Skip to main content

ভ্যালেন্টাইন ফর্দ



দশকর্মা ভাণ্ডারগুলোকে আপগ্রেড করার সময় এসেছে। তেরো তারিখ সন্ধেবেলা সে দোকানে গিয়ে খোকা খুকুরা দাঁড়াবে ফর্দ হাতে।
তারা গড়গড় করে বলে যাবে, দোকানি সুড়সুড় করে টুকে যাবেন।


ঠোঁট পালিশের বোরোলিন টিউব
১টা
আঙুলের ডগায় লাগিয়ে চেটে নেওয়ার জন্য মধুর ছোট শিশি
১টা
ভিক্টোরিয়া বা ময়দানের ঘাসে পেতে বসার জন্য রুমাল
২টো
খোলা না ভাঙা বাদাম ২৫০ গ্রাম করে
২ ঠোঙা
ফ্লপ সিনেমার কর্নার সীটের টিকিট
২টো
চিঠি লেখার হ্যান্ডমেড কাগজ
১/৪ বান্ডিল
গোলাপি রঙের সুগন্ধি খাম
'টো
স্পার্কল ঝরানো কালি ভরা কলম
১টা
ঝোপঝাড়ে জ্বালানোর গুডনাইটের কয়েল
১টা
ক্যাডবেরির প্যাকেট, বড় সাইজের
১টা
এমপি থ্রী প্লে লিস্ট (শুধু মাখোমাখো গান, হয়তো তোমারই জন্য, টাইটানিকের গান আর জাতিস্মর মাস্ট)
১টা প্লেলিস্ট (৫০টা গান)
মাউথ ফ্রেশনার
১টা
প্রেমের কোটেশনের পকেট বই
১টা
গোলাপ
২টো
টেরাকোটা কানের দুল / মানিব্যাগ
১ জোড়া/ ১ পিস্‌
ইত্যাদি।

দোকানিকে ফর্দ আর ব্যাগ দিয়ে অপেক্ষা মিনিট কুড়ি। তারপর ব্যাগ হাতে সোজা বাড়ি। রাত্তিরে ঠাকুরঘরে থাকবে সে ব্যাগ। মেজপিসি গিয়ে সে ব্যাগ খুলে ফর্দের সঙ্গে জিনিসপত্র মিলিয়ে নেবেন। দু'জনের নামসহ হার্ট শেপের চাবির রিংটা না পেয়ে আঁতকে উঠবেন তিনি।

সে কথা বাবার কানে উঠতে গনগনে রাগ বাড়ির সিলিঙে ধাক্কা খাবে।
"রাস্কেলটা চাবির রিংটাই ভুলে গেছে? ও কি প্রেম করছে না মুর্গি কাটছে? দত্তবাড়ির সেজছেলে শুনলাম কফির কাপে প্রেমিকার ছবি আর শেষের কবিতার কোটেশন সাঁটিয়ে এনেছে। আর এদিকে আমাদের ছাগলটা চাবির রিংটুকু ভুলে মেরে দিলে। অকালকুষ্মাণ্ড! শেষে কিনা আমাদের ফ্যামিলির ছেলে অ্যারেঞ্জড ম্যারেজ করবে? ওর পিঠে ছাল আমি ছাড়িয়ে নেব"।

শেষে পুরুতমশাইকে ফোন করতে সলিউশন বেরোবে। দু'জনে মিলে হটচকোলেটে কুলকুচি করে চুমু খেলে নাকি হার্ট শেপের চাবির রিং না থাকার দোষ কেটে যাবে।
মেজদা ক্ল্যারিফাই করে নেবে "দোষ খণ্ডনে গুপ্তপ্রেস কি স্মুচ বলছে না পেক্‌"?

পরের দিন ভোর ভোর বাড়ির বড়দের প্রণাম করে খোকা ব্যাকপাকে ভ্যালেন্টাইন সামগ্রী পুরে বেরোবে অভিসারে। মা সন্তোষীর ঘটে দশটাকা মানত করবেন "মা, খোকা যেন এবার গতবারের মত সন্ধ্যের আগে বাড়ি ফিরে না আসে। ফিরতে অন্তত যেন রাত এগারোটা হয়। মা, মা গো"।

Comments

Popular posts from this blog

গোয়েন্দা গল্প

- কিছু মনে করবেন না মিস্টার দত্ত...আপনার কথাবার্তাগুলো আর কিছুতেই সিরিয়াসলি নেওয়া যাচ্ছে না।  - কেন? কেন বলুন তো ইন্সপেক্টর? - ভোররাতে এই থানা থেকে একশো ফুট দূরত্বে ফুটপাথে আপনাকে উপুড় হয়ে শুয়ে থাকতে দেখা যায়।  - আপনার কনস্টেবল নিজের চোখে দেখেছে তো।  - না না, সে'টাকে আমি কোশ্চেন করছি না। আমি শুধু সামারাইজ করছি। আপনার গায়ে দামী চিকনের পাঞ্জাবী, ঘড়িটার ডায়ালও সোনার হলে অবাক হব না। এ'রকম কাউকে বড় একটা ফুটপাথে পড়ে থাকতে দেখা যায় না। যা হোক। হরিমোহন কনস্টেবলের কাঁধে ভর দিয়ে আপনি থানায় এলেন। জলটল খেয়ে সামান্য সুস্থ বোধ করলেন। অল ইজ ওয়েল। নিঃশ্বাসে অ্যালকোহলের সামান্যতম ট্রেসও নেই। শরীরে নেই কোনও চোট আঘাত।  - আমার কথা আমায় বলে কী লাভ হচ্ছে? আমি যে জরুরী ব্যাপারটা জানাতে মাঝরাতে ছুটে এসেছিলাম...সেই ব্যাপারটা দেখুন...। ব্যাপারটা আর্জেন্ট ইন্সপেক্টর মিশ্র।  - আর্জেন্সিতে পরে আসছি। রাত সাড়ে তিনটে নাগাদ আপনি থানায় ছুটে এসেছিলেন। ওয়েল অ্যান্ড গুড। কিন্তু...ফুটপাথে পড়ে রইলেন কেন...।  - এ'টাই, এ'টাই আমি ঠিক নিশ্চিত নই। মাথাটাথা ঘুরে গেছিল হয়ত। আফটার অল বা

পকেটমার রবীন্দ্রনাথ

১ । চাপা উত্তেজনায় রবীন্দ্রনাথের ভিতরটা এক্কেবারে ছটফট করছিল । তার হাতে ঝোলানো কালো পলিথিনের প্যাকেটে যে ' টা আছে , সে ' টা ভেবেই নোলা ছুকছাক আর বুক ধড়ফড় । এমনিতে আলুথালু গতিতে সে হেঁটে অভ্যস্ত । তাড়াহুড়ো তার ধাতে সয় না মোটে । কিন্তু আজ ব্যাপারটা আলাদা । সে মাংস নিয়ে ফিরছে । হোক না মোটে আড়াই ' শ গ্রাম , তবু , কচি পাঁঠা বলে কথা । সহৃদয় আলম মিয়াঁ উপরি এক টুকরো মেটেও দিয়ে দিয়েছে । তোফা ! নিজের লম্বা দাড়ি দুলিয়ে ডবল গতিতে পা চালিয়ে সে এগোচ্ছিল ।   গলির মোড়ের দিকে এসে পৌঁছতে রবীন্দ্রনাথের কেমন যেন একটু সন্দেহ হল । ঠিক যেন কেউ পিছু নিয়েছে । দু ' একবার ঘাড় ঘুরিয়েও অবশ্য কাউকে দেখা গেলনা । ভাবনা ঝেড়ে ফেলে মাংসের পাকেটটায় মন ফিরিয়ে আনলেন রবীন্দ্রনাথ । বৌ নিশ্চয়ই খুব খুশি হবে আজ । খোকাটাকে যে কদ্দিন মাংসের ঝোল খাওয়ানো হয়নি ।   খাসির রান্নার গন্ধ ভেবে বড় গান পাচ্ছিল রবীন্দ্রনাথের । সে বাধ্য হয়েই একটা কুমার শানুর গাওয়া আশিকি সিনেমার গান ধরলে ।

চ্যাটার্জীবাবুর শেষ ইচ্ছে

- মিস্টার চ্যাটার্জী...। - কে? - আমার নাম বিনোদ। - আমি তো আপনাকে ঠিক...। - আমায় বস পাঠিয়েছেন। - ওহ, মিস্টার চৌধুরী আপনাকে...। - বসের নামটাম নেওয়ার তো কোনও দরকার নেই। কাজ নিয়ে এসেছি। কাজ করে চলে যাব। - আসুন, ভিতরে আসুন। - আমি ভিতরে গিয়ে কী করব বলুন। সৌজন্যের তো আর তেমন প্রয়োজন নেই। আপনি চলুন আমার সঙ্গে। চটপট কাজ মিটে গেলে পৌনে এগারোটার লোকালটা পেয়ে যাব। আমায় আবার সেই সোনারপুর ফিরতে হবে। - যা করার তা কি এ'খানেই সেরে ফেলা যায়না? - এমন কনজেস্টেড এলাকায় ও'সব কাজ করা চলেনা। চুপচাপ ব্যাপারটা সেরে ফেলতে হবে। - প্লীজ দু'মিনিটের জন্য ভিতরে আসুন বিনোদবাবু। জামাটা অন্তত পালটে নিই। - কী দরকার বলুন জামা পালটে। - দরকার তেমন নেই। তবু। ওই, লাস্ট উইশ ধরে নিন। - ক্যুইক প্লীজ। ট্রেন ধরার তাড়াটা ভুলে যাবেন না। আর ইয়ে, পিছন দিক দিয়ে পালাতে চেষ্টা করে লাভ নেই। বসের লোকজন চারপাশে ছড়িয়ে আছে। - ও মা, ছি ছি। তা নয়। আসলে মিতুলের দেওয়া একটা জামা এখনও ভাঙা হয়নি। বাটিক প্রিন্টের হাফশার্ট। একটু ব্রাইট কালার কিন্তু বেশ একটা ইয়ে আছে। ও চলে যাওয়ার পর ও জামার ভাজ ভাঙতে ইচ্ছে হয়নি। কিন্তু...আজ না হয়...। - মিতু