Skip to main content

টিভির রিমোট

টিভির রিমোট বড় সংবেদনশীল বস্তু।

এ জিনিস যার হাতেই থাক তাকে ফেরেব্বাজ বলে মনে হয়। সামনে চলন্ত টিভি থাকলেই পাশে বসা রিমোট হাতে মানুষটার প্রতি অবিশ্বাস দৃঢ় হয়। হবেই। এই বুঝি চ্যানেল পালটে দিলো, এই বুঝি চ্যানেল পালটে দিল। রিমোট হারানোর সঙ্গে সঙ্গে জীবনে নেমে আসে একটা হাত কামড়ানো অস্বস্তি।

হয়তো আপনার মনে হল নিউজচ্যানেল ট্যু নিউজচ্যানের খেউর শুনে মন ভালো করবেন, অথচ রিমোটওলা মন দিয়ে ডিসকভারিতে পোলারবিয়ারের গ্যাস অম্বলের ধাত নিয়ে একটা অনুষ্ঠান দেখে চলেছেন। আপনাদের ইতিউতি কথা হচ্ছে বটে কিন্তু রিমোটওলার মন রয়েছে টিভিতে আর আপনার মনে ক্রমাগত প্রতিধ্বনিত হয়ে চলেছে স্লোগান "রিমোটওলা হাড়বজ্জাতের কালো হাত ভেঙে দাও গুঁড়িয়ে দাও"।

একটা ঘরে যদি বুদ্ধ (গৌতম), গান্ধী (মোহনদাস), একটা কেবল-সহ টেলিভিশন, একটা রিমোট আর একটা বন্দুক রেখে দেওয়া হয়, তাহলে বাহাত্তর ঘণ্টার মাথায় একটা লাশ পাওয়া যাবে। যাবেই। কেউ মন দিয়ে গবেষণা করলে জানতে পারবেন যে টেলিভিশন রিমোট আবিষ্কারের সঙ্গে গোটা বিশ্বে ডিভোর্সের সংখ্যা হুড়মুড় করে বেড়ে গেছে।

এই টেলিভিশনের রিমোটের জন্যই ছোটমামাও প্রায় তেত্রিশ বার ডিভোর্সের দোরগোড়ায় পৌঁছে গেছিলেন। ইন ফ্যাক্ট গত শনিবার মামাকে নিখিল তান্ত্রিকের ডেরা থেকে বেরোনোর সময় পাকড়াও করে জানাতে পারলাম যে নিখিল নাকি মামাকে আশ্বাস দিয়েছে যে গোপনে মামীর রিমোট ছাড়ানোর টোটকা তার জানা আছে। এ'দিকে মামীকে যে আমিই প্রতি বিস্যুদবার বিকেলে নিখিলের কাছে নিয়ে আসি সে গোপন খবরের আঁচ মামা পায়নি দেখলাম। নিখিলের ব্যবসায় টার্নওভারের প্রতি কমিটমেন্ট দেখেও ভালো লাগলো।

আমার বহুদিনের শখ ছিল একটা এলইডির। নিখিলেরই কল্যাণে ছোটমামার এলইডি আমার একলার সংসারের শোওয়ার ঘরে প্রতিষ্ঠিত হল অস্ট্রেলিয়া সিরিজের সেকেন্ড টেস্টের আগেই।

ইউটিউব এসে মামাবাড়ির সম্পর্কের একটা ঠ্যাং কফিন থেকে হিঁচড়ে বের করতে পেরেছে। আর হায়ার সেকেন্ডারি ফেল নিখিলের পকেটে টু পাইস যাওয়াটা একটা বাড়তি তৃপ্তির কারণ তো বটেই।

Comments

Popular posts from this blog

গোয়েন্দা গল্প

- কিছু মনে করবেন না মিস্টার দত্ত...আপনার কথাবার্তাগুলো আর কিছুতেই সিরিয়াসলি নেওয়া যাচ্ছে না।  - কেন? কেন বলুন তো ইন্সপেক্টর? - ভোররাতে এই থানা থেকে একশো ফুট দূরত্বে ফুটপাথে আপনাকে উপুড় হয়ে শুয়ে থাকতে দেখা যায়।  - আপনার কনস্টেবল নিজের চোখে দেখেছে তো।  - না না, সে'টাকে আমি কোশ্চেন করছি না। আমি শুধু সামারাইজ করছি। আপনার গায়ে দামী চিকনের পাঞ্জাবী, ঘড়িটার ডায়ালও সোনার হলে অবাক হব না। এ'রকম কাউকে বড় একটা ফুটপাথে পড়ে থাকতে দেখা যায় না। যা হোক। হরিমোহন কনস্টেবলের কাঁধে ভর দিয়ে আপনি থানায় এলেন। জলটল খেয়ে সামান্য সুস্থ বোধ করলেন। অল ইজ ওয়েল। নিঃশ্বাসে অ্যালকোহলের সামান্যতম ট্রেসও নেই। শরীরে নেই কোনও চোট আঘাত।  - আমার কথা আমায় বলে কী লাভ হচ্ছে? আমি যে জরুরী ব্যাপারটা জানাতে মাঝরাতে ছুটে এসেছিলাম...সেই ব্যাপারটা দেখুন...। ব্যাপারটা আর্জেন্ট ইন্সপেক্টর মিশ্র।  - আর্জেন্সিতে পরে আসছি। রাত সাড়ে তিনটে নাগাদ আপনি থানায় ছুটে এসেছিলেন। ওয়েল অ্যান্ড গুড। কিন্তু...ফুটপাথে পড়ে রইলেন কেন...।  - এ'টাই, এ'টাই আমি ঠিক নিশ্চিত নই। মাথাটাথা ঘুরে গেছিল হয়ত। আফটার অল বা

পকেটমার রবীন্দ্রনাথ

১ । চাপা উত্তেজনায় রবীন্দ্রনাথের ভিতরটা এক্কেবারে ছটফট করছিল । তার হাতে ঝোলানো কালো পলিথিনের প্যাকেটে যে ' টা আছে , সে ' টা ভেবেই নোলা ছুকছাক আর বুক ধড়ফড় । এমনিতে আলুথালু গতিতে সে হেঁটে অভ্যস্ত । তাড়াহুড়ো তার ধাতে সয় না মোটে । কিন্তু আজ ব্যাপারটা আলাদা । সে মাংস নিয়ে ফিরছে । হোক না মোটে আড়াই ' শ গ্রাম , তবু , কচি পাঁঠা বলে কথা । সহৃদয় আলম মিয়াঁ উপরি এক টুকরো মেটেও দিয়ে দিয়েছে । তোফা ! নিজের লম্বা দাড়ি দুলিয়ে ডবল গতিতে পা চালিয়ে সে এগোচ্ছিল ।   গলির মোড়ের দিকে এসে পৌঁছতে রবীন্দ্রনাথের কেমন যেন একটু সন্দেহ হল । ঠিক যেন কেউ পিছু নিয়েছে । দু ' একবার ঘাড় ঘুরিয়েও অবশ্য কাউকে দেখা গেলনা । ভাবনা ঝেড়ে ফেলে মাংসের পাকেটটায় মন ফিরিয়ে আনলেন রবীন্দ্রনাথ । বৌ নিশ্চয়ই খুব খুশি হবে আজ । খোকাটাকে যে কদ্দিন মাংসের ঝোল খাওয়ানো হয়নি ।   খাসির রান্নার গন্ধ ভেবে বড় গান পাচ্ছিল রবীন্দ্রনাথের । সে বাধ্য হয়েই একটা কুমার শানুর গাওয়া আশিকি সিনেমার গান ধরলে ।

চ্যাটার্জীবাবুর শেষ ইচ্ছে

- মিস্টার চ্যাটার্জী...। - কে? - আমার নাম বিনোদ। - আমি তো আপনাকে ঠিক...। - আমায় বস পাঠিয়েছেন। - ওহ, মিস্টার চৌধুরী আপনাকে...। - বসের নামটাম নেওয়ার তো কোনও দরকার নেই। কাজ নিয়ে এসেছি। কাজ করে চলে যাব। - আসুন, ভিতরে আসুন। - আমি ভিতরে গিয়ে কী করব বলুন। সৌজন্যের তো আর তেমন প্রয়োজন নেই। আপনি চলুন আমার সঙ্গে। চটপট কাজ মিটে গেলে পৌনে এগারোটার লোকালটা পেয়ে যাব। আমায় আবার সেই সোনারপুর ফিরতে হবে। - যা করার তা কি এ'খানেই সেরে ফেলা যায়না? - এমন কনজেস্টেড এলাকায় ও'সব কাজ করা চলেনা। চুপচাপ ব্যাপারটা সেরে ফেলতে হবে। - প্লীজ দু'মিনিটের জন্য ভিতরে আসুন বিনোদবাবু। জামাটা অন্তত পালটে নিই। - কী দরকার বলুন জামা পালটে। - দরকার তেমন নেই। তবু। ওই, লাস্ট উইশ ধরে নিন। - ক্যুইক প্লীজ। ট্রেন ধরার তাড়াটা ভুলে যাবেন না। আর ইয়ে, পিছন দিক দিয়ে পালাতে চেষ্টা করে লাভ নেই। বসের লোকজন চারপাশে ছড়িয়ে আছে। - ও মা, ছি ছি। তা নয়। আসলে মিতুলের দেওয়া একটা জামা এখনও ভাঙা হয়নি। বাটিক প্রিন্টের হাফশার্ট। একটু ব্রাইট কালার কিন্তু বেশ একটা ইয়ে আছে। ও চলে যাওয়ার পর ও জামার ভাজ ভাঙতে ইচ্ছে হয়নি। কিন্তু...আজ না হয়...। - মিতু