Skip to main content

মাঝরাতের ট্রেন

- কদ্দূর?
- চুঁচুড়া। আপনি?
- ভদ্রেশ্বর।
- হুঁ।
- যাক, কামরায় একা নই। এ'টাই নিশ্চিন্দি।
- এত রাত্রে লোকাল আছে সে'টাই জানতাম না।
- আমিও। ধরেই নিয়েছিলাম ভোর চারটে নাগাদ যে ব্যান্ডেলটা আছে সে'টা ধরেই...। আচমকা অ্যানাউন্সমেন্ট শুনে উঠে বসলাম।
- আমিও তো ইক্যুয়ালি সারপ্রাইজড। একটা বিয়েবাড়ি অ্যাটেন্ড করতে গিয়ে এই হ্যারাসমেন্ট। ভাবতেই পারিনি এতটা দেরী হবে। আচ্ছা, কামরায় একটা বোঁটকা মাছের গন্ধ আছে না?
- ভেন্ডরদের কামরায় না উঠে কোনও মাছওলা এখানে উঠেছিল হয়তো। ডিসিপ্লিন ওয়াইজ তো দেশটা ডকে উঠছে।
- ডিসিপ্লিন? হুঁহ্, রুলিং পার্টি যদি এমন অপদার্থ হয়, তাহলে ইনডিসিপ্লিন তো ছড়িয়ে পড়বেই। চাদ্দিকে তো এলোমেলা করে খাবলে খাই টেন্ডেন্সি।
- এই আপনাদের এক দোষ। রুলিং পার্টি চাবকে নিজেদের রেস্পন্সিবিলিটি এড়িয়ে যাওয়া।
- আপনি কি ওদের দালাল নাকি?
- আমি দালাল কি না জানি না। তবে আপনি যে অপোজিশনের পা চাটা সে'টা স্পষ্ট বুঝতে পারছি।
- কী? আমি পা চাটা?
- আমি দালাল?
- নেহাত এত রাত তাই, নাহলে আপনার কলার ছিঁড়ে নিতাম।
- অপোজিশনের মতই গুণ্ডাবাজি ভাষা দেখছি আপনার। চাইলে এখুনি আপনাকে ট্রেন থেকে নামিয়ে দিতাম। নেহাত রাত গভীর, আর আপনি সিনিয়র...।
- ওরে আমার কালচারাল খুড়ো এলেন হে।
- মাছের গন্ধটা গায়েব হয়েছে, সে'টা টের পাচ্ছেন কি?
- তাই তো। স্ট্রেঞ্জ।

**

- রাত তিনটের ফাঁকা ট্রেন। মাত্র দু'জন বোকাপাঁঠা মানুষ।  তাও তুই ভয় দেখাতে পারলি না?
- বাবা, আমি গেছিলাম তো ভয় দেখাতে। এক্কেবারে ফার্স্ট কামরায়।
- উদ্ধার করেছ। গেছিলি যখন পালিয়ে এলি কেন ভয় না দেখিয়ে? রাস্কেল!
- ইয়ে, ভয় দেখানোর আগেই...।
- ভয় দেখানোর আগেই?
- ভয় দেখানোর আগেই আমি...।
- কী?
- ভয় দেখানোর আগেই আমি ভয় পেয়ে গেছিলাম বাবা।
- কী?
- ভয়!
- ভয়? ভূতের বাচ্চা হয়ে তুই মানুষের ভয় পেয়েছিস? হোয়াট?
- দিব্যি ঝাঁপানোর জন্য রেডী হচ্ছিলাম মাইরি,আচমকা দু'জনে রাজনীতি নিয়ে ঝগড়া আরম্ভ করল। আমি এমন ভয় পেয়ে গেলাম যে...।
- কী নিয়ে ঝগড়া?
- পলিটিক্স নিয়ে। মানুষের ঝগড়া।
- আঁ আঁ..আঁ...।
- ও কী বাবা, গোঙাচ্ছ কেন? কী হল? অমন ছটফট করছ কেন বাবা?

Comments

Popular posts from this blog

গোয়েন্দা গল্প

- কিছু মনে করবেন না মিস্টার দত্ত...আপনার কথাবার্তাগুলো আর কিছুতেই সিরিয়াসলি নেওয়া যাচ্ছে না।  - কেন? কেন বলুন তো ইন্সপেক্টর? - ভোররাতে এই থানা থেকে একশো ফুট দূরত্বে ফুটপাথে আপনাকে উপুড় হয়ে শুয়ে থাকতে দেখা যায়।  - আপনার কনস্টেবল নিজের চোখে দেখেছে তো।  - না না, সে'টাকে আমি কোশ্চেন করছি না। আমি শুধু সামারাইজ করছি। আপনার গায়ে দামী চিকনের পাঞ্জাবী, ঘড়িটার ডায়ালও সোনার হলে অবাক হব না। এ'রকম কাউকে বড় একটা ফুটপাথে পড়ে থাকতে দেখা যায় না। যা হোক। হরিমোহন কনস্টেবলের কাঁধে ভর দিয়ে আপনি থানায় এলেন। জলটল খেয়ে সামান্য সুস্থ বোধ করলেন। অল ইজ ওয়েল। নিঃশ্বাসে অ্যালকোহলের সামান্যতম ট্রেসও নেই। শরীরে নেই কোনও চোট আঘাত।  - আমার কথা আমায় বলে কী লাভ হচ্ছে? আমি যে জরুরী ব্যাপারটা জানাতে মাঝরাতে ছুটে এসেছিলাম...সেই ব্যাপারটা দেখুন...। ব্যাপারটা আর্জেন্ট ইন্সপেক্টর মিশ্র।  - আর্জেন্সিতে পরে আসছি। রাত সাড়ে তিনটে নাগাদ আপনি থানায় ছুটে এসেছিলেন। ওয়েল অ্যান্ড গুড। কিন্তু...ফুটপাথে পড়ে রইলেন কেন...।  - এ'টাই, এ'টাই আমি ঠিক নিশ্চিত নই। মাথাটাথা ঘুরে গেছিল হয়ত। আফটার অল বা

পকেটমার রবীন্দ্রনাথ

১ । চাপা উত্তেজনায় রবীন্দ্রনাথের ভিতরটা এক্কেবারে ছটফট করছিল । তার হাতে ঝোলানো কালো পলিথিনের প্যাকেটে যে ' টা আছে , সে ' টা ভেবেই নোলা ছুকছাক আর বুক ধড়ফড় । এমনিতে আলুথালু গতিতে সে হেঁটে অভ্যস্ত । তাড়াহুড়ো তার ধাতে সয় না মোটে । কিন্তু আজ ব্যাপারটা আলাদা । সে মাংস নিয়ে ফিরছে । হোক না মোটে আড়াই ' শ গ্রাম , তবু , কচি পাঁঠা বলে কথা । সহৃদয় আলম মিয়াঁ উপরি এক টুকরো মেটেও দিয়ে দিয়েছে । তোফা ! নিজের লম্বা দাড়ি দুলিয়ে ডবল গতিতে পা চালিয়ে সে এগোচ্ছিল ।   গলির মোড়ের দিকে এসে পৌঁছতে রবীন্দ্রনাথের কেমন যেন একটু সন্দেহ হল । ঠিক যেন কেউ পিছু নিয়েছে । দু ' একবার ঘাড় ঘুরিয়েও অবশ্য কাউকে দেখা গেলনা । ভাবনা ঝেড়ে ফেলে মাংসের পাকেটটায় মন ফিরিয়ে আনলেন রবীন্দ্রনাথ । বৌ নিশ্চয়ই খুব খুশি হবে আজ । খোকাটাকে যে কদ্দিন মাংসের ঝোল খাওয়ানো হয়নি ।   খাসির রান্নার গন্ধ ভেবে বড় গান পাচ্ছিল রবীন্দ্রনাথের । সে বাধ্য হয়েই একটা কুমার শানুর গাওয়া আশিকি সিনেমার গান ধরলে ।

চ্যাটার্জীবাবুর শেষ ইচ্ছে

- মিস্টার চ্যাটার্জী...। - কে? - আমার নাম বিনোদ। - আমি তো আপনাকে ঠিক...। - আমায় বস পাঠিয়েছেন। - ওহ, মিস্টার চৌধুরী আপনাকে...। - বসের নামটাম নেওয়ার তো কোনও দরকার নেই। কাজ নিয়ে এসেছি। কাজ করে চলে যাব। - আসুন, ভিতরে আসুন। - আমি ভিতরে গিয়ে কী করব বলুন। সৌজন্যের তো আর তেমন প্রয়োজন নেই। আপনি চলুন আমার সঙ্গে। চটপট কাজ মিটে গেলে পৌনে এগারোটার লোকালটা পেয়ে যাব। আমায় আবার সেই সোনারপুর ফিরতে হবে। - যা করার তা কি এ'খানেই সেরে ফেলা যায়না? - এমন কনজেস্টেড এলাকায় ও'সব কাজ করা চলেনা। চুপচাপ ব্যাপারটা সেরে ফেলতে হবে। - প্লীজ দু'মিনিটের জন্য ভিতরে আসুন বিনোদবাবু। জামাটা অন্তত পালটে নিই। - কী দরকার বলুন জামা পালটে। - দরকার তেমন নেই। তবু। ওই, লাস্ট উইশ ধরে নিন। - ক্যুইক প্লীজ। ট্রেন ধরার তাড়াটা ভুলে যাবেন না। আর ইয়ে, পিছন দিক দিয়ে পালাতে চেষ্টা করে লাভ নেই। বসের লোকজন চারপাশে ছড়িয়ে আছে। - ও মা, ছি ছি। তা নয়। আসলে মিতুলের দেওয়া একটা জামা এখনও ভাঙা হয়নি। বাটিক প্রিন্টের হাফশার্ট। একটু ব্রাইট কালার কিন্তু বেশ একটা ইয়ে আছে। ও চলে যাওয়ার পর ও জামার ভাজ ভাঙতে ইচ্ছে হয়নি। কিন্তু...আজ না হয়...। - মিতু