Skip to main content

মহারাজ ও নিমুভূত

- রাজামশাই!
- কে?
- আমি নিমু।
- নিমু কে?
- ভূত।
- ভ..ভূত?
- আজ্ঞে।
- তা আমার শোয়ার ঘরে আসার গুস্তাখি কেন?
- তা ভূতের আবার গুস্তাখি কী! হাওয়া ভেসে বেড়াই তো।
- তুমি জানো আমি তোমায় কোতল করাতে পারি?
- ভূতকে কোতল?
- যাহ্। তাই তো। বন্দী করে রাখতে হবে।
- হাওয়া তো। দিব্যি গলে যাবো।
- চোপ! যত বড় মুখ নয় তত বড় কথা! গলে যাবো! আর কোথায় আছিস রে তুই?  দম থাকলে সামনে আয়! অ্যাই সান্ত্রী!
- আমি স্কন্ধকাটা,  মাথাই নেই তো মুখ। আর সান্ত্রীকে ডেকে লাভ নেই।
- লাভ নেই মানে?
- আপনি ঘুমিয়ে। স্বপ্ন দেখছেন। আমি দুম করে মানুষের সামনে উদয় না হয়ে স্বপ্নে আসি। সুবিধেজনক।
- হোক স্বপ্ন। রাজার স্বপ্ন বলে কথা। সহবতে ফাঁকফোকর দেখলেই চট করে বন্দী। তারপর নির্মম অত্যাচার।
- বেশ বিপদে ফেললেন দেখছি।
- রাজার স্বপ্নে বা শোওয়ার ঘরে কোনও চালাকি নয়।
- তা'হলে আসি।
- রুকো!
- ডাকলেন? রাজামশাই?
- এসেছিলে কেন ভাই?
- আপনি গান ভালোবাসেন?
- চুপ! চুপ!
- সে কী! কেন?
- কে তুই বেয়াদপ? বেসুরবেগান রাজ্যের রাজাধিরাজের সামনে তুই গানের কথা বলছিস? অ্যাইই জল্লাদ!
- স্বপ্ন তো। আপনার স্বপ্ন। সে'খানে শুধু আপনি, এই বিছানা আর আমি; নিমু। জল্লাদ পাবেন কই?
- স্কন্ধকাটা নিমু।
- ঠিক।
- ভাই নিমু, স্কন্ধকাটারা কথা বলে কী ভাবে? মুখ যেহেতু নেই..।
- মুখ না থাকলে বুঝি কথা বলা যায় না?
- যায়?
- আপনি যে মনে মনে একটানা গুনগুন করে যান, সেই বেলা?
- গান? বেসুরবেগানের রাজার বিরুদ্ধে গান গাওয়ার অভিযোগ? সেনাপতি!  অ্যাই সেনাপতি! সৈন্যবাহিনীকে হুকুম দাও নিমুর বিরুদ্ধে যুদ্ধে যাবে।
- আরে স্বপ্নে আপনি সেনাপতিকে পাচ্ছেন কোথায়? ধ্যাত্তেরি। যাক গে, আমি চলি।
- খবরদার! আমি অনুমতি দিয়েছি যাওয়ার? রাজার হুকুম ছাড়া কাজ? এত সাহস? তোর ঘাড়ে ক'টা মাথা রে বেয়াদপ?
- বলব? আমার ঘাড়ে ক'টা মাথা?
- ওহ হো। কিছু মনে করলে ভাই?
- কিছু বলবেন?
- ওই গান নিয়ে কী বলছিলে যেন?
- ভালোবাসেন? গান?
- গানের কথা শোনাও যে পাপ! এ দেশে কেউ গান গাইলে কোতল করার আইন আছে।
- আপনি তো রাজা। আইন আপনার।
- পাগল নাকি! এ রাজ্যে কারুর গলায় সুর নেই। সবাই মিলে গান ধরলে পাশের রাজ্যে ভূমিকম্প হয়, তারা সেনা পাঠিয়ে আক্রমণ করে! কামানের গোলায় দেশ উজাড় করে দেয়।
- কামানের গোলার ভয় গান ছাড়বেন? মহারাজ?
- আমাদের সুর নেই যে!
- গান তো আছে। বেসুর হোক, আপনাদেরই তো। গান ছাড়লে রইবে কী?
- গা...গান ছাড়ব না?
- মায়ের হাতের মাছের ঝোল মুখে রোচে না বলে মাকে হিমালয়ে পাঠিয়ে দেবেন?
- গান। মা।
- তাই তো!
- বেশ করব বেসুরে গাইব। আমরা সবাই বেসুরে গাইব, কার বাপের কী? আমার গান আমি গাইব!
- মহারাজের জয়! গানের অভাবে এ রাজ্য থেকে ভালো ভূতেরা পালিয়ে যাচ্ছিল। আমিও যেতাম, তবে পালানোর আগে ভাবলাম একবার দেখা করে আসি গিয়ে।
- ভালো ভূত?
- গানের বেসুরে যাদের টিকে থাকা। দুপুরের আয়েসি মেজাজের বেম্যদত্যি, বিকেলের মনখারাপি আনচানের শাঁকচুন্নি, রাতের ঘুম না আসার এ'পাশ-ও'পাশের স্কন্ধকাটা!
- আমি থাকতে আমার রাজ্য থেকে ভালো ভূতেরা বিদেয় নেবে? এত সাহস?
- ধরবেন? গান?
- মহামন্ত্রী! তুরন্ত একটা হারমোনিয়ামের ব্যবস্থা করো!
- স্বপ্ন মহারাজ! এ'টা স্বপ্ন! ঘুমটা ভাঙুক আগে।

**

- বাবা! সকাল সকাল কোথায় চললে? আজ রোববার তো!
- জরুরী কাজ!
- কী কাজ?
- হারমোনিয়াম খরিদেগা বিলু।
- সে কী! তুমি ফের গান গাইবে? মা মামাবাড়ি চলে যাবে আমায় নিয়ে, ও'দিকে একতলার মন্টুকাকা বলেছে ফের তোমায় গাইতে শুনলে পুলিশে খবর দেবে।
- বিলু! তুই ক্লাস সেভেনে উঠেও থার্ড ম্যান আর গালি গুলিয়ে ফেলিস, তাই বলে কি আমি তোকে হস্টেলে রেখে এসেছি?
- কীসের সঙ্গে কীসের তুলনা!
- বিলু রে, আমার ভিতরের ভূতগুলো সুটসাট্ কেটে পড়ছে রে। গান আমায় গাইতেই হবে।
- ভিতরের ভূত?
- তোর সঙ্গে নিমুর আলাপ করিয়ে দেব একদিন। এখন আসি। কেমন?

Comments

Popular posts from this blog

গোয়েন্দা গল্প

- কিছু মনে করবেন না মিস্টার দত্ত...আপনার কথাবার্তাগুলো আর কিছুতেই সিরিয়াসলি নেওয়া যাচ্ছে না।  - কেন? কেন বলুন তো ইন্সপেক্টর? - ভোররাতে এই থানা থেকে একশো ফুট দূরত্বে ফুটপাথে আপনাকে উপুড় হয়ে শুয়ে থাকতে দেখা যায়।  - আপনার কনস্টেবল নিজের চোখে দেখেছে তো।  - না না, সে'টাকে আমি কোশ্চেন করছি না। আমি শুধু সামারাইজ করছি। আপনার গায়ে দামী চিকনের পাঞ্জাবী, ঘড়িটার ডায়ালও সোনার হলে অবাক হব না। এ'রকম কাউকে বড় একটা ফুটপাথে পড়ে থাকতে দেখা যায় না। যা হোক। হরিমোহন কনস্টেবলের কাঁধে ভর দিয়ে আপনি থানায় এলেন। জলটল খেয়ে সামান্য সুস্থ বোধ করলেন। অল ইজ ওয়েল। নিঃশ্বাসে অ্যালকোহলের সামান্যতম ট্রেসও নেই। শরীরে নেই কোনও চোট আঘাত।  - আমার কথা আমায় বলে কী লাভ হচ্ছে? আমি যে জরুরী ব্যাপারটা জানাতে মাঝরাতে ছুটে এসেছিলাম...সেই ব্যাপারটা দেখুন...। ব্যাপারটা আর্জেন্ট ইন্সপেক্টর মিশ্র।  - আর্জেন্সিতে পরে আসছি। রাত সাড়ে তিনটে নাগাদ আপনি থানায় ছুটে এসেছিলেন। ওয়েল অ্যান্ড গুড। কিন্তু...ফুটপাথে পড়ে রইলেন কেন...।  - এ'টাই, এ'টাই আমি ঠিক নিশ্চিত নই। মাথাটাথা ঘুরে গেছিল হয়ত। আফটার অল বা

পকেটমার রবীন্দ্রনাথ

১ । চাপা উত্তেজনায় রবীন্দ্রনাথের ভিতরটা এক্কেবারে ছটফট করছিল । তার হাতে ঝোলানো কালো পলিথিনের প্যাকেটে যে ' টা আছে , সে ' টা ভেবেই নোলা ছুকছাক আর বুক ধড়ফড় । এমনিতে আলুথালু গতিতে সে হেঁটে অভ্যস্ত । তাড়াহুড়ো তার ধাতে সয় না মোটে । কিন্তু আজ ব্যাপারটা আলাদা । সে মাংস নিয়ে ফিরছে । হোক না মোটে আড়াই ' শ গ্রাম , তবু , কচি পাঁঠা বলে কথা । সহৃদয় আলম মিয়াঁ উপরি এক টুকরো মেটেও দিয়ে দিয়েছে । তোফা ! নিজের লম্বা দাড়ি দুলিয়ে ডবল গতিতে পা চালিয়ে সে এগোচ্ছিল ।   গলির মোড়ের দিকে এসে পৌঁছতে রবীন্দ্রনাথের কেমন যেন একটু সন্দেহ হল । ঠিক যেন কেউ পিছু নিয়েছে । দু ' একবার ঘাড় ঘুরিয়েও অবশ্য কাউকে দেখা গেলনা । ভাবনা ঝেড়ে ফেলে মাংসের পাকেটটায় মন ফিরিয়ে আনলেন রবীন্দ্রনাথ । বৌ নিশ্চয়ই খুব খুশি হবে আজ । খোকাটাকে যে কদ্দিন মাংসের ঝোল খাওয়ানো হয়নি ।   খাসির রান্নার গন্ধ ভেবে বড় গান পাচ্ছিল রবীন্দ্রনাথের । সে বাধ্য হয়েই একটা কুমার শানুর গাওয়া আশিকি সিনেমার গান ধরলে ।

চ্যাটার্জীবাবুর শেষ ইচ্ছে

- মিস্টার চ্যাটার্জী...। - কে? - আমার নাম বিনোদ। - আমি তো আপনাকে ঠিক...। - আমায় বস পাঠিয়েছেন। - ওহ, মিস্টার চৌধুরী আপনাকে...। - বসের নামটাম নেওয়ার তো কোনও দরকার নেই। কাজ নিয়ে এসেছি। কাজ করে চলে যাব। - আসুন, ভিতরে আসুন। - আমি ভিতরে গিয়ে কী করব বলুন। সৌজন্যের তো আর তেমন প্রয়োজন নেই। আপনি চলুন আমার সঙ্গে। চটপট কাজ মিটে গেলে পৌনে এগারোটার লোকালটা পেয়ে যাব। আমায় আবার সেই সোনারপুর ফিরতে হবে। - যা করার তা কি এ'খানেই সেরে ফেলা যায়না? - এমন কনজেস্টেড এলাকায় ও'সব কাজ করা চলেনা। চুপচাপ ব্যাপারটা সেরে ফেলতে হবে। - প্লীজ দু'মিনিটের জন্য ভিতরে আসুন বিনোদবাবু। জামাটা অন্তত পালটে নিই। - কী দরকার বলুন জামা পালটে। - দরকার তেমন নেই। তবু। ওই, লাস্ট উইশ ধরে নিন। - ক্যুইক প্লীজ। ট্রেন ধরার তাড়াটা ভুলে যাবেন না। আর ইয়ে, পিছন দিক দিয়ে পালাতে চেষ্টা করে লাভ নেই। বসের লোকজন চারপাশে ছড়িয়ে আছে। - ও মা, ছি ছি। তা নয়। আসলে মিতুলের দেওয়া একটা জামা এখনও ভাঙা হয়নি। বাটিক প্রিন্টের হাফশার্ট। একটু ব্রাইট কালার কিন্তু বেশ একটা ইয়ে আছে। ও চলে যাওয়ার পর ও জামার ভাজ ভাঙতে ইচ্ছে হয়নি। কিন্তু...আজ না হয়...। - মিতু