Skip to main content

নয়নতারা ও খোকা


আমি ভালো ফটোগ্রাফ তুলতে পারি না। ফোকাস বুঝি না। কাছে ঘেঁষলে ঝাপসা হয়ে যায়। দূরে দাঁড়ালে ফ্রেম এলোমেলো হয়ে পড়ে। আলো ঠাহর করতে পারি না। কোন রঙের ঘাড়ে কোন রঙ চাপালে দৃষ্টিনন্দন হবে, সে বোধও তেমন নেই।

আমি ভালো ছবি তুলতে পারলে বোঝাতে পারতাম এই নয়নতারাগুলো কী সুন্দর। আমাদের ফ্ল্যাটবাড়ির ছাদে অন্য কারুর রাখা টব আলো করে আছে। ছাদ আলো করে আছে। বিকেল আলো করে আছে। গোলাপি রঙের নয়নতারা আকছার দেখা যায়, তবে এই রঙটা বড় একটা দেখি না। যদি আর একটু স্থির ভাবে মোবাইল ক্যামেরাটা ধরতে পারতাম তাহলে নয়নতারার পাপড়িগুলো স্পষ্ট হয়ে ধরা পড়ত।
তবু।

আরও বছর তিরিশ পর গুগল ইমেজেস স্ক্রোল করতে করতে এই ছবিটাই দেখে বিকেলের গন্ধ পাব। নয়নতারাগুলোকে স্পষ্ট মনে পড়বে।

নয়নতারা, আলো আলো একটা মেয়ে। ফিক্‌ হাসির মেয়ে। বিকেলের মেয়ে। অল্পবিস্তর সিজোফ্রেনিয়ার ওজন কি সকলেই বয়ে চলে না? এই মেয়েটার সঙ্গে আমার বেশ কিছুদিনের আলাপ। খানিক ভালোবাসাবাসিও আছে। আমার আস্তিনে ওর আঙুলের টান আছে। এমনকি আমার মেসবাড়ির পুরনো গন্ধ মিশে আছে খানিকটা। আমার পরিচিত কলকাতার গন্ধ। টিউশনি সন্ধ্যের আঁচ। দিল্লীর শীতের রাতের ধোঁয়া ওঠা পরোটার ওম। বিহারের রাত্রির ঝকঝকে তারা মাখানো আকাশের গল্প। সমস্ত মিলে আমি নয়নতারাকে চিনি। তার সঙ্গে অল্পস্বল্প কথাবার্তাও হয়। নয়নতারা আমার ভুল, বেঠিক, বিদঘুটে সমস্ত কিছু দেখতে পারে। কিন্তু ঠেলে সরিয়ে পাশ কাটিয়ে চলে যায় না। সে মেয়ে জ্বরের খাটে এসে চুপটি করে বসে থাকে।
একরত্তি মেয়ে হলে কী হবে, নয়নতারা কান্না দেখতে পায়। সমস্ত লেখা পড়তে পারে। ছাতের আবডালে হুমড়ি খেয়ে সামনে এসে পড়ে। অবিশ্যি খুকির সামনে নতজানু হতে নেই।

যা হোক। একদিকে নয়নতারা। অন্যদিকে আকাশ ভরা টলটলে মেঘ। বাপ আর ব্যাটা রাস্তায় বেমক্কা ঘুরে বেড়াচ্ছিলাম। তক্ষুনি, দু’চার ফোঁটা। আর তার মধ্যে থেকে খান দুই ফোঁটা খোকার গায়ে।

প্রথম বৃষ্টির ফোঁটা। আরও কত অজস্র ভিজে সপসপ মুহূর্ত পড়ে আছে। কাকভিজে হয়ে ফুটবল নিয় হুড়োহুড়ি করবে, মনের মধ্যে একরাশ আকুলিবিকুলি নিয়ে কোনও একদিন ইচ্ছে করে এন্তার ভিজবে হাতের ছাতা না খুলে, বৃষ্টির রাতে জানালা দিয়ে হাত বাড়িয়ে প্রথম অতুলপ্রসাদ আবিষ্কার করবে, অফিসের মুখে ঝমঝম বৃষ্টি পেয়ে বিরক্তিতে পায়চারি করবে, ভালবাসবে, চিঠি লিখবে।

কিন্তু ভায়া বালিশেন্দ্র, প্রথম বৃষ্টির ফোঁটা গায়ে নামার সময় বাবা সঙ্গে ছিল। ভুলে, বেঠিকে, বিদঘুটেমোতে ঠাসা সেই ভদ্রলোক যে ভালো ছবি তুলতে পারে না। ফোকাস বোঝে না, আলো ঠাহর করতে পারে না।

তবু। মুহূর্তটার গন্ধ কি এ ছবিতে থাকবে না? অনেক বছর পরে? যখন ভুল, বেঠিক, বিদঘুটে সমস্ত উবে যাবে? নয়নতারার ছবিটার মত আলো আলো হয়ে থেকে যাবে না?     

Comments

Unknown said…
অসাধারণ
Nabanita said…
Sundor Gopal :)
Anonymous said…
চমৎকার হয়েছে।
Joy Ghosh said…
বেড়ে লিখেচো boss

Popular posts from this blog

গোয়েন্দা গল্প

- কিছু মনে করবেন না মিস্টার দত্ত...আপনার কথাবার্তাগুলো আর কিছুতেই সিরিয়াসলি নেওয়া যাচ্ছে না।  - কেন? কেন বলুন তো ইন্সপেক্টর? - ভোররাতে এই থানা থেকে একশো ফুট দূরত্বে ফুটপাথে আপনাকে উপুড় হয়ে শুয়ে থাকতে দেখা যায়।  - আপনার কনস্টেবল নিজের চোখে দেখেছে তো।  - না না, সে'টাকে আমি কোশ্চেন করছি না। আমি শুধু সামারাইজ করছি। আপনার গায়ে দামী চিকনের পাঞ্জাবী, ঘড়িটার ডায়ালও সোনার হলে অবাক হব না। এ'রকম কাউকে বড় একটা ফুটপাথে পড়ে থাকতে দেখা যায় না। যা হোক। হরিমোহন কনস্টেবলের কাঁধে ভর দিয়ে আপনি থানায় এলেন। জলটল খেয়ে সামান্য সুস্থ বোধ করলেন। অল ইজ ওয়েল। নিঃশ্বাসে অ্যালকোহলের সামান্যতম ট্রেসও নেই। শরীরে নেই কোনও চোট আঘাত।  - আমার কথা আমায় বলে কী লাভ হচ্ছে? আমি যে জরুরী ব্যাপারটা জানাতে মাঝরাতে ছুটে এসেছিলাম...সেই ব্যাপারটা দেখুন...। ব্যাপারটা আর্জেন্ট ইন্সপেক্টর মিশ্র।  - আর্জেন্সিতে পরে আসছি। রাত সাড়ে তিনটে নাগাদ আপনি থানায় ছুটে এসেছিলেন। ওয়েল অ্যান্ড গুড। কিন্তু...ফুটপাথে পড়ে রইলেন কেন...।  - এ'টাই, এ'টাই আমি ঠিক নিশ্চিত নই। মাথাটাথা ঘুরে গেছিল হয়ত। আফটার অল বা

পকেটমার রবীন্দ্রনাথ

১ । চাপা উত্তেজনায় রবীন্দ্রনাথের ভিতরটা এক্কেবারে ছটফট করছিল । তার হাতে ঝোলানো কালো পলিথিনের প্যাকেটে যে ' টা আছে , সে ' টা ভেবেই নোলা ছুকছাক আর বুক ধড়ফড় । এমনিতে আলুথালু গতিতে সে হেঁটে অভ্যস্ত । তাড়াহুড়ো তার ধাতে সয় না মোটে । কিন্তু আজ ব্যাপারটা আলাদা । সে মাংস নিয়ে ফিরছে । হোক না মোটে আড়াই ' শ গ্রাম , তবু , কচি পাঁঠা বলে কথা । সহৃদয় আলম মিয়াঁ উপরি এক টুকরো মেটেও দিয়ে দিয়েছে । তোফা ! নিজের লম্বা দাড়ি দুলিয়ে ডবল গতিতে পা চালিয়ে সে এগোচ্ছিল ।   গলির মোড়ের দিকে এসে পৌঁছতে রবীন্দ্রনাথের কেমন যেন একটু সন্দেহ হল । ঠিক যেন কেউ পিছু নিয়েছে । দু ' একবার ঘাড় ঘুরিয়েও অবশ্য কাউকে দেখা গেলনা । ভাবনা ঝেড়ে ফেলে মাংসের পাকেটটায় মন ফিরিয়ে আনলেন রবীন্দ্রনাথ । বৌ নিশ্চয়ই খুব খুশি হবে আজ । খোকাটাকে যে কদ্দিন মাংসের ঝোল খাওয়ানো হয়নি ।   খাসির রান্নার গন্ধ ভেবে বড় গান পাচ্ছিল রবীন্দ্রনাথের । সে বাধ্য হয়েই একটা কুমার শানুর গাওয়া আশিকি সিনেমার গান ধরলে ।

চ্যাটার্জীবাবুর শেষ ইচ্ছে

- মিস্টার চ্যাটার্জী...। - কে? - আমার নাম বিনোদ। - আমি তো আপনাকে ঠিক...। - আমায় বস পাঠিয়েছেন। - ওহ, মিস্টার চৌধুরী আপনাকে...। - বসের নামটাম নেওয়ার তো কোনও দরকার নেই। কাজ নিয়ে এসেছি। কাজ করে চলে যাব। - আসুন, ভিতরে আসুন। - আমি ভিতরে গিয়ে কী করব বলুন। সৌজন্যের তো আর তেমন প্রয়োজন নেই। আপনি চলুন আমার সঙ্গে। চটপট কাজ মিটে গেলে পৌনে এগারোটার লোকালটা পেয়ে যাব। আমায় আবার সেই সোনারপুর ফিরতে হবে। - যা করার তা কি এ'খানেই সেরে ফেলা যায়না? - এমন কনজেস্টেড এলাকায় ও'সব কাজ করা চলেনা। চুপচাপ ব্যাপারটা সেরে ফেলতে হবে। - প্লীজ দু'মিনিটের জন্য ভিতরে আসুন বিনোদবাবু। জামাটা অন্তত পালটে নিই। - কী দরকার বলুন জামা পালটে। - দরকার তেমন নেই। তবু। ওই, লাস্ট উইশ ধরে নিন। - ক্যুইক প্লীজ। ট্রেন ধরার তাড়াটা ভুলে যাবেন না। আর ইয়ে, পিছন দিক দিয়ে পালাতে চেষ্টা করে লাভ নেই। বসের লোকজন চারপাশে ছড়িয়ে আছে। - ও মা, ছি ছি। তা নয়। আসলে মিতুলের দেওয়া একটা জামা এখনও ভাঙা হয়নি। বাটিক প্রিন্টের হাফশার্ট। একটু ব্রাইট কালার কিন্তু বেশ একটা ইয়ে আছে। ও চলে যাওয়ার পর ও জামার ভাজ ভাঙতে ইচ্ছে হয়নি। কিন্তু...আজ না হয়...। - মিতু