Skip to main content

চুটকি

কুমুদবাবু আজ রাতের খাওয়াটা তাড়াতাড়ি সেরে নিয়েছিলেন। তারপর প্যাড কলম নিয়ে সোজা পড়ার টেবিলে।

পারচেজের গুপ্তর ছোঁড়া চ্যালেঞ্জটার একটা চোয়াল ভাঙা জবাব না দিতে পারলে শান্তি নেই। ব্যাটা বলে কিনা আজকের যুগে দাঁড়িয়ে ইনঅফেন্সিভ জোক ফাঁদা সম্ভবই নয়?
চুটকি মানেই লোকের গায়ে ফোস্কা ফেলবে? এ'টা কোনও কথা হলো?

মনে মনে চ্যালেঞ্জ নিয়ে বাড়ি ফিরেছিলেন কুমুদবাবু। একদম ঝরঝরে রক্তপাতহীন জোক লিখবেন তিনি খানকয়েক। তারপর সে'গুলো সোজা গিয়ে ছুঁড়ে মারবেন গুপ্তর মুখে।

খসখস করে প্রথমেই লিখতে শুরু করেছিলেন এই ভাবে;

"এক স্বামী তাঁর স্ত্রীর ড্রাইভিং লাইসেন্স নম্বরের মধ্যে কোয়াড্রেটিক ইকুয়েশন খুঁজছিলেন..."।
এ'টুকু লিখেই মনে হল 'না না, এ'টা সেক্সিস্ট জোক হয়ে যাচ্ছে'।

প্যাডের পাতাটা ছিঁড়ে দলা পাকিয়ে ওয়েস্টপেপার বাস্কেটে ফেলে নতুন করে লেখা আরম্ভ করলেন।

"ব্রণকে ভয় পেতেন না রবীন্দ্রনাথ..."।
এ'টাতেও চটপট ইতি টানতে হলো কুমুদবাবুকে। বাঙালি দুঃখ পাবে। প্রচণ্ড প্রতিবাদে এ'পাশ থেকে ও'পাশ ফিরে শোবে। এ ঠাট্টাটাও বাদ গেল।

প্যাডের পরের পাতায় উনি লিখলেন;
"ফেয়ার অ্যান্ড লাভলি বেড়ালদের জন্য ক্রীম আবিষ্কার করতেই রাস্তাঘাটের দুর্ঘটনার সংখ্যা দ্রুত বেগে কমে আসতে লাগলো..."।
পরক্ষণে নিজেই "রেসিস্ট" বলে শিউরে উঠে ছোট বাথরুম সেরে এসে বসলেন কুমুদবাবু।

একটু মেজাজ চিড়বিড়ে হচ্ছিল। কাজটা এর চেয়ে ঢের সহজ ভেবেছিলেন ভদ্রলোক। এরপরের জোক লেখা শুরু করলেন;
"অশোকবাবু সেক্স-র‍্যাকেট চালাতেন। মধুচক্রের হোতা হয়েও অবিশ্যি তার জাতীয়তা বোধ কোনও অংশে কম ছিল না..."।
কুচিকুচি করে পাতাটা ছিঁড়ে ফেললেন কুমুদবাবু। নিজের অজান্তে এ কী দেশ বিরোধী নোংরা জোক মাঠে নামাচ্ছিলেন তিনি। ছিঃ ছিঃ।

এমন করে চুটকির পর চুটকি মুখ থুবড়ে পড়তে লাগলো।
কোনওটা বাউলদের ছোট করছে, কোনওটা স্তন্যপায়ীদের হ্যাটা করছে।
কোনওটা বডি শেমিং করে বাহবা লুঠছে তো কোনওটা লুঙ্গিকে ইনসাল্ট করছে।

রাত বেড়ে চললো। একটা রাইটিং প্যাড নিকেশ হয়ে দু'নম্বরও ফতুর হতে চললো।
ওয়েস্টপেপার বাস্কেট উপচে পড়ে মেঝেময় দলাপাকানো ছেঁড়া প্যাডের পাতা।

ভোরের দিলে যখন প্রায় হাল ছেড়ে গুপ্তর কাছে মনে মনে হার স্বীকার করে নিয়েছেন, ঠিক তখনই ব্যালকনিতে 'ঝুপ' শব্দে টনক নড়লো কুমুদবাবুর। খবরের কাগজ দিয়ে গেলো।

মিচকি হেসে খবরের কাগজের রাশিফলের অংশটুকু কেটে মানিব্যাগে পুরলেন তিনি। সে'খানে মেষের আন্ডারে লিখেছে "যে কোনও বাজিতে জয় অবশ্যম্ভাবী"।

Comments

Popular posts from this blog

গোয়েন্দা গল্প

- কিছু মনে করবেন না মিস্টার দত্ত...আপনার কথাবার্তাগুলো আর কিছুতেই সিরিয়াসলি নেওয়া যাচ্ছে না।  - কেন? কেন বলুন তো ইন্সপেক্টর? - ভোররাতে এই থানা থেকে একশো ফুট দূরত্বে ফুটপাথে আপনাকে উপুড় হয়ে শুয়ে থাকতে দেখা যায়।  - আপনার কনস্টেবল নিজের চোখে দেখেছে তো।  - না না, সে'টাকে আমি কোশ্চেন করছি না। আমি শুধু সামারাইজ করছি। আপনার গায়ে দামী চিকনের পাঞ্জাবী, ঘড়িটার ডায়ালও সোনার হলে অবাক হব না। এ'রকম কাউকে বড় একটা ফুটপাথে পড়ে থাকতে দেখা যায় না। যা হোক। হরিমোহন কনস্টেবলের কাঁধে ভর দিয়ে আপনি থানায় এলেন। জলটল খেয়ে সামান্য সুস্থ বোধ করলেন। অল ইজ ওয়েল। নিঃশ্বাসে অ্যালকোহলের সামান্যতম ট্রেসও নেই। শরীরে নেই কোনও চোট আঘাত।  - আমার কথা আমায় বলে কী লাভ হচ্ছে? আমি যে জরুরী ব্যাপারটা জানাতে মাঝরাতে ছুটে এসেছিলাম...সেই ব্যাপারটা দেখুন...। ব্যাপারটা আর্জেন্ট ইন্সপেক্টর মিশ্র।  - আর্জেন্সিতে পরে আসছি। রাত সাড়ে তিনটে নাগাদ আপনি থানায় ছুটে এসেছিলেন। ওয়েল অ্যান্ড গুড। কিন্তু...ফুটপাথে পড়ে রইলেন কেন...।  - এ'টাই, এ'টাই আমি ঠিক নিশ্চিত নই। মাথাটাথা ঘুরে গেছিল হয়ত। আফটার অল বা

পকেটমার রবীন্দ্রনাথ

১ । চাপা উত্তেজনায় রবীন্দ্রনাথের ভিতরটা এক্কেবারে ছটফট করছিল । তার হাতে ঝোলানো কালো পলিথিনের প্যাকেটে যে ' টা আছে , সে ' টা ভেবেই নোলা ছুকছাক আর বুক ধড়ফড় । এমনিতে আলুথালু গতিতে সে হেঁটে অভ্যস্ত । তাড়াহুড়ো তার ধাতে সয় না মোটে । কিন্তু আজ ব্যাপারটা আলাদা । সে মাংস নিয়ে ফিরছে । হোক না মোটে আড়াই ' শ গ্রাম , তবু , কচি পাঁঠা বলে কথা । সহৃদয় আলম মিয়াঁ উপরি এক টুকরো মেটেও দিয়ে দিয়েছে । তোফা ! নিজের লম্বা দাড়ি দুলিয়ে ডবল গতিতে পা চালিয়ে সে এগোচ্ছিল ।   গলির মোড়ের দিকে এসে পৌঁছতে রবীন্দ্রনাথের কেমন যেন একটু সন্দেহ হল । ঠিক যেন কেউ পিছু নিয়েছে । দু ' একবার ঘাড় ঘুরিয়েও অবশ্য কাউকে দেখা গেলনা । ভাবনা ঝেড়ে ফেলে মাংসের পাকেটটায় মন ফিরিয়ে আনলেন রবীন্দ্রনাথ । বৌ নিশ্চয়ই খুব খুশি হবে আজ । খোকাটাকে যে কদ্দিন মাংসের ঝোল খাওয়ানো হয়নি ।   খাসির রান্নার গন্ধ ভেবে বড় গান পাচ্ছিল রবীন্দ্রনাথের । সে বাধ্য হয়েই একটা কুমার শানুর গাওয়া আশিকি সিনেমার গান ধরলে ।

চ্যাটার্জীবাবুর শেষ ইচ্ছে

- মিস্টার চ্যাটার্জী...। - কে? - আমার নাম বিনোদ। - আমি তো আপনাকে ঠিক...। - আমায় বস পাঠিয়েছেন। - ওহ, মিস্টার চৌধুরী আপনাকে...। - বসের নামটাম নেওয়ার তো কোনও দরকার নেই। কাজ নিয়ে এসেছি। কাজ করে চলে যাব। - আসুন, ভিতরে আসুন। - আমি ভিতরে গিয়ে কী করব বলুন। সৌজন্যের তো আর তেমন প্রয়োজন নেই। আপনি চলুন আমার সঙ্গে। চটপট কাজ মিটে গেলে পৌনে এগারোটার লোকালটা পেয়ে যাব। আমায় আবার সেই সোনারপুর ফিরতে হবে। - যা করার তা কি এ'খানেই সেরে ফেলা যায়না? - এমন কনজেস্টেড এলাকায় ও'সব কাজ করা চলেনা। চুপচাপ ব্যাপারটা সেরে ফেলতে হবে। - প্লীজ দু'মিনিটের জন্য ভিতরে আসুন বিনোদবাবু। জামাটা অন্তত পালটে নিই। - কী দরকার বলুন জামা পালটে। - দরকার তেমন নেই। তবু। ওই, লাস্ট উইশ ধরে নিন। - ক্যুইক প্লীজ। ট্রেন ধরার তাড়াটা ভুলে যাবেন না। আর ইয়ে, পিছন দিক দিয়ে পালাতে চেষ্টা করে লাভ নেই। বসের লোকজন চারপাশে ছড়িয়ে আছে। - ও মা, ছি ছি। তা নয়। আসলে মিতুলের দেওয়া একটা জামা এখনও ভাঙা হয়নি। বাটিক প্রিন্টের হাফশার্ট। একটু ব্রাইট কালার কিন্তু বেশ একটা ইয়ে আছে। ও চলে যাওয়ার পর ও জামার ভাজ ভাঙতে ইচ্ছে হয়নি। কিন্তু...আজ না হয়...। - মিতু