Skip to main content

মনখারাপবাবু

- এ কী! আপনি এইখানে?
- রিল্যাক্স মিস্টার চ্যাটার্জী। আমি আশ্চর্য প্রদীপ নই। পুজো প্যান্ডেলের ভিআইপি পাস নই। এমনকি কোনও স্ক্র‍্যাচকার্ডও নই। আমি মনখারাপ। ইউ আর সাপোসড টু রান অ্যাওয়ে ফ্রম মি।
- অমন করে বলবেন না স্যার। আপনি যে কী ভীষণ কাছের।
- রোম্যান্টিকালি বলছেন নাকি?
- যাক গে, কোথায় ছিলেন বলুন তো মশাই? মাস খানেক এক্কেবারে উধাও! পুজোর ক'দিন থেকে থেকেই আপনার কথা মনে পড়ছিল, জানেন? শেষে যে চাঁদুদার চায়ের দোকানের বেঞ্চিতে ঘুগনির প্লেট হাতে আপনাকে দেখব, তাও নবমীর সন্ধেয়; এ'টা কিছুতেই ভাবতে পারিনি। হোয়াট আ সারপ্রাইজ।
- আচ্ছা, আমার কথা মনে পড়ছিল কেন?
- কী কেন?
- আমার কথা মনে পড়ছিল কেন? মতলবটা কী? হিডেন মোটিভ কোনও?
- মতলব ছাড়া আপনার কথা মনে পড়তে নেই?
- না পড়াটাই মঙ্গল।
- মনখারাপবাবু!
- কী চাই?
- আমার সঙ্গে কিন্তু আজ যেতেই হবে আপনাকে।
- কিন্তু...।
- কোনও কিন্তু শুনছি না!
- তাই বলে পুজোর হুল্লোড়ের মধ্যে আপনি আমায় বাড়ি নিয়ে যাবেন? বৌ মেয়ে বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে কত প্ল্যান থাকার কথা...।
- আরে ধুর মশাই।
- ধুর মানে?
- কেউ কোত্থাও নেই। চারদিকে ট্রানজাকশন! ফেলো কড়ি মাখো তেল। অপরচুনিটি কস্ট দেখে ঠিক করে নেওয়া একে অপরের মাথায় কাঁঠাল ভাঙব কি না। অপরচুনিটি কস্টে আপনি বেনিফিসিয়াল হলে তবেই সম্পর্ক। নয়ত কাঁচকলা। এই এক আপনি ছিলেন তাই..।
- তাই?
- মনে হয় একলা নই। আপনি থাকলে গান শুনি। দু'টো সৎচিন্তা করি। আপনাকে ছুঁয়ে বই পড়তে ইচ্ছে করে। ছাত ভালো লাগে। ইন্টারনাল সিস্টেম পার্জ করা কান্না। নো অপরচুনিটি কস্টের ক্যালকুলেশন স্যর। আজ আপনাকে ছাড়ছি না।
- মিস্টার চ্যাটার্জী।
- ইয়েস মনখারাপবাবু।
- আমার ওপর ভর দিয়ে আর কদ্দিন চলবে?
- যদ্দিন তদ্দিন।
- কেউ নেই? যার পাশে গুটিসুটি বসে আপনি সারেন্ডার করতে পারেন? আসলে আমার শিডিউল এত টাইট...।
- সারেন্ডার? বললাম যে; অপরচুনিটি কস্ট সর্বত্র। অপরচুনিটি কস্টে মাইনর মুনাফা দেখলেই সারেন্ডারের স্যান্ড গেঞ্জি হিঁচড়ে খুলে ঘর মোছার ন্যাতা করা হবে স্যর। প্লীজ স্যার, দিন দুয়েক অন্তত থাকুন। দ্বাদশী পর্যন্ত ছুটি। আমি স্যর ধোপার গাধা লেভেলের, কাজে ঢুকে পড়লেই আপনার মত ফাইনার এলিমেন্টকে বয়ে চলতে পারব না। তখন চারদিকে দিব্যি 'হ্যাঁ স্যার',  'হ্যাঁ গো', 'হ্যাঁ রে' বলে চালিয়ে দেব। কিন্তু কয়েক দিন থাকুন স্যার। মাঝরাতে দু'জনে ছাতে উঠে যাব'খন। মায়ের কথা ভেবে হেঁচড়েছেঁচড়ে যাব। প্লীজ। না বলবেন না মনখারাপবাবু!
- এত ইনসিস্ট করছেন যখন...আর এক প্লেট ঘুগনি অর্ডার করুন আমার জন্য। উইথ ডিম সেদ্ধ। আর ইয়ে, নজরুলের যে প্লে-লিস্টটা গতবার আমরা দু'জনে মিলে বানিয়েছিলাম, সে'টা আছে তো?

Comments

s amit said…
মন খারাপে সিস্টেম পার্জ করা কান্না - এটা জীবনে বড় পাওয়া। সবাই এই কপাল করে আসেনি ।

Popular posts from this blog

গোয়েন্দা গল্প

- কিছু মনে করবেন না মিস্টার দত্ত...আপনার কথাবার্তাগুলো আর কিছুতেই সিরিয়াসলি নেওয়া যাচ্ছে না।  - কেন? কেন বলুন তো ইন্সপেক্টর? - ভোররাতে এই থানা থেকে একশো ফুট দূরত্বে ফুটপাথে আপনাকে উপুড় হয়ে শুয়ে থাকতে দেখা যায়।  - আপনার কনস্টেবল নিজের চোখে দেখেছে তো।  - না না, সে'টাকে আমি কোশ্চেন করছি না। আমি শুধু সামারাইজ করছি। আপনার গায়ে দামী চিকনের পাঞ্জাবী, ঘড়িটার ডায়ালও সোনার হলে অবাক হব না। এ'রকম কাউকে বড় একটা ফুটপাথে পড়ে থাকতে দেখা যায় না। যা হোক। হরিমোহন কনস্টেবলের কাঁধে ভর দিয়ে আপনি থানায় এলেন। জলটল খেয়ে সামান্য সুস্থ বোধ করলেন। অল ইজ ওয়েল। নিঃশ্বাসে অ্যালকোহলের সামান্যতম ট্রেসও নেই। শরীরে নেই কোনও চোট আঘাত।  - আমার কথা আমায় বলে কী লাভ হচ্ছে? আমি যে জরুরী ব্যাপারটা জানাতে মাঝরাতে ছুটে এসেছিলাম...সেই ব্যাপারটা দেখুন...। ব্যাপারটা আর্জেন্ট ইন্সপেক্টর মিশ্র।  - আর্জেন্সিতে পরে আসছি। রাত সাড়ে তিনটে নাগাদ আপনি থানায় ছুটে এসেছিলেন। ওয়েল অ্যান্ড গুড। কিন্তু...ফুটপাথে পড়ে রইলেন কেন...।  - এ'টাই, এ'টাই আমি ঠিক নিশ্চিত নই। মাথাটাথা ঘুরে গেছিল হয়ত। আফটার অল বা

পকেটমার রবীন্দ্রনাথ

১ । চাপা উত্তেজনায় রবীন্দ্রনাথের ভিতরটা এক্কেবারে ছটফট করছিল । তার হাতে ঝোলানো কালো পলিথিনের প্যাকেটে যে ' টা আছে , সে ' টা ভেবেই নোলা ছুকছাক আর বুক ধড়ফড় । এমনিতে আলুথালু গতিতে সে হেঁটে অভ্যস্ত । তাড়াহুড়ো তার ধাতে সয় না মোটে । কিন্তু আজ ব্যাপারটা আলাদা । সে মাংস নিয়ে ফিরছে । হোক না মোটে আড়াই ' শ গ্রাম , তবু , কচি পাঁঠা বলে কথা । সহৃদয় আলম মিয়াঁ উপরি এক টুকরো মেটেও দিয়ে দিয়েছে । তোফা ! নিজের লম্বা দাড়ি দুলিয়ে ডবল গতিতে পা চালিয়ে সে এগোচ্ছিল ।   গলির মোড়ের দিকে এসে পৌঁছতে রবীন্দ্রনাথের কেমন যেন একটু সন্দেহ হল । ঠিক যেন কেউ পিছু নিয়েছে । দু ' একবার ঘাড় ঘুরিয়েও অবশ্য কাউকে দেখা গেলনা । ভাবনা ঝেড়ে ফেলে মাংসের পাকেটটায় মন ফিরিয়ে আনলেন রবীন্দ্রনাথ । বৌ নিশ্চয়ই খুব খুশি হবে আজ । খোকাটাকে যে কদ্দিন মাংসের ঝোল খাওয়ানো হয়নি ।   খাসির রান্নার গন্ধ ভেবে বড় গান পাচ্ছিল রবীন্দ্রনাথের । সে বাধ্য হয়েই একটা কুমার শানুর গাওয়া আশিকি সিনেমার গান ধরলে ।

চ্যাটার্জীবাবুর শেষ ইচ্ছে

- মিস্টার চ্যাটার্জী...। - কে? - আমার নাম বিনোদ। - আমি তো আপনাকে ঠিক...। - আমায় বস পাঠিয়েছেন। - ওহ, মিস্টার চৌধুরী আপনাকে...। - বসের নামটাম নেওয়ার তো কোনও দরকার নেই। কাজ নিয়ে এসেছি। কাজ করে চলে যাব। - আসুন, ভিতরে আসুন। - আমি ভিতরে গিয়ে কী করব বলুন। সৌজন্যের তো আর তেমন প্রয়োজন নেই। আপনি চলুন আমার সঙ্গে। চটপট কাজ মিটে গেলে পৌনে এগারোটার লোকালটা পেয়ে যাব। আমায় আবার সেই সোনারপুর ফিরতে হবে। - যা করার তা কি এ'খানেই সেরে ফেলা যায়না? - এমন কনজেস্টেড এলাকায় ও'সব কাজ করা চলেনা। চুপচাপ ব্যাপারটা সেরে ফেলতে হবে। - প্লীজ দু'মিনিটের জন্য ভিতরে আসুন বিনোদবাবু। জামাটা অন্তত পালটে নিই। - কী দরকার বলুন জামা পালটে। - দরকার তেমন নেই। তবু। ওই, লাস্ট উইশ ধরে নিন। - ক্যুইক প্লীজ। ট্রেন ধরার তাড়াটা ভুলে যাবেন না। আর ইয়ে, পিছন দিক দিয়ে পালাতে চেষ্টা করে লাভ নেই। বসের লোকজন চারপাশে ছড়িয়ে আছে। - ও মা, ছি ছি। তা নয়। আসলে মিতুলের দেওয়া একটা জামা এখনও ভাঙা হয়নি। বাটিক প্রিন্টের হাফশার্ট। একটু ব্রাইট কালার কিন্তু বেশ একটা ইয়ে আছে। ও চলে যাওয়ার পর ও জামার ভাজ ভাঙতে ইচ্ছে হয়নি। কিন্তু...আজ না হয়...। - মিতু