Skip to main content

ফার্স্ট ফ্লাইট



- নমস্কার।
- হুঁ।
- তুমি নমস্কার বললে না তো?
- জ্বালিও না খোকা।
- ম্যানার্স শেখোনি?
- ভারি ডেঁপো খোকা তো! যাও যাও। জ্বালিও না।
- তুমি এত রেগে আছ কেন?
- তা'তে তোমার কী? এত্তটুকুন ছেলে, গুরুজনদের রেস্পেক্ট দিয়ে কথা বলতে শেখোনি?
- এতটুকুন? আমি এতটুকুন? আমি তোমার চেয়ে কত্ত বড়!
- সে তো সাইজে। দশাসই চেহারা থাকলেই বড় হওয়া যায়? তোমার বাবা মা তাই শেখাচ্ছে বুঝি?
- না তা নয়। আচ্ছা, আমার বয়স নয় বছর। তোমার বয়স কত?
- আট।
- তা'ও বলবে তুমি আমার গুরুজন?
- আচ্ছা মুশকিলে পড়া গেল। এক ঘটি জল কি আধ বালতির চেয়ে বেশি?
- না তা নয়...।
- তুমি মানুষ, আমি পাখি। তাও বদ্রি পাখি। আমার আট মানে তোমার আশি। আমি মানুষ হলে তোমায় বলতাম ছুট্টে  গিয়ে আমার জন্য চশমা আর খবরের কাগজ নিয়ে আসতে। আমার বয়সে এসে তুমি খিটখিটেমোর এভারেস্ট হয়ে উঠবে।
- সরি। কিন্তু তুমি এত ছটফট করছ কেন?
- সে আমার দরকার আছে।
- কীসের?
- বড় প্রশ্ন করে তো ছেলে। এত জেনে তোমার কী হবে?
- কীসের অপেক্ষা?
- উড়ব।
- বেশ তো! খাঁচা খুলে বের করে দিই তোমায়?
- ভারি বদ ছেলে তো তুমি!
- যাব্বাবা। ভালো করতে চাইলাম তো।
- বাপের জন্মে উড়েছি? এই যে ডানা জোড়া দেখছ, এ' তোমাদের খবরের কাগজের মত; জঞ্জাল। খাঁচার বাইরে বেরিয়েছি কী হুলোর পিকনিক! জন্মেছি খাঁচায় রাখা মাটির পাত্রে। খাঁচাই আমার পৃথিবী। তোমার যেমন কলকাতা। বা কাবুলিওলার যেমন খোঁকি। বা অর্জুনের যেমন কৃষ্ণর আড়াল।
- তা'হলে উড়বে কী করে?
- কাল স্বপ্ন দেখলাম।
- কী স্বপ্ন?
- জঙ্গল, সবুজে সবুজ! বড় গাছের পাতা কালচে সবুজ,  মাঝারি গাছের পাতা ফ্যাকাশে সবুজ আর ঘাসেরা  উজ্জ্বল। জঙ্গলের গা বেয়ে সরু নদী বয়ে চলেছে, তিরতিরে স্বচ্ছজল। বাতাসে শ্যাওলা আর ভেজা মাটির গন্ধ। স্পষ্ট দেখছিলাম, শুঁকছিলাম! অথচ এগুলো আমার দেখার কথা নয়। আমি তো ব্যালকনির খাঁচাতেই কাটিয়ে দিলাম জীবন।
- তারপর? আর কী দেখলে?
- আকাশ! নীল! ঝকঝকে নীল! চোখ ধাঁধানো নীল। আরও কী দেখলাম বলো তো খোকা?
- কী?
- দেখলাম আমার ডানায় রোদ্দুর, নখের তলায় হাওয়া! হাওয়া! ভাবতে পারছ? আমি ভাসছি,হাওয়ায়! নিজের ডানার শব্দ নিজের কানে ঝাপ্টা মারছে। উড়ছি! উড়ছি! আর...আর..।
- আর? পাখি?
- আমি একা নই!
- একা নও?
- না! আমারই পাশে পাশে যে উড়ছে সে আমারই মত, একই মুখ প্রায়। পালক আমারই মত হলুদ। শুধু আমার চাইতে ভালো। কী ভালোই না সে। মনখারাপ করা ভালো।
- পাখি? কাঁদছ? কষ্ট হচ্ছে?
- খোকা, চারদিকে সবুজ। আর সে সবুজের মাথায় ঝকঝকে নীল। সেই শ্যাওলা আর ভেজা মাটি মেশানো গন্ধ...।
- এ'খানে তো এখন মেঘলা আকাশ, মেঝে সদ্য মোছা হয়েছে, ফিনাইলের গন্ধ।
- খোকা,আমি পাচ্ছি। দেখছে পারছি, স্পষ্ট। উড়তে পারব এ'বার খোকা। মা এসেছে..। মা। আকাশের মত।
- পাখি?
- খোকা,অনেক অনেক দিন পর আবার তোমার সঙ্গে দেখা হবে। কেমন? যখন তোমার মাথার আকাশ ঝকঝকে নীল, তাকিয়ে দেখো। আমি আর মা, সেই আকাশে ঠিক থাকব। এ'বার আসি।

Comments

Popular posts from this blog

গোয়েন্দা গল্প

- কিছু মনে করবেন না মিস্টার দত্ত...আপনার কথাবার্তাগুলো আর কিছুতেই সিরিয়াসলি নেওয়া যাচ্ছে না।  - কেন? কেন বলুন তো ইন্সপেক্টর? - ভোররাতে এই থানা থেকে একশো ফুট দূরত্বে ফুটপাথে আপনাকে উপুড় হয়ে শুয়ে থাকতে দেখা যায়।  - আপনার কনস্টেবল নিজের চোখে দেখেছে তো।  - না না, সে'টাকে আমি কোশ্চেন করছি না। আমি শুধু সামারাইজ করছি। আপনার গায়ে দামী চিকনের পাঞ্জাবী, ঘড়িটার ডায়ালও সোনার হলে অবাক হব না। এ'রকম কাউকে বড় একটা ফুটপাথে পড়ে থাকতে দেখা যায় না। যা হোক। হরিমোহন কনস্টেবলের কাঁধে ভর দিয়ে আপনি থানায় এলেন। জলটল খেয়ে সামান্য সুস্থ বোধ করলেন। অল ইজ ওয়েল। নিঃশ্বাসে অ্যালকোহলের সামান্যতম ট্রেসও নেই। শরীরে নেই কোনও চোট আঘাত।  - আমার কথা আমায় বলে কী লাভ হচ্ছে? আমি যে জরুরী ব্যাপারটা জানাতে মাঝরাতে ছুটে এসেছিলাম...সেই ব্যাপারটা দেখুন...। ব্যাপারটা আর্জেন্ট ইন্সপেক্টর মিশ্র।  - আর্জেন্সিতে পরে আসছি। রাত সাড়ে তিনটে নাগাদ আপনি থানায় ছুটে এসেছিলেন। ওয়েল অ্যান্ড গুড। কিন্তু...ফুটপাথে পড়ে রইলেন কেন...।  - এ'টাই, এ'টাই আমি ঠিক নিশ্চিত নই। মাথাটাথা ঘুরে গেছিল হয়ত। আফটার অল বা

পকেটমার রবীন্দ্রনাথ

১ । চাপা উত্তেজনায় রবীন্দ্রনাথের ভিতরটা এক্কেবারে ছটফট করছিল । তার হাতে ঝোলানো কালো পলিথিনের প্যাকেটে যে ' টা আছে , সে ' টা ভেবেই নোলা ছুকছাক আর বুক ধড়ফড় । এমনিতে আলুথালু গতিতে সে হেঁটে অভ্যস্ত । তাড়াহুড়ো তার ধাতে সয় না মোটে । কিন্তু আজ ব্যাপারটা আলাদা । সে মাংস নিয়ে ফিরছে । হোক না মোটে আড়াই ' শ গ্রাম , তবু , কচি পাঁঠা বলে কথা । সহৃদয় আলম মিয়াঁ উপরি এক টুকরো মেটেও দিয়ে দিয়েছে । তোফা ! নিজের লম্বা দাড়ি দুলিয়ে ডবল গতিতে পা চালিয়ে সে এগোচ্ছিল ।   গলির মোড়ের দিকে এসে পৌঁছতে রবীন্দ্রনাথের কেমন যেন একটু সন্দেহ হল । ঠিক যেন কেউ পিছু নিয়েছে । দু ' একবার ঘাড় ঘুরিয়েও অবশ্য কাউকে দেখা গেলনা । ভাবনা ঝেড়ে ফেলে মাংসের পাকেটটায় মন ফিরিয়ে আনলেন রবীন্দ্রনাথ । বৌ নিশ্চয়ই খুব খুশি হবে আজ । খোকাটাকে যে কদ্দিন মাংসের ঝোল খাওয়ানো হয়নি ।   খাসির রান্নার গন্ধ ভেবে বড় গান পাচ্ছিল রবীন্দ্রনাথের । সে বাধ্য হয়েই একটা কুমার শানুর গাওয়া আশিকি সিনেমার গান ধরলে ।

চ্যাটার্জীবাবুর শেষ ইচ্ছে

- মিস্টার চ্যাটার্জী...। - কে? - আমার নাম বিনোদ। - আমি তো আপনাকে ঠিক...। - আমায় বস পাঠিয়েছেন। - ওহ, মিস্টার চৌধুরী আপনাকে...। - বসের নামটাম নেওয়ার তো কোনও দরকার নেই। কাজ নিয়ে এসেছি। কাজ করে চলে যাব। - আসুন, ভিতরে আসুন। - আমি ভিতরে গিয়ে কী করব বলুন। সৌজন্যের তো আর তেমন প্রয়োজন নেই। আপনি চলুন আমার সঙ্গে। চটপট কাজ মিটে গেলে পৌনে এগারোটার লোকালটা পেয়ে যাব। আমায় আবার সেই সোনারপুর ফিরতে হবে। - যা করার তা কি এ'খানেই সেরে ফেলা যায়না? - এমন কনজেস্টেড এলাকায় ও'সব কাজ করা চলেনা। চুপচাপ ব্যাপারটা সেরে ফেলতে হবে। - প্লীজ দু'মিনিটের জন্য ভিতরে আসুন বিনোদবাবু। জামাটা অন্তত পালটে নিই। - কী দরকার বলুন জামা পালটে। - দরকার তেমন নেই। তবু। ওই, লাস্ট উইশ ধরে নিন। - ক্যুইক প্লীজ। ট্রেন ধরার তাড়াটা ভুলে যাবেন না। আর ইয়ে, পিছন দিক দিয়ে পালাতে চেষ্টা করে লাভ নেই। বসের লোকজন চারপাশে ছড়িয়ে আছে। - ও মা, ছি ছি। তা নয়। আসলে মিতুলের দেওয়া একটা জামা এখনও ভাঙা হয়নি। বাটিক প্রিন্টের হাফশার্ট। একটু ব্রাইট কালার কিন্তু বেশ একটা ইয়ে আছে। ও চলে যাওয়ার পর ও জামার ভাজ ভাঙতে ইচ্ছে হয়নি। কিন্তু...আজ না হয়...। - মিতু