Skip to main content

কড়াই ও মুগুর

- আসুন। আসুন মিস্টার।
- ধুর ছাই। ম্যানেজারবাবু, হপ্তায় একবার করে আপনি অফিসে ডেকে পাঠান। অথচ ফেরত পাঠানোর কোনো কংক্রিট প্ল্যান আজও শুনলাম না।
- মরলে জন্মাতে হবে, চিরভূত কে কোথা কবে?
- ধ্যাত্তেরি। সেই কবে থেকে এক কথা। মরেছি বছর দশেক তো হল। আর কদ্দিন?
- দাঁড়ান। আপনার আত্মার জন্য সুইটেবল প্রোফাইল না পেলে বাজারে ছাড়ি কী করে বলুন তো। এই যেমন  গেল বার, পকেটমার আত্মা নেমে হল দারোগা। শেষে সে কয়েদীদের পকেট মারার চেষ্টা শুরু করলে, ভেবেছেন কাণ্ডটা?
- পৃথিবীতে তো টপাটপ মানুষ মরছে। হাজার রকমের প্রোফাইল,  টুয়েন্টি ফোর সেভেন নতুন ভ্যাকেন্সি তৈরি হচ্ছে। দশ বছরে আমার জন্য সুটেবল কিছু পেলেন না?
- ও মা! অত সহজ নাকি। ক্রস-ফাংশনাল ম্যাচিং আছে। ওয়েটিং লাইন আছে। দুম করে কিছু করে দিলেই হল? আরে মশাই গরম তেলের কড়াইয়ের কম্ফর্টে শুয়ে অনেকে বাতেলা ঝাড়তে পারে। কিন্তু আমার কাজের প্রেশার যদি বুঝতেন।
- দিনে তিন ঘণ্টা করে আমায় গরম তেলে ডীপ ফ্রাই করা হয়, সে'টা মামুলি ব্যাপার নাকি?
- অত ইম্পেশেন্ট হবেন না মিস্টার। ভূত হয়ে তেলের কড়াইতে যত চুবনি খাবেন, জন্মের পর আপনার হিউম্যান স্কিন তত গ্লো করবে, মিলিয়ে নেবেন।
- রিয়েলি?
- আলবাত।
- যা হোক, ম্যানেজারবাবু। একটু দেখুন না, প্লীজ। আর ভাল্লাগছে না।
- হবে হবে।
- একটু যদি এক্সপেডাইট করা যায়।
- আমার হাত পা বাঁধা।
- প্লীজ। এ'খানে ঘুষ চলে?
- কোনো রিসোর্স নেই। ঘুষ নিয়ে হবে কী?
- প্লীজ। কড়াইয়ে বড্ড বোর হচ্ছি। আর সহ্য হচ্ছে না।
- মুগুরপেটায় শিফট করিয়ে দেব? ইনস্টেড অফ কড়াই?
- সেই বাহান্ন তিপ্পান্ন কেস। প্লীজ ম্যানেজারবাবু। সহ্য হচ্ছে না আর। এ'বার জন্মাতে দিন।
- আরে হবে না। একটা এক্সেপশনাল রুট আছে বটে, তবে সে'টা পারবেন না আপনি।
- পারব না?
- ইম্পসিবল।
- খুব পারব। আমার খুব জেদ। প্লাস মনের জোর।
- হবে না মিস্টার।
- ম্যানেজারদাদা। মুখ ফস্কে একটা উপায়ের কথা বলে যখন ফেলেছেন তখন আর আপনার ছাড়ান নেই। পথ বাতলে দিন স্যার। ওই কড়াই ভর্তি গরম তেলে গলা ডুবিয়ে যতই জাকুজি-মস্তি ভাবি, বড় জ্বালা। স্যার, প্লীজ।
- আপনার জেদ যে আছে তা অনস্বীকার্য। মনের জোরও অসীম। কিন্তু এই দু'টো কোয়ালিটির জন্যেই চিন্তা হচ্ছে। রোলটা আপনি ম্যানেজ করতে পারবেন কি না...।
- আরে ধ্যের রে বাবা, বলছি তো। কড়াই মুগুরের দেশ থেকে বেরোতে চাই। কুকুর হয়ে জন্মালেও আপত্তি নেই।
- কুকুর? না, সে চান্স নেই। পশু মানে তো বিজনেস ক্লাস। আপনি মানুষের ভূত, আপনার কপালে স্লিপারের সাইড আপার।
- রোলটা কীসের?
- সরকারের চাটুকার খবরের কাগজের সম্পাদক। সরকার অমুককে ভালো বললে আপনি লিখবেন অমুক হল বিবেকানন্দ। সরকার তমুককে মন্দ বললে আপনি তমুককে বলবেন শুয়োরের বাচ্চা। নেতা যাই বলুক তা বেদ। অপোজিশন যাই বলুক তা বেদো। পারবেন মিস্টার?
- কড়াইয়ের তুলনায় মুগুরপিটুনিটা মন্দ নয় বলছেন ম্যানেজারবাবু? অন্তত বছর দশেক আরও চালিয়ে নেওয়া যাবে তো?

Comments

Popular posts from this blog

গোয়েন্দা গল্প

- কিছু মনে করবেন না মিস্টার দত্ত...আপনার কথাবার্তাগুলো আর কিছুতেই সিরিয়াসলি নেওয়া যাচ্ছে না।  - কেন? কেন বলুন তো ইন্সপেক্টর? - ভোররাতে এই থানা থেকে একশো ফুট দূরত্বে ফুটপাথে আপনাকে উপুড় হয়ে শুয়ে থাকতে দেখা যায়।  - আপনার কনস্টেবল নিজের চোখে দেখেছে তো।  - না না, সে'টাকে আমি কোশ্চেন করছি না। আমি শুধু সামারাইজ করছি। আপনার গায়ে দামী চিকনের পাঞ্জাবী, ঘড়িটার ডায়ালও সোনার হলে অবাক হব না। এ'রকম কাউকে বড় একটা ফুটপাথে পড়ে থাকতে দেখা যায় না। যা হোক। হরিমোহন কনস্টেবলের কাঁধে ভর দিয়ে আপনি থানায় এলেন। জলটল খেয়ে সামান্য সুস্থ বোধ করলেন। অল ইজ ওয়েল। নিঃশ্বাসে অ্যালকোহলের সামান্যতম ট্রেসও নেই। শরীরে নেই কোনও চোট আঘাত।  - আমার কথা আমায় বলে কী লাভ হচ্ছে? আমি যে জরুরী ব্যাপারটা জানাতে মাঝরাতে ছুটে এসেছিলাম...সেই ব্যাপারটা দেখুন...। ব্যাপারটা আর্জেন্ট ইন্সপেক্টর মিশ্র।  - আর্জেন্সিতে পরে আসছি। রাত সাড়ে তিনটে নাগাদ আপনি থানায় ছুটে এসেছিলেন। ওয়েল অ্যান্ড গুড। কিন্তু...ফুটপাথে পড়ে রইলেন কেন...।  - এ'টাই, এ'টাই আমি ঠিক নিশ্চিত নই। মাথাটাথা ঘুরে গেছিল হয়ত। আফটার অল বা

পকেটমার রবীন্দ্রনাথ

১ । চাপা উত্তেজনায় রবীন্দ্রনাথের ভিতরটা এক্কেবারে ছটফট করছিল । তার হাতে ঝোলানো কালো পলিথিনের প্যাকেটে যে ' টা আছে , সে ' টা ভেবেই নোলা ছুকছাক আর বুক ধড়ফড় । এমনিতে আলুথালু গতিতে সে হেঁটে অভ্যস্ত । তাড়াহুড়ো তার ধাতে সয় না মোটে । কিন্তু আজ ব্যাপারটা আলাদা । সে মাংস নিয়ে ফিরছে । হোক না মোটে আড়াই ' শ গ্রাম , তবু , কচি পাঁঠা বলে কথা । সহৃদয় আলম মিয়াঁ উপরি এক টুকরো মেটেও দিয়ে দিয়েছে । তোফা ! নিজের লম্বা দাড়ি দুলিয়ে ডবল গতিতে পা চালিয়ে সে এগোচ্ছিল ।   গলির মোড়ের দিকে এসে পৌঁছতে রবীন্দ্রনাথের কেমন যেন একটু সন্দেহ হল । ঠিক যেন কেউ পিছু নিয়েছে । দু ' একবার ঘাড় ঘুরিয়েও অবশ্য কাউকে দেখা গেলনা । ভাবনা ঝেড়ে ফেলে মাংসের পাকেটটায় মন ফিরিয়ে আনলেন রবীন্দ্রনাথ । বৌ নিশ্চয়ই খুব খুশি হবে আজ । খোকাটাকে যে কদ্দিন মাংসের ঝোল খাওয়ানো হয়নি ।   খাসির রান্নার গন্ধ ভেবে বড় গান পাচ্ছিল রবীন্দ্রনাথের । সে বাধ্য হয়েই একটা কুমার শানুর গাওয়া আশিকি সিনেমার গান ধরলে ।

চ্যাটার্জীবাবুর শেষ ইচ্ছে

- মিস্টার চ্যাটার্জী...। - কে? - আমার নাম বিনোদ। - আমি তো আপনাকে ঠিক...। - আমায় বস পাঠিয়েছেন। - ওহ, মিস্টার চৌধুরী আপনাকে...। - বসের নামটাম নেওয়ার তো কোনও দরকার নেই। কাজ নিয়ে এসেছি। কাজ করে চলে যাব। - আসুন, ভিতরে আসুন। - আমি ভিতরে গিয়ে কী করব বলুন। সৌজন্যের তো আর তেমন প্রয়োজন নেই। আপনি চলুন আমার সঙ্গে। চটপট কাজ মিটে গেলে পৌনে এগারোটার লোকালটা পেয়ে যাব। আমায় আবার সেই সোনারপুর ফিরতে হবে। - যা করার তা কি এ'খানেই সেরে ফেলা যায়না? - এমন কনজেস্টেড এলাকায় ও'সব কাজ করা চলেনা। চুপচাপ ব্যাপারটা সেরে ফেলতে হবে। - প্লীজ দু'মিনিটের জন্য ভিতরে আসুন বিনোদবাবু। জামাটা অন্তত পালটে নিই। - কী দরকার বলুন জামা পালটে। - দরকার তেমন নেই। তবু। ওই, লাস্ট উইশ ধরে নিন। - ক্যুইক প্লীজ। ট্রেন ধরার তাড়াটা ভুলে যাবেন না। আর ইয়ে, পিছন দিক দিয়ে পালাতে চেষ্টা করে লাভ নেই। বসের লোকজন চারপাশে ছড়িয়ে আছে। - ও মা, ছি ছি। তা নয়। আসলে মিতুলের দেওয়া একটা জামা এখনও ভাঙা হয়নি। বাটিক প্রিন্টের হাফশার্ট। একটু ব্রাইট কালার কিন্তু বেশ একটা ইয়ে আছে। ও চলে যাওয়ার পর ও জামার ভাজ ভাঙতে ইচ্ছে হয়নি। কিন্তু...আজ না হয়...। - মিতু