Skip to main content

থরের ডর

হাতুড়িটা না পেলেই মন খারাপ হয়ে যায় থরবাবুর। ও'দিকে বনমালী নস্কর লেনে গিয়ে নিজের জিনিস চেয়ে ফেরত নিতেও হাজার ঝ্যামেলা, সে'সব ভাবলেই থরহরিকম্প। এ'দিকে প্রতি বছর এ সময় একবার করে হাতুড়ি গায়েব হবেই।

কিন্তু দেবতাদের অত লাজুক হলে চলে না। হাতুড়িটাই যে আই-কার্ড।  দিন কয়েকের মাথায় ফেরত না এলেই সে'খানে গিয়ে হত্যে দিতে হয়। এ'বারেও হলো। এ'বার সাহস করে ভদ্রলোককে জিজ্ঞেস করেই ফেললেন থর;

"বলছিলাম দাদা, চাদ্দিকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে পেপারওয়েট, তবুও আমার হাতুড়ির দিকে ফি'বছর নজর পড়ে কেন"?

সিগারেট ধোঁয়ার খান কয়েক রিং বাতাসে ভাসিয়ে উত্তর দিলেন ভদ্রলোক;
"জরুরী দরকারেই তোমার হাতুড়িটা সরিয়ে আনি ভাই। সব পেপারওয়েটে তো আর রাষ্ট্রনেতাদের গোপন চিঠি চাপা দেওয়া ঠিক নয়। এমনিতেই মেসের ফচকে ছেলেগুলোর কিউরিওসিটি প্রয়োজনের চেতে কিঞ্চিৎ বেশি"।

দেবতা হওয়ার আবার এই এক মুশকিল। অন্তর পড়ে ফেলা যায়।

ফস্ করে বলে ফেললেন থর;
"দাদা, ডিভোর্স যখন তোমাদের দু'জনেরই হয়ে গেছে, তখন তো এটাকে আর এক্সট্রাম্যারিটাল বলা যায় না। তা ছাড়া তোমার দেওয়া বন্যা ডাকনামটা তো ভালোই ছিল, লাবণ্য দিদিভাইকে অকারণ রাষ্ট্রনেতা বলে ডাকার কী মানে? প্রতি বসন্তে তুমি একটা চিঠি লিখবে, তার একটা উত্তর আসবে। ব্যাস। তাতে অত লুকোছাপা কেন? থরের হাতুড়ির পেপারওয়েট! বোঝো! মাঝখান থেকে হাতুড়ির অভাবে আমি হয়রান। আরে শেষের পরেই তো শুরু গুরু..."।

বেজার মুখে, হাতুড়ি হাতে, মাথায় একজোড়া গাঁট্টায় পয়দা হওয়া জোড়া আলু নিয়ে সেই মেসবাড়ি ছাড়লেন থর।

Comments

Unknown said…
Ek ei post 2 bar !!!

Popular posts from this blog

গোয়েন্দা গল্প

- কিছু মনে করবেন না মিস্টার দত্ত...আপনার কথাবার্তাগুলো আর কিছুতেই সিরিয়াসলি নেওয়া যাচ্ছে না।  - কেন? কেন বলুন তো ইন্সপেক্টর? - ভোররাতে এই থানা থেকে একশো ফুট দূরত্বে ফুটপাথে আপনাকে উপুড় হয়ে শুয়ে থাকতে দেখা যায়।  - আপনার কনস্টেবল নিজের চোখে দেখেছে তো।  - না না, সে'টাকে আমি কোশ্চেন করছি না। আমি শুধু সামারাইজ করছি। আপনার গায়ে দামী চিকনের পাঞ্জাবী, ঘড়িটার ডায়ালও সোনার হলে অবাক হব না। এ'রকম কাউকে বড় একটা ফুটপাথে পড়ে থাকতে দেখা যায় না। যা হোক। হরিমোহন কনস্টেবলের কাঁধে ভর দিয়ে আপনি থানায় এলেন। জলটল খেয়ে সামান্য সুস্থ বোধ করলেন। অল ইজ ওয়েল। নিঃশ্বাসে অ্যালকোহলের সামান্যতম ট্রেসও নেই। শরীরে নেই কোনও চোট আঘাত।  - আমার কথা আমায় বলে কী লাভ হচ্ছে? আমি যে জরুরী ব্যাপারটা জানাতে মাঝরাতে ছুটে এসেছিলাম...সেই ব্যাপারটা দেখুন...। ব্যাপারটা আর্জেন্ট ইন্সপেক্টর মিশ্র।  - আর্জেন্সিতে পরে আসছি। রাত সাড়ে তিনটে নাগাদ আপনি থানায় ছুটে এসেছিলেন। ওয়েল অ্যান্ড গুড। কিন্তু...ফুটপাথে পড়ে রইলেন কেন...।  - এ'টাই, এ'টাই আমি ঠিক নিশ্চিত নই। মাথাটাথা ঘুরে গেছিল হয়ত। আফটার অল বা

পকেটমার রবীন্দ্রনাথ

১ । চাপা উত্তেজনায় রবীন্দ্রনাথের ভিতরটা এক্কেবারে ছটফট করছিল । তার হাতে ঝোলানো কালো পলিথিনের প্যাকেটে যে ' টা আছে , সে ' টা ভেবেই নোলা ছুকছাক আর বুক ধড়ফড় । এমনিতে আলুথালু গতিতে সে হেঁটে অভ্যস্ত । তাড়াহুড়ো তার ধাতে সয় না মোটে । কিন্তু আজ ব্যাপারটা আলাদা । সে মাংস নিয়ে ফিরছে । হোক না মোটে আড়াই ' শ গ্রাম , তবু , কচি পাঁঠা বলে কথা । সহৃদয় আলম মিয়াঁ উপরি এক টুকরো মেটেও দিয়ে দিয়েছে । তোফা ! নিজের লম্বা দাড়ি দুলিয়ে ডবল গতিতে পা চালিয়ে সে এগোচ্ছিল ।   গলির মোড়ের দিকে এসে পৌঁছতে রবীন্দ্রনাথের কেমন যেন একটু সন্দেহ হল । ঠিক যেন কেউ পিছু নিয়েছে । দু ' একবার ঘাড় ঘুরিয়েও অবশ্য কাউকে দেখা গেলনা । ভাবনা ঝেড়ে ফেলে মাংসের পাকেটটায় মন ফিরিয়ে আনলেন রবীন্দ্রনাথ । বৌ নিশ্চয়ই খুব খুশি হবে আজ । খোকাটাকে যে কদ্দিন মাংসের ঝোল খাওয়ানো হয়নি ।   খাসির রান্নার গন্ধ ভেবে বড় গান পাচ্ছিল রবীন্দ্রনাথের । সে বাধ্য হয়েই একটা কুমার শানুর গাওয়া আশিকি সিনেমার গান ধরলে ।

চ্যাটার্জীবাবুর শেষ ইচ্ছে

- মিস্টার চ্যাটার্জী...। - কে? - আমার নাম বিনোদ। - আমি তো আপনাকে ঠিক...। - আমায় বস পাঠিয়েছেন। - ওহ, মিস্টার চৌধুরী আপনাকে...। - বসের নামটাম নেওয়ার তো কোনও দরকার নেই। কাজ নিয়ে এসেছি। কাজ করে চলে যাব। - আসুন, ভিতরে আসুন। - আমি ভিতরে গিয়ে কী করব বলুন। সৌজন্যের তো আর তেমন প্রয়োজন নেই। আপনি চলুন আমার সঙ্গে। চটপট কাজ মিটে গেলে পৌনে এগারোটার লোকালটা পেয়ে যাব। আমায় আবার সেই সোনারপুর ফিরতে হবে। - যা করার তা কি এ'খানেই সেরে ফেলা যায়না? - এমন কনজেস্টেড এলাকায় ও'সব কাজ করা চলেনা। চুপচাপ ব্যাপারটা সেরে ফেলতে হবে। - প্লীজ দু'মিনিটের জন্য ভিতরে আসুন বিনোদবাবু। জামাটা অন্তত পালটে নিই। - কী দরকার বলুন জামা পালটে। - দরকার তেমন নেই। তবু। ওই, লাস্ট উইশ ধরে নিন। - ক্যুইক প্লীজ। ট্রেন ধরার তাড়াটা ভুলে যাবেন না। আর ইয়ে, পিছন দিক দিয়ে পালাতে চেষ্টা করে লাভ নেই। বসের লোকজন চারপাশে ছড়িয়ে আছে। - ও মা, ছি ছি। তা নয়। আসলে মিতুলের দেওয়া একটা জামা এখনও ভাঙা হয়নি। বাটিক প্রিন্টের হাফশার্ট। একটু ব্রাইট কালার কিন্তু বেশ একটা ইয়ে আছে। ও চলে যাওয়ার পর ও জামার ভাজ ভাঙতে ইচ্ছে হয়নি। কিন্তু...আজ না হয়...। - মিতু