি লেভেলে আমি থাকিনা। নেহাত মৃণাল জ্যেঠু আর সিনেমা বানাচ্ছেন না। কোনো কমা জায়গায় স্টেজে নামতে চাওয়ার মত কাঙাল আমি নই।
- বিনুদা বলছিল তোমায় নাকি বাদ দিয়েছে...।
- বিনু বলেছে? হুক আর পুলে তফাৎ গুলিয়ে ফেলা ছেলের কথা তুই বিশ্বাস করলি? 
- তা মেসদাদুর ছবির সামনে কী রিহার্সাল করছিলে শুনি?
- সে সব বড় জটিল ব্যাপার। সামান্য ফার্স্ট ইয়ারের ছেলে হয়ে আমাদের সেকেন্ড ইয়ারের সমস্যাগুলো গ্রাস্প করবি কী করে?
- বেশ বলতে হবে না।
- বড্ড অভিমান তোর। ইনসিস্ট করছিস যখন বলি। সোমাকে প্রপোজ করার ব্যাপারটা অনেকদিন ঝুলিয়ে রেখেছিলাম। আমায় দেখলেই বেচারির চোখে এক ধরণের আকুতি বেশ কিছুদিন ধরেই ফুটে উঠছিল। মেয়ে তো, বড্ড নরম মন। ও'দের বুক ফাটে তবু মুখ ফোটে না। এই সে'দিন যখন ক্যান্টিনে দেখা হয়েছিল। জোর করে মুখে তাচ্ছিল্যের হাসি ফুটিয়ে নিজের চোখের যন্ত্রণা ঢাকার চেষ্টা করছিল। আপ্রাণ। অথচ ওর চোখ থেকে দানা দানা ভালোবাসা বাতাসে ছড়িয়ে পড়ে আমার বুক ভারি করে তুলেছিল।
- কী ছড়িয়ে কী হচ্ছিল?
- ফার্স্ট ইয়ার রে বিশে। তোর কলজে এখনও পোয়েট্রির জন্য তৈরি হয়নি।
- অ। তা করেছিলে? প্রপোজ?
- আলবাত। গত পরশু। শেষ ক্লাসের পর। তিনতলার করিডরে তখন শেষ বিকেলের আলোছায়া। দিলাম উইটের তলোয়ারে এফোঁড়ওফোঁড় করে। মেয়েরা উইট পছন্দ করে, মনে রাখিস। উইটে ধার দিয়ে যা। ব্যস।
- সোমাদি কী বললে?
- মুখে কী আর স্বীকার করতে চায় রে? লজ্জায় হাবুডুবু খেয়ে এক কথা বলতে গিয়ে বলে ফেললে 'জুতো মারব'।
- সোমাদি তোমায় জুতো মারবে বলেছে?
- ধুর বোকা। সে কি আর মনের কথা? হবু ইয়ের সামনে আনন্দে লাফানোটা আদৌ গ্রেসফুল নয়।
- জুতো মারার ব্যাপারটা বোধ হয় গ্রেসফুল?
- আজ জুতো মারবে বলেছে, কাল সোনা বলে ডেকে কান মুলবে। মিলেনিয়াল প্রেম ভাই। ও তুই বুঝবি না, সেকেন্ড ইয়ারে এমন কত ব্রেন-ধাঁধানো ব্যাপার আছে। সোমা মুখে যাই বলুক, ওর চোখের কোণে চিকচিক করছিল ভালোবাসা। স্পষ্ট দেখেছি।
- ও। চোখ। আগে বলবে তো। তা, এরপর?
- ওই যে। পোয়েট্রি। কবিতা লিখব ক'দিন ধরে। এ হপ্তায় তাই কলেজ বন্ধ। 
- ও। বেশ। শুনিও। 
- সংকলনের একটা নামও ঠিক করে ফেলেছি। সোমালিয়া। ওয়ার্ডপ্লেটা নোটিস করেছিস?
- বিলক্ষণ।
- লিটল ম্যাগট্যাগ না, স্ট্রেট বই। নন্তুদার নতুন পাবলিশিং কোম্পানি একটা ব্রেকথ্রু খুঁজছিল। ভাবছি অবলাইজ করেই ফেলব।
- বেশ। তবে ইয়ে, ঘটিদা..। 
- কী?
- বলছিলাম, সোমাদি কিন্তু গ্রেস ব্যাপারটা সবার সঙ্গে ঠিক ইউনিফর্মলি এক্সেকিউট করতে পারছে না। শুনছি ফিজিক্সের নির্মলদার সঙ্গে সে নাকি টপাটপ রোল কাটলেট খেয়ে বেড়াচ্ছে। আজ দেলখোশা তো কাল বসন্ত কেবিন। গতকাল আবার দু'জনে ব্যান্ডেল চার্চ ঘুরতে গেছিল। 
- নির্মল? ছোহ্। ও'তো হ্যান্ডমেড পেপার। মেটাফরিকালি অফকোর্স। সোমা ওর সঙ্গে ঘোরাঘুরি করে আমায় ইঙ্গিতের কলমে মেটাফরিকাল চিঠি পাঠাচ্ছে।
- মানে, তোমার জন্য গ্রেস আর চিকচিক। নির্মলদার জন্য কাটলেট আর ব্যান্ডেল?
- তোর ঘটে মালকড়ি আছে। যাক। চ', তোকে আজ অন্নপূর্ণা হোটেলে মটন টিকিয়া আর রুমালি রুটি খাওয়াবো।
- মাসের শেষে? টিকিয়া রুটি খাওয়াবে? লটারি পেয়েছ নাকি?
- লটারি নয়। তবে নির্মলের মানিব্যাগটা পেয়েছি। 
- কী?
- গতকাল ব্যাটা আমায় জিজ্ঞেস করেছিল ব্যান্ডেল স্টেশন থেকে চার্চ যাওয়ার ডিরেকশন। বুঝিয়ে দিলাম। মানিব্যাগটা দৃষ্টিকটু ভাবে হিপপকেটে উঁচিয়ে ছিল। বোঝা লাঘব করে দিলাম। স্কিল। এ'সব করতেও মেডিটেশন দরকার। যাক গে। শুনেছি ব্যান্ডেলে বড় রেস্তোরাঁয় ঢুকে খেয়েদেয়ে টাকা দেওয়ার সময় বেশ অপদস্থ হয়েছে, সোমা না থাকলে ব্যাটাকে বাসন মাজতে হত। যা হোক, যারা চোখের চিকচিক চিনতে পারে না, তাদের অমন একটু ভুগতে হয় বৈকি। আর আহাম্মকের সাহস দ্যাখ, ওয়ালেটে সোমার ছবি রেখেছে? পারভার্ট। দেখব বাছাধনের কী হাল হয় যখন বাড়ির গার্জেনদের কাছে উড়ো চিঠিটা পৌঁছয়। সোমাকে কেন যে এত ডিস্টার্ব করে ছেলেটা..।
- উড়ো চিঠি? নির্মলদার গার্জেনদের? কে দেবে?
- বড় বাজে প্রশ্ন করিস তুই বিশে। টিকিয়া রুটি খাবি তো? চটপট জামাটা গলা। ফেরার পথে একবার আলোছায়া স্টুডিওয় ঢুঁ মারতে হবে। সোমার পাসপোর্ট সাইজ ছবিটা এনলার্জ করাতে দিয়েছিলাম। আজ ফ্রেম করাতে হবে। দেওয়ালে মেসমালিকের বাপের ছবিটা বড্ড বিরক্তিকর। চে আর সোমা ছাড়া এই রুমে কারুর ছবি থাকবে না। চলো কমরেড!

Comments

Popular posts from this blog

গোয়েন্দা গল্প

- কিছু মনে করবেন না মিস্টার দত্ত...আপনার কথাবার্তাগুলো আর কিছুতেই সিরিয়াসলি নেওয়া যাচ্ছে না।  - কেন? কেন বলুন তো ইন্সপেক্টর? - ভোররাতে এই থানা থেকে একশো ফুট দূরত্বে ফুটপাথে আপনাকে উপুড় হয়ে শুয়ে থাকতে দেখা যায়।  - আপনার কনস্টেবল নিজের চোখে দেখেছে তো।  - না না, সে'টাকে আমি কোশ্চেন করছি না। আমি শুধু সামারাইজ করছি। আপনার গায়ে দামী চিকনের পাঞ্জাবী, ঘড়িটার ডায়ালও সোনার হলে অবাক হব না। এ'রকম কাউকে বড় একটা ফুটপাথে পড়ে থাকতে দেখা যায় না। যা হোক। হরিমোহন কনস্টেবলের কাঁধে ভর দিয়ে আপনি থানায় এলেন। জলটল খেয়ে সামান্য সুস্থ বোধ করলেন। অল ইজ ওয়েল। নিঃশ্বাসে অ্যালকোহলের সামান্যতম ট্রেসও নেই। শরীরে নেই কোনও চোট আঘাত।  - আমার কথা আমায় বলে কী লাভ হচ্ছে? আমি যে জরুরী ব্যাপারটা জানাতে মাঝরাতে ছুটে এসেছিলাম...সেই ব্যাপারটা দেখুন...। ব্যাপারটা আর্জেন্ট ইন্সপেক্টর মিশ্র।  - আর্জেন্সিতে পরে আসছি। রাত সাড়ে তিনটে নাগাদ আপনি থানায় ছুটে এসেছিলেন। ওয়েল অ্যান্ড গুড। কিন্তু...ফুটপাথে পড়ে রইলেন কেন...।  - এ'টাই, এ'টাই আমি ঠিক নিশ্চিত নই। মাথাটাথা ঘুরে গেছিল হয়ত। আফটার অল বা

পকেটমার রবীন্দ্রনাথ

১ । চাপা উত্তেজনায় রবীন্দ্রনাথের ভিতরটা এক্কেবারে ছটফট করছিল । তার হাতে ঝোলানো কালো পলিথিনের প্যাকেটে যে ' টা আছে , সে ' টা ভেবেই নোলা ছুকছাক আর বুক ধড়ফড় । এমনিতে আলুথালু গতিতে সে হেঁটে অভ্যস্ত । তাড়াহুড়ো তার ধাতে সয় না মোটে । কিন্তু আজ ব্যাপারটা আলাদা । সে মাংস নিয়ে ফিরছে । হোক না মোটে আড়াই ' শ গ্রাম , তবু , কচি পাঁঠা বলে কথা । সহৃদয় আলম মিয়াঁ উপরি এক টুকরো মেটেও দিয়ে দিয়েছে । তোফা ! নিজের লম্বা দাড়ি দুলিয়ে ডবল গতিতে পা চালিয়ে সে এগোচ্ছিল ।   গলির মোড়ের দিকে এসে পৌঁছতে রবীন্দ্রনাথের কেমন যেন একটু সন্দেহ হল । ঠিক যেন কেউ পিছু নিয়েছে । দু ' একবার ঘাড় ঘুরিয়েও অবশ্য কাউকে দেখা গেলনা । ভাবনা ঝেড়ে ফেলে মাংসের পাকেটটায় মন ফিরিয়ে আনলেন রবীন্দ্রনাথ । বৌ নিশ্চয়ই খুব খুশি হবে আজ । খোকাটাকে যে কদ্দিন মাংসের ঝোল খাওয়ানো হয়নি ।   খাসির রান্নার গন্ধ ভেবে বড় গান পাচ্ছিল রবীন্দ্রনাথের । সে বাধ্য হয়েই একটা কুমার শানুর গাওয়া আশিকি সিনেমার গান ধরলে ।

চ্যাটার্জীবাবুর শেষ ইচ্ছে

- মিস্টার চ্যাটার্জী...। - কে? - আমার নাম বিনোদ। - আমি তো আপনাকে ঠিক...। - আমায় বস পাঠিয়েছেন। - ওহ, মিস্টার চৌধুরী আপনাকে...। - বসের নামটাম নেওয়ার তো কোনও দরকার নেই। কাজ নিয়ে এসেছি। কাজ করে চলে যাব। - আসুন, ভিতরে আসুন। - আমি ভিতরে গিয়ে কী করব বলুন। সৌজন্যের তো আর তেমন প্রয়োজন নেই। আপনি চলুন আমার সঙ্গে। চটপট কাজ মিটে গেলে পৌনে এগারোটার লোকালটা পেয়ে যাব। আমায় আবার সেই সোনারপুর ফিরতে হবে। - যা করার তা কি এ'খানেই সেরে ফেলা যায়না? - এমন কনজেস্টেড এলাকায় ও'সব কাজ করা চলেনা। চুপচাপ ব্যাপারটা সেরে ফেলতে হবে। - প্লীজ দু'মিনিটের জন্য ভিতরে আসুন বিনোদবাবু। জামাটা অন্তত পালটে নিই। - কী দরকার বলুন জামা পালটে। - দরকার তেমন নেই। তবু। ওই, লাস্ট উইশ ধরে নিন। - ক্যুইক প্লীজ। ট্রেন ধরার তাড়াটা ভুলে যাবেন না। আর ইয়ে, পিছন দিক দিয়ে পালাতে চেষ্টা করে লাভ নেই। বসের লোকজন চারপাশে ছড়িয়ে আছে। - ও মা, ছি ছি। তা নয়। আসলে মিতুলের দেওয়া একটা জামা এখনও ভাঙা হয়নি। বাটিক প্রিন্টের হাফশার্ট। একটু ব্রাইট কালার কিন্তু বেশ একটা ইয়ে আছে। ও চলে যাওয়ার পর ও জামার ভাজ ভাঙতে ইচ্ছে হয়নি। কিন্তু...আজ না হয়...। - মিতু