Skip to main content

কমিশন

- আচ্ছা, ব্যাপারটা কী বলুন তো মিস্টার দত্ত!
- কীসে কী?
- আমাদের পর পর পাঁচটা কোটেশন মুখ থুবড়ে পড়ল।
- ইরেসপন্সিবলি কোট করলে এর চেয়ে বেটার আর কী হবে বলুন সান্যালবাবু।
- ইরেস্পন্সিবল? রিয়েলি? এত লো মার্জিনে কোট করছি তবুও বলছেন...? আর আপনি আছেন কী করতে?
- আমি আছি। থাকবও। কিন্তু তাই বলে তো আর রাতকে দিন করে দিতে পারব না। ওপরওলার কাছে আমায় জবাবদিহি করতে হয়।
- ঝেড়ে কাশুন তো মশাই, গুপ্তা বেশি কিছু অফার করেছে নাকি আপনাকে? পাঁচটায় তিনটে কোটেশন তো গুপ্তাই ঝেড়ে দিলো।
- পরের চিন্তা ছাড়ুন দেখি। সামনে বড় দাঁও আসছে। মিনিমাম আড়াই কোটির কন্ট্র‍্যাক্ট।
- টু পয়েন্ট ফাইভ?
- থার্টি পার্সেন্ট মার্জিন।
- বলেন কী! এ'বার গুপ্তাফুপ্তা বললে শুনব না দত্তবাবু। লোয়েস্ট কোট যেন আমাদেরই হয়।
- হুঁ। দেখুন আমি চাকরী করে খাওয়া মানুষ...।
- এ'সব বললে আর শুনছি না। আপনার কমিশন আমি দুই পারসেন্ট বাড়িয়ে দেব।
- দুই?
- গুপ্তা আরও বেশি দিচ্ছে? চলুন পাঁচ বেশি দেব, বাট দ্যাট ইজ ম্যাক্সিমাম।
- অকারণ বিচলিত হচ্ছেন সান্যালবাবু।
- আড়াই কোটি আমার চাই।
- কমিশন ডাবল করুন। এই দুই পাঁচ বাড়িয়ে কোনও লাভ হচ্ছে না।
- ডাবল মানে পনেরো পারসেন্ট? হাফ দ্য প্রফিট?
- আমায় স্লীপিং পার্টনার হিসেবে ধরে নিন।
- টূ হাই।
- গুপ্তাজি বেশ অমায়িক এ'সব সাবজেক্টে।
- বেশ। ফিফটিন পার্সেন্ট ফর ইউ। কিন্তু কন্ট্র‍্যাক্ট আমার চাই।
- কফি চলবে সান্যালবাবু? না লাইম সোডা?
- না, আজ সে'সব থাক। উঠি বরং।

**

- সান্যাল আপনাকে ফিফটিন অফার করেছে? রিয়েলি?
- হোয়াই শুড আই লাই গুপ্তাজি?
- আমি টুয়েন্টি দিব।
- এই কন্ট্র‍্যাক্টটা গেছে। পরেরটা।
- নো, আই নীড দিস ওয়ান।

**

- কী রে! খোকা, ক্লান্ত দেখাচ্ছে কেন এত তোকে?
- এক সান্যাল আর এক গুপ্তা মিলে আমায় এমন নাচিয়ে চলেছে...কী বলব।
- ধুস, কিছুই বুঝি না কী বলিস।
- আচ্ছা মা, তোমার শরীর কেমন আছে?

**

মা,

বছর দুই আপ্রাণ চেষ্টা করলাম। হলো না।

আর আমার দ্বারা হবেও না বোধ হয়। বাবার রেখে যাওয়া ধার শোধ করার মত টাকা জোগাড় হয়ে গেছিল। তবে ঠিক সৎপথে নয়।

অতএব পাপের আয়ে টাকাটা শোধ না করে ব্যাঙ্ক থেকে পুরো টাকাটা তুলে একটা থলিতে ভরে গঙ্গায় ফেললাম। এ সময় বিকেল বেলায় হাওড়া ব্রীজের রেলিঙ ধরে দাঁড়ালে মুখে কী ফুরফুরে হাওয়া ঠেকে, জানো?

গতকাল জিজ্ঞেস করলে আমায় অমন ক্লান্ত দেখাচ্ছে কেন। ভূতকে অমন একটু শ্রান্ত দেখায়। কিছু মনে কোর না।  তোমায় আর ঠকাতে মন চাইছিল না। তাই লিখে ফেললাম এই চিঠিটা।  মধুপুরের বাড়িটা বিক্রি করে দিয়েছি বাবার ধার শোধ করতে। পারলে ক্ষমা কোরো।

তবে অদ্ভুত নেশাটা কাটিয়ে উঠতে পারিনি। কমিশন বাড়ানোর নেশা। টাকার দরকার নেই আর, বডিও হুগলীর নীচে পচছে। তবু, কমিশন বাড়ানোর নেশাটা কাটিয়ে উঠতে পারছি না। পনেরো পার্সেন্ট পর্যন্ত টেনে তুলেছি, আরও কতটা তোলা যায় দেখি।

আর তোমায় মিথ্যে জ্বালাব না।

আসি,

খোকা।

Comments

Popular posts from this blog

গোয়েন্দা গল্প

- কিছু মনে করবেন না মিস্টার দত্ত...আপনার কথাবার্তাগুলো আর কিছুতেই সিরিয়াসলি নেওয়া যাচ্ছে না।  - কেন? কেন বলুন তো ইন্সপেক্টর? - ভোররাতে এই থানা থেকে একশো ফুট দূরত্বে ফুটপাথে আপনাকে উপুড় হয়ে শুয়ে থাকতে দেখা যায়।  - আপনার কনস্টেবল নিজের চোখে দেখেছে তো।  - না না, সে'টাকে আমি কোশ্চেন করছি না। আমি শুধু সামারাইজ করছি। আপনার গায়ে দামী চিকনের পাঞ্জাবী, ঘড়িটার ডায়ালও সোনার হলে অবাক হব না। এ'রকম কাউকে বড় একটা ফুটপাথে পড়ে থাকতে দেখা যায় না। যা হোক। হরিমোহন কনস্টেবলের কাঁধে ভর দিয়ে আপনি থানায় এলেন। জলটল খেয়ে সামান্য সুস্থ বোধ করলেন। অল ইজ ওয়েল। নিঃশ্বাসে অ্যালকোহলের সামান্যতম ট্রেসও নেই। শরীরে নেই কোনও চোট আঘাত।  - আমার কথা আমায় বলে কী লাভ হচ্ছে? আমি যে জরুরী ব্যাপারটা জানাতে মাঝরাতে ছুটে এসেছিলাম...সেই ব্যাপারটা দেখুন...। ব্যাপারটা আর্জেন্ট ইন্সপেক্টর মিশ্র।  - আর্জেন্সিতে পরে আসছি। রাত সাড়ে তিনটে নাগাদ আপনি থানায় ছুটে এসেছিলেন। ওয়েল অ্যান্ড গুড। কিন্তু...ফুটপাথে পড়ে রইলেন কেন...।  - এ'টাই, এ'টাই আমি ঠিক নিশ্চিত নই। মাথাটাথা ঘুরে গেছিল হয়ত। আফটার অল বা

পকেটমার রবীন্দ্রনাথ

১ । চাপা উত্তেজনায় রবীন্দ্রনাথের ভিতরটা এক্কেবারে ছটফট করছিল । তার হাতে ঝোলানো কালো পলিথিনের প্যাকেটে যে ' টা আছে , সে ' টা ভেবেই নোলা ছুকছাক আর বুক ধড়ফড় । এমনিতে আলুথালু গতিতে সে হেঁটে অভ্যস্ত । তাড়াহুড়ো তার ধাতে সয় না মোটে । কিন্তু আজ ব্যাপারটা আলাদা । সে মাংস নিয়ে ফিরছে । হোক না মোটে আড়াই ' শ গ্রাম , তবু , কচি পাঁঠা বলে কথা । সহৃদয় আলম মিয়াঁ উপরি এক টুকরো মেটেও দিয়ে দিয়েছে । তোফা ! নিজের লম্বা দাড়ি দুলিয়ে ডবল গতিতে পা চালিয়ে সে এগোচ্ছিল ।   গলির মোড়ের দিকে এসে পৌঁছতে রবীন্দ্রনাথের কেমন যেন একটু সন্দেহ হল । ঠিক যেন কেউ পিছু নিয়েছে । দু ' একবার ঘাড় ঘুরিয়েও অবশ্য কাউকে দেখা গেলনা । ভাবনা ঝেড়ে ফেলে মাংসের পাকেটটায় মন ফিরিয়ে আনলেন রবীন্দ্রনাথ । বৌ নিশ্চয়ই খুব খুশি হবে আজ । খোকাটাকে যে কদ্দিন মাংসের ঝোল খাওয়ানো হয়নি ।   খাসির রান্নার গন্ধ ভেবে বড় গান পাচ্ছিল রবীন্দ্রনাথের । সে বাধ্য হয়েই একটা কুমার শানুর গাওয়া আশিকি সিনেমার গান ধরলে ।

চ্যাটার্জীবাবুর শেষ ইচ্ছে

- মিস্টার চ্যাটার্জী...। - কে? - আমার নাম বিনোদ। - আমি তো আপনাকে ঠিক...। - আমায় বস পাঠিয়েছেন। - ওহ, মিস্টার চৌধুরী আপনাকে...। - বসের নামটাম নেওয়ার তো কোনও দরকার নেই। কাজ নিয়ে এসেছি। কাজ করে চলে যাব। - আসুন, ভিতরে আসুন। - আমি ভিতরে গিয়ে কী করব বলুন। সৌজন্যের তো আর তেমন প্রয়োজন নেই। আপনি চলুন আমার সঙ্গে। চটপট কাজ মিটে গেলে পৌনে এগারোটার লোকালটা পেয়ে যাব। আমায় আবার সেই সোনারপুর ফিরতে হবে। - যা করার তা কি এ'খানেই সেরে ফেলা যায়না? - এমন কনজেস্টেড এলাকায় ও'সব কাজ করা চলেনা। চুপচাপ ব্যাপারটা সেরে ফেলতে হবে। - প্লীজ দু'মিনিটের জন্য ভিতরে আসুন বিনোদবাবু। জামাটা অন্তত পালটে নিই। - কী দরকার বলুন জামা পালটে। - দরকার তেমন নেই। তবু। ওই, লাস্ট উইশ ধরে নিন। - ক্যুইক প্লীজ। ট্রেন ধরার তাড়াটা ভুলে যাবেন না। আর ইয়ে, পিছন দিক দিয়ে পালাতে চেষ্টা করে লাভ নেই। বসের লোকজন চারপাশে ছড়িয়ে আছে। - ও মা, ছি ছি। তা নয়। আসলে মিতুলের দেওয়া একটা জামা এখনও ভাঙা হয়নি। বাটিক প্রিন্টের হাফশার্ট। একটু ব্রাইট কালার কিন্তু বেশ একটা ইয়ে আছে। ও চলে যাওয়ার পর ও জামার ভাজ ভাঙতে ইচ্ছে হয়নি। কিন্তু...আজ না হয়...। - মিতু