Wednesday, March 22, 2017

ময়ূরাক্ষী ফাস্ট প্যাসেঞ্জার

আপ ময়ূরাক্ষী ফাস্ট প্যাসেঞ্জার। বর্ধমান থেকে উঠতো ঝুড়িতে শিঙাড়া আর অ্যালুমিনিয়ামের বালতিতে গরম ডিম সেদ্ধ। সে শিঙাড়ার ভার্টেক্সের নিমকি পরত বাড়তি মজবুত, ভিতরে সাদাসিধে হলদে আলুর তরকারি। সেই শিঙাড়া দু'টো।

আর ডিম সেদ্ধ এক পিস। আধ ফালি করে মধ্যিখানে বিটনুন ছড়ানো। আর ভিড় ট্রেনকামরার হাওয়া গায়ে লাগলে ডিমসেদ্ধর স্বাদ দশগুণ বেড়ে যায়।

তখন শিঙাড়া মিলতো শালপাতার দোনায়,  ডিমসেদ্ধ থাকত চৌকো করে কাটা খবরের কাগজের পাতায়।
তখন মামাবাড়ি থেকে ফেরা। মনের ভিতর সে কী প্রবল হুহু। বাবা শিঙাড়া ডিমসেদ্ধতে ইনভেস্ট করতেন মনখারাপ ডায়লুট করতে। মনবভার যদি খুব বেশি হত আর ট্রেন যদি বুকস্টলের ধারেকাছে দাঁড়াত, তাহলে জুটত মেগাবোনাস; নারায়াণ দেবনাথ অথবা ডায়মন্ড কমিক্সের অরণ্যদেব বা চাচা চৌধুরী। কিন্তু ডিমের কামড় শিঙাড়ার মুচমুচ আর কমিক্সের ফুরফুরেও কতবার দিদাদাদুর জন্য মনকেমন কাটেনি।

দাদুর চশমা, বুকপকেটের ডটপেন। দিদার সিঁদুর ল্যাপটানো চিরুনি। দাদুর ক্রিকেটের গল্প, দিদার মাখা আম দুধ মুড়ি। ময়ূরাক্ষী ফাস্ট প্যাসেঞ্জারের ঝুপুর ঝুপের সঙ্গে তাল মিলিয়ে সে'সব মনে ধাক্কা মারতো। আমি নন্টেফন্টের সুতো আর ডিমসেদ্ধর ছুঁচ দিয়ে নিজেকে এঁটে রাখতাম।

এখনও ময়ূরাক্ষীর ঝুপুরঝাপুর এখন ক্রমাগত বুকে গোঁত্তা মারে,  বিশেষত রাতের দিকে। শিঙাড়া ডিমসেদ্ধর গন্ধ ফেরত আসে। একটু মন দিলে সাবু আর রাকার ঝগড়াঝাঁটিও শুনতে পাওয়া যায় স্পষ্ট।

এখন একটানা শুধু ভীড় ট্রেনের মত দমবন্ধ ভাব।
এখন আর কোত্থাও ফেরত যাওয়ার নেই।

1 comment:

Anonymous said...

এ কী গভীর বাণী......