Skip to main content

ব্রিজ

- ব্রিজটা কি দুলছে?
- অল্প।
- ভেঙে পড়বে?
- জানি না। অপেক্ষা করে দেখতে পারি।
- স্ট্রেঞ্জ। রোজ সন্ধেবেলা আমাদের ব্রিজে দেখা হয়। দু'চারটে কথা, তারপর আপনি এ'দিকে নেমে যান ডাউনের ট্রেন ধরতে, আমি অন্যদিকে আপের জন্য। অথচ আজ কাঁপছে বলে অপেক্ষা করব? দুদ্দাড় করে বেরিয়ে যাব না?
- কাঁপুনি অনুভব করার সময়ই পালানো উচিৎ ছিল, জিজ্ঞেস করতে গেলেন কেন?
- না, কাঁপুনিটা কতটা সিরিয়াস জানার কিউরিওসিটি ছিল।
- আগুনের টেম্পারেচার দেখতে থার্মোমিটারসহ আগুনে ঝাঁপ দেবেন? তাছাড়া  আমি কোনও দিন কোনও ভেঙে যাওয়া ব্রীজে থেকেছি কি? এ কাঁপুনি সিরিয়াস কিনা কী ভাবে বলব?
- তাও বটে। আজ ওয়েদারটা বেশ ভালো ছিল। ইশ, আজকেই ব্রীজটার এমন দশা হতে হল?
- ওয়েদার ভালো?
- ভালো না? কেমন ফুরফুরে হাওয়া! ভাবলাম আপনার নাম জিজ্ঞেস করে ফেলব আজ।
- এদ্দিন করেননি কেন?
- খুব অ্যাগ্রেসিভ হত।
- আগ্রাসী? আপনি পুরুষ আমি নারী বলে?
- টু সাম এক্সটেন্ট।
- আজ ব্রীজ ভেঙে পড়তে পারে বলে দুঃসাহসী হয়ে উঠেছেন?
- নাম জিজ্ঞেস করব ভেবেছিলাম। করিনি।
- আমাদের প্রথম ব্রীজে কথা হয়েছিল কেন যেন?
- সময়। ক'টা বাজে জিজ্ঞেস করেছিলাম। আমার হাতঘড়ি আর মোবাইল দু'টোই বিট্রে করেছিল, অথচ ট্রেনটা..।
- তারপরের দিন হেসে 'ভালো তো'?
- সে'টা আপনি ইনিশিয়েট করেছিলেন।
- ব্রীজের কাঁপুনি বাড়ল।
- সে'টা বছর দুই আগে হবে, তাই না?
- দু'বছর দেড় মাস স্যার। হপ্তায় পাঁচ দিন, ব্রিজে দেখা।
- আপনার বা আমার ক্যাসুয়াল বা অন্য লীভ না থাকলে, তবেই।
- দেড় দুই মিনিটের অপ্রয়োজনীয় কথা। নিয়মিত।
- মিনিমাম বারো সেকেন্ড। ম্যাক্সিমাম পাঁচ মিনিট বাইশ সেকেন্ড।
- বাহ, সময়ের ব্যাপারে বেশ হিসেবি আপনি। অথচ বছর দুই আগে কিনা আপনারই ঘড়ি বিকল হয়েছিল।
- দু'বছর দেড় মাস ম্যাডাম। অথচ! নামটাই জানা হল না।
- কাঁপুনি বাড়ল। এ'বার বেশ দুলছে।
- কত জরুরী সব ব্যাপার জানা হল না। এ'সব নামঠাম তো তুচ্ছ।
- জরুরী? যেমন?
- ভ্যানিলা না বাটারস্কচ। মাথা দাবানো ডটপেন না ঢাকনি। শৈলেন না সঞ্জীব।
- এ'টা আগেই বলেছি।
- সরি। সরি।
- কাঁপছে। আরও! 
- অ্যানাউন্সমেন্ট শুনেছেন? আমাদের নামতে বলা হচ্ছে!
- শুনেছি। নেমে যান।
- সর্বনাশ, ও'দিকের সিঁড়িটা ভাঙতে শুরু করল ম্যাডাম। চলুন!
- আপনার তো আপ লোকাল। ও'দিকটা অক্ষত। আমার ডাউনটা যখন মিস হচ্ছেই, থেকেই যাই। আপনি আসুন।
- ওহ।
- কই? গেলেন না?
- আমার নাম...।
- আরও মিনিট খানেক সময় আছে তো স্যরবাবু। জরুরী খবর আগে দিই। স্ট্রবেরি, সোনালি ঢাকনাওলা ফাউন্টেন পেন অনলি। আর কিছু স্যারবাবু?
- আচ্ছা ম্যাডামদেবী, মাঝরাতের ছাত না বিকেলের ঘাট?

Comments

Popular posts from this blog

গোয়েন্দা গল্প

- কিছু মনে করবেন না মিস্টার দত্ত...আপনার কথাবার্তাগুলো আর কিছুতেই সিরিয়াসলি নেওয়া যাচ্ছে না।  - কেন? কেন বলুন তো ইন্সপেক্টর? - ভোররাতে এই থানা থেকে একশো ফুট দূরত্বে ফুটপাথে আপনাকে উপুড় হয়ে শুয়ে থাকতে দেখা যায়।  - আপনার কনস্টেবল নিজের চোখে দেখেছে তো।  - না না, সে'টাকে আমি কোশ্চেন করছি না। আমি শুধু সামারাইজ করছি। আপনার গায়ে দামী চিকনের পাঞ্জাবী, ঘড়িটার ডায়ালও সোনার হলে অবাক হব না। এ'রকম কাউকে বড় একটা ফুটপাথে পড়ে থাকতে দেখা যায় না। যা হোক। হরিমোহন কনস্টেবলের কাঁধে ভর দিয়ে আপনি থানায় এলেন। জলটল খেয়ে সামান্য সুস্থ বোধ করলেন। অল ইজ ওয়েল। নিঃশ্বাসে অ্যালকোহলের সামান্যতম ট্রেসও নেই। শরীরে নেই কোনও চোট আঘাত।  - আমার কথা আমায় বলে কী লাভ হচ্ছে? আমি যে জরুরী ব্যাপারটা জানাতে মাঝরাতে ছুটে এসেছিলাম...সেই ব্যাপারটা দেখুন...। ব্যাপারটা আর্জেন্ট ইন্সপেক্টর মিশ্র।  - আর্জেন্সিতে পরে আসছি। রাত সাড়ে তিনটে নাগাদ আপনি থানায় ছুটে এসেছিলেন। ওয়েল অ্যান্ড গুড। কিন্তু...ফুটপাথে পড়ে রইলেন কেন...।  - এ'টাই, এ'টাই আমি ঠিক নিশ্চিত নই। মাথাটাথা ঘুরে গেছিল হয়ত। আফটার অল বা

পকেটমার রবীন্দ্রনাথ

১ । চাপা উত্তেজনায় রবীন্দ্রনাথের ভিতরটা এক্কেবারে ছটফট করছিল । তার হাতে ঝোলানো কালো পলিথিনের প্যাকেটে যে ' টা আছে , সে ' টা ভেবেই নোলা ছুকছাক আর বুক ধড়ফড় । এমনিতে আলুথালু গতিতে সে হেঁটে অভ্যস্ত । তাড়াহুড়ো তার ধাতে সয় না মোটে । কিন্তু আজ ব্যাপারটা আলাদা । সে মাংস নিয়ে ফিরছে । হোক না মোটে আড়াই ' শ গ্রাম , তবু , কচি পাঁঠা বলে কথা । সহৃদয় আলম মিয়াঁ উপরি এক টুকরো মেটেও দিয়ে দিয়েছে । তোফা ! নিজের লম্বা দাড়ি দুলিয়ে ডবল গতিতে পা চালিয়ে সে এগোচ্ছিল ।   গলির মোড়ের দিকে এসে পৌঁছতে রবীন্দ্রনাথের কেমন যেন একটু সন্দেহ হল । ঠিক যেন কেউ পিছু নিয়েছে । দু ' একবার ঘাড় ঘুরিয়েও অবশ্য কাউকে দেখা গেলনা । ভাবনা ঝেড়ে ফেলে মাংসের পাকেটটায় মন ফিরিয়ে আনলেন রবীন্দ্রনাথ । বৌ নিশ্চয়ই খুব খুশি হবে আজ । খোকাটাকে যে কদ্দিন মাংসের ঝোল খাওয়ানো হয়নি ।   খাসির রান্নার গন্ধ ভেবে বড় গান পাচ্ছিল রবীন্দ্রনাথের । সে বাধ্য হয়েই একটা কুমার শানুর গাওয়া আশিকি সিনেমার গান ধরলে ।

চ্যাটার্জীবাবুর শেষ ইচ্ছে

- মিস্টার চ্যাটার্জী...। - কে? - আমার নাম বিনোদ। - আমি তো আপনাকে ঠিক...। - আমায় বস পাঠিয়েছেন। - ওহ, মিস্টার চৌধুরী আপনাকে...। - বসের নামটাম নেওয়ার তো কোনও দরকার নেই। কাজ নিয়ে এসেছি। কাজ করে চলে যাব। - আসুন, ভিতরে আসুন। - আমি ভিতরে গিয়ে কী করব বলুন। সৌজন্যের তো আর তেমন প্রয়োজন নেই। আপনি চলুন আমার সঙ্গে। চটপট কাজ মিটে গেলে পৌনে এগারোটার লোকালটা পেয়ে যাব। আমায় আবার সেই সোনারপুর ফিরতে হবে। - যা করার তা কি এ'খানেই সেরে ফেলা যায়না? - এমন কনজেস্টেড এলাকায় ও'সব কাজ করা চলেনা। চুপচাপ ব্যাপারটা সেরে ফেলতে হবে। - প্লীজ দু'মিনিটের জন্য ভিতরে আসুন বিনোদবাবু। জামাটা অন্তত পালটে নিই। - কী দরকার বলুন জামা পালটে। - দরকার তেমন নেই। তবু। ওই, লাস্ট উইশ ধরে নিন। - ক্যুইক প্লীজ। ট্রেন ধরার তাড়াটা ভুলে যাবেন না। আর ইয়ে, পিছন দিক দিয়ে পালাতে চেষ্টা করে লাভ নেই। বসের লোকজন চারপাশে ছড়িয়ে আছে। - ও মা, ছি ছি। তা নয়। আসলে মিতুলের দেওয়া একটা জামা এখনও ভাঙা হয়নি। বাটিক প্রিন্টের হাফশার্ট। একটু ব্রাইট কালার কিন্তু বেশ একটা ইয়ে আছে। ও চলে যাওয়ার পর ও জামার ভাজ ভাঙতে ইচ্ছে হয়নি। কিন্তু...আজ না হয়...। - মিতু