Skip to main content

খোকা ও বই



- খোকা, এই হল বই।
*খোকার বই হাতে নেওয়া*
- বইয়ের চেয়ে বড় বন্ধু আর দু'টি নেই।
*খোকার বইয়ে প্রথম কামড়*
- না না, কামড় নয়। বই আর বন্ধুদের কামড়াতে নেই খোকা।
*খোকার মলাট চেবানোর চেষ্টা*
- মনে রেখো। ইউ উইল বি নোন বাই দ্য কোম্পানি ইউ কীপ অ্যান্ড দ্য বুকস ইউ চিউ। থুড়ি। রীড।
*খক খক হাসিতে খোকার মাথা নাড়া আর আরও দাপুটে কামড়*
- আহ্‌। কী হচ্ছে কী। তুমি দেখছি বইয়ের অযোগ্য। যাও, হাওয়াই চটি নিয়ে খেলো গে।
*খোকার মলাট চেটে বিরক্তি-লাভ*
- খেতে ভালো লাগেনি বুঝি? শরদিন্দুতে বিশেষ স্বাদ নেই? শীর্ষেন্দু চলবে?
*দাপটের সঙ্গে আধ-চেবানো বই ছুঁড়ে মেঝেতে ফেললে খোকা*
- সর্বনাশ! সরস্বতী কে ইনসাল্ট! অঙ্কে ফেল রুখবে কে এ'বার?
*বইয়ের ওপর খোকার ডান পায়ের পাতার মচরমচ*
- মনে রেখো। তোমার ফ্যামিলি সরস্বতী বিশ্বাসী কম্যুনিস্ট।
* খোকার দ্বিতীয় পা মুখ থুবড়ে পড়া বইয়ের পিঠে*
- গোস্তাখি! ব্যাটাচ্ছেলে এই বয়স থেকে সহবতের মাথায় লাথি মারতে শিখেছে? বাপের চোখ রাঙানিকে কাঁচকলা?
* পাশের ঘরের টিভি থেকে ভেসে আসা ফুর্তি মার্কা হিন্দি গান, খোকার কোমর দুলুনি*
- আইকনোক্লাস্ট? শরদিন্দুর ঘাড়ে চেপে ব্রেকআপ সং? পিঠের চামড়া তুলে নেব!
*খোকা নাচের তালে তালে বইয়ের চামড়া তুলতে শুরু করলে*
- আই অর্ডার ইউ টু স্টপ দ্য অ্যাসল্ট! নাউ! এখুনি! তুরন্ত!
*খোকার কোমর দুলুনির গতি বৃদ্ধি, বইয়ের মলাট ততক্ষণে এস্পারওস্পার*
- তবে রে? ব্যাটাচ্ছেলে তুই বই ভালবাসবি না তোর বাপ বই ভালবাসবে! আজ তোরই একদিন কি আমারই একদিন। নেমে আয় রাস্কেল বই থেকে।
*বইয়ের ওপর থেকে বলিউডি বিট-বিদ্ধ খোকাকে জোর করে ওঠানোর চেষ্টা, খোকার তীব্র তীক্ষ্ণ প্রতিবাদ*
- খবরদার যেন আর কোনোদিন না দেখি বইকে ইনসাল্ট করতে।
*খোকার হাউমাউ চিৎকারে বাড়ির কেঁপে ওঠা, টিভির শীতল আশ্রয় ছেড়ে ঠাকুমার দাঁত কিড়মিড়িয়ে উঠে আসা*
- কী হয়েছে! তুই দাদুভাইকে ধমক দিচ্ছিস কেন? অমন ইডিয়টের মত চেল্লাছিসই বা কেন?- আরে দেখ না। ভাবছিলাম ছেলেটার মধ্যে একটু বই প্রেম কাল্টিভেট করব। - এই কালচার কালচার করে আজকাল তোর ঘাস খাওয়ার অবস্থা হয়েছে। কাজের কাজ সব বন্ধ করে শুধু বাতেলা। - মাইন্ড ইওর ল্যাঙ্গুয়েজ মা। আজকালকার প্যারেন্টিং পলিসি এ'টাই। আর খোকা কী লেভেলের বেয়াদপ হয়েছে দেখেছ? বইকে গ্রেসফুলি একসেপ্ট করার বদলে মাটিতে ফেলে তার ওপর ধেই ধেই করে নাচছে!- বইগুলো নিয়ে শেলফ বোঝাই করে তো হোয়্যাটস্যাপ ফরওয়ার্ড পড়ে দিন কাটাস। তার চেয়ে বই মেঝেতে ফেলে তার ওপর দাঁড়িয়ে নাচা বরং অনেক বেশি প্রো-কালচার।
*খেক্‌ খেক্‌ শব্দসহ খোকার বিশ্রী হাসি*

Comments

Popular posts from this blog

গোয়েন্দা গল্প

- কিছু মনে করবেন না মিস্টার দত্ত...আপনার কথাবার্তাগুলো আর কিছুতেই সিরিয়াসলি নেওয়া যাচ্ছে না।  - কেন? কেন বলুন তো ইন্সপেক্টর? - ভোররাতে এই থানা থেকে একশো ফুট দূরত্বে ফুটপাথে আপনাকে উপুড় হয়ে শুয়ে থাকতে দেখা যায়।  - আপনার কনস্টেবল নিজের চোখে দেখেছে তো।  - না না, সে'টাকে আমি কোশ্চেন করছি না। আমি শুধু সামারাইজ করছি। আপনার গায়ে দামী চিকনের পাঞ্জাবী, ঘড়িটার ডায়ালও সোনার হলে অবাক হব না। এ'রকম কাউকে বড় একটা ফুটপাথে পড়ে থাকতে দেখা যায় না। যা হোক। হরিমোহন কনস্টেবলের কাঁধে ভর দিয়ে আপনি থানায় এলেন। জলটল খেয়ে সামান্য সুস্থ বোধ করলেন। অল ইজ ওয়েল। নিঃশ্বাসে অ্যালকোহলের সামান্যতম ট্রেসও নেই। শরীরে নেই কোনও চোট আঘাত।  - আমার কথা আমায় বলে কী লাভ হচ্ছে? আমি যে জরুরী ব্যাপারটা জানাতে মাঝরাতে ছুটে এসেছিলাম...সেই ব্যাপারটা দেখুন...। ব্যাপারটা আর্জেন্ট ইন্সপেক্টর মিশ্র।  - আর্জেন্সিতে পরে আসছি। রাত সাড়ে তিনটে নাগাদ আপনি থানায় ছুটে এসেছিলেন। ওয়েল অ্যান্ড গুড। কিন্তু...ফুটপাথে পড়ে রইলেন কেন...।  - এ'টাই, এ'টাই আমি ঠিক নিশ্চিত নই। মাথাটাথা ঘুরে গেছিল হয়ত। আফটার অল বা

পকেটমার রবীন্দ্রনাথ

১ । চাপা উত্তেজনায় রবীন্দ্রনাথের ভিতরটা এক্কেবারে ছটফট করছিল । তার হাতে ঝোলানো কালো পলিথিনের প্যাকেটে যে ' টা আছে , সে ' টা ভেবেই নোলা ছুকছাক আর বুক ধড়ফড় । এমনিতে আলুথালু গতিতে সে হেঁটে অভ্যস্ত । তাড়াহুড়ো তার ধাতে সয় না মোটে । কিন্তু আজ ব্যাপারটা আলাদা । সে মাংস নিয়ে ফিরছে । হোক না মোটে আড়াই ' শ গ্রাম , তবু , কচি পাঁঠা বলে কথা । সহৃদয় আলম মিয়াঁ উপরি এক টুকরো মেটেও দিয়ে দিয়েছে । তোফা ! নিজের লম্বা দাড়ি দুলিয়ে ডবল গতিতে পা চালিয়ে সে এগোচ্ছিল ।   গলির মোড়ের দিকে এসে পৌঁছতে রবীন্দ্রনাথের কেমন যেন একটু সন্দেহ হল । ঠিক যেন কেউ পিছু নিয়েছে । দু ' একবার ঘাড় ঘুরিয়েও অবশ্য কাউকে দেখা গেলনা । ভাবনা ঝেড়ে ফেলে মাংসের পাকেটটায় মন ফিরিয়ে আনলেন রবীন্দ্রনাথ । বৌ নিশ্চয়ই খুব খুশি হবে আজ । খোকাটাকে যে কদ্দিন মাংসের ঝোল খাওয়ানো হয়নি ।   খাসির রান্নার গন্ধ ভেবে বড় গান পাচ্ছিল রবীন্দ্রনাথের । সে বাধ্য হয়েই একটা কুমার শানুর গাওয়া আশিকি সিনেমার গান ধরলে ।

চ্যাটার্জীবাবুর শেষ ইচ্ছে

- মিস্টার চ্যাটার্জী...। - কে? - আমার নাম বিনোদ। - আমি তো আপনাকে ঠিক...। - আমায় বস পাঠিয়েছেন। - ওহ, মিস্টার চৌধুরী আপনাকে...। - বসের নামটাম নেওয়ার তো কোনও দরকার নেই। কাজ নিয়ে এসেছি। কাজ করে চলে যাব। - আসুন, ভিতরে আসুন। - আমি ভিতরে গিয়ে কী করব বলুন। সৌজন্যের তো আর তেমন প্রয়োজন নেই। আপনি চলুন আমার সঙ্গে। চটপট কাজ মিটে গেলে পৌনে এগারোটার লোকালটা পেয়ে যাব। আমায় আবার সেই সোনারপুর ফিরতে হবে। - যা করার তা কি এ'খানেই সেরে ফেলা যায়না? - এমন কনজেস্টেড এলাকায় ও'সব কাজ করা চলেনা। চুপচাপ ব্যাপারটা সেরে ফেলতে হবে। - প্লীজ দু'মিনিটের জন্য ভিতরে আসুন বিনোদবাবু। জামাটা অন্তত পালটে নিই। - কী দরকার বলুন জামা পালটে। - দরকার তেমন নেই। তবু। ওই, লাস্ট উইশ ধরে নিন। - ক্যুইক প্লীজ। ট্রেন ধরার তাড়াটা ভুলে যাবেন না। আর ইয়ে, পিছন দিক দিয়ে পালাতে চেষ্টা করে লাভ নেই। বসের লোকজন চারপাশে ছড়িয়ে আছে। - ও মা, ছি ছি। তা নয়। আসলে মিতুলের দেওয়া একটা জামা এখনও ভাঙা হয়নি। বাটিক প্রিন্টের হাফশার্ট। একটু ব্রাইট কালার কিন্তু বেশ একটা ইয়ে আছে। ও চলে যাওয়ার পর ও জামার ভাজ ভাঙতে ইচ্ছে হয়নি। কিন্তু...আজ না হয়...। - মিতু