Skip to main content

চিঠি ও পদ্য

গত তিনদিনে এই নিয়ে বাহাত্তর নম্বর চিঠি এলো। উড়ো। এ'তেও বক্তব্য মোটামুটি একই রকম।
অবশ্য বক্তব্য না বলে হুমকি বলা ভালো।

বিয়ে না করলে সে মেয়ে নাকি আত্মহত্যা করবে। কিন্তু কী মুশকিল। সে যে নিজের নাম ঠিকানা কিছুই লেখেনি। অবশ্য তাঁর পরিচয় কিছুটা হলেও আঁচ করেছেন মনোহর। নিজে থেকে তাঁর একটা নাম দেওয়া হয়ে গেছে ভাবতে একটু লজ্জাই লাগে মনোহরের; সুলিয়া। খামে অল্প গন্ধরাজের সুবাস। আর চিঠির ভাষায় এই যে সামান্য অনুযোগ মেশানো হুমকি, তা'তে মায়া আরও তরতর করে বেড়ে চলে।

পরিচয় পেলে বিয়েটা সেরে ফেলতে খুব আপত্তি করতেন না মনোহর। সুলিয়াকে নিয়ে সে'সবই সাতপাঁচ ভাবছিলেন  তিনি। ভেবে ভেবে উপায়ন্তর না দেখে নীল ডায়েরীটা টেনে নিয়ে বাহাত্তর নম্বর পদ্যটা লিখে ফেললেন মনোহর।

আর তখনই চড়ুইপাখির ডানঝাপটানো সুরে জানালা বেয়ে তিয়াত্তর নম্বর চিঠিটা এলো।

***

- চিঠি?
- তাই তো বলে ডাক্তারবাবু।
- আপনি দেখেছেন সে চিঠি?
- চিঠি না হাতি।
- আরে! কী মুশকিল। এই যে বললেন আপনার দাদার চিঠি পাওয়া বাতিক হয়েছে?
- বাতিক না। ব্যামো। আর আদতে কিস্যু আসে না। সে জন্যেই তো আপনার কাছে আসা ডাক্তারবাবু।
- নার্ভটার্ভ ফেল করেছে নাকি?
- আশ্চর্য নয়, নতুন কবিদের অমন একটু হতেই পারে। এ'বার দু'দাগ ওষুধ দিন দেখি।

***

দুপুরবেলা গন্ধরাজ গাছটায় হেলান দিয়ে একটু ঝিমটি না দিলে টুসুর চলে না। দিন তিনেক হল; সে'খানে শুয়ে সে রোজ ঝিমঝিমে স্বপ্ন দেখছে। সে'সব স্বপ্নে বাবার পছন্দের ব্যাঙ্ক চাকুরে পাত্রটি তার পিছনে ঘুরঘুর করে না। বরং তার চোখের সামনে নতুন নতুন পদ্যরা নেচে বেড়ায়। সব পদ্যর একই বিদঘুটে শিরোনাম; "অ্যাই সুলিয়া"!

Comments

Popular posts from this blog

গোয়েন্দা গল্প

- কিছু মনে করবেন না মিস্টার দত্ত...আপনার কথাবার্তাগুলো আর কিছুতেই সিরিয়াসলি নেওয়া যাচ্ছে না।  - কেন? কেন বলুন তো ইন্সপেক্টর? - ভোররাতে এই থানা থেকে একশো ফুট দূরত্বে ফুটপাথে আপনাকে উপুড় হয়ে শুয়ে থাকতে দেখা যায়।  - আপনার কনস্টেবল নিজের চোখে দেখেছে তো।  - না না, সে'টাকে আমি কোশ্চেন করছি না। আমি শুধু সামারাইজ করছি। আপনার গায়ে দামী চিকনের পাঞ্জাবী, ঘড়িটার ডায়ালও সোনার হলে অবাক হব না। এ'রকম কাউকে বড় একটা ফুটপাথে পড়ে থাকতে দেখা যায় না। যা হোক। হরিমোহন কনস্টেবলের কাঁধে ভর দিয়ে আপনি থানায় এলেন। জলটল খেয়ে সামান্য সুস্থ বোধ করলেন। অল ইজ ওয়েল। নিঃশ্বাসে অ্যালকোহলের সামান্যতম ট্রেসও নেই। শরীরে নেই কোনও চোট আঘাত।  - আমার কথা আমায় বলে কী লাভ হচ্ছে? আমি যে জরুরী ব্যাপারটা জানাতে মাঝরাতে ছুটে এসেছিলাম...সেই ব্যাপারটা দেখুন...। ব্যাপারটা আর্জেন্ট ইন্সপেক্টর মিশ্র।  - আর্জেন্সিতে পরে আসছি। রাত সাড়ে তিনটে নাগাদ আপনি থানায় ছুটে এসেছিলেন। ওয়েল অ্যান্ড গুড। কিন্তু...ফুটপাথে পড়ে রইলেন কেন...।  - এ'টাই, এ'টাই আমি ঠিক নিশ্চিত নই। মাথাটাথা ঘুরে গেছিল হয়ত। আফটার অল বা

পকেটমার রবীন্দ্রনাথ

১ । চাপা উত্তেজনায় রবীন্দ্রনাথের ভিতরটা এক্কেবারে ছটফট করছিল । তার হাতে ঝোলানো কালো পলিথিনের প্যাকেটে যে ' টা আছে , সে ' টা ভেবেই নোলা ছুকছাক আর বুক ধড়ফড় । এমনিতে আলুথালু গতিতে সে হেঁটে অভ্যস্ত । তাড়াহুড়ো তার ধাতে সয় না মোটে । কিন্তু আজ ব্যাপারটা আলাদা । সে মাংস নিয়ে ফিরছে । হোক না মোটে আড়াই ' শ গ্রাম , তবু , কচি পাঁঠা বলে কথা । সহৃদয় আলম মিয়াঁ উপরি এক টুকরো মেটেও দিয়ে দিয়েছে । তোফা ! নিজের লম্বা দাড়ি দুলিয়ে ডবল গতিতে পা চালিয়ে সে এগোচ্ছিল ।   গলির মোড়ের দিকে এসে পৌঁছতে রবীন্দ্রনাথের কেমন যেন একটু সন্দেহ হল । ঠিক যেন কেউ পিছু নিয়েছে । দু ' একবার ঘাড় ঘুরিয়েও অবশ্য কাউকে দেখা গেলনা । ভাবনা ঝেড়ে ফেলে মাংসের পাকেটটায় মন ফিরিয়ে আনলেন রবীন্দ্রনাথ । বৌ নিশ্চয়ই খুব খুশি হবে আজ । খোকাটাকে যে কদ্দিন মাংসের ঝোল খাওয়ানো হয়নি ।   খাসির রান্নার গন্ধ ভেবে বড় গান পাচ্ছিল রবীন্দ্রনাথের । সে বাধ্য হয়েই একটা কুমার শানুর গাওয়া আশিকি সিনেমার গান ধরলে ।

চ্যাটার্জীবাবুর শেষ ইচ্ছে

- মিস্টার চ্যাটার্জী...। - কে? - আমার নাম বিনোদ। - আমি তো আপনাকে ঠিক...। - আমায় বস পাঠিয়েছেন। - ওহ, মিস্টার চৌধুরী আপনাকে...। - বসের নামটাম নেওয়ার তো কোনও দরকার নেই। কাজ নিয়ে এসেছি। কাজ করে চলে যাব। - আসুন, ভিতরে আসুন। - আমি ভিতরে গিয়ে কী করব বলুন। সৌজন্যের তো আর তেমন প্রয়োজন নেই। আপনি চলুন আমার সঙ্গে। চটপট কাজ মিটে গেলে পৌনে এগারোটার লোকালটা পেয়ে যাব। আমায় আবার সেই সোনারপুর ফিরতে হবে। - যা করার তা কি এ'খানেই সেরে ফেলা যায়না? - এমন কনজেস্টেড এলাকায় ও'সব কাজ করা চলেনা। চুপচাপ ব্যাপারটা সেরে ফেলতে হবে। - প্লীজ দু'মিনিটের জন্য ভিতরে আসুন বিনোদবাবু। জামাটা অন্তত পালটে নিই। - কী দরকার বলুন জামা পালটে। - দরকার তেমন নেই। তবু। ওই, লাস্ট উইশ ধরে নিন। - ক্যুইক প্লীজ। ট্রেন ধরার তাড়াটা ভুলে যাবেন না। আর ইয়ে, পিছন দিক দিয়ে পালাতে চেষ্টা করে লাভ নেই। বসের লোকজন চারপাশে ছড়িয়ে আছে। - ও মা, ছি ছি। তা নয়। আসলে মিতুলের দেওয়া একটা জামা এখনও ভাঙা হয়নি। বাটিক প্রিন্টের হাফশার্ট। একটু ব্রাইট কালার কিন্তু বেশ একটা ইয়ে আছে। ও চলে যাওয়ার পর ও জামার ভাজ ভাঙতে ইচ্ছে হয়নি। কিন্তু...আজ না হয়...। - মিতু