Skip to main content

লিপির মনের ভিতরে

- হ্যালো।
- হ্যালো! লিপি!
- উঁ। বলো। কী ব্যাপার, এত রাত্রে?
- জানি এত রাত্রে তোমায় ফোন করাটা ঠিক নয়..তবে ইয়ে...খুব আর্জেন্ট একটা কথা ছিল।
- কাল বললে হয় না অতনু? লাঞ্চে অফিস থেকে কল করে নেব।
- কিন্তু লিপি...ব্যাপারটা খুব ক্রিটিকাল। এখুনি না জানালে...।
- বলো। শুনি।
- একটা ব্যাপার স্পষ্ট হয়ে গেছে লিপি। সাঙ্ঘাতিক কাণ্ড।
- কী ব্যাপার? কী সাঙ্ঘাতিক কাণ্ড?
- খুব ঠাণ্ডা মাথায় শোন! কেমন?
- আরে ব্যাপারটা কী বলবে তো! রাতদুপুরে এত ধানাইপানাই  ভালো লাগে না।
- তুমি বুঝতে পারছ না। খবরটা জানার পর তোমার মাথা ঠাণ্ডা রাখাটা খুব জরুরী।
- কী খবর অতনু?
- খবরটা হল। আসলে...মানে যাকে বলে...ইয়ে...।
- কী ইয়ে?
- ব্যাপারটা হল গিয়ে..তুমি আসলে আমার প্রেমে পড়ে গেছ।
- হোয়াট?
- তুমি। লিপি দত্ত। আমায়। অর্থাৎ অতনু ঘোষকে। ভালোবাসো।
- হোয়াট?
- স্পষ্ট। জলের মত। তবে ঘাবড়ে যেও না। মাথা ঠাণ্ডা রাখতে হবে।
- আমি তোমায় ভালোবাসি?
- আমি জানি তুমি অবাক হচ্ছ। আসলে তুমি বুঝতে পারছ না যে তুমি আমায় ভালোবাসো। কিন্তু মনের গভীরে...অল্প গভীরে নয়...একদম তলার দিকে...তোমার মনে আমার জন্য কিলো কিলো প্রেম জমে রয়েছে।
- ইয়ার্কি হচ্ছে? তুমি তিন বার প্রপোজ করার বাঁদরামো করেছ আগে। সহ্য করেছি। কিন্তু এ'সব কী হচ্ছে?
- সাবকনশাস লিপি। সব সাবকনশাসের খেল। খুব জটিল ব্যাপার।
- শোনো। আমি তোমায় ভালোবাসি না।
- অত হুড়মুড় করে ফেলো না...সিচুয়েশনটা বোঝো...। এই যে আমার প্রতি ভালোবাসা তোমার অন্তরে ফল্গুধারের মত বয়ে চলেছে...।
- শাট আপ অতনু। শাট। আপ। আমি অরিজিৎকে ভালোবাসি। আগামী সপ্তাহে আমাদের বিয়ের পাকাকথা।  আর আদতে তুমি জ্বলেপুড়ে পাগল হয়ে যাচ্ছ...।
- জেলাস? আমি? তুমি জানো রীতা আমায় নিয়মিত ঢলঢলে মেল করছে? সুনন্দা আমায় হার্টসাইন দিয়ে রোজ ভোরে হোয়্যাটস্যাপে পিং করে? সেই আমি জেলাস হব? প্রেমট্রেম আমি নিজেই অ্যাভয়েড করি। আমার ব্যস্ততার মধ্যে রোম্যান্সের সময় কই? তোমার প্রপোজ করেছি বটে আগে। তবে সে'টা এক ধরণের সোশ্যাল এক্সপেরিমেন্ট বলতে পারো।
- তুমি একটা অসহ্য মানুষ অতনু। এই রাত্রে এত বাজে কথা শুনতে ভালো লাগছে না। ফোন কাটছি।
- প্লীজ না। আই মীন, তোমার কষ্ট হবে এমন দুম করে কথা বন্ধ করলে। ভালোবাসার নেচারটাই এ'রকম! তোমার কিছু করার নেই লিপি।
- উফ! বাবা গো!
- ব্যাপারটা অনেকদিন ধরে পুষে রেখেছিলে। বলা ভালো, বুকে পাথরচাপা দিয়ে রেখেছিলে। ভালো হলো আজ খোলতাই আলোচনা হয়ে গেল। তোমার মনের ভার খানিকটা লাঘব হলো।
- আমি। আমি তোমায় ভালোবাসি? তোমার মত একটা ঘ্যানঘ্যানে ছেলেকে?
- অবাক লাগছে,  তাই না? জানতে পেরে আমি নিজেই অবাক হয়েছি। যাক গে, এখন যখন জানাজানি হয়েই গেছে তখন আর আলোচনায় দ্বিধা কেন। তবে আমি আবার দুম করে 'আমিও ভালোবাসি' বলে ফেলত পারব না, কেমন? প্রেমট্রেম এখনই তেমন ভেবে উঠতে পারিনি। তাছাড়া আমি বরাবরের লাজুক। কাজেই এখনই তোমায় হলফ করে বলতে পারছি না যে আমরা মিউচুয়ালি প্রেম করবই। তবে চান্স যে নেই তা নয়। আর চান্স যেহেতু আছে, সেহেতু তুমি তোমার ওই সাজানো প্রেমিক অরিজিৎকে বলে দিত পারো যে বিয়েটা আপাতত ক্যান্সেল।
- অরিজিৎ সাজানো? হোয়াট ননসেন্স?
- ও মা! এই সহজ ডিফেন্স মেকানিজমটা ধরতে পারোনি? তুমি আমার প্রেমে পাগল অথচ বলতে পারছ না। একটা প্রেশার রিলীজ ভাল্ভ দরকার তো। অরিজিৎ হচ্ছে তাই। ও'সব নিয়ে ভেবো না।
- তুমি উন্মাদ! আমি তোমায় ভালোবাসি না।
- আহ্হা! আ ক্লাসিক কেস অফ সেল্ফ ডিনায়াল!
- অসহ্য। তা তুমি কী করে জানলে? যে আমি মনে মনে তোমায় ভালোবাসি?
- জলের মত সহজ তো। আমায় পাওয়ার আকাঙ্ক্ষা তোমার এতটাই যে পোষা হুলোর নাম দিলে সিলি।
- তো?
- সিলিকে যখন বাড়ি এনেছিলে তখন আমি নর্থ বেঙ্গলে ছিলাম। অফিসের ট্যুরে শিলিগুড়িতে। তখনও তোমার অবচেতনে ছিলাম আমি আর মন জুড়ে ছিল শিলিগুড়ি। শিলিগুড়ির শিলি নিয়েই তুমি সিলি নাম ভেবেছ। সাবকনশাসলি।
- উফফ! মাগো!
- তারপর এই অরিজিৎ।
- অরিজিৎ কী করল?
- ওই নামের ছেলেই কেন পছন্দ করলে জানো? কারণ তোমার অন্তর আমায় পাওয়ার আশা ছেড়ে দিয়েছিল। মনে মনে তুমি আমার কাছে হেরে যাচ্ছিলে। তুমি ভাবছিলে যে আমি তোমায় ভালোবাসায় হারিয়ে দিলাম। তুমি হারের স্বীকারোক্তি হিসেবে আমায় গোপন মেসেজ দিতে চাইলে; অতনুরই জিত। অর্থাৎ অ'রই জিত। তাই অরিজিৎকে বেছে নিলে।
- হোয়াই ডোন্ট ইউ ডাই?
- তোমায় এমন অসহায় অবস্থায় ফেলে রেখে? ইউ আর মাই বেস্ট ফ্রেন্ড। আমি তোমায় সহজে ছেড়ে দেব না লিপি। হ্যালো? হ্যালো? এ কী! যাহ্। লাইন কেটে গেল যে।

Comments

Popular posts from this blog

গোয়েন্দা গল্প

- কিছু মনে করবেন না মিস্টার দত্ত...আপনার কথাবার্তাগুলো আর কিছুতেই সিরিয়াসলি নেওয়া যাচ্ছে না।  - কেন? কেন বলুন তো ইন্সপেক্টর? - ভোররাতে এই থানা থেকে একশো ফুট দূরত্বে ফুটপাথে আপনাকে উপুড় হয়ে শুয়ে থাকতে দেখা যায়।  - আপনার কনস্টেবল নিজের চোখে দেখেছে তো।  - না না, সে'টাকে আমি কোশ্চেন করছি না। আমি শুধু সামারাইজ করছি। আপনার গায়ে দামী চিকনের পাঞ্জাবী, ঘড়িটার ডায়ালও সোনার হলে অবাক হব না। এ'রকম কাউকে বড় একটা ফুটপাথে পড়ে থাকতে দেখা যায় না। যা হোক। হরিমোহন কনস্টেবলের কাঁধে ভর দিয়ে আপনি থানায় এলেন। জলটল খেয়ে সামান্য সুস্থ বোধ করলেন। অল ইজ ওয়েল। নিঃশ্বাসে অ্যালকোহলের সামান্যতম ট্রেসও নেই। শরীরে নেই কোনও চোট আঘাত।  - আমার কথা আমায় বলে কী লাভ হচ্ছে? আমি যে জরুরী ব্যাপারটা জানাতে মাঝরাতে ছুটে এসেছিলাম...সেই ব্যাপারটা দেখুন...। ব্যাপারটা আর্জেন্ট ইন্সপেক্টর মিশ্র।  - আর্জেন্সিতে পরে আসছি। রাত সাড়ে তিনটে নাগাদ আপনি থানায় ছুটে এসেছিলেন। ওয়েল অ্যান্ড গুড। কিন্তু...ফুটপাথে পড়ে রইলেন কেন...।  - এ'টাই, এ'টাই আমি ঠিক নিশ্চিত নই। মাথাটাথা ঘুরে গেছিল হয়ত। আফটার অল বা

পকেটমার রবীন্দ্রনাথ

১ । চাপা উত্তেজনায় রবীন্দ্রনাথের ভিতরটা এক্কেবারে ছটফট করছিল । তার হাতে ঝোলানো কালো পলিথিনের প্যাকেটে যে ' টা আছে , সে ' টা ভেবেই নোলা ছুকছাক আর বুক ধড়ফড় । এমনিতে আলুথালু গতিতে সে হেঁটে অভ্যস্ত । তাড়াহুড়ো তার ধাতে সয় না মোটে । কিন্তু আজ ব্যাপারটা আলাদা । সে মাংস নিয়ে ফিরছে । হোক না মোটে আড়াই ' শ গ্রাম , তবু , কচি পাঁঠা বলে কথা । সহৃদয় আলম মিয়াঁ উপরি এক টুকরো মেটেও দিয়ে দিয়েছে । তোফা ! নিজের লম্বা দাড়ি দুলিয়ে ডবল গতিতে পা চালিয়ে সে এগোচ্ছিল ।   গলির মোড়ের দিকে এসে পৌঁছতে রবীন্দ্রনাথের কেমন যেন একটু সন্দেহ হল । ঠিক যেন কেউ পিছু নিয়েছে । দু ' একবার ঘাড় ঘুরিয়েও অবশ্য কাউকে দেখা গেলনা । ভাবনা ঝেড়ে ফেলে মাংসের পাকেটটায় মন ফিরিয়ে আনলেন রবীন্দ্রনাথ । বৌ নিশ্চয়ই খুব খুশি হবে আজ । খোকাটাকে যে কদ্দিন মাংসের ঝোল খাওয়ানো হয়নি ।   খাসির রান্নার গন্ধ ভেবে বড় গান পাচ্ছিল রবীন্দ্রনাথের । সে বাধ্য হয়েই একটা কুমার শানুর গাওয়া আশিকি সিনেমার গান ধরলে ।

চ্যাটার্জীবাবুর শেষ ইচ্ছে

- মিস্টার চ্যাটার্জী...। - কে? - আমার নাম বিনোদ। - আমি তো আপনাকে ঠিক...। - আমায় বস পাঠিয়েছেন। - ওহ, মিস্টার চৌধুরী আপনাকে...। - বসের নামটাম নেওয়ার তো কোনও দরকার নেই। কাজ নিয়ে এসেছি। কাজ করে চলে যাব। - আসুন, ভিতরে আসুন। - আমি ভিতরে গিয়ে কী করব বলুন। সৌজন্যের তো আর তেমন প্রয়োজন নেই। আপনি চলুন আমার সঙ্গে। চটপট কাজ মিটে গেলে পৌনে এগারোটার লোকালটা পেয়ে যাব। আমায় আবার সেই সোনারপুর ফিরতে হবে। - যা করার তা কি এ'খানেই সেরে ফেলা যায়না? - এমন কনজেস্টেড এলাকায় ও'সব কাজ করা চলেনা। চুপচাপ ব্যাপারটা সেরে ফেলতে হবে। - প্লীজ দু'মিনিটের জন্য ভিতরে আসুন বিনোদবাবু। জামাটা অন্তত পালটে নিই। - কী দরকার বলুন জামা পালটে। - দরকার তেমন নেই। তবু। ওই, লাস্ট উইশ ধরে নিন। - ক্যুইক প্লীজ। ট্রেন ধরার তাড়াটা ভুলে যাবেন না। আর ইয়ে, পিছন দিক দিয়ে পালাতে চেষ্টা করে লাভ নেই। বসের লোকজন চারপাশে ছড়িয়ে আছে। - ও মা, ছি ছি। তা নয়। আসলে মিতুলের দেওয়া একটা জামা এখনও ভাঙা হয়নি। বাটিক প্রিন্টের হাফশার্ট। একটু ব্রাইট কালার কিন্তু বেশ একটা ইয়ে আছে। ও চলে যাওয়ার পর ও জামার ভাজ ভাঙতে ইচ্ছে হয়নি। কিন্তু...আজ না হয়...। - মিতু